somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির নামে প্রতারণা ।। পর্ব-দুই

০৯ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নামে প্রতারণা ।। পর্ব-এক



মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানী নামের প্রতারক চক্র যে জাল ছড়াচ্ছে যদিও তা আপাত চোখে কোন ফাঁকি ধরা পড়েনা। এর কারণ একমাত্র হিসাব জ্ঞানের দূর্বলতা ও অর্থলোভ। এদেশের সাধারণ মানুষের হিসাব জ্ঞানে দূর্বলতা, অর্থলোভ ও অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে তথাকথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে।



আপনি কি এদের ফাঁদে পা দিয়েছেন?
আপনি কি এদের ফাঁদে পা দিয়েছেন? অথবা সদস্য হওয়ার কথা ভাবছেন? তবে অবশ্যই আপনার ভাবাবেগ ও মনের দূর্বলতা কাটিয়ে উঠে খতিয়ে দেখতে হবে বিষয়টি আসলে কি? আপনি কিন্তু একেবারে অনভিজ্ঞ নন। কেননা এর আগেও ’বিনা পুঁজি’, ’যুব উন্নয়ন লটারী’ ইত্যাকার কয়েকটি জালিয়াতির খেলা আপনি দেখেছেন। আর এখন দেখছেন সেই জালিয়াতিরই নতুন ভার্সন। কিভাবে? আসুন কতগুলো বিভ্রান্তির উত্তর খুঁজে বেড় করি।

ইজি মানির ফাঁদ:

ঐ সকল প্রতিষ্ঠান আপনাকে এমন একটা লোভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছে যা আপনাকে একজন ধন্যাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত করবে। তারা একটা পণ্য বিক্রির মাধ্যমে আপনাকে সদস্য করে এম.এল.এম পদ্ধতির মাধ্যমে এক বিশেষ কৌশলে কমিশন দিচ্ছে এবং বলছে প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বেকার যুব সাধারণ সহ সবাইকে একটা কমিশন দিয়ে কর্ম সংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতির পরিণতি সম্পর্কে আপনাকে জানাচ্ছে না। আপনি কি সেটা যাচাই করেছেন? নাকি সহজ রাস্তায় ধনী হওয়ার স্বপ্নে আপনিও বিভোর। মুক্ত মন যুক্তি দিয়ে আপনি দেখুন সত্যিই কি এটা আপনাকে লাভবান করবে?

প্রত্যেকেই কি পণ্যটি কিনতে আগ্রহী:
আপনি কি ভেবে দেখেছেন মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনাকে যে পণ্যটি তারা অফার করে, তা কিনতে আপনি পুরো মাত্রায় আগ্রহী বা ঐ পন্যটি কি আপনার প্রয়োজনীয়? না। কিন্তু আপনি ইজি মানি বা সহজ পথে ধনী হবার লোভে ঐ পণ্যটি কিনেছেন। এই সব প্রতারক প্রতিষ্ঠান তারা একটি অতি সাধারণ পণ্য বাজার দও থেকে অত্যাধিক লাভে এক ব্যক্তির নিকট সদস্য হবার জন্য কিনতে বাধ্য করায়। এ ক্ষেত্রে তারা এমন পণ্যও আমদানী করে যা চলতি বাজারে নেই।
এ ক্ষেত্রে মূল্যের ব্যপারে আপনার যাচাই করার কোন সুযোগ নেই। পণ্যটি পছন্দ করার ক্ষেত্রেও আপনার কোন পথ নেই, শুধুমাত্র ঐ প্রতিষ্ঠান ছাড়া। হয়তো আপনি ঐ পন্যটিই অন্য কোন কোয়ালিটির অথবা ঐটির চেয়ে সস্তা বা বেশী মুল্যের ভাল পণ্য কিনতে আগ্রহী; কিন্তু তা কি পাচ্ছেন? তাছাড়া সেই পণ্য কি বাজার মূল্যে পাচ্ছেন? যাচাই করুন। এ ছাড়াও আপনি কি কোন একটি পণ্য কিনলেই ঐ প্রতিষ্ঠানের সদস্য হচ্ছেন? নাকি আপনাকে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সদস্য হতে হচ্ছে? আপনি দেখুন তাদের কথার সাথে এই ব্যপারটি কি সংঙ্গতিপূর্ণ? বিষয়টি কি আপনাকে চিন্তিত করছে না? অরুন তারা আপনাকে প্রথমে ২২০০/=টাকা বিনিয়োগ করতে বলে, কিন্তু আপনাকে মাত্র ৮০০/= টাকার পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করায়। তাহলে বাকী ১৪০০/=টাকা কি হলো? ওটা তাদের সদস্য ফী।

বাজার: চাহিদা ও যোগান
বৈধ বাজার গড়ে ওঠে বাজারে ভোক্তার চাহিদার উপর নির্ভর করে। আর বাজারে পণ্যের চাহিদার উপর নির্ভর করেই যোগান বৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা থাকলেই কেবল ঐ পণ্যটির যোগান তৈরী হয়। কারণ, কেবল আপনার চাহিদা থাকলেই আপনি ঐ পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হবেন। অর্থনীতির ভাষায় চাহিদার অনুমিত শর্ত হলো,
১. পণ্যটির প্রয়োজনীয়তা বোধ করতে হবে;
২. পণ্যটি কেনার ইচ্ছা থাকতে হবে; ও
৩. পণ্যটি কেনার মতো আর্থিক সামর্থ থাকতে হবে।
কিন্তু মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি আগে যোগান নিশ্চিত করে তারপর চাহিদা অনুযায়ী ভোক্তার নিকট নয়, বরং চাহিদা থাক আর না থাক সদস্যদের কিনতে বাধ্য করায়। এটা কি ভাবে বৈধ ব্যবসা হতে পারে, একবার ভাবুন।

এই পদ্ধতি অবশ্যই একটি জালিয়াতি। কিছু মানুষের অল্প সময়ে প্রচুর টাকা তৈরীর ফাঁদ। আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনাকে যে অর্থের লোভ দেখাচ্ছে সে অর্থের উৎস কোথায়? আপনার লক্ষ্য অজ্ঞাত। আপনি জানেন না এই উৎসের শেষ কোথায়? কারণ এই পদ্ধতি কাজ করে জ্যামিতিক হারে। তাই দেখা যায় যে, এই সব জালিয়াত বেশির অধিক মানুষের টাকা তুলে মাত্র কয়েকজনের হাতে টাকা তুলে দেয় এবং অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করে। কিভাবে, তা আমরা একটু হিসাব করে দেখি।

হিসাব ও সাধারণ জ্ঞান:
ধরা যাক তৃতীয় ধাপ থেকে প্রথম সদস্য কমিশন পেতে থাকলো এবং সপ্তম ধাপে তার ক্রয়কৃত পণ্যটির মূল্য সম্পুর্ণ ফেরত পেল। তাহলে আমরা দেখতে পাবো যে, প্রথম সদস্য যখন টাকা পেয়ে লাভবান হতে শুরু করলো, তখন অর্থাৎ সপ্তম ধাপে সর্বমোট ২৫৫ জন এই জালে ধরা পড়লো। এই হিসেবে আড়াই হতে তিন লক্ষ জনসংখ্যার কোন শহরে যখন ২৬২১৪৪ জন লোক সদস্য হবে তখন লাভবান হতে শুরু করবে মাত্র ৪০৯৬ জন সদস্য। লক্ষ্য করুন তারা কেবল লাভবান হতে শুরু করবে; অর্থাৎ তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাবে। সুতরাং এই জালিয়াতির সহজ রূপটি দেখা যাচ্ছে যে মাত্র গুটি কতক মানুষ এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে আর বাকী ব্যপক জনসাধারণ প্রতারিত হচ্ছে।

এই মূহুর্তে আপনি এইসব প্রতারকের ফাঁদে পা দেবার আগে জিজ্ঞাসা করুন, এ পদ্ধতিতে ঐ আড়াই লক্ষ মানুষ সকলে কিভাবে লাভবান হবে! আর তার জন্য কতো কোটি মানুষকে প্রতারিত করতে হবে? সেই জালিয়াতরা কি এর নিশ্চয়তা দেবে? এর বিপর্যয় অবশম্ভাবী নয় কি? সুতরাং এ থেকেই প্রমাণ করা যাচ্ছে যে, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিগুলো আপনাকে যে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে তার কোন সফল ভবিষ্যত নেই, এবং তারপরও যদি আপনি ঐ কিছু সংখ্যক ব্যক্তির মতো লাভবান হয়ে থাকেন, তবে তা ব্যপক মানুষের সাথে প্রতারণা করেই।

মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের সেরা কৌশল:
মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের সেরা কৌশল হচ্ছে অন্ধ বিশ্বাস জন্মানো, হিসাব জ্ঞানের অভাব ও লোভের কাছে আত্মসমর্পন। সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র মানুষের এই তিন সেরা দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছে এইসব কৌশল। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি সত্যিই সোনার হরিণ, কিন্তু তবুও আমরা নিজেদের ভুলেই পদে পদে প্রতারণার শিকার হচ্ছি। একটি প্রবাদ আছে 'দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা', আমরা বারবারই এই সব দুষ্টলোকের ফাঁদে পা দিচ্ছি, তাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করে, হিসাব না করেই লোভনীয় কথা-বার্তায় মুগ্ধ হয়ে আমাদের সীমিত অর্থ-সম্পদ খুইয়ে বসছি।

এটা কি একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ নয়?
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। তারা সাধারণ মানুষকে লোভের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে। ইউরোপ-আমেরিকাতেও এইসব ব্যবসার নামে জালিয়াতি করে বড় বড় গ্যংষ্টার'রা বা মাফিয়া গ্রুপ। তারা প্রশাসনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ভেট দেয় আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষের নিকট হতে প্রতারণার আশ্রয়ে অর্থ শোষণ করে। তাদের প্রতারণাপূর্ণ কথায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে অনেক অর্থ উপার্জন করতে চায়, কিন্তু তারা কি জানে এই টাকা কোথা হতে আসে? শুধুমাত্র পণ্য বিক্রি করে কি? যে পণ্য সত্যিকার বাজারে বিক্রি হয় খুব কম?

পরিশেষে বলা যায় যে, এই সব প্রতারক চক্র আপনার আশেপাশেই রয়েছে। আপনার যুক্তিবোধ, মুক্তমন এবং সচেতনতাই পারে এদের পেতে রাখা ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে। শুধু নিজেকে নয় দেশের সকল সাধারণের জন্যও আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে এইসব প্রতারকদের। সরকারকেও তার অসাধু কর্মকর্তাদের কঠোর ভাবে দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে, কারণ এইসব কর্মকর্তারাই এ সকল অপরাধ চক্রকে সাহায্য করছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৫:১৮
৩৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×