(পর্ব-১ এর লিন্ক দেয়া যাচ্ছে না বলে এখানে ইউ.আর.এল উল্লেখ করে দিলাম:http://www.somewhereinblog.net/blog/SHATUAHAQ/29407357 )
১
ধুমনদী। এক ইতিহাস। বিস্তৃতির ওপার থেকে আজও খুঁজে আনা যায় তার কথা। বাংলার মানুষের জয়গান গায় এই নদী, এবং এরই স্মৃতি হাতরে আসে ধুমের কুঠি দূর্গের মাতৃজঠরে কয়েকটি নাম; ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানী, দয়ালশীল, ফকির মজনু শাহ এবং নূরুলদীন আর তাঁর কণ্ঠস্বর...
আরও শতবছর পার হয়ে এলো, ধুমের কুঠি এখন এক গাঁয়ের নাম আর ধুমনদী এক বিড়াট জলমহাল। এ যেন নরকের খুব কাছাকাছি। এখানে বিষাক্ত বাতাস আসে; আসে মৃত্যু; কার্তিকের মঙ্গা আর কর্মহীন মানুষের ঢল। ভূসত্ত্ব সংকুচিত হয়েছে আমাদের, আজ প্রান্তিক অথবা ভূমিহীন। নদীপাড়; বাঁশঝাড়ের মাথাগুলো নুয়ে আছে বরষির ছিপের মতো। আমরা ছোটলোকের জাত, আমাদের পিতা-পিতামহ-প্রপিতামহ বহু যুগধরে তারাও বাস করে, বসে বসে স্বপ্ন দেখে প্রতিদিন ভাতে মাছের সুবাস। আমরাও দেখি। তবু হায়! আজ অবাঞ্চিত; নিষিদ্ধ এই জলে। যুগযুগ ধরে যাদের আমিষের সংস্থান করতো যে ধুমনদী, সেখানে তারা অধিকারহীন। কিন্তু কেন...?
সেদিন ছিল মাঝ দুপুর। রোদের তাপ ছিল প্রখর। দলের বেশ বড় জটলাটি একটু ছেঁড়াছেঁড়া। আশপাশের গাছের ছায়ায় ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে সকলে। আজিজার একদিক থেকে এগিয়ে এলেন। না পৌঢ় নয়, বায়ান্ন বছরের এক যুবক। তিনিই যে আমাদের নেতা বেশ অনুমান করা যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দলটির মাঝামাঝি এসে দাঁড়ালেন। রোদের আলো আড়াল করতে একটা হাত কপাল বরাবর তুললেন।
তাঁর দাড়িয়ে থাকা দেখে এগিয়ে এলেন দূরে দাড়ানো কিছু লোক। আমরা। কিছু শুনতে চাই সবাই।
নেতা সবার উদ্দেশ্যে বললেন, 'ভাইসব। প্রধান নির্বাহীর নিকট আমাদের আবেদন পৌছেছে। আমরা তাঁর সাক্ষাৎ প্রার্থী তাও তিনি জেনেছেন, এখন তিনি আমাদের ডাকলেই তাঁর সাথে দেখা করবো। আপনারা সকাল থেকে অনেকদূর পথ হেঁটে এই অফিসে এসেছেন, সকলেই ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। কিন্তু সকলের কাছে আমার আহ্বান আপনারা আর একটু ধর্য্য ধরুন, আমরা আমাদের দাবী পেশ করেই ফিরে যাবো। '
নেতার আহ্বান শেষ হতে না হতেই সকলের মধ্যে গুঞ্জন শোনা গেল, জানা গেল প্রধান নির্বাহী অফিস থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছেন। এবং দেখা গেল, প্রধান নির্বাহী দৃপ্ত পদক্ষেপে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ব্যক্তিত্বে তাঁর উচ্চতার প্রত্যয় জমেছে. গ্রীবায় অহংকার। এমনি অবস্থায় নেতা ছুটে গেলেন তাঁর কাছে।
'স্যার। আমাদের একটা আবেদন ছিল। এছাড়া কিছু কথাও বলতাম আমরা।'
ভ্রু কুঁচকে নির্বাহী দেখলেন তাঁর প্রতি, 'কি আবেদন?'
'স্যার, আমরা ধুমের কুঠি মৎসজীবী...'
'ও আচ্ছা। আপনারা সপ্তাহ দুয়েক পরে আসুন। আমি খুব ব্যস্ত। সামনের সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি আসবেন; এখন আমার কোনদিকে তাকানোর সুযোগ নেই।'
'কবে আসবো স্যার?'
'আহ!' বিরক্ত বোধ করলেন নির্বাহী। মনে মনে ভাবলেন, ছোটলোকের জাত গুলো কিছুই বোঝে না, শুধু শুধু কাজের ভেতর ঝামেলা পাকায়। মুখে বললেন, ' সপ্তাহ দুই পরে আসবেন।'
শেষের কথা গুলো তিনি গাড়িতে উঠেবসে বললেন। মাথা কাত করে ড্রাইভারকে ইঙ্গিত করলেন গাড়ি ছেড়ে দিতে। নেতা আরও কিছু বলবার জন্য মুখ খুলেছিলেন, শুধু বলতে পারলেন, 'স্যার...' কিন্তু তার আর কিছুই বলা হলো না। ততক্ষনে গাড়ি তাঁকে ছেড়ে এগিয়ে গেছে অনেক দূর।
২
সাংবিধানিক সংকটের দিনে শিবির গুলোর ভেতরে ভেতরে পঠিত হয় 'পেন্টাগনের বাইবেল'। কাঁধের ক্রসগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে বড় হয়। যেন বিপ্লব; আর তারা বিপ্লবী সৈনিক। ক্রুশবিদ্ধ হয় কুবেরের দল, সাথে ধন-মান-ইজ্জত। আমরাতো যোগ-বিয়োগ করি শুধু; আর দেবতাদের ত্রিকোণমিতির প্যাঁচে হেলে পড়া সূর্যের মোহিত পথ অঙ্কিত হয়। বিমূর্ত প্রত্যয়ে আলোর ঘ্রাণ। ধ্রুব হয়ে যায় তাঁদের ইচ্ছাপুরনের কল্পনা। আর মর্ত্যলোকে আরোপিত সত্য অনুগামী করে আমাদের। অপরাপর দিনের মতো অচেতন মনের আয়নায় সত্য বলে প্রতিভাত হয়ে পরে মেকি শিরোনাম।
মাইনাস টু। প্লাস এনি ওয়ান। প্যাট্রিওটিক গভর্ণমেন্ট এগেনস্ট দ্য পলিটিক্যাল গভর্ণমেন্ট। মুভ অন।
হাটুরেদের আতঙ্ক ছিল সেদিন, তবু বিশ্বাস ছিল মানবতায়। কিন্তু শেষবার তারা এলো হাতিয়ার নিয়ে; আমাদের সৈনিকেরা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ভূস্বত্ত্ব ত্যাগ করে আমরা যারা ভাসমান, হাটের পসরা নিয়ে ক্ষুদ্র দোকানি, কামার, সুতোর এবং হাটের নরসুন্দর; জীবীকা আহরণের শেষটুকু সহ উচ্ছেদ হলো হঠাৎ। এভাবেই তো আমাদের প্রজাপতিরা দেশ রক্ষা করেন। তাদের ন্যায় পরায়নতা এবং আইনগত ঘটনাসংক্রান্ত প্রশ্ন করা অবান্তর। আমরাতো জানিই নির্বাহী আইন হলো ধর্মেরই প্রতিভূ। আমার দোষী মন কী নিবারণমূলক শাস্তির দায় এড়িয়েছে? অতএব সাবধান হও। ধর্ম যখন তোমার পক্ষে থাকে ততোক্ষন তুমি সত্যিই নিরাপদ।
বিস্মৃতির ওপার হতে যে শেঁকড় অনায়াসে উঠেছিল, আমরাতো তার কোন খবর নেই না; আজো কালে কালে তাই যেন উচ্ছেদ হয়ে যাই সব। আর দেখ, বন্ধুর মতো শত্রুতা কতো নিপুণ! শকুনেরা এসেছিল প্রেমিকের মতো; প্রেমিকেরা জাদুকর বটে, তাই ঐন্দ্রিলা প্রিয় নারীরা মরিয়া হয়ে মৃত্তিকার মতোন সোনা আর প্রসাধনে লুকোনো সম্পদ বিকিয়েছে দেখ, বিশ্বায়নের বাণীসংহিতায়। তাইতো প্রতিদিনই হাসি মুখ দেখি আমি, কিন্তু কী আশ্চর্য!! সারামুখে আজ কোথাও বাংলা নেই।
এবং এভাবেই রাবণের পাল পাল তুলে আসে; আর পালের গোদারা মহাজন হয়। তারা আসে প্রাচীন অতীত থেকে, তার সাথে তাদেরও স্মৃতি হাতরে এসেছে আমাদের পূর্বপুরুষ। তাই যেন রক্তের গোলামের মতোন নিজেদের তারা দন্ডিত মনে করে।
তারা বলে, 'মাননীয়, আপনারা পশ্চিমা স্বর্গভূমি থেকে আগমন করে আমাদের শাসনভার যে তুলে নিয়েছেন এজন্য আমরা ধন্য। আপনারা আদেশ করলেই আমরাতো আছিই, কুকুর সদৃশ আদেশ পালন করবো'।
মাননীয়গণ তখন এই বিনয়কে ফিরিয়ে দেয় আর বলে, 'না না তোমরা কুকুর কেন হবে!? তোমরাতো তার চেয়েও মহান'।
[চলবে........]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





