somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানাযার নামাযের পদ্ধতি ও করণীয়

১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানাযার নামাজ ও তার ফযীলত

যখন কোন মুসলমান মারা যায় তখন তার আত্মার শান্তির জন্য বিশেষভাবে কিছু দুআ করা হয়। ঐ বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুআ করার নাম জানাযার নামাজ। এই নামাযের ফযীলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের জানাযায় শরীক হয়ে নামাজ পড়ে এবং তাকে কবরও দেয় সে দু কীরাত নেকী পায়। প্রত্যেক কীরাত উহুদ পাহাড় সমান নেকী। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযায় নামাজ পড়ে এবং মাটি দেয় না সে এক কীরাত নেকী পাবে (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, ১৪৪ পৃষ্ঠা)।

জানাযার নামাজের জন্য অযু শর্ত

বিখ্যাত তাবেয়ী নাফেঅ বলেন, আবদুল্লা ইবনু ওমর বলতেন, কেউ যেন বিনা অযুতে জানাযার নামায না পড়ে (মুঅত্তা ইমাম মালিক, ৮০ পৃষ্ঠা)। তবে হ্যাঁ, অযু করতে গিয়ে জানাযা যদি ছেড়ে যাবার আশংকা থাকে তাহলে ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, তুমি তায়াম্মুম কর এবং নামাজ পড় (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, ৩য় খণ্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)।

লাশ ও ইমামের অবস্থান কিরূপ হবে?

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রা.) বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহর পেছনে একটি মেয়ের জানাযা পড়ি। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাশের মাঝ বরাবর দাঁড়ান (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ১৪৫ পৃষ্ঠা)।

মুক্তাদীদের লাইন কটা হবে?

মালিক ইবনু হোরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে মুসলমানের মরার পর তার জানাযায় মুসলমানদের তিন লাইন লোক নামাজ পড়ে তার জন্য (আল্লাহতা’য়ালা ক্ষমা) অপরিহার্য করে দেন। তাই জানাযা ইমাম মোক্তাদীর সংখ্যা যখন কম মনে করতো তখন মালেক (রা.) এই হাদীসটির ভিত্তিতে তিনটি লাইন করে নিতেন (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজা, মিশকাত, ১৪৭ পৃষ্ঠা)।

মুসল্লী সংখ্যা কত হওয়া উচিত?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মুসলমানের জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেননি যদি শরীক হয়ে ঐ লাশের জন্য দুআ করে তাহলে আল্লাহতা’য়ালা তাদের সুপারিশ নিশ্চয়ই কবুল করবেন (মুসলিম, মিশকাত, ১৪৫)

জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম

আবু ওমামাহ ইবনু সহাল ইবনু হোনায়ফ (রা.) বলেন, জানাযার নামাজে সুন্নত হল তকবীর দেয়া। তারপর সূরায়ে ফাতেহা পড়া। কিছু আয়াত পড়া তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে দরূদ পড়া। তারপর মাইয়েতের জন্য আন্তরিক দোয়া পড়া। (ফতহুলবারী ৩য় খণ্ড ২০৩ পৃ:)

আত্মহত্যাকারী, বেনামাযী ও ফাসেকের জানাযা

জাবের বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একজন আত্মহত্যাকারীর লাশ আনা হলে তিনি তার জানাযা পড়েননি (মুসলিম, বুলুগুল মারাম, ৩৯ পৃষ্ঠা)। এইরূপ জোহায়না গোত্রের এক ব্যক্তি খায়বারের দিনে গনীমতের (জেহাদেলব্ধ) মাল চুরি করায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা না পড়ে বলেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী)।

উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ওলামায়ে কিরাম বলেন, আত্মহত্যাকারী এবং চোর ও ডাকাতের জানাযা আলেম ও পরহেযগার লোক না পড়ে সাধারণ লোক পড়বে। যাতে অন্যান্য লোকেরা সাবধান হয়ে যায় এবং শিক্ষা পায়।

গায়েবী জানাযা

আবিসিনিয়ার বাদশাহ আসহিমাহ নাজ্জাশী যেদিন মারা যান সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে ঐ মৃত্যু সংবাদ দিয়ে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে গিয়ে গায়েবী জানাযা পড়েন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ১৪৪ পৃষ্ঠা)।

ইমাম ইবনু হাযম বলেন, এই হাদীস প্রমাণ করে যে, জামায়াত সহকারে গায়েবী জানাযা পড়া সাহাবায়ে কিরামের ইজমা বা সর্ববাদীসম্মত অভিমত। এর খেলাফ করা বৈধ নয় (মুহাল্লা, ৫ম খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা)।

আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনু ইউসুফ যাইলায়ী হানাফী (রহ.) বাইহাকী এবং ওয়াকিদীর কিতাবুল মাগা-যীর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূতা যুদ্ধের দুই শহীদ রাসুলুল্লাহ পালক পুত্র যায়দ ইবনু হা-রিসাহ এবং আলীর বড় ভাই জাফর ইবনু আবী তা-লিবের গায়েবী জানাযা পড়েছিলেন (নাসবুর রা-য়াহ ২য় খণ্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)।

মসজিদে জানাযার নামায চলে কিনা?

আয়েশা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইযার দুই পুত্র সুহাইল এবং তার ভাইয়ের জানাযা মসজিদে পড়েছিলেন (মুসলিম, মিশকাত, ১৪৫ পৃষ্ঠা)।

আর এক মুহাদ্দিস আল্লামা যাইলায়ী বলেন, ঐরূপ হাদীস ইবনু আদীর আলকা-মিলেও আছে। কিন্তু ইমাম নবভী বলেন, ঐ সব হাদীসই যয়ীফ। যা দলিল যোগ্য হতে পারে না। (নাসবুর রা-য়াহ ২য় খণ্ড, ২৭৫-২৭৬ পৃষ্ঠা)।

মোসান্নাফ ইবনু আবী শায়বা এবং সুনানে সায়ীদ ইবনু মনসুরে আছে যে, ওমর আবু বাক্রের জানাযা মসজিদে পড়েছিলেন (হাশিয়া দেহলঅবী আলা-বুলুগুল মারা-ম, ১ম খণ্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা)।

এ ব্যাপারে হাফেয ইবনুল কাইয়েম বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই মসজিদের বাইরে পড়তেন এবং কখনো কখনো মসজিদের ভেতরেও পড়েছেন। দু’রকমই জায়েয। তবে অসুবিধা না হলে মসজিদের বাইরে পড়াটাই উত্তম (যা-দুল মাআ-দ, ১ম খণ্ড, ১৪০ পৃষ্ঠা)।

জানাযার ইমাম কে হওয়া উচিত?

মাইয়েত যদি জীবদ্দশায় তার জানাযা পড়াবার জন্য কাউকে অসিয়্যত করে থাকে তাহলে সেইই জানাযা পড়াবে। যেমন-আবুবাকর ওমরকে, ওমর সুহাইবকে এবং তার পুত্র হাযেরকে, ইবনু মসউদ ইবনু যুবায়রকে এবং আয়েশা আবু হুরায়রাকে তাদের জানাযা পড়াবার জন্য অসিয়্যত করেছিলেন। তাই তারাই জানাযা পড়িয়েছিলেন। ফলে এটা ইজমায় পরিণত হয় (আসইয়লাহ, ১ম খণ্ড, ২৬৫ পৃষ্ঠা)।

ইমাম নবভী বলেন, অসিয়্যতের পর অলী বা মাইয়েতের ঘনিষ্ট আত্মীয় জানাযা পড়াবে। তারপর মসজিদের ইমাম। ঘনিষ্ট আত্মীয়দের মধ্যে প্রথমে পিতা, তারপর দাদা, তারপর পুত্র, তারপর পৌত্র, তারপর ভাই (রওযাতুত তলিবীন, ২য় খণ্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)।

জানাযার নামাজের সময়ের করণীয়ঃ এই পৃথিবীতে জীবন চলার পথে প্রত্যেক মানুষই ভাল-মন্দ নিয়েই জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হন। ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ এই নশ্বর পৃথিবীতে নেই। সেজন্য কোন মানুষের মৃত্যু খবর শোনামাত্র তার ভুল-ত্রুটিগুলো সবারই ক্ষমা করে দেয়া উচিত। মৃত ব্যক্তি যদি কারো কাছে ঋণ থাকেন তাহলে তার ওয়ারিশগণ পরিশোধ করে দেবেন। আর যদি তারা অসচ্ছল হয় ও ঋণদাতা স্বচ্ছল হন তাহলে ক্ষমা করে দেয়াই হবে মহোত্তম কাজ। এক স্থানে জানাযা পড়তে গিয়ে একটি অভিনব ঘটনার সূত্রপাত হলো। সবাই জানাযা নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমন সময় ইমাম সাহেব বলছেন, মৃত ব্যক্তির কত ওয়াক্ত নামাজ কাযা গিয়েছে? পরিবারের লোকজন সঠিক হিসাব দিতে পারছিলেন না। ইমাম সাহেব বললেন, যত ওয়াক্ত নামাজ কাযা গিয়েছে তা হিসাব করে কাফফরা না দিলে জানাযা নামাজ পড়ানো যাবে না। এভাবে সময়ক্ষেপণ করায় উপস্থিত মুসল্লিরা বিব্রত হচ্ছিলেন। আসলে ঐ বিষয়টি ইমামের পরিষ্কার জানা নেই যে জানাযা আটকিয়ে রেখে নামাজের কাফফারা আদায় করার কোন বিধান কুরআন হাদীসে নেই। কারণ যতক্ষণ মানুষের সেন্স থাকে ততক্ষণ ইশারায় হলেও নামাজ পড়তে হবে। আর কাযা হলে কাযা আদায় করবেন। আর যার কাযা আদায় করা সম্ভব হয়নি তিনি তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এর জন্য তাকে কোনো কাফফারা দেয়ার প্রয়োজন নেই।

পরিশেষে আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে মৃত ব্যক্তিদের দাফন কার্য সম্পন্ন করে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করার তাওফিক দান করুন, আমীন।

প্রফেসর ড ফারুক আব্দুল্লাহ

ইত্তেফাক অবলম্বনে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:৫৪
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×