ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠানের খবর প্রচার করছে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো। শুধু বাংলাদেশ নয় সিএনএন বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুলোতেও প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠানের খবর আলাদা স্থান করে নিয়েছে।আম্বানি পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠান ভারতের আর দশটা বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ভিন্ন ,হয়তো সেই কারণেই বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে সাধারণ মানুষের মাঝে এতো আগ্রহ । মুকেশ আম্বানি বর্তমানে বিশ্বের নবম ধনী ব্যক্তি তিনি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান। ফোর্বস এর তথ্য অনুসারে, তিনি ১১৭ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক। ধারণা করা হয় ছোট ছেলের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানে মুকেশ আম্বানি ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করেছেন ।সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সবচে ব্যয়বহুল বিয়ের অনুষ্ঠান গুলোর তালিকায় এটি প্রথম স্থান দখল করেছে লিস্ট এর দ্বিতীয় স্থান টিও আম্বানি পরিবারের দখলে কিছু দিন আগে মের বিয়েতে তারা ৯০০ কোটি টাকা খরচ করেন ।
অনন্ত আম্বানির ২৮ সাথে বিয়ে ঠিক হয় তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী রাধিকা মার্চেন্ট ২৯ এর সাথে। রাধিকা এনকোর হেলথকেয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও বীরেন মার্চেন্টের মেয়ে।পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের জামনগর শহরে প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় । অনুষ্ঠান স্থলের খুব কাছেই রিলায়েন্সের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগার টি অবস্থিত।তিন দিনের জমকালো অনুষ্ঠান এর শুরুতে অনন্ত ও রাধিকা স্থানীয় গ্রামবাসীদের জন্য একটি সাম্প্রদায়িক নৈশভোজের আয়োজন করে যেখানে ৫১০০০ মানুষকে খাওয়ানো হয়। মূল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১২০০ ভি আই পি অতিথিকে জামনগরে আমন্ত্রণ জানায় আম্বানি পরিবার ।অনুষ্ঠানে বিল গেটস, মেটার মার্ক জুকারবার্গ, ইভানকা ট্রাম্প ,ডিজনী সিইও বব ইগার ,ভারতীয় বিলিয়নেয়ার গৌতম আদানি এবং কুমার মঙ্গলম বিড়লা, পাশাপাশি অনেক ক্রিকেটার এবং বলিউডের চলচ্চিত্র তারকারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন ।অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে মার্কিন জাদুকর ডেভিড ব্লেইন ও পপ সুপারস্টার রিহানা কে আমন্ত্রণ জানানো হয়।সুপারস্টার রিহানাকে অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য ৬.৩ মিলিয়ন ডলার বা ৬৯ কোটি টাকার চেক প্রদান করা হয়। যেখানে জামনগর বিমানবন্দরে দিনে ১০ টি বিমান অবতরণ করে সেখানে সেদিন অনুষ্ঠান উপলক্ষে ১৩০ টি বিমান অবতরণ করে । রাতে বেশিরভাগ অতিথি অনুষ্ঠানস্থলের কাছে বিলাসবহুল "গ্ল্যাম্পিং" তাঁবুতে অবস্থান করেন।আমন্ত্রিত অতিথিদের খাবার তৈরির জন্য ভারতের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ তারকা হোটেল এর ক্যাটারিং গ্রূপগুলো কাজ দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে ১০০ জন শেফ ৫০০ পদের খাবার তৈরি করে।এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিদের হেয়ার স্টাইলিং, মেকআপ আর্টিস্ট এবং ভারতীয় পোশাকের ড্র্যাপিস্ট এর ব্যাবস্থা রাখা হয় ।প্রাক বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে একটি নতুন হিন্দু মন্দির কমপ্লেক্স বিশেষভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যা অনুষ্ঠানের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এছাডাও আম্বানি পরিবারের বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত বাসস্থানের রেকর্ডটি তারা তাদের দখলে নিয়েছে ।মুম্বাই এ অবস্থিত তাদের ২৭ তালা বাসস্থানের এর আনুমানিক মূল্য ১৯০০ কোটি টাকা ।এছাড়াও আম্বানি পরিবারের সদস্য দের দামী গাড়ি ,দামী ঘড়ি ,দামী কাপড়ের, শখ তো আছেই ।আম্বানি পরিবারের মেয়ে বিয়ের সময় ৯০ লাখ টাকা দামের লেহেঙ্গা পরে যা ভারতে বিয়েতে পরা সবচে দামী লেহেঙ্গা হিসাবে রেকর্ড গড়ে ।এবার বিয়ের অনুষ্ঠানে একটি ছবিতে দেখা যায় মেটার মার্ক জুকারবার্গ ও তার স্ত্রী অনন্ত আম্বানির হতে পরা ঘড়ির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছেন । অনন্ত আম্বানির হতে পরা ঘড়ি গুলোর মাঝে আছে রিচার্ড মিলে যার আনুমানিক মূল্য ১৫ কোটি টাকা এছাডাও তার কাছে পাটেক ফিলিপ গ্র্যান্ড কমপ্লিকেশন স্কাই মুন ট্যুরবিলন যার মূল্য ৬৩ কোটি টাকা এবং একটি গ্র্যান্ড মাস্টার চিমস যার মূল্য ৬৬ কোটি টাকা।
মানুষ যখন নতুন ধনী হয় কিংবা হঠাৎ প্রচুর টাকার মালিক হয় তখন তাদের মাঝে এরকম অদ্ভুত শখের উদ্ভব হয় ।যদিও এখন ভারতের ধনী পরিবার গুলোর দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম ব্যাবসা পরিচালনার সাথে যুক্ত হচ্ছে তারপরও টাকার গরম দেখানোর সংস্কৃতি থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারছে না ।ভারতের ধনী পরিবার গুলোর মাঝে বর্তমানে বিভাজন স্পষ্ট এক দিকে আম্বানিদের মতো ধনী যারা নিজেকে জাহির করার জন্য কিংবা মানুষের বাহবা নেওয়ার জন্য একের পর এক অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ ব্যয় করে মানুষকে তাক লাগিয়ে মজা নিচ্ছেন।অন্য দিকে আছেন রতন টাটার মতো ব্যাবসায়ী যারা নিজের সব উজাড় করে দিচ্ছেন সমাজের জন্য । যেমন টাটা গ্রুপের মূল কোম্পানি টাটা সন্স তার অধীনে থাকা হোল্ডিং কোম্পানি গুলো থেকে যা আয় করে তার ৬৬ শতাংশ দিয়ে দেয় টাটা ট্রাস্টকে ।টাটা ট্রাস্ট সেই অর্থ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা কাজের তহবিল হিসাবে প্রদান করে ।
মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদ হল ৮৩.৪ বিলিয়ন ডলার, এবং মুকেশ আম্বানির প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এই বছরের মোট আয় ১১ বিলিয়ন ডলার । অন্য দিকে রতন টাটার মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার কিন্তু টাটা গ্রুপের এই বছরের মোট আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার সুতরাং, পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে টাটা গ্রুপ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে অনেক এগিয়ে, তবুও আপনি ভাবছেন কেন রতন টাটার মোট সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার তাই না ? কারণ রতন টাটা তার কোম্পানির আয়ের ৬৬% দান করেন। তিনি যদি এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া বন্ধ করে দেন, তাহলে তিনি মুকেশ আম্বানিকে পেছনে ফেলে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যেতেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২