
চমৎকার রৌদ্দজ্জল সকালে বারান্দায় মাদুর পেতে বসে আছে ওরা চার ভাই বোন। বিন্তি, পুটি, টুকটুকি এবং বাবু। গতকাল রাতে ওদের মা বিলকিস বেগম অনেক রাত জেগে চিতৈই পিঠা তৈরি করেছে সেটা ওরা সবাই জানে। পিঠা তৈরি করতে করতে অনেক রাত হওয়ার কারণে বিন্তিরা আর রাতে পিঠা খেতে পারেনি। তাছাড়া চিতৈই পিঠা শুধু-শুধু খেলে খুব বেশি মজা লাগে না। চিতৈই পিঠা রসে ভিজিয়ে খেলে সব থেকে বেশি মজা লাগে। আর সেজন্য পিঠা খাওয়ার জন্য ওরা রাতে কেউ-ই তেমন একটা গা করেনি। তাই সাত সকালে ওরা বারান্দায় মাদুর পেতে সূর্যের দিকে পিঠ করে বসেছে, চমৎকার রসে ভিজানো চিতৈই পিঠা খাবে বলে। শীতের সকালে রোদে বসে গুড় মাখানো চিড়ে এবং চিতৈই পিঠা খেতে শুধু ওদের না, সবারই অনেক মজা লাগে!
বিন্তিরা চার ভাই বোন। বিন্তি সবার বড়। ও এবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী। ছোট ভাই পুটি পড়ে ক্লাস থ্রিতে। আর টুকটুকি সবে মাত্র স্কুলে পা দেওয়া শুরু করেছে এবং বাবু এখনো পিচ্চি। সব সময় মায়ের পাছে পাছে লেগে থাকে। বিন্তির বাবা মন্তেজ মিয়া একজন দিন মজুর। আর মা বিলকিস বেগম গৃহিনী। শীত পড়েছে অনেক দিন। কিন্তু এতদিনের মধ্যেও বিন্তিদের এখনো শীতের পিঠা খাওয়া হয় নি। তাছাড়া খাওয়ার মন জাগলেই বিন্তিরা সব সময় সব কিছু ঠিক সময়ে খেতে পারে না। কারণ বিন্তির বাবাই ওদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাছাড়া উনি দিন মজুর হওয়ার কারণে আয়ও অনেক কম। সারাদিন হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে যা উপার্জন করেন, তাতে দু'বেলা দু'মুঠো ভাতই অনেক সময় কপালে জোঠে না, সেখানে পিঠাতো অনেক দূর্লভ বস্তু! তার উপর যদি কখনো হঠাৎ বিন্তির বাবার বড় ধরনের কোন অসুখ-বিসুখ হয়, তাহলে তো সেই কয়দিন ওদেরকে না খেয়েই থাকতে হয়।
গত কয়েকদিন থেকে বিন্তির ছোট ভাই পুটি, পিঠা খাবো পিঠা খাবো বলে মাকে ভীষণ জ্বালাতন করছে। মা পুটিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এতদিন রাখলেও, গতকাল দুপুর থেকে পুটি এমন কান্নাকাটি শুরু করেছে যে, শেষে মন্তেজ মিয়াকে এত কষ্টের মধ্যেও পিঠার আনুসাঙ্গিক জিনিস পত্তর ধার দেনা করে হলেও জোগাড় করতে হয়েছে। বিন্তি ওর পরিবারের অভাব অনটনের কথাটা বুঝলেও, ওর ছোট ভাই বোন গুলো তো আর এতটা বোঝে না। ওরা যে এখনো অবুঝ। বিন্তি জানে, ওর বাবা কত কষ্ট করে সারাদিন হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে ওদের জন্য সামান্য কিছু আয় রোজগার করে । মাঝে-মাঝে তো বাবা প্রচন্ড অসুস্থতার মধ্যেও কাজের খোঁজে বেরিয়ে যায়। কারণ একদিন কাজ না করলে যে মন্তেজ মিয়ার পরিবার অভুক্ত থাকবে। আর মন্তেজ মিয়াও চায়না সে বেঁচে থাকতে তার পরিবার অভুক্ত থাকুক। মন্তেজ মিয়া সব সময় তার পরিবারের সবার মুখে হাসি দেখতে চায়। আর সেজন্যই তো তিনি শত কষ্টের মাঝেও ছেলে মেয়েদের আবদার পূরণ করার জন্য, ধার দেনা করে হলেও আটা, ময়দা কিনে এনে স্ত্রী বিলকিস বেগমের হাতে দিয়ে পিঠা তৈরি করে সন্তানদেরকে খাওয়াতে বলেছেন!
পিঠা নিয়ে মায়ের আসতে দেরি দেখে পুঁটি বারান্দা থেকে হাক ছাড়ে.......
-'মা! ও মা, পিডা নিয়া আসিস না ক্যান......?'
বিলকিস বেগম রান্নাঘর থেকেই পুঁটির কথার উত্তর দেয়, 'এই তো বাজান আইতাছি। একটু ছবুর করস না ক্যান বাজান!'
বিলকিস বেগম আর দেরি না করে পিঠার পতিল সহ বিন্তিদের কাছে গিয়ে হাজির হয়। মায়ের হাতে পিঠার পাতিল দেখে চার ভাই বোনের চোখ চকচক করে ওঠে। সবার আগে পুঁটি প্লেট বাড়িয়ে ধরে বলে, 'আমায় আগে দিতে হবে!'
সাথে সাথে টুকটুকি প্রতিবাদ করে তার প্লেট বাড়িয়ে ধরে বলে, 'না, আমাকে আগে দিতে হবে!'
ওদের দেখা দেখি দুই বছরের বাবুও তার প্লেট মায়ের সামনে বাড়িয়ে ধরে, 'আম্মু আমালে আগে না দিলে আমি কাঁনবো!'
কাকে রেখে কাকে দেবেন, এইটা নিয়ে বিলকিস বেগম বেশ ধান্দায় পড়ে যান। কিন্তু সবার আগে ছোটটাকে তো ঠান্ডা করতে হবে! নইলে একবার যদি কান্দা শুরু করে তাহলে আর রক্ষে নেই। সব মেছাকার করে দেবে! সেজন্য বিলকিস বেগম প্রথমেই বাবুর প্লেটটা নিয়ে তাতে একটা পিঠা উঠিয়ে দিতে দিতে বলেন,
-'আমার আব্বুকে আমি সবার আগে দেবো। এই নেও আব্বু, খাও!'
বাবুর প্লেটে পিঠা দেখে পুঁটির চোখ লোভে চকচক করে ওঠে। ও কোন কিছু না ভেবেই বাবুর পিঠায় একটা আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে তা জিভ দিয়ে চাটতে চাটতে বলে,
-'আম্মু পিঠা যে খুব সুন্দর হইছে?'
বিলকিস বেগম পুঁটির কথার আর উত্তর করতে পারে না। কারণ ওদিকে পুঁটি বাবুর প্লেটে রাখা পিঠায় হাত দেওয়াতে বাবু তার মারাত্মক অস্ত্র, কান্না শুরু করে দিয়েছে। মা বিলকিস বেগম বেশ অসুবিধায় পড়ে যান। তিনি আর সন্তানদের পাতে পিঠা দেবেন, না ছোটটার কান্না থামাবেন? তার উপর বাবু কান্না শুরু করলেই, কান্নার আগে নাকে ময়লা চলে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। আর সেটা দেখে অন্য সবাই একেবারে হৈ হৈ করে উঠলো। বিলকিস বেগম কোন রকমে বিন্তির পাতে একটা পিঠা তুলে দিয়ে বললেন,
-'এই বিন্তি, বাবুর নাক টা মুছিয়ে দিয়ে তুই ওকে নিয়ে বাইরে গিয়ে বস!'
বিন্তি কিছু না বলে বাবুকে কোলে উঠিয়ে ওর প্লেটটা হাতে নিয়ে বাইরে খড়ের উপর গিয়ে বসলো। বিলকিস বেগম পুঁটির পাতে পিঠা তুলে দিতে দিতে পুঁটিকে জিজ্ঞাসা করলেন,
-'হ্যারে বাপ, তোরে না কইছিলাম তোর বাজানরে ডাইকা আনতে? ডাকছিলি?'
-হ মা, ডাকছিলাম। তয় বাজান কইলো হাতে নাকি আর অল্প একটু কাজ আছে, সেইটা শেষ কইরাই চইলা আইবো।
কথা বলতে বলতে পুঁটি বাইরের দিকে তাকিয়ে বললঃ
-ঐতো বাজান আইয়া পড়ছে!
বিলকিস বেগম তাকিয়ে দেখলেন সত্যিই উনার স্বামী চলে এসেছেন। তাড়াতাড়ি করে উনি স্বামী মন্তেজ মিয়ার দিকে একটা চাটাই এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-'আইতে এত দেরি হইলো যে? আর একটু দেরি করলে তোমার ভাগের পিডা পোলাপান এতক্ষণে খাইয়া ফেলতো?'
মন্তেজ মিয়া চাটাইয়ে বসতে বসতে একটু হেসে বললেন,
-'ক্যান আমার পিডা পোলাপান খাইবো ক্যান? আমার পিডা পোলাপান খাইবো না পোলাপানের মা খাইবো, সেইটা তো বুঝতাছি না!'
বিলকিস বেগম একটু লজ্জা পেয়ে বললেন,
-'হ, সব সময় তো তোমার জিনিস আমিই খাই?'
তারপর স্বামীর প্লেটে একটা পিঠা এবং কিছু রস উঠিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর পুঁটি এসে আবার প্লেট এগিয়ে ধরলো-
-মা, আর একটা দাও না?
পুঁটির উপর মন্তেজ মিয়া ধমকে উঠলেন- 'ঐ, একটু আগে না খাইলি। আবার ক্যান?'
বিলকিস বেগম স্বামীকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন- 'থাক না! অবুঝ পোলা।'
তারপর পুঁটির পাতে একটা ভাঙা পিঠা উঠিয়ে দিয়ে বললেন, 'নে বাবা খা!'
পুঁটি পিঠা নিয়ে চলে গেল। কিন্তু হঠাৎ বাইরের দিকে তাকিয়ে টুকটুকি হৈ হৈ করে উঠলো- 'ঐ যে সেই বুড়ি আইতাছে। এই বুড়ি টা যে আমাগো বাড়ি ক্যান আহে।'
বিলকিস বেগম টুকটুকির কথা শুনে বাইরের দিকে নজর দিয়ে দেখেন, পাশের বাড়ির মকবুলের মা চাচি আসছে। চাচিকে দেখে বিলকিস বেগম একটু লজ্জিত সুরে বলেন- 'চাচি কিছু মনে করবেন না! পোলাপান মানুষ তো। ভুল ভ্রান্তিতো হইবারই পারে!'
তারপর চাচির দিকে একটা পিড়ি এগিয়ে দিলেন। মকবুলের মা পিড়িতে বসতে বসতে বললেনঃ
-'নারে মা, কিছু মনে করি নাই। নাতি পুতিরা কবিনা তো কবি কেডা। তা মন্তেজ ব্যাডা আছো কেমন?'
মন্তেজ মিয়া মকবুলের মায়ের দিকে ফিরে বললেন- 'এইতো চাচি আছি ভালই। তো আপনি কেমন আছেন? শুনলাম মকবুল নাকি বৌ নিয়া আবারও শশুর বাড়ি যাইয়া উঠছে?'
-হরে বাজান। পোলাডার যে কি হইলো। বৌ ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। বৌ যে যুক্তি দিবো, হেই যুক্তিই সে হুনবো!
মন্তেজ মিয়া পিঠা খেতে খেতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন- 'বিন্তির মা, পিডাকি আর বেশি আছে? থাকলে চাচিরে একটা দাও না?'
মন্তেজ মিয়ার কথা শুনে মকবুলের মা বললেন- 'নারে বাজান, পিডা লাগবো না। তোরা খা, আর আমি চাইয়া চাইয়া দেহি!'
বিলকিস বেগম প্লেটে একটা পিঠা তুলে মকবুলের মাকে দিতে দিতে বললেন- 'তাই কি হয় চাচি। সমস্যা নেই চাচি, আপনি খান। আমাগোলাই আরো আছে।'
প্রচন্ড লজ্জা লাগলেও মকবুলের মা কোন উপায়ন্তর না দেখে বৌমার দেওয়া পিঠা খেতে আর অস্বীকার করতে পারলেন না। তাছাড়া প্রথমে না না করলেও, শীতের রসালো পিঠা চোখের সামনে দেখলে কার না খেতে লোভ লাগে? মকবুলের মাও তাই এই অনুরোধকে আর প্রত্যাখ্যান করতে পারলেন না। কিছুক্ষণ পর টুকটুকি, পুঁটি আর বাবু আবারও প্লেট নিয়ে হাজির হলো। বিলকিস বেগম ছেলে-মেয়েদের এই পাগলামী দেখে চাচির সামনে বলতে লজ্জা লাগলেও, কোন রকমে সংকোচ দমন করে আস্তে আস্তে বললেনঃ
-আর যে পিডা নাই বাজান। যা ছিল সবইতো তোদের কে দিলাম! আমি আর পিডা কই পাবো ক?
স্ত্রীর কথা শুনে এবার মন্তেজ মিয়া খাওয়া বাদে স্ত্রীর মুখের দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন! তারপর কোন রকমে ঢোক গিলে নিয়ে বললেনঃ
-বিন্তির মা কও কি? তুমি কি পিডা খাইছো?
-ছাড়েন তো আমার খাওয়া। আপনেরা খাইলেই তাতে আমার খাওয়া হয়ে যাবে। তাছাড়া এখনো যা আছে তাতেই আমার হয়ে যাবে। আপনি শুধু শুধু চিন্তা কইরেন না!
বিলকিস বেগমের কথা শুনে মকবুলের মায়ের বুকের ভিতরটা হঠাৎ কোন এক অজানা আশঙ্কায় মোচড় দিয়ে উঠলো। তিনিও প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে বিলকিস বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ
-কসকি বৌ? তাইলে তুই নিজে না খাইয়া আমারে খাওয়াইলি ক্যান? হায়রে পোড়া কপালী, এত কষ্ট কইরা নিজে সব কিছু তৈরি কইরাও তুই নিজে একটু খাইতে পারলি না?
মকবুলের মায়ের কথা শুনে বিলকিস বেগম একটু লজ্জিত কন্ঠে বললেনঃ
-আরে না চাচি। এহনও আছে। তয় পোলাপানের সামনে কইলে তো ওরা আবার চাইবো সেজন্যই কইতাছি না। আপনি খান চাচি!
বিলকিস বেগম পাতিল থেকে কিছু রস পুঁটি আর টুকটুকির প্লেটে ঢেলে দিলে, টুকটুকি সেটা দেখে চিৎকার করে বললঃ
-আমাগো পিডা সব এই বুড়ি খাইয়া ফেলছে তাই না মা?
টুকটুকির কথা শুনে মন্তেজ মিয়া ধমকে উঠে বললেনঃ
-চুপ থাক হারামজাদী। বুড়ি কস ক্যান? দাদী কইতে পারস না?
-ক্যান দাদী কমু ক্যান। বুড়ি সারাক্ষন আমারে কয়, আমি নাকি টুনটুনি পাখির মত হারাডা গ্রাম খালি লাফাইয়া বেড়াৃই?
টুকটুকির কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বিলকিস বেগম টুকটুকির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেনঃ
-ছিঃ মা, অমন করে কইতে হয় না। দাদী যে তোর লগে মজা করেরে মা! দাদীরা নাতী পুতিগো লগে সব সময় এমন একটু মজা করে, তাই বইলা কি মুরুব্বিগো এমন কইরা কইতে হয়? উনি তোমার চাইতে কত্ত বড় তুমি জানো?'
-তাইলে আর অমন কইরা কইবে নাতো?
-না মা, আর অমন কইরা কইবে না! তুমি খাও, খাইয়া ছাগলডা নিয়া মাঠে গিয়ে একটু ঘাস খাওয়াইয়া আনো তো?
-আচ্ছা ঠিক আছে!
খাওয়া দাওয়া শেষে মকবুলের মা এবার বাড়ি যাবার জন্য পা বাড়ালেন। যাওয়ার আগে তিনি বৌয়ের পাতিলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, পাতিলে আর এতটুকু পরিমাণেও পিঠা তো দূরের কথা; একটু রসও অবশিষ্ট নাই। পাতিল টা দেখেই ওনার পেটের মধ্যে হঠাৎ কিসের যেন খোঁচা দিতে থাকে। কোন রকমে চোখের পানি চেপে রেখে বিলকিস বেগমের মাথায় হাত দিয়ে মকবুলের মা বলেনঃ
-মারে, যতই আমার কাছে তুই লুকাস; আমিও যে মা! আমি তো সবই বুঝিরে মা! এত কষ্টের তৈরি করা পিডা শেষ পর্যন্ত তুই নিজের মুখে দিয়া একটু দেখতেও পারলি না যে সেটা কেমন হইছে? কি আর করবি রে মা! সবই যে নিয়তি! আচ্ছা যাইরে মা! তুই ভাল থাকিস!
মকবুলের মা কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাইরে চলে আসলেন। মন্তেজ মিয়া এবং বিলকিস বেগম কোন কিছু না বুঝে উনার গমন পথের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন! মকবুলের মা পথে যেতে যেতে ভাবতে লাগলেনঃ
-হায়রে আমার সংসার! এত কষ্ট করে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে একটা জিনিস যে তৈরি করলো, শেষ পর্যন্ত সেই জিনিসটা সে একটু চেখেও দেখতে পারলো না। বৌ আমার কাছে গোপন করে? কিন্তু বৌ তো জানেনা যে, আমিও একজন মা। যতই সে আমার কাছে গোপন করুক, আমিতো সবই বুঝি। বৌ আজ যে সময়টা পার করছে, সেই সময়টা যে আমি আজ থেকে বিশ বছর আগে পার করে এসেছি।
তিনি একটু দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুূখ করে বিড়বিড় করে বলেনঃ
-ক্যান যে খোদা মানুষরে এমন গরিব আর বড়লোক কইরা তৈরি করে? এমন খেল দেহাইয়া বিধাতার মনে যে কি সুখ আহে হেইডাই মুই বুঝবার পারি না! সৃষ্টিকর্তা যদি এই পৃথিবীর কোন মানুষরে গরিব বড়লোক না রাইখা সবাইরে সমান কইরা দিতো তাইলে মনে হয় ভাল হইতো। অন্তত ক্ষুধার তাড়না থেকে তো সবাই বাঁচতো! পৃথিবীতে আর কেউ তো কখনো না খেয়ে মরতো না। ক্ষুধার যন্ত্রনা যে কত ভয়াবহ যন্ত্রনা, হেইডা যে না সহ্য করছে সে জানবো ক্যামনে? কিন্তু ক্যান যে খোদা এমনটা করে না সেইটা তিনিই ভাল জানেন? কারণ তিনি যে অনেক বড় খিলাড়ি............!!
পুনশ্চঃ- পৃথিবীতে যদি ভালবাসা পরিমাপ করা যন্ত্র থাকতো, আর সেই যন্ত্রে যদি পরিবারের সবার ভালবাসাকে পরিমাপ করা যেতো। তাহলে কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই ঐ যন্ত্রে যার ভালবাসাটা সবার চেয়ে উপরে থাকতো তিনি আর কেউ নন, আমাদেরই গর্ভধারিণী 'মা'!!
আপনার গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড আপনাকে যতই ভালবাসার গল্প শুনাক না কেন, মায়ের নিঃস্বার্থ ভালবাসার কাছে তার ঐ স্বার্থান্বেষী ভালবাসার মূল্য "আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে এক টুকরা বরফ খন্ডের সমান"!!
আপনার মা আপনার জন্য ঠিক কি পরিমাণে কষ্ট করেছেন সেটা যদি বুঝতে চান, তাহলে আপনি আপনার স্ত্রীকে দেখতে পারেন। কারণ আপনার স্ত্রী আপনার সন্তানের জন্য যতটা কষ্ট করেন, আপনি ছোট থাকতে আপনার মা-ও আপনার জন্য ঠিক ততটাই কষ্ট করেছেন!!
"মা তখনও কাঁদে যখন সন্তান ভাত খায় না, আবার মা তখনও কাঁদে যখন সন্তান ভাত দেয় না"
"সবাইকে সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবসের শুভেচ্ছা"
.....................................সমাপ্ত.....................................
বিঃ দ্রঃ- এই গল্পের বিষয়বস্তু সহ যাবতিয় চরিত্র সম্পূর্ন কাল্পনিক। যদি কারো ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মিলে যায়, তাহলে সেটা একান্তই কাকতালীয় মাত্র। সেজন্য লেখক কোন অংশেই দ্বায়ী থাকবে না। তাছাড়া টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



