somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিপন্ন মানবতার নৃশংসতম হত্যার আর এক নাম-গর্ভপাত"

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দৃষ্টি আকর্ষণঃ- গত ০৬ ই আগষ্ট ২০১৫ ইং তারিখ, দুপুর-১২:৫৮ মিনিটে এই পোস্টটি আমি সামহোয়্যার ইন ব্লগে প্রথম প্রকাশ করি। কিন্তু পরবর্তিতে সহ ব্লগার এহসান সাবির ভাইয়ের পরামর্শ এবং অনুরোধে পোস্টটিকে আমি আবারও রিপোস্ট হিসাবে প্রকাশ করলাম। আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এহসান সাবির ভাইয়ের প্রতি, সব সময় আমার পাশে থেকে এভাবে আমাকে উৎসাহ প্রদান করার জন্য!



আমার আজকের পোস্টটি শুরু করার আগে সর্ব প্রথম আমি আপনাকে খুব ছোট এবং অতি সাধারন দুইটা প্রশ্ন করবো। আমার প্রথম প্রশ্ন, বলেনতো অন্যায় ভাবে কোন প্রানী হত্যা করাকে আপনার দৃষ্টিতে কি মনে হয়?
নিশ্চই বলবেন 'খারাপ/পাপ'! আমি জানতাম যে আপনি ঠিক এই কথাটাই বলবেন। শুধু আপনি কেন, এই পৃথিবীর সবাই বলবে 'অন্যায় ভাবে যে কোন প্রানী হত্যা করা অবশ্যই পৃথিবীর জঘন্যতম একটি কাজের মধ্যে অন্যতম।' আর সেই প্রানীটা যদি মানুষ হয় তাহলেতো তা আরও খারাপ, আরও জঘন্য!


এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন, গর্ভপাতের মাধ্যমে মানব ভ্রুন হত্যা করাকে আপনার দৃষ্টিতে কেমন মনে হয়?
আমি জানি আমার এই প্রশ্নে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার মনের মধ্যে দুইটা ভাগ হয়ে যাবে। যার একভাগ বলবে অবশ্যই এটাও একটা খারাপ কাজ। আর অন্য ভাগ বলবে 'মানুষতো আর ইচ্ছা করে গর্ভপাত করায় না। এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দূর্ভাগ্যক্রমে ঘটে যায়'। হাঁ আপনার কথা ঠিক। কিন্তু যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলছে তাদের সম্পর্কে আপনি কি বলবেন? নিশ্চই দ্বিধা-দ্বন্দের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন? আমিযে কেন আপনাকে এই দুইটা প্রশ্ন করলাম, সেটা জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিন্মোক্ত পোস্টটা ভাল ভাবে পড়তে হবে। তহলে চলুন দেরি না করে আমরা মূল আলোচনায় ফিরে যাই।


গর্ভপাত কাকে বলেঃ- সঠিক সময়ের আগে জরায়ু থেকে ভ্রুণ বেরিয়ে আসাকে গর্ভপাত বলা হয়। গর্ভপাত ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটানো যায়, আবার কখনও কোন আঘাত বা কারণ ছাড়াই জরায়ু থেকে ভ্রুণ বেরিয়ে আসতে পারে। তবে প্রাকৃতিক কারনের চেয়ে সেচ্ছায় গর্ভপাত ঘটানোর পরিমানটা অনেক বেশি। গর্ভপাতকে কেন্দ্র করে বিলিয়নের পর বিলিয়ন ডলার ব্যবসা গড়ে উঠেছে। ১৯৯৬ সালে আমেরিকার এক সমীক্ষায় দেখা যায় ধর্ষণ ও ইনসেস্টের কারনে মাত্র ১% ও স্বাস্থগত কারণে ৬% গর্ভপাত ঘটে। অর্থাৎ গর্ভপাতের ৯৩% হচ্ছে অপরিকল্পিত গর্ভধারণজনিত গর্ভপাত। অবাধ মেলামেশের কারণে কম বয়সে মা হওয়া, ক্যারিয়ার, পড়াশুনা, দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, লিভ টুগেদার ইত্যাদি কারণসমূহও ইহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যে সমাজ গর্ভপাতের মাধ্যমে অনাকাংখিত শিশুকে হত্যা করছে, সেই একই সমাজ আবার শিশু কামনার্থে In Vitro Fertilization-এর পসার জমিয়ে বসেছে! সমস্যা সমাধানের নামে এটা কেমন ধরনের পরিহাস?


গর্ভপাত ও মিসক্যারিজের মধ্যে অনেক বড় ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। গর্ভপাত হচ্ছে ইচ্ছামূলক। অপরপক্ষে মিসক্যারিজ হচ্ছে স্বতঃস্ফুর্ত। গর্ভধারণের ২২ সপ্তাহের মধ্যে কোন দুর্ঘটনাজনিত আঘাত বা প্রাকৃতিক কারণে জরায়ু থেকে ভ্রুণের বের হয়ে আসাকে স্বতঃস্ফুর্ত গর্ভপাত বলে। ডিকশনারী অনুযায়ী- Abortion is the intentional termination of a pregnancy after conception, অন্যদিকে A miscarriage is the spontaneous loss of a fetus before the 20th week of pregnancy. গর্ভপাত নিয়ে আমাদের ধারণা তেমন একটা স্বচ্ছ নয়, এমনকি যারা গর্ভপাত করান (অথ্যাৎ জড়িত ডাক্তাররা), তাদের অনেকেই এর বীভৎসতা সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহল নন!


কিভাবে গর্ভপাত করানো হয়ঃ- গর্ভ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন উপায়ে গর্ভপাত ঘটানো যেতে পারে। উপায় সমূহ প্রধানতঃ গর্ভধারণকাল বা ভ্রুণের বয়স বা আকারের উপর নির্ভর করে। নিম্নে কৃত্রিম উপায়ে গর্ভপাতের কয়েকটি নৃশংসতম উদাহরন উল্লেখ করা হলো।

স্যাকশন ও এসপিরেশন পদ্ধতিঃ- গর্ভধারনের ১২ সপ্তাহের পর গর্ভপাত ঘটাতে চাইলে সবচেয়ে বেশী যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে Suction Aspiration পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একটি ভ্যাকুয়াম নল মাতৃজঠরে প্রবেশ করানো হয়। প্রসংগত এটি কাজ করে ভ্যাকুয়াম ক্লীনারের মতই, তবে এখানে কমপক্ষে ২৯ গুন বেশী চাপ প্রয়োগ করা হয়। এই প্রচণ্ড চাপে শিশুটি মুহূর্তের মধ্যেই টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এ পদ্ধতির সবচেয়ে বীভৎস অংশ হচ্ছে, যেহেতু শিশুটির মাথা অনেক বড় থাকে সেহেতু এটি নলের মাধ্যমে বের করা যায় না। সেজন্য চিমটার মতন একপ্রকার ধাতব যন্ত্র দিয়ে শিশুটির মাথা দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়। তারপর উক্ত শিশুটিকে মতৃজঠর থেকে বের করে আনা হয়।


ডায়ালেশন ও ইভাকুয়েশন পদ্ধতিঃ- আরেকটু বড় শিশুর (গর্ভধারণের ১৮-২০ সপ্তাহের পর) ক্ষেত্রে, ভ্যাকুয়াম নল দিয়ে বের করা অত্যন্ত কঠিন (গর্ভস্থ ২০ সপ্তাহ বয়সের শিশু দেখতে কেমন এখানে জানা যাবে)। তাই আরেকটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যার নাম Dilation and Evacuation (D&E) পদ্ধতি। এখানে এক জাতীয় চিমটার মাধ্যমে বাচ্চাকে মুচড়ানো হয় এবং জীবন্ত শিশুটির দেহের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগগুলো টেনে টেনে আলাদা করা হয়। মাথাটিকেও প্রচন্ড চাপ দিয়ে বিচূর্ণ করা হয়। যতক্ষণ না বাচ্চাটি সম্পূর্ণভাবে টুকরো টূকরো করে সহজে বের করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত বারংবার এই মুচড়ানো ও বিচূর্ণ করার প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। অবশেষে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বিচূর্ণ অংগ-প্রত্যংগ গুলো জড়ো করে মিলানো হয় যে সম্পূর্ণ শিশু বের হয়েছে কিনা। কারণ যদি শিশুর কোন অংগ মাতৃজঠরে রয়ে যায় তবে তা মায়ের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।


লবন পদ্ধতিঃ- গর্ভপাতের আরেকটি অতি সস্তা পদ্ধতি হচ্ছে মাতৃজঠরে লবন বা বিষ প্রয়োগে গর্ভজাত শিশুটিকে ধীরে ধীরে হত্যা করা। পরবর্তীতে শিশুটি মরে যাওয়ার সাধারণত ২৪ ঘন্টার পরে মা মৃত বাচ্চা প্রসব করে। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চা মরে না এবং জীবিতই প্রসব হয়। সেক্ষেত্রে মাটি চাপা দিয়ে উক্ত শিশুটিকে মেরে ফেলা হয়। আরেকটি ব্যয় বহুল পদ্ধতি হলো prostaglandin নামক একটি হরমোনের ব্যবহার, যা সাধারণত গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পরে প্রয়োগ করা হয়। এটির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে প্রসব বেদনা তৈরী করে জীবিত শিশুকে প্রসব করানো হয়। পরে শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।


জীবন্ত গর্ভপাতঃ- গর্ভপাতের এমন ভয়ংকর বিবর্তন ঘটেছে যে Live abortion -এর মত নিষ্ঠুর ঘটনাও দিন দিন বাড়েই চলেছে। যেখানে শিশুটিকে (সাধারনত গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের পর থেকে) জীবন্ত প্রসব করিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমেরিকাতে Live abortion-এর নিষ্ঠুরতা ও তৎসম্পর্কিত জনরোষের কারণে ২০০৩ সালে Partial-Birth Abortion Ban Act আইন পাশের মাধ্যমে তা নিষিদ্ধ করা হয়। মানবতা এতটাই নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আইন করেও কাজ হচ্ছে না, বের করা হচ্ছে নতুন নতুন ফাঁক-ফোঁকর। যেমন গাইনোকলজিস্ট শিশুটির মাথা ছাড়া দেহের বাকী অংশটুকু বের করেন; এতে করে আইনগতভাবে বলা যাবে না যে শিশুটি জীবন্ত প্রসব হয়েছে, কেননা মাথাটি এখনো বের হয়নি। তারপর ছটফট করতে থাকা শিশুটির মাথায় ফুটো করে পাইপের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে শুষে বের করে আনা হয়। এর ফলে মাথাটিও সহজে বের করে আনা যায়। এছাড়া এই মৃত শিশুটিকে নিয়েও চলছে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মানবতার উন্নতি সেখানে এতই চরমে পৌঁছেছে যে, জীবন্ত অবস্থায় যে শিশুটি ছিল অনাকাংখিত, মৃত্যুর পরে সেই শিশুটিই হয়ে উঠেছে বহু আকাংখিত। তবে মায়ের কাছে নয়, রিসার্চ সেন্টার ও প্রসাধন ইন্ডাষ্ট্রীর কাছে! অবহেলিত, অনাকাংখিত হত্যাকৃত শিশুদের রক্ত মাংসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে Fetal Harvesting Firms । যারা ফেলে দেওয়া শিশুদের অংগ, প্রত্যংগ, মস্তিষ্ক, টিস্যু ইত্যাদি অর্ডার মাফিক সযত্নে পৌঁছে দিচ্ছে রিসার্চ সেন্টারগুলোতে। মানবতার নামে এটা কেমন ধরনের প্রহশন?


গর্ভপাতের সময় গর্ভস্থ শিশুরা ব্যথা পায় কিনাঃ- গর্ভপাত ঘটানোর সময় গর্ভস্থ শিশুরা ব্যথা পায় কিনা তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। গর্ভস্থ শিশুরা ব্যথা পায় কিনা তা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা যায়নি। আদৌ প্রমাণ করা যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কেননা এর সাথে জড়িত রয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ব্যবসা ও নারীর অধিকার। একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতেঃ "গর্ভস্থ শিশুরা ৬/৭ সপ্তাহ থেকে ব্যথা অনুভব করতে পারে। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট এবং De Veber Institute for Bioethics and Social Research এর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট Dr. Paul Ranalli এ সম্পর্কে মত পোষণ করেন যে, গর্ভপাতের সময় মাতৃ গর্ভস্থ শিশুরা অবশ্যই ব্যাথা অনুভব করে। কারন যে সময়ে গর্ভপাতের মাধ্যমে তাদের কে হত্যা করা হয়, সে সময়টাতে ব্যাথা অনুভব করার মত ক্ষমতা তাদের মধ্যে চলে আসে।"


১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত ‘সভ্য’ পশ্চিমা দেশেগুলোতে ভ্রূণ হত্যা নামক ইস্যুটি তেমন গুরুত্বপুর্ণ ছিল না। মাত্র ২৭ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারী, The Silent Scream-এর কারণে গর্ভপাতের অবৈধতা নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনা শুরু হয়। গর্ভপাত বিশেষজ্ঞ Dr. Bernard Nathanson গর্ভপাত নিয়ে একটি ভিডিও তৈরী করেন, যিনি বিখ্যাত Center for Reproductive and Sexual Health (CRASH) এর ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি নিজেও সারাজীবনে ৭৫ হাজারেরও বেশী গর্ভপাতের সাথে জড়িত ছিলেন।
The Silent Scream নামক হৃদয়বিদারক ডকুমেন্টারীতে দেখানো হয়েছে যে, '১২ সপ্তাহের শিশু সাকশন টিউবকে এড়ানোর জন্য প্রচণ্ডভাবে ছটফট করতে থাকে (ডকুমেন্টারীটি দেখুন)। তার মতে, গর্ভস্থ শিশুরাযে অবশ্যই ব্যাথা অনুভব করে এর মধ্যে কোন রকমের সন্দেহ নেই। এদের দাবী গর্ভপাতকে নিরুৎসাহিত করে বলে তাদের কন্ঠরোধ করার জন্য এদের গায়ে ধার্মিকের তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়!'

প্রসংগত, ২০০৭ সালের এক সমীক্ষা অনুসারে আমেরিকার ৮৪% গর্ভপাতের ঘটনায় অবিবাহিতরা জড়িত এবং ৫০% গর্ভপাতকারীর বয়স ২৫ বছরের নিচে। যার ফলে এ গ্রুপটিও নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ‘গর্ভস্থ শিশুরা ব্যথা পায় না’ গ্রুপে যোগ দেয়! আশ্চার্য্যজনক ব্যাপার হচ্ছে নারীবাদীরাও জরায়ুর স্বাধীনতার নামে গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান নেয়।


গর্ভপাত সম্পর্কে ইসলাম কি বলেঃ- মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে সুরা আল-আনআমের ১৪০ নং আয়াতে উল্লেখ করেনঃ- "নিশ্চই তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ কোন প্রমাণ ছাড়াই হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব দিয়েছিলেন, সেগুলোকে আল্লাহর প্রতি ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করে হারাম করে নিয়েছে। নিশ্চই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি"। ইচ্ছাকৃত গর্ভপাতকে যে ইসলাম সমর্থন করেনা, তা এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন।


বাচ্চা নষ্ট করার সব পদ্ধতিতেই এক ধরণের লম্বা নল জরায়ুতে ঢুকিয়ে গর্ভের শিশুটিকে প্রথমে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। পরে ভ্যাকুয়াম সাকারের মাধ্যমে শিশুটিকে শুষে আনা হয়। গর্ভপাতের সময়কার শিশুটির অব্যাক্ত বেদনা হয়তো কারো কানে পৌঁছায় না। কিন্তু তাই বলেকি তাদের প্রতি আমাদের কোন মায়া-মমতা নেই? আপনার জন্ম গ্রহণকারী ছোট্ট বাবুটি যখন সামান্য একটু ব্যাথা পায় তখন আপনার কাছে কেমন লাগে? আর আপনার চোখের আড়ালে যাকে ক্ষতবিক্ষত করছেন তার ব্যাথাটা একটু বোঝার চেষ্টাও করেন না? যেসব মা ক্ষণিকের সুখের জন্য নিজ গর্ভের সন্তানকে পাশবিকভাবে হত্যা করে তাদের জন্য আমার পক্ষথেকে হৃদয় উগড়ে দেয়া সীমাহীন ঘৃণা।


গর্ভপাত পরিসংখ্যানঃ- বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটা দেশেই এখন গর্ভপাত অনেকটা আইনি পদ্ধতিতেই হয়। কিন্তু তারপরেও আফগানিস্তান, এ্যাঙ্গোলা, মিশর, সহ আরো অনেক দেশে গর্ভপাত সম্পূর্ন ভাবে নিষিদ্ধ এবং এটা করা অবৈধ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৫৫ মিলিয়ন নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকেন। উক্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৪০% গর্ভপাত ঘটানো হয় নারীর সম্মতিক্রমে অথ্যাৎ ইচ্ছাকৃত ভাবে, ২৫% গর্ভপাত ঘটানো হয় নারীর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকলে, ২৩% গর্ভপাত ঘটানো হয় সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে এবং সর্বশেষ ১২% গর্ভপাত ঘটে ভ্রুণের অস্বাভাবিকতার কারণে অথ্যাৎ এটা হয় অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই! আর এর মধ্যে ১.৫ মিলিয়ন মায়ের গর্ভপাত হয় সাধারণত যাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই গর্ভপাত হওয়ার ৭৫% কারণ হলো বিবাহ বহির্ভূত যৌন ক্রিয়াকলাপ এবং যৌবন কালীন উশৃঙ্খলতা!


"পরিশেষে একজন গর্ভধারিনী মায়ের কাছে করা একটা শিশুর কাল্পনিক কিছু কথপোকথন দিয়ে আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করবো"

প্রথম মাস=> হ্যালো আম্মু…..!! কেমন আছো তুমি? জানো, আমি এখন মাত্র ৩-৪ইঞ্চি লম্বা!! কিন্তু হাত-পা সবই আছে তোমার কথা শুনতে পাই। তোমার কথা শুনতে আমার খুবই ভালো লাগে।

দ্বিতীয় মাস=> আম্মু, আমি এখন আমার হাতের বুড়ো আঙ্গুল চুষা শিখেছি, তুমি আমাকে দেখলে এখন বেবি বলবে! বাইরে আসার সময় এখনো হয়নি আমার, এখানেই উষ্ণ অনুভব করি খুব।

তৃতীয় মাস=> আম্মু তুমি কি জানো আমি যে একটা মেয়ে? পরী পরী লাগবে আমাকে, আমাকে দেখলে তুমি অনেক খুশি হবে, তুমি মাঝে মাঝে কাঁদো কেনো আম্মু? তুমি কাঁদলে আমারও খুব কান্না পায়…।

চতুর্থ মাস=> আমার মাথায় ছোট্ট ছোট্ট চুল গজিয়েছে আম্মু। আমি হাত-পা ভালো ভাবে নাড়াতে পারি, মাথা নাড়াতে পারি, অনেক কিছুই করতে পারি।

পঞ্চম মাস=> আম্মু তুমি ডাক্তারের কাছে কেনো গিয়েছিলে? ডাক্তার তোমাকে কি বলেছে আম্মু? আমি তার কথা শুনতে পারিনি, তোমার কথা ছাড়া আমি যে আর কারো কথা শুনতে পারিনা।

ষষ্ঠ মাস=> আম্মু আমি অনেক ব্যথা পাচ্ছি আম্মু, ডক্টর সুঁচের মতো কি যেনো আমার শরীরে ঢুকাচ্ছে, ওদের থামতে বলো আম্মু আমি তোমাকে ছেড়ে কথাও যাবোনা আম্মু…!

সপ্তম মাস=> আম্মু কেমন আছো? আমি এখন স্বর্গে আছি, একটা এঞ্জেল আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে, এঞ্জেল বলেছে আমার জন্য তোমকে নাকি এবরশন করতে হয়েছে, তুমি আমাকে কেনো চাওনি আম্মু?


পুনশ্চঃ- প্রতিটি Abortion মানে একটি হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়া…! একটি হাসি থেমে যাওয়া…! দুটি হাত, যা কখনো কাউকে স্পর্শ করতে পারবেনা…! দুটি চোখ, যা সুন্দর এই পৃথিবীর আলো দেখবেনা…! হায়রে মানবতা! অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! যেখানে মা ব্যথানাশক (Local anesthesia) নিচ্ছে, সেখানে বাচ্চাটি ব্যথায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এটি কি দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের চরম দৃষ্টান্ত নয়?

বর্তমান উন্নত বিশ্বে গবেষণাগার গুলোতে ছোট্ট মাছকেও ব্যবচ্ছেদ করার আগে চেতনানাশক পদ্ধতি ব্যবহার করা বৈজ্ঞানিক নৈতিকতার অন্তর্গত। ইঁদুর কিংবা গিনিপিগের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। আর সে হচ্ছে নিষ্পাপ ও অসহায় মানব শিশু। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভাবধারা বা জীবন পদ্ধতিকে সমর্থন করতে গিয়ে গর্ভস্থ শিশু ব্যথা পায় কিনা তা নিয়েও বিতর্ক হয় বর্তমান সভ্যজগতে! তাও আবার এটি করা হয় সেই মানবতার নামে...........!!
আমার মতে, ব্যথা পাক, বা না পাক; গর্ভপাতের মাধ্যমে অবুঝ শিশু হত্যা করা নিঃসন্দেহে একটি জঘন্যতম অন্যায় কাজ এবং গুরুতর অপরাধ। আর সেজন্য এটাকে বর্জন করা উচিত......!!!!

তথ্যসূত্রঃ- প্রত্যেকটা ছবি সহ পোস্ট সংশ্লিষ্ট যাবতিয় তথ্যাবলী সব ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। তবে গর্ভপাত সম্পর্কে আন্ত্রর্জাতিক পরিসংখ্যান এবং এটা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে নিম্নোক্ত লিংক গুলোতে প্রবেশ করতে পারেন!
০১। উইকিপিডিয়া এবং এনসাইক্লোপিডিয়ার তথ্য।
০২। আরো জানতে হলে চোখ রাখুন এখানে


"সবাইকে নতুন বছরের অগ্রীম শুভেচ্ছা; Happy New Year-2016"

বিঃ দ্রঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৮
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×