somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার জাল বুনেছি

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
- এই তোমার পছন্দের পোকা কি?
বহ্নি হতাশ চোখে রণোর দিকে তাকালো। এতো ঝামেলা করে বাবা মায়ের চোখ এড়িয়ে রণোর সাথে দেখা করতে এলো। লেকের পাশে বসে পড়ন্ত বিকেলের অদ্ভুত মায়াবী আলোয় কেউ বুঝি তার প্রেমিকাকে এইসব বলে।

- আমার কোন পছন্দের পোকা নেই!!
- আমার মনে হয় তোমার মাকড়শা পছন্দ করা উচিত।
- কেন? তোমার বুঝি মাকড়শা খুব পছন্দ?
- হুউউ...পছন্দ মানে!!! আমি নিজেইতো একটা মাকড়শা।
- তাতো হবেই...আটটা হাত পা দিয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরেছো!!!
- আমি মোটেও তোমাকে আঁকড়ে ধরিনি বহ্নি। আর কোন দিন তোমায় ধরেও রাখবো না...আমিতো শুধু জাল বুনে যাবো...তোমার চারপাশে ভালোবাসার জাল...দেখি ধরা পড়ো কিনা!!

রণো হাসছে; লেকের জলের আয়নায় ধাক্কা লেগে অস্তরাগের আলো ওর চোখে মুখে। ছেলেটা যখন হাসে ওর চোখ হাসে; বামপাশের একটা উঁচু দাঁত পাতলা ঠোঁটেটাকে কি সুন্দর করে যে বাঁকিয়ে দেয়! বহ্নি নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো মানুষটা আরেকটু কম সুন্দর হলে কি হতো?

ওর একটু মন খারাপ লাগছে। আজ বহ্নি কালো শাড়ী পরেছে; রনোর ফেভারিট কালার ব্ল্যাক। শাড়ীটার আঁচলে বেগুনী আর গোলাপী ফুলের ছাপ; ওর ঠোঁটে ম্যাচিং বেগুনী লিপস্টিক। একবার কথায় কথায় রনো বলেছিলো যে ওকে বেগুনী ঠোঁটে মানাবে। গত কয়েকদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে শেষে গুলশানের মার্কেট থেকে বেগুনী লিপস্টিক কিনেছে। এমন সাজগোজ করে বাসা থেকে বেরুতে মাকে অনেকগুলো মিথ্যা বলতে হয়েছে। অথচ রনোতো মনে হয় খেয়ালই করেনি।

রণোর সাথে ওর সম্পর্কের বয়স প্রায় দু’বছর হতে চললো; কিন্তু আজও ছেলেটা একবারো বলেনি ভালোবাসি। দেখা হলেই সব ইয়ার্কি কথাবার্তা!!! মাঝে মাঝে বহ্নির খুব রাগ লাগে; কিন্তু ভালোবাসার কথার জন্য অপেক্ষা করতে যে খুব ভালোও লাগে। দেখা হলেই বুক ধুকপুক ধুকপুক; যদি আজ সে ওই তীব্র সুন্দর শব্দগুলো বলে!! রণো কি ইচ্ছে করেই এমনটা করে? ও কি জানে যে অপেক্ষা ভালোবাসাকে আরো গাঢ় করে?

রণো বকবক করে চলেছে “আমি হচ্ছি তোমার পোষা মাকড়শা...তুমি কি জানো আমার অনেক গুণ? মাকড়শার জাল দিয়ে একদিন ধ্বংসাত্মক মিসাইল আটকে দেয়া যাবে; চারজন মানুষের যতোটুকু ডিএনএ তা একটা মাকড়শার ডিমে থাকে। আর Black Widow নামের নারী মাকড়শা পুরুষের সাথে মিলনের পরপরই তাকে মেরে ফেলতে চায়। ঐ পুরুষকে তারা মনে করে genetic anomaly!! আজব না?”

সময় শেষ হয়ে আসছে; সূর্য ডুবুডুবু; আকাশটার সাথে সাথে লেকের জলও কমলা লাল। নাহ্...রণো আজ আসলেই ওকে একটুও খেয়াল করেনি! সবুজ পাতায় ফিকে রোদের মতো এক টুকরো বিষাদ লেপ্টে থাকে সারাটা বিকেল। অথচ এই বিকেলটা হতে পারতো অন্যরকম; আকাশ দোলের আবীর মেখেছিল। মন খারাপ করে বহ্নি রিকশায় উঠে বসতেই রণো বললো “বাসায় পৌঁছে জানিও। আর শোনো আমার জারুল ঠোঁটের মেয়ে...তুমি কি জানো যে তুমি আমার রানী মাকড়শা, Black Widow? মরে যাবো জেনেও বার বার তোমার কাছেই যেতে ইচ্ছা করে!!!”

বহ্নির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো; বুকের মধ্যে হঠাত ধাক্কা লাগলো। ভাগ্যিস সন্ধ্যা নামছে; রণো দেখতে পায়নি যে ওর চোখে জল চলে এসেছে। মানুষটা এমন করে বলে যে বুকের মাঝে একই সময়ে কষ্ট আর সুখেরা ঘাই মারে!! এটাই কি ভালোবাসা?

২.

- প্রত্যেকদিন ঝুল ঝাড়ো...মাকড়শাটা মেরে ফেললেইতো হয়!!
- না না...থাক না! ঝুল ঝাড়তে কি আর এমন কষ্ট?
- ভয় পাও নাকি? ভয় লাগলে আমি মেরে দিতে পারি!!
- না না আবীর...প্লিজ!! কি দরকার? ও তো কাউকে কামড়াচ্ছে না...থাক না!!

কোমরে আঁচল পেঁচানো আর লম্বা ঝুলঝাড়ন হাতে বহ্নি; কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। লালচে মুখের কাজে ব্যস্ত বহ্নিকে আবীর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
- ইশশ রে আমার বউটা না একটু বেশীই ভালো...একটা মাকড়শার জন্যেও এতো মায়া?
- যাওতো...অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে...আর আল্লাদী করতে হবে না।

বাইরের দরজা বন্ধ করে বহ্নি শোবার ঘরের বিছানায় এসে বসলো। ও ঠোঁট চেপে কান্নার দমক সামলাচ্ছে; আবীর জানে না কিন্তু ও আসলেই একটা বিষাক্ত মাকড়শা, Black Widow। একবছর আগে ঠিক আজকের দিনটাতে রণো ঠিক ওর ঠোঁটের মতো বেগুনী হয়ে গিয়েছিলো। এতো অভিমানী হয় মানুষ? বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে বহ্নির মানুষটা চুপচাপ ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরে যাবে? একবারো বললো না যে “বিয়ে করো না”; শুধু কষ্টে বেগুনী হতে হতে চিরকুট লিখে গেলো “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ না শুধু একটা রানী মাকড়শা দায়ী।“

বহ্নি দেয়াল বেয়ে ওঠা মাকড়শাটার দিকে তাকিয়ে বললো “রণো...মিছেমিছি তুমি জাল বুনে যাচ্ছ। রানী মাকড়শাটা সেই কবেই তোমার ভালোবাসার জালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। আমার বোকা মাকড়শা...ভালোবাসার জাল বুঝি কেউ ছাড়াতে পারে? কিন্তু আমার জাল তুমি কাটলে কেন বলতো? খুব অভিমানী ছিলে যে...বেশী বেশী ভালোবাসা পেতেই বুঝি ভালোবাসার জাল ছিড়েছো? তুমি ফেরারী আর আর আমি? সেই কবে থেকে বাঁধা পড়ে আছি.....আর কতোদিন তোমাকে একা একা ভালোবাসবো বলতো? আমি যে এখনো অপেক্ষা করে আছি...এখোনো...”

(১১/৩০/২০১৫) (ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:০৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×