somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিফিন (অণুগল্প)

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১/
অর্কের বুক ধ্বক্ ধ্বক্ করছে ভয়ে। কারণ স্যার আজকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা গুণতে বলেছেন। এ দায়িত্ব সাধারণত ক্লাস ক্যাপ্টেনের। অর্কের রোল ২, এবছর এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ফার্স্ট ব্য উপস্থিত থাকায় অর্ককে আর কোনদিন ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করতে হয়নি। তবে তার ভয় পাবার কারণটা ভিন্ন, ক্লাসের প্রথমদিকের কয়েকটি ছেলে তাকে বলে দিয়েছে যতজন উপস্থিত হয়েছে তার চেয়ে পাঁচ বাড়িয়ে স্যারের কাছে বলতে, কারণ এ সংখ্যাটি টিফিনের জন্য লিখে পাঠানো হবে। টিফিন এক্সট্রা থাকলে প্রথম দিকের স্টুডেন্টরা এক্সট্রা পায়, তাই এ কাজ। অর্কের ভয়ের কারণ যদি স্যার আবার গুণে দেখেন?
"এতক্ষণ লাগে গণতে?"
"স্যার ৫৫ জন"
"হুম, বোস"
এখন আবার অর্কের ভয় লাগছে। কারণ সে সংখ্যা বাড়িয়ে বলেনি। এখন যদি টিফিন চোর ছেলেগুলো তাকে কিছু বলে?
২/
স্কুলের যে ঘন্টার শব্দ অর্কের সবচেয়ে ভাল লাগে তা হচ্ছে টিফিনের ঘন্টা। কারণ যে টিফিনই দিক না কেন ও সেটা ব্যাগে রাখা টিফিন বক্সে করে বাসায় নিয়ে যায়। ছোটবোন মাশিয়াতকে নিয়ে দুজন ভাগ করে খায়। আজ অবশ্য একটু ভয় ভয় লাগছে। কারণ ক্লাসের কয়েকটি ছেলে প্ল্যান করেছে প্রথমেই কিছু টিফিন লুকিয়ে ফেলবে। পরে অর্ককে গিয়ে টিফিন রুমে বলতে হবে ওদের ক্লাসে আজ টিফিন কম পরেছে। ওর মিথ্যা বলতে যে খুব খারাপ লাগে এমনটা না, কিন্তু ও মিথ্যা বললে কেন যেন সবাই ধরে ফেলে।
৩/
অর্ক এখন টিফিন বিতরণ করছে। তার সাথে আরেকটি ছেলেও বিতরণ করছে। ঐ ছেলেটি কি সুন্দর দক্ষতায় ওর ব্যাগে পাঁচটি টিফিন লুকিয়ে ফেলল, ওর চুরির গুণ দেখে অর্ক মুগ্ধ! সকালে ক্লাসে আসা শিক্ষার্থীদের চারজন দেয়াল টপকিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় পাঁচটি টিফিন চুরি যাবার পরও টিফিন শর্ট পরেছে এক পিস। অর্ক এখনো পায়নি, যারা বিতরণ করে তাদের সবার শেষে নিতে হয়।
এখন অর্ককে টিফিনরুমে গিয়ে বলতে হবে যে এক পিস টিফিন কম পরেছে। তার মিথ্যা বলতে একেবারেই ইচ্ছে হচ্ছে না!
৪/
অর্ক প্রায় বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। তার মনটা ভীষণ খারাপ। সে টিফিন আনে নি। সে ভেবে রেখেছে মাশিয়াতকে গিয়ে মিথ্যা বলবে, যে সে স্কুলে টিফিন খেয়ে ফেলেছে। কারণ সে যদি সত্যি বলে মাশিয়াত তার বোকামি শুনে তাকে বকা দিবে। মাশিয়াত ভীষণ চালাক। একবার পরীক্ষার আগে অর্কের সিলেবাসের কিছু অংশ পড়া হয়নি। মাশিয়াত এসে বলে, "ভাইয়া মন খারাপ কেন?"
"পড়া শেষ হয়নি"
"তাহলে এক কাজ কর, যেগুলো পড়া হয়নি সেগুলো হাতে লিখে নিয়ে যাও, পরীক্ষায় দেখে দেখে লিখে ফেলবে"
যে মেয়ে স্কুকে ভর্তি হবার আগেই এমন চিন্তা করে তাকে বুদ্ধিমতী বলাই যায়।
আব্বু মটর সাইকেল থেকে নামিয়ে দিয়ে আবার চলে গেলেন। অর্ক দরজায় নক করল। সে দৌড়ানোর শব্দ পাচ্ছে। নিশ্চয়ই মাশিয়াত আসছে। এত আগ্রহ নিয়ে দৌড়ে এসে সে যখন দেখবে অর্ক টিফিন নিয়ে আসেনি তার মুখটা কেমন হবে ভাবতেই অর্কের খারাপ লাগছে। হুড়াহুড়ি করে দরজা খুলে মাশিয়াত বলল, "ভাইয়া জান আজ কি হয়েছে, আজ না নাবিল মামা আসছিল। আম্মুকে না দেখিয়ে আমাকে ১০০ টাকা দিয়েছে। আমি কি করেছি জান? যখন আম্মু রান্না করছিল তখন আম্মুকে না বলে আস্তে করে দরজা খুলে মোড়ের ফার্স্টফুড দোকান থেকে গিয়ে একটা বার্গার কিনে এনেছি। এখনো আস দুজন লুকিয়ে লুকিয়ে খাব"
বোনের খুশি দেখে অর্কের প্রচন্ড আনন্দ হচ্ছে!আনন্দ এতোই বেশি যে তার চোখ দিয়ে এখনই পানি চলে আসবে। কিন্তু আসতে দেয়া যাবেনা। কারণ ক্লাস থ্রিতে পড়া ছেলের ছোটবোনের সামনে কান্না করার চেয়ে লজ্জার কিছু নেই। সে কান্না চাপানোর জন্য বলল, "তুমি যে একা একা আম্মুকে না বলে বের হয়েছ এখন যদি ছেলে ধরা নিয়ে যেত?"
"আমি তোমার মত বোকা নাকি যে আমাকে ছেলেধরা ধরবে?"
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×