
“জীবন মানে জি বাংলা”
মানব সমাজের একটা সহজ দোষ হচ্ছে এরা সব সময় খারাপের দিকে আকর্ষিত হয়, ঘটনার শুরু কিন্তু বিবি হাওয়া থেকে
আমি খুব বয়স্ক কোন লোক নই
নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হয়ে পৃথিবীকে করা হচ্ছে আর জটিলতর। এটা নাকি “Commercialization” এর যুগ। কোথায় ভালোবাসা? কোথায় মায়া মমতা? কোথায় আবেগ? এই এই Commercial যুগে ? আবেগ বিষয়টিতো মনে হয় পৃথিবী থেকেই উঠে গেছে (আমি মনের আবেগের কথা বলছি, লোক দেখান মস্তিকের তৈরি আবেগ নয়)। যদিও আদিম যুগের মানুষগুলোর মাঝে একটা প্রথা ছিল যে, আমাকে এটা দাও তাহলে আমি তোমাকে ওইটা দিব। এটাকে “Barter System” বলা হয় যার বাংলা হল “বিনিময় প্রথা”। কিন্তু অই মানুষগুলো আজকের মানুষগুলো থেকে অনেক বেশি নিঃস্বার্থ ছিল। ঐ যে বললাম আমরা শুধু খারাপটা নিতে ভালোবাসি তাই বিনিময় প্রথা টিকে একটু আধুনিকায়ন করে আয়ত্ত রেখেছি কিন্তু ভালবাসাকে অবজ্ঞা করে।
প্রতিটা সম্পর্ক, প্রতিটা কাজ, প্রতিটা অবস্থায় আজ স্বার্থপরতা এতটাই উল্লেখযোগ্য যে বাকি বিষয়গুলো অনেক আবছা মনে হয়। স্বার্থের জন্য আজ ছেলে বাবাকে খুন করছে, স্ত্রী নিজের স্বার্থের জন্য খুন করছে নিজ স্বামীকে, স্বার্থের উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে “Best Friends”, স্বার্থের জন্য অফিসের সেই প্রিয় সহকর্মীটি অন্তরের বিষ উগলে দিচ্ছে, স্বার্থের জন্য কাছ থেকে কাছের আত্মীয় আজ কেমন যেন অনেক পর আর অনেক দূরের মানুষজন অনেক আপন হয়ে রয়েছে, স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে উঠছে ভালোবাসা, স্বার্থের দরুন তৈরি হচ্ছে হাজারো সম্পর্ক।
বিজ্ঞ লোকেরা বলেন – “স্বার্থপর লোকেরা জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারে” এক সিনেমায় একটি ইংরেজি প্রবাদ শুনেছিলাম – “স্বার্থপর লোক অনেকদিন বেচে থাকে”। আমি মানছি যে স্বার্থের প্রয়োজন আছে কিন্তু তা মানবতা ভালোবাসা আর মনুষ্যত্বকে ছাপিয়ে নয়।
প্রিয় বন্ধুটি আজ একদম ভুলেই গেছে সে নাকি অনেক বেস্ত, দেখা করার সময় ই পায় না অথচ বাড়ির রাস্তায়ই তার চলাফেরা। অফিসের নারী সহকর্মীটি স্বার্থের জন্য নিজেকে উজার করে দিচ্ছে বসের সেবায়। এক সাথে কাজ করেও পাসের সহকর্মীটি করতিপক্ষের কাছে মিথ্যে গল্পের জন্ম দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেছে অনেক উপরে। আত্মীয় তার স্বার্থের জন্য আজ সবার থেকে নিজেকে আলাদা করে রেখেছে সবার সাথে থাকলে নাকি একটা পিছুটান থাকে যা তাকে তার সন্তানকে ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে সাথে তার নিজের জীবনও। যার জন্য মন থেকে কেমন যেন একটা শিতল অনুভূতি জন্ম নিয়েছে, যাকে ঘিরে স্বপ্নের একটি ভুবন জন্ম নিতে জাচ্ছে, যাকে আগলে রাখবে বলে নিজেকে প্রিয় মানুষটির নাম করে দিয়েছে সেই মানুষটি মনের ইচ্ছার দাম না দিয়ে তার পাক্ষিক স্বার্থের কথা ভেবে সরাসরি রাজি না হয়ে খুজে চলেছে এর চেয়েও ভালো আরেকজন, হয়তো ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করে আজ “Option” করে রেখেছে, যদি এর মাঝে ভালো কেউ না আসে তাহলে একেই হয়তো গ্রহন করে নিবে।
না পৃথিবীতে আজও নিঃস্বার্থ মানুষ আছে। আর এই নিঃস্বার্থ মানুষগুলোর জন্যই স্বার্থবাদী দুমুখো সাপ বেসে মানুষগুলো তাদের স্বার্থের খোরাক মিটাতে পারছে। আমরা একটি ঘুমের মধ্যে আছি যেই ঘুমের রঙ্গিন সপ্নে আমরা এতটাই বিভোর যে দিন শেষে বাস্তবিকতা আমাদের কাছে যে কতটা একাকিত্তের জন্ম দিবে সেই সম্পর্কে আন্দাজ ও করতে পারছি না। কথাটা এই জন্য বললাম যে আমার দেখা আমি যতজন এরকম স্বার্থপর লোক দেখেছি তারা একটি সময় শেষে আবার ফিরে এসেছে সেই মানুষগুলোর মাঝে, যাদের অবজ্ঞা করে নিজে ছুটে গিয়েছিলো অনেকটা পথ। ফিরে সবাইকে আসতেই হবে। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।
যেই সন্তান নিজের সুখের কথা চিন্তা করে বাবা-মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়েছিলো সেই সন্তানই একদিন এই বাবা-মা র জন্য অঝোরে চোখের পানি ঝরাবে। ফিরে পেতে চাইবে কিন্তু তখন হয়তো তরী পাড় ছেরে চলে গেছে অনেক দূরে।
যেই বন্ধুটি বন্ধুত্তের বাঁধনকে অবজ্ঞা করে ইমারত গড়তে ছুটে চলেছিল অনেক বেস্ত পথে সেই বন্ধুটি একদিন ফিরে আস্তে চাইবে এই মায়ার পরশে। ভাঙ্গা কাচ জোরা হয়তো লাগবে কিন্তু কখনো তা আগের মত হবেনা।
যেই মানুষটি নিজের লোভী স্বার্থপরতার জন্য উপেক্ষা করেছে আরেকটি মানুষের ভালোবাসা, বিচার করেনি তার মহানুভবতা, অনুভব করেনি তার অনুভূতি, মেপে দেখিনি তার বিশালতার গভীরতা সেই মানুষটি একদিন গোপনে কেদে আফসোস করবে কেন মিছে মায়ায় মজে আজ আমি একা, কেন এত প্রতিপত্তি থেকেও আমি এত অসহায় কেন এত কিছু থেকেও আজ আমার মনে অজানা অভাব, সেই প্রশ্ন হয়তো তখন শুধু প্রশ্নই থেকে যাবে।
যেই আত্মীয় তার সন্তানের কথা ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে গিয়েছিল সবার থেকে, সেই আত্মীয় যখন তার আধুনিক সন্তানদের আধুনিকায়নে তেক্ত হয়ে আবার ফিরে আসতে চাইবে সেই মানুষদের কাছে একটু প্রশান্তির জন্য। ফিরে আসতে চাইবে সেই বোনের কাছে যাকে মন খুলে মনের সবটা কথা বলা যায়, ফিরে পেতে চাইবে সেই ভাইকে যাকে বুকে জড়িয়ে ধরলে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী বলে মনে হয়।
শুরুতে বলেছিলাম জীবন মানে জি বাংলা। কেন? না তেমন কোন কারন নেই। আমি আজ কোন চ্যানেলকে বিশ্লেষণ করতে চাচ্ছি না। তবে ঐ বাক্যটির মাঝে লুকিয়ে আছে অনেক কিছু। হাসি তামাসা, দুঃখ, লোভ, লালসা, প্রেম-বিচ্ছেদ, নীতি-দুর্নীতি, নৈতিকতা-অনৈকতা, কামনা-বাসনা আর অনেক কিছু। প্রতিটি অনুষ্ঠানের শেষ যেমন ভালোর মধ্য দিয়ে হয় হয়তো আমাদের জীবনেও এমনটি ঘটে। কিন্তু কিছু বিষয় আমাদের মনে দাগ কেটে যায় আর সব কিছু ঠিক হয়ে গেলেও সেই দাগ আমাদের বয়ে বেড়াতে বাকি পুরোটা সময়। জি বাংলার কথাই কেন বললাম? কারন এই শব্দটি আর এই চ্যানেলটি বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক প্রচলিত এবং জনপ্রিয় একটি নাম। তাই একে উপমা করতে চাচ্ছি। ভালো মন্দ বিচার নিজের কাছে অন্য কিছুকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।
এই পৃথিবীতে আমরা অল্প কিছুদিনের জন্য এসেছি তবে কেন এই জটিলতা? কেন এই কুৎসিত স্বার্থপরতা। প্রকিতপক্ষে এখন আর পরিবর্তনের কথা বলে লাভ নেই। যেমন মাটির পুতুল শুকিয়ে গেলে আর পরিবর্তন করা যায় না, ভেঙ্গে ফেলা ছাড়া তখন এতে আর নতুন কোন আকার দেয়া যায় না। এক কথা বলতে গেলে অন্য প্রসঙ্গ চলে আসে তাই কথা বাড়াতেও চাচ্ছি না। শুধু বলতে চাই। মানুষকে তার কৃতকর্মের ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে সেটা ভালো হক আর মন্দ। স্বার্থপর হয়ে আমরা নিজের কতটুকু ভালো করছি সেটা যেমন দেখার বিষয় তেমনি অন্নের কতটা ক্ষতি করছি সেটাও সমানভাবে খেয়াল রাখার বিষয়।।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




