আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভুত-প্রেতে একদমই বিশ্বাস করেন না। তারা বলেনযে ভুত-প্রেত বলে আসলেই কিছু নেই। আমিও ঠিক জানিনা যে তাদের কথা কতটুকু সত্য কিংবা কতটুকু মিথ্যা। কারন আজ পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে ভুত দেখার সৌভাগ্য আমার কোনদিনই হয়নি। বিজ্ঞানও এটাকে ঠিক সহজ ভাবে নেয় না। বিজ্ঞান বলে, ভুত-প্রেত বলতে কিছু নেই। ওগুলো সব আমাদের অবচেতন মনের কল্পনা মাত্র। বিজ্ঞান চায় স্পষ্ট প্রমাণ, আবছায়া অস্পষ্ট কিছু সে চায় না। মাঝে মাঝে ভাবি, আসলেই কি ভুত-প্রেত বলে কিছু আছে? নাকি এটি শুধুই আমাদের মনের কল্পনা, চোখের ভুল? জানিনা সত্যিটা আসলে কি? তবে ভুত-প্রেতে বিশ্বাস না করলেও এখন আপনাদের কাছে যে বিষয়গুলো শেয়ার করতে চলেছি তার সঠিক ব্যাখ্যা কিন্তু বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি.......!! বর্নিত ঘটনা গুলো শুনতে একটু অবাস্তব মনে হলেও এর প্রত্যেকটি কাহিনীই স্পষ্ট সত্য।
০১।
হাইগেট সমাধিক্ষেত্র, ইউকেঃ- 
ইংল্যান্ডের ভুতুড়ে সমাধিস্থল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো হাইগেট সমাধিক্ষেত্র। এখানে রাত হলেই শুরু হয় আজব গুজব সব কাজ কারবার। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, প্রতি রাতে এখানে মস্তকবিহীন একটি লাশ একবার কবরের ভেতরে ধুকে, এবং কিছুক্ষন পর তা আবার বাইরে বেরিয়ে আসে। মস্তকবিহীন লাশটির সর্বাঙ্গে লতাপাতা জড়ানো থাকে, আর তার গঠন এক্কেবারে অন্যরকম। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এখানকার তাপমাত্রা সব সময়ই বাইরের থেকে অস্বাভাবিক ভাবে কম থাকে!
০২।
ওহিও ইউনিভার্সিটি, ইউএসএঃ- 
আমেরিকার সবচেয়ে ভুতুড়ে যায়গা গুলোর নাম উচ্চারন করলে সবার আগে যে যায়গার নামটি চলে আসে, সেটি হলো ওহিও ইউনিভার্সিটিটি। এখানে বহু পুরনো পাঁচটি সমাধি আছে যা কিনা একটি পঞ্চভুজ তৈরি করে রেখেছে। সমাধি গুলো যে ঠিক কতটা পুরনো তা কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারে না। আর এখানে অনেক পুরনো একটি মানসিক রোগীদের চিকিৎসা দেবার জন্য ল্যাব ছিল, শোনা যায় সেখানে চিকিৎসারত মানুসিক রুগিদেরকে ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হতো। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। লোকমুখে শোনা যায় যে সন্ধ্যা হবার পর এখানে নাকি অদ্ভুত রকমের সব চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যায়। যার ফলে প্রচন্ড ভয়ের কারনে সেখানে কেউই যেতে সাহস করেনা!
০৩।
ভাঙ্গার দুর্গ, ইন্ডিয়াঃ- 
এটি ইন্ডিয়ার রাজস্থানের পাশে অবস্থিত। এখানকার স্থানীয় মানুষের মুখে শোনা যায়, এই জায়গাটির ওপর নাকি অনেক অভিশাপ আছে। আজ থেকে বহু বহু বছর আগে কোন একজন ঋষি এই জায়গারটির ওপর অভিশাপ দিয়েছিল যে, "যারা এখানে মারা যাবে তাদের আত্মা সারা জীবন এইখানেই বন্দি থাকবে।" সব চেয়ে আশ্চর্য জনক ব্যাপার হচ্ছে এখানকার কোন বাড়িরই ছাদ নেই। কারন যখনই কেও তার বাড়ির ছাদ তৈরি করে, ঠিক তার কিছুক্ষনের মধ্যেই নাকি সেগুলা ভেঙ্গে পড়ে যায়। যায়গাটি এতটাই ভুতুড়ে যে, সন্ধ্যার পরে এখানে কেউ যাওয়ার সাহস পায় না। আজ পর্যন্ত যত পর্যটকই এখানে সন্ধার পরে গেছে ,তারা আর ফিরে আসেনি। এবং সেই সমস্থ হারানো পর্যটকদের ভাগ্যে আসলে কি ঘটেছিল, তাও জানা যায় নি। তাই এখনকার সরকার সন্ধ্যার পরে সেখানে যেতে পুরোপুরি নিষেধ করে দিয়েছে!
০৪।
চাঙ্গি বীচ, সিঙ্গাপুরঃ- 
চাঙ্গি বীচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি জায়গা। ‘সোক চিং’ যুদ্ধ সংঘটিত হবার সময় জাপানিরা নিজেদের বিরোধী ভেবে অনেক অনেক নিরীহ চীনা নাগরিককে হত্যা করে, তারপর তাদেরকে এখানে কবর দেয়। আর সেই থেকে এই জায়গাটি হয়ে ওঠে ভুতুড়ে। এখানে রাত হলেই শুরু হয় অবাস্তব সব ভুতুড়ে কাজ কারবার। কাছাকাছি দাড়িয়ে শুনলে মনে হয়, দূর থেকে কিছু মানুষ কান্না করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। অনেক পর্যটক কিছু না জেনে এখানে রাত্রে বেলা ঘুরতে আসে, আর ফেরার সময় নিয়ে যায় অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা। এখন পর্যন্ত প্রায় হাজার খানেক মানুষ এমন কান্নাকাটি শোনার কথা শিকার করেছে। আর ভৌতিকতার জন্য, রাতের বেলা ভুল করেও কেউ এই যায়গা মাড়ানোর সাহস পায় না!
০৫।
স্ক্রিমিং টানেল, নায়াগ্রা ফলসঃ- 
কুখ্যাত যায়গার মধ্যে অন্যতম একটি যায়গা হলো স্ক্রিমিং টানেল। এখানকার মানুষেরা বলে, আপনি যদি এই টানেলের ভেতরে একটি ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালান তবে সেটি আগুনের গোলা টানেলের বাইরে চলে যাবে। আর সাথে সাথে আপনি একটি ছোট্ট মেয়ের চীৎকার দেবার আওয়াজ শুনতে পাবেন যা খুবই ভয়ানক। আজ পর্যন্ত কেউই সেই ছোট্ট মেয়ের চিৎকার দেবার কারন অনুসন্ধান করতে পারেনি। যত পর্যটকই এই যায়গাটি দেখার জন্য যান, এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা সব সময় তাদেরকে সেখানে যেতে নিষেধ করে দেয়!
০৬।
প্রাচীন রাম হোটেল, ইংল্যান্ডঃ- 
আপনি যদি ভুতের ঘটনার উপর একেবারেই বিশ্বাস না করে থাকেন, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন এই হোটেলটি থেকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননা মতে, হোটেলটিতে সবসময় কেমন যেন একটা স্যাঁতস্যাতে পরিবেশ বিরাজ করে, আর যায়গাটি সব সময় খুবই কদাকার একটি গন্ধে ভরে থাকে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে এই হোটেলটি একটি কবরের ওপর তৈরি করা হয়েছে। আর এখানকার সবারই ধারনা যে এইজন্যই এখানকার পরিবেশ এমন ভুতুড়ে ধরনের!
০৭।
মন্টে ক্রিস্টো, অস্ট্রেলিয়াঃ- 
এই বাড়ির মালিক মিসেস ক্রাওলি তার স্বামীর মৃত্যুর পরবর্তী ২৩ বছরে মাত্র ২ বার বাড়ির বাইরে বের হয়েছিল। এবং তার মৃত্যুর পর আজও নাকি তাকে এই বাড়িতেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এই বাড়ির ভেতর থেকে যারা ঘুরে এসেছে তাদের মুখ থেকে এর সত্যতা মেলে। তারা বলে বাড়ির ভেতরে গেলে মনে হয়, কে যেন আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে; কিন্তু হুট করেই তা আবার মিলিয়ে যায়! জিনিসটা এতটাই দ্রুত ঘটে যে, কিছুক্ষনের জন্য একবারে থ মেরে জেতে হয়। তারা আরও বলেন, যখন তারা ক্রাওলির ঘরে প্রবেশ করে তখন প্রত্যেকে রূদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির ভেতরে ছিলেন এবং তাদের মনে হচ্ছিলো যেন তাদের সারা গায়ে কেমন রক্তবর্ণ দেখা দিচ্ছে। পরবর্তীতে যখন তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে, তখন সবকিছু আবার পূর্বের মত স্বাভাবিক হয়ে যায়!
০৮।
এডিনবার্গ দুর্গ, স্কটল্যান্ডঃ- 
স্কটল্যান্ডেরই একটা খুবই পরিচিত নাম এডিনবার্গ দুর্গ। স্থানীয়দের মতে এই অসাধারণ দুর্গে ভূত দেখা গিয়েছে অনেকবার এবং এখানে যেসব পর্যটক ঘুরতে এসেছে তারাও এই বিষয়টি স্বীকার করেছে। জানা যায় ফরাসি যুদ্ধ চলার সময় এখানে বহু বন্দীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং সেজন্যই পরবর্তীতে এই জায়গাটি হয়ে ওঠে অভিশপ্ত এবং ভুতুড়ে!
০৯।
ডোমিনিকান হিল, ফিলিপাইনসঃ- 
সবাই বলে এখানে নাকি যুদ্ধের সময় যারা আহত হতো তাদের চিকিৎসা দেয়া হতো। আর চিকিৎসারত অবস্থায় যারা মারা যেত তাদেরকে এখানেই কবর দেয়া হতো। পরবর্তীতে জায়গাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এখানকার মানুষেরা বলে রাত হলে নাকি এখান থেকে সব অদ্ভুত রকমের শব্দ পাওয়া যায়। কখনো গুলির শব্দ, কখনো মানুষের বাঁচার জন্য আর্তনাদ ইত্যাদি। যার ফলে ভয়ে এখানে কেউ আসে না। আর টুরিস্ট হিসাবে যারা আসে, তারা যায়গাটিকে দূর থেকে একবার দেখেই চলে যায়!
১০।
বেরি পোমেরয় দুর্গ, টোটনেসঃ- 
জায়গাটি যতটা না সুন্দর, তার থেকে বেশি ভয়ংকর। এমনটা শোনা যায় যে, প্রায় চৌদ্দর বছর আগে এখানে একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। কিংবদন্তী অনুসারে, হোয়াইট লেডি হলেন মার্গারেট পোমেরয়ের আত্মা। যিনি বন্দি অবস্থায় অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন আর তাকে বন্দি করেছিল তারই হিংসুটে বোন। মার্গারেট পোমেরয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর থেকে এই দুর্গের অনেক জায়গায় তাকে ঘুরতে দেখা যায়। এবং স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই তা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন
তথ্যসূত্রঃ- ইন্টারনেট অবলম্বনে, Bigganprojukti.com & Others.
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৩