নিচের সংবাদটি আজ হঠাৎ চোখে পড়লো। এ বিষয়ে লিখতে যাবো এমন সময়ে দেখি এই সংবাদটির উপর ইতোমধ্যে একটি পোস্ট সংকলিত হয়েছে, তবে তা কেবল সংবাদ পরিবেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমি এই সংবাদ প্রতিবেদনের উপর একটি বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট উপস্থাপন করছি।
সুনামগঞ্জ, ১১ জুন (শীর্ষ নিউজ ডটকম): সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পল্লীতে বিয়ের দাবিতে ১১ বছরের এক কিশোরী তার প্রেমিকের (১৭) বাড়িতে গিয়ে অনশন শুরু করেছে। রোবিয়া নামের ওই কিশোরী দুর্লভপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। আর তার প্রেমিক সারোয়ার একই গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে। গ্রামবাসী জানায়, একই গ্রামের বাসিন্দা রোবিয়া ও সারোয়ারের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছে। প্রেমের টানে রোবিয়া বুধবার সন্ধ্যায় প্রেমিক সারোয়ারের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। কিন্তু ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় বিয়ে মেনে নিচ্ছেন না ছেলে পক্ষ। কনের চাচা বকুল মিয়া জানান, মেয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেছে। তাই কেলেঙ্কারির ভয়ে আমরা বিয়ে দিতে রাজি হয়েছি। তবে সারোয়ারের চাচা আব্দুল রাহাদ জানান, ছেলেমেয়ে উভয়ই নাবালক, তাই আমরা মেয়েকে তার অভিভাবকদের হাতে তুলে দিতে চাই। এ ব্যাপারে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, বাল্য বিবাহের খবর আমাদের কাছে আসেনি, তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/ প্রতিনিধি/ এসআই/ জেডএম/ ১১.২০ঘ.)
সংবাদ লিঙ্ক: এখানে ক্লিক করুন
এই সংবাদ প্রতিবেদনটি পড়ার পর আমি আমার একটি উপলব্ধি ব্যক্ত করার ইচ্ছা পোষণ করছি যা দীর্ঘদিন থেকেই আমি নিজের মধ্যে অনুধাবন করে আসছি। আজকাল উপরিউক্ত কিছু ঘটনা পর্যালোচনা করলে হয়তো সবাই একমত হবেন যে 'প্রেম' বিষয়টিকে সবাই এখন একটা ফ্যাশন হিসেবে গণ্য করছে। বেশিরভাগের ধারনা এখন এমন যে এই কুৎসিতমনা ফ্যাশনটি অনুকরণ না করলে যুগের তালে আর সময়ের চাহিদা থেকে তারা বুঝি পুরোপুরি পিছিয়ে পড়বে। গ্রামের অশিক্ষিত আর অসংস্কৃত জনগোষ্ঠীর কথা না হয় বাদই দিলাম, শহুরে জীবনের শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত সমাজের মধ্যেও এই বিষবৃক্ষতুল্য ধারনাটি ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রসার আর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে অপরিপক্ক মানসিকতার ধারাবাহী এই উন্মাদনার ব্যাপক ব্যাপ্তিলাভের ফলাফলটি কি হতে পারে?
এর ফলাফল যথাসম্ভব একটিই, আমরা প্রণয়ভগলতার বাতিকগ্রস্থ একটি আবেগসর্বস্ব নবীন প্রজন্ম লাভের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। আমি এর জন্য দায়ী করবো আমাদের দেশী ও বিদেশী বিনোদন মাধ্যমগুলোকে ( নাটক, চলচ্চিত্র, উপন্যাস, টিভি বিজ্ঞাপন ), যারা সব সময়ই প্রণয়কেন্দ্রিক বিষয়বস্তুকে মূল উপজীব্য ধরে নিয়ে তাদের নিজ নিজ সৃষ্টিশৈলীর রংচঙে আর জবরজং উপস্থাপনায় সর্বদা সচেষ্ট থাকে। যার কারণে আমাদের নবীন প্রজন্ম এই বিনোদন মাধ্যমগুলোর সংস্পর্শে এসে নিজ সমাজ, সংসার ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যথাযথ ও পরিপূর্ণ ধারণা লাভের পূর্বেই তাদের নিজেদের অপরিণত ও কোমলমতি হৃদয়ের গহীনে প্রণয়ভগলতার তীব্র আকুতি অনুভব করে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে তারা প্রেমসুধার মরীচিকাসম অতল সমুদ্রে গা ভাসাতে গিয়ে খুব তাড়াতাড়িই বিপথগামীদের দলে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। এরই পরিণতি হিসেবে সময়ে সময়ে আমাদের সামনে কি কি প্রতিভাসগুলো উন্মোচিত হয়?
উপরের সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিয়ের দাবীতে আমরণ অনশন থেকে শুরু করে প্রেমে ব্যর্থতা কিংবা প্রেমিকা/প্রেমিকপ্রবরকে না পেয়ে আত্মহত্যা প্রচেষ্টা, মানসিক বৈকল্য, পারিবারিক কলহ, সামাজিক শত্রুতা এবং সর্বোপরি জীবন বিমুখতা ইত্যাদি ঘটনাবলী হয়তো ইতোমধ্যে আমাদের অনেকেরই চাক্ষুসভাবে দৃষ্টিগোচরীভূত হয়েছে। অতএব, এর থেকে একটি কথা বোধ করি পরিষ্কারভাবেই অনুধাবন করা যায় যে অপরিণত প্রেম মানুষের শুধুমাত্র মানসিক ক্ষতিসাধন করে তা নয়, বরং বৈষয়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ করে।
‘প্রেম’ বিষয়ে আমার নিজস্ব একটি অভিমত আছে যা আমি ব্যক্ত করার ইচ্ছা পোষণ করছি। প্রেমের সম্পর্ক হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক যার কোন সামাজিক ভিত্তি নেই। এই সম্পর্কটি দুজনের একান্ত মানসিক ইচ্ছা বা মর্জি নির্ভরভাবেই গড়ে উঠে। এর মানে এই দাঁড়ালো যে প্রেমের সম্পর্কের বেলায় আমরা অপর পাশ থেকে কেবল নৈতিকভাবেই প্রত্যাশা পূরণের আশা করতে পারি, যে প্রত্যাশা পূরণের অধিকারটি আইনসিদ্ধ কিংবা সমাজসিদ্ধ নয়। প্রেমের সম্পর্ক মানুষকে কেবল সাময়িকভাবে মানসিক প্রশান্তি প্রদানের ক্ষণস্থায়ী নিশ্চয়তা দিতে পারে, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। এক্ষেত্রে একজনের প্রতি আরেকজনের যে অধিকারবোধ তা পূরণ করা অপরজনের জন্য একান্তই ঐচ্ছিক একটি বিষয়, যেটার কোন সামাজিক বা আইনগত ভিত্তি নেই। এমন একটি ঠুনকো ও ভিত্তিহীন সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে নিজে উৎসাহিতবোধ করা উচিত নয় কিংবা অপরকেও উৎসাহিত করা উচিত নয়।
পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই যে আমাদের সকলের উচিত ‘প্রেম’ বিষয়ে সত্যিকারের বাস্তবতার উপর আমাদের নবীন প্রজন্মকে যথাযথভাবে অবহিত ও ওয়াকিবহাল করা এই কারণে যে তারা যেন আবেগতাড়িত হয়ে কোনক্রমেই ভুল পথে পা না বাড়ায়। আর আমাদের বিনোদন মাধ্যমের হর্তাকর্তাদের উচিত হবে তারা যেন মানুষের অপরিণত আবেগকে পুঁজি করে মুনাফা লাভের লিপ্সায় মেতে না উঠে সুস্থ ও আগ্রহপূর্ণ বিষয়াবলীর উপর সৃষ্টিকর্ম রচনা করার মাধ্যমে সৃজনশীলতার প্রশংসনীয় ছাপ রেখে চলেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



