somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবিজ-কবজ সম্পর্কে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের বক্তব্য এবং এর জবাব

২৪ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রসঙ্গ: তাবি-কবজ ও ঝাঁড়-ফুঁক

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
প্রকাশ: ৯ আগষ্ট ২০০০ খ্রিস্টাব্দ,
সাপ্তাহিক ইসলামিক সমাচার, লন্ডন।

প্রসঙ্গ কথা
লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইসলামিক সমাচারের ৯আগষ্ট ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তাবিজের পক্ষে ‘প্রসঙ্গ : তাবিজ-কবজ ও ঝাড়-ফুঁক’ শিরোনামে জনপ্রিয় ইসলামী ম্যাগাজিন মাসিক মদিনার সম্মানিত সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের একটি লেখা প্রকাশিত হয়। আমরা এখানে প্রথমে খান সাহেবের এই লেখা পাঠ করবো, তারপর শ্রদ্ধার সাথে বিবেচনা করবো তাঁর বক্তব্যের সত্যতা।


আমাদের সমাজে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ ইত্যাদির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। বুজুর্গ আলেম ও পির-মাশায়েখগণ জানা-অজানা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকজনকে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ দিয়ে থাকেন। আর বিপদগ্রস্ত লোকজন এসব ব্যবহার করে উপকার লাভ করেন। এসবের প্রচলন আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে।
ইদানিং এক শ্রেণীর লোককে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজকে হারাম, শেরেকী আমলরূপে সাব্যস্ত করতে তৎপর দেখা যায়। সুতরাং ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজের বৈধতা শরীয়তের দলীলদ্বারা প্রমাণ এবং তৎসঙ্গে যারা এগুলিকে হারাম সাব্যস্ত করে থাকেন ও এই চরম সিদ্ধান্তের অনুকূলে কিছু দলীল-প্রমাণ ও যুক্তির অবতারণা করেন, সেগুলি অবশ্যই পর্যালোচনার দাবি রাখে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হালাল এবং হারামের দলীল আমাদিগকে কুরআন এবং সুন্নাহ্ থেকেই গ্রহণ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে বা সুন্নায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বা ইশারা-ইঙ্গিতেও যদি কোন বিষয়ের বৈধতার দলীল থাকে, তবে সে বিষয়টাকে সরাসরি হারাম বলা চরম ধৃষ্ঠতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তাছাড়া যুগ পরম্পরায় নির্ভরযোগ্য আলেমগণের আমলও শরীয়তের একটি দলীলরূপে গণ্য। শেষোক্ত এই দলীলটিকে ‘এজমায়ে উম্মত’ বলা হয়।
পবিত্র কুরআনের অনেকগুলি আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘কুরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য শেফা ও হেদায়াতের উৎস।’ আলোচ্য আয়াতগুলোতে উল্লেখিত ‘শেফা’ শব্দের তফসীরে শাহ্ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (রহ.) লিখেছেন, ‘কুরআন শরীফের চাইতে ব্যাপক উপকারী এবং মানবজাতির রোগ-ব্যাধি নিরাময়কারী আর কিছু নাযিল হয়নি।’ যেমন বলা হয়েছে, ‘আর আমি কুরআনে এমন কিছু আয়াত নাযিল করেছি যা মু’মিনদের জন্য শেফা এবং রহমত স্বরূপ।’ (বনী ইস্রাঈল: ৮২)
এতদসঙ্গে পবিত্র কুরআনের আয়াতে শেফা নামে পরিচিত আয়াতগুলোর কথা উল্লেখ করা যায়। আয়াতগুলো হচ্ছে :
১. সুরা তাওবার ১৪ নং আয়াত, ২. সুরা ইউনূসের ৫৭ নং আয়াত, ৩. ছুরা নাহ্লের ৬৯ নং আয়াত, ৪. সুরা বনী ইস্রাঈলের ৮২ নং আয়াত, ৫. সুরা আশ্-শোয়ারার ৮৫ নং আয়াত এবং ৬. সুরা হা-মীম ছাজদার ৪৪ নং আয়াত। উপরোক্ত প্রতিটি আয়াতেই কুরআনে মুমিনদের জন্য ‘শেফা’, ‘রহমত’ প্রভৃতির কথা উল্লেখিত হয়েছে। তফসীরবিদ ইমাম বায়হাকী (রহ.) ‘শেফা’ অর্থ আত্মা এবং দেহ উভয়ের শেফা বা নিরাময় বলেছেন। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে যেমন আত্মার যাবতীয় রোগ এবং মন্দ প্রবণতার চিকিৎসা রয়েছে, তেমনি দেহের যাবতীয় রোগ-ব্যাধীরও চিকিৎসা রয়েছে।
কুরআনের আয়াত দ্বারা রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা হতে পারে এ কথা অনুধাবন করার জন্য শেষ দু’টি সুরার তফসীর ও শানে-নুযুল পাঠ করাই যথেষ্ট। উল্লেখ্য যে, এই দুইটি সুরা হযরত নবি করীম (সা.)-কে যাদু করার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল। আল্লাহ্পাক যাদুর প্রতিকার করার উদ্দেশ্যে সুরা দু’টি দান করেছিলেন।
ইমাম কুশাইরী (রহ.) তাঁর মারাত্মক অসুস্থ শিশুপুত্রের চিকিৎসার লক্ষ্যে যে আয়াতে ‘শেফা’ পাত্রে লেখে তা পানিতে ধুয়ে পান করিয়েছিলেন। ফলে মৃতকল্প শিশুটি আশ্চর্যজনকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ইমাম সাহেব এই তদবীরটি একটি মোবারক স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশের ভিত্তিতে করেছিলেন। তারপর থেকে আয়াতে ‘শেফা’ গুরুতর অসুস্থতা নিরাময়ের লক্ষ্যে যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম তাজউদ্দীন সুবকী (রহ.) রোগ-ব্যাধী নিরাময়ের উদ্দেশ্যে আয়াতে শেফা এবং পবিত্র কুরআনের অন্য কয়েকটি আয়াতের ব্যবহার সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা শেষে মন্তব্য করেছেন যে, ‘আমাদের মাশায়েখগণ রোগ-ব্যাধী নিরাময়ের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনের আয়াত ব্যবহার করতেন।’
হাদিস শরীফের সহীহ্ বর্ণনায় বিচ্ছুর দংশনজনিত বিষ নিরাময়ের দোয়ার উল্লেখ আছে। সুতরাং ঝাড়-ফুঁক কুরআন-হাদিস পরিপন্থী, এমন কথা বলা মোটেও বাস্তবতা-সংগত নয়।
সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.) শিশুদিগকে সর্বপ্রকার ভয়-ভীতি ও আপদ-বালাই থেকে নিরাপদ থাকার একটি দোয়া শিক্ষা দিতেন। যারা দোয়াটি উচ্চারণ করতে সম হতো না তাদের জন্য দোয়াটি কাগজে লিখে তা ওদের গলায় ধারণ করতে দিতেন। [যাদুল-মাআদ]
হাদিস শরীফের কোনো কোনো বর্ণনায় ‘তাবিজ’ শব্দটিরও উল্লেখ পাওয়া যায়। সুতরাং সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয় যে, ঝাড়-ফুঁক যেমন একটি মছনূন আমল, তেমনি তাবিজ ব্যবহারও সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে প্রচলিত একটি বৈধ আমল।
আবু দাউদ এবং ইবনে মাজাহ্ শরীফে ‘রোক্বা তামায়েম ও তোলা হারাম’ উল্লেখ করে যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে, সে হাদিসের তিনটি শব্দ রোক্বা অর্থ-দুর্বোধ্য বা শেরেকী শব্দাবলী সম্বলিত ঝাড়-ফুঁক, তামায়েম অর্থ-তন্ত্রমন্ত্র লিখিত তাবিজ এবং তোলা অর্থ-তুক-তাক বা যাদুমন্ত্র। জাহেলিয়াতের যুগে যেমন এসবের প্রচলন রয়েছে। এসব কুফরী যাদুমন্ত্রের ব্যবহার যে হারাম তাতে কারো দ্বিমত নাই।
ইবনে মাজাহ্ শরীফে হযরত আলী (রা.)কর্তৃক বর্ণিত এক হাদিসে আছে যে, সর্বাপো বড় নিরাময়কারী হচ্ছে কুরাআন। ইমাম বায়হাকী (রহ.) ও শাফী (রা.) আয়াতে শেফার তফসীরে পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ ‘মাওয়াহেবে রাদুন্নিয়া’ নামক বিখ্যাত কিতাবে আলোচিত হয়েছে। এতদসঙ্গে একথাও বলা হয়েছে যে, কুরআনের আয়াত বা হাদিস শরীফে উল্লেখিত দোয়া কালাম পাঠ করে বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে সমান উপকার পাওয়া যায়।
ইমাম কুশাইরী (রাহ.) ঝাড়-ফুঁক এবং তাবিজকে দোয়ার বিকল্পরূপে উল্লেখ করেছেন। কারণ, দোয়া তাবিজ এবং ঝাড়-ফুঁক প্রভৃতি সবকিছুতেই আল্লাহর নামের ওছিলা গ্রহণ করে আল্লাহ্র নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, যা অবৈধ হওয়ার কোন কারণ নেই। বরং এগুলিও একান্তভাবে আল্লাহ্র নিকটই সাহায্য প্রার্থনার একটি পদ্ধতিরূপে গ্রহণযোগ্য। এই গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিকে কুফুরী ও জাহেলিয়াত যুগের শেরেকী কালামের কুফুরী ও জাহেলিয়াত যুগের শেরেকী কালামের সাথে একাকার গণ্য করা মোটেও যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।



----------------------------------------------------------------------------------
সৈয়দ মবনু

প্রসঙ্গ কথা

প্রিয় পাঠক, মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রতি আমার প্রচুর শ্রদ্ধা থাকার পরও এই লেখাটির দুর্বল দিক পর্যালোচনা আমাকে করতেই হলো। ২৫ অক্টোবর এবং ৮ নভেম্বর ২০০০ খ্রিস্টাব্দের সাপ্তাহিক ইসলামিক সমাচারের দুই সংখ্যায় আমার ‘তাবিজ-কবজ ও ঝাড়-ফুঁক প্রসঙ্গে’ প্রকাশিত হয়।
১)
ব্রিটিশ শাসনের দুইশত বছরের প্রভাবে ভারতবর্ষের মুসলিম সমাজে যেমন ইসলামিশিক্ষা হ্রাস পেয়েছিলো তেমনি সহী-উল-আকায়েদ ইসলাম থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন ভণ্ডপির এমনকি মিথ্যা নবুওতের দাবিদারও জন্মে ছিলো। ওদেরই প্রভাবে একসময় পাক-ভারত-বাংলায় এক শ্রেণীর লোক জীবিকার মাধ্যম হিসেবে তাবিজ-কবজের ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে তা অনেকটা জমজমাট ভাবেই চলছে। পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন দেখলেই ব্যাপারটা অনুমানে আসবে। তাবিজ-কবজের সাথে অনেকে কুফরী যাদু-মন্ত্র ও করছেন বলে শোনা যায়। অনেকে আবার ইসলামি চিকিৎসা পদ্ধতি বলে এগুলোর মহত্ব বর্ণনা করে থাকেন। এই প্রোপটে আজ থেকে দু-এক বছর পূর্বে লন্ডনের সাপ্তাহিক সুরমা ও সাপ্তাহিক ইসলামিক সমাচার পত্রিকায় ‘কুরআন-হাদিসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি?’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। প্রবন্ধটি প্রকাশের পর আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত পাঠকের সহযোগিতায় ঈদুল আযহা দুই হাজার সাল উপলে তা সিলেট থেকে গ্রন্থাকারে বের হয়। অন্যদিকে আমার বন্ধু-বান্ধব এবং শ্রদ্ধাভাজনেষু পরিচিতজনদের মধ্যে যারা প্রত্য বা পরো তাবিজ ব্যবসার সাথে জড়িত, তারা বিভিন্নভাবে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন। অনেকে গালি-মন্দও দিয়েছেন। দু-চার জন এমনও আছেন যারা টাকার লোভ দেখিয়ে বলেছেন, তাবিজের বিরোধীতা না করতে। তাদের কোন কিছুই আমার হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি, কারণ এক্ষেত্রে আমি শায়খুল ইসলাম ইমাম তকিউদ্দিন ইবনে তায়মিয়া (রা.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত। আমি তাদেরকে স্পষ্ট বলেছি, তাবিজের বিরুদ্ধে আমি যে হাদিসগুলো নকল করেছি সেগুলোকে যদি আপনারা সহী মনে না করেন তবে দলিল দিন। অথবা আপনারা তাবিজের পে সহী দলিল উপস্থাপন করুন। এই পর্যন্ত তারা তা পারেননি বা সে দিকে চেষ্টা না করে নানা কথার মালা গেঁথে মূল বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের বিশ্বাস, কোন ঈমানদারের সামনে সহী-উল-আকায়েদ ইসলাম উপস্থাপন করলে সে মানতে বাধ, যেহেতু তার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর বিশ্বাস, রাসুলের আনুগত্য এবং বেহেস্তের প্রত্যাশা।
আমাদের সমাজে আবহমানকাল থেকে প্রচলিত বলেই কেউ কেউ তাবিজ-কবজের বৈধতা ঘোষণা করেন। তাদের অবশ্যই বুঝা উচিত যে, কোন কিছু যতই পুরাতন হোক যদি তা কুরআনে সুন্নায় প্রত্য-পরো বা ইশারা-ইঙ্গিতে না থাকে তবে তা দ্বীনি কাজ মনে করে পালন করা বিদআত। আর যদি তা কুরআন-হাদিসের বিধান পরিপন্থী হয় তবে হারাম। বিদআত কিংবা হারামে কিছু সাময়িক উপকার হলে তা বাস্তবিক দিকে প্রচুর তির কারণ। মহানবি (সা.) বলেছেন-‘সর্বোত্তম বক্তব্য আল্লাহর বক্তব্য। সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা রাসুল (সা.)-এর জীবন ব্যবস্থা। সব চাইতে নিকৃষ্ট কাজ ইসলামের ভেতর নতুন কিছু (বিদআত) সৃষ্টি করা। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। (মুসলিম শরিফ)
স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালার ঘোষণা-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আইন অমান্য করে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিপে করা হবে।’ (সুরা নিসা- ১৪)
তাই আবহমান কাল থেকে প্রচলিত কাজ যদি কুরআন-হাদিস ভিত্তিক না হয়, তবে তা অবৈধ। অনেকে ঝাঁড়-ফুঁক এবং দোয়ার বিধান দিয়ে তাবিজ-কবজের কিয়াস করেন। কুরআন-হাদিস-ইজমা-কিয়াসের মাধ্যমে ইসলামের বিধান প্রণীত হয়। তবে ইজমা ও কিয়াস তখন-ই বৈধ হয় যখন কুরআন-হাদিস কিংবা হযরতে সাহাবা-এ-কিরামের আমলে পাওয়া যায়। আমাদের বুঝা উচিত যে, তাবিজ-কবজ আর ঝাঁড়-ফুঁক কিংবা দোয়া এক জিনিস নয়। ঝাঁড়-ফুঁক শিরক্ মুক্ত হলে অসুবিধা নেই তা স্বয়ং রাসুল (সা.) বলেছেন। আর দোয়া নিজের জন্য বা অন্যের জন্য তাতো বড়ই ফাজিলতের কাজ। নবি-রাসুল, সাহাবাসহ আল্লাহর প্রত্যেক নেক বান্দারা দোয়া করেছেন এবং তাদের অনুসারীগণ আজো করছেন । পবিত্র কুরআনে -হাদিসে বিভিন্ন বিষয়ে দোয়া রয়েছে, এসব পাঠ করলে উপকার হয়। তবে এগুলোর সাথে তাবিজ-কবজের কোন সম্পর্ক নেই। তাবিজ-কবজ বৈধ হয় কিভাবে যেহেতু এসবের বিরুদ্ধে স্পষ্ট রাসুল (সা.)-এর হাদিস রয়েছে। (হাদিসগুলো দেখতে পারেন কুরআন হাদিসের আলোকে তাবিজাত র্শিক নয় কি? পর্বে)। অনেকে বলেন, ‘ইমান কুরাইশী (রা.) তাঁর অসুস্থ শিশু সন্তানের চিকিৎসা করেছেন একটি পাত্রে আয়াতে শিফা লিখে তা পানি দিয়ে ধুয়ে পান করিয়ে।’(মাওলানা মহিউদ্দিন খান, প্রসঙ্গ: তাবিজ-কবজ ও ঝাড়-ফুঁক, ইসলামিক সমাচার, লন্ডন, বর্ষ-২, সখ্যা-৬৫, পৃ. ৫)।
আমি বলবো, হয়তো তিনি করেছেন। কিন্তু তাঁর ঘটনা কি প্রামণ করে না যে তাবিজ-কবজ উচিত নয়? তিনি যদি আয়াতে শিফা কাগজে লিখে কবজে ডুকিয়ে তাগায় বেঁধে শরীরে ঝুলাতেন তবে একটা কথা ছিলো। তারপরও এই ঘটনা দলিল হতো না যেহেতু এর বিরুদ্ধে হাদিসে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে, হযরতে সাহাবা কিরাম (রা.)এর বিরোধীতা করেছেন এবং তিনি তা করেছেন শিশুবাচ্চার ক্ষেত্রে। বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) শিশুদেরকে ভয়-ভীতি ও আপদ-বিপদ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য একটি দোয়া শিক্ষা দিতেন। যারা দোয়া পাঠে অম হতো তাদের জন্য লিখে গলায় বেঁধে দিতেন।
(আবু দাউদ এবং যাদুল মাআদ)।
অনেকে এই ঘটনাকেও তাবিজের দলিল মনে করেন। এটা তাবিজ-কবজের দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মা’জুর (যে কোনো কারণে অম) ব্যক্তিদের জন্য শরিয়তের বিধান সাধারণ বিধান থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই মা’জুরদের মাসআলা দিয়ে সাধারণ মাসআলার কিয়াস হয় না। বাচ্চাদের ব্যাপারে ও তাই। বোখারি শরিফে দুইটা হাদিস রয়েছে বাচ্চরা মহানবি (সা.) এর সামনে বাজনা বাজিয়ে গান গেয়েছে। একটা ছিলো ঈদের দিন, স্বয়ং হযরত আয়েশা (রা.)-এর কে। যে হযরত আবু বকর (রা.) এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করলে স্বয়ং রাসুল (সা.) এর উত্তরে বলেন, ‘আবুবকর তুমি ওদের প্রতি রাগ করো না। প্রত্যেক জাতিরই বিশেষ কিছু দিন থাকে আনন্দ-উৎসবের। আজ মুসলিম উম্মাহের সেই দিন।’
অন্য ঘটনাটি ঘটে হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রা.)-এর বিয়ের মাহফিলে। কিছু বাচ্চা ছেলে-মেয়ে বাজনা বাজিয়ে গান গেয়ে গেয়ে মহানবি (সা.)-এর সামনে থমকে দাঁড়ালো। রাসুল (সা.) তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা বন্ধ হলে কেন? চালিয়ে যাও।’
এই দুই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে শরীয়তের বিধান মতো যারা বাচ্চা তারা বিয়ে কিংবা ঈদে বাজনা বাজিয়ে গান করতে পারে। তবে বয়স্কদের জন্য বাজনা হারাম। এখন যদি এই হাদিস দু’টি উপস্থাপন করে ফতোয়া দিয়ে বসেন যে, ইসলামে বাদ্যযন্ত্র বৈধ হবে, তবে তা চরম ধৃষ্টতা বলেই প্রমাণিত হবে। তেমনি তাবিজ-কবজের ব্যপারটাও। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) কিংবা ইমাম কুরাইশী (রহ.) এর ঘটনা ছিলো শিশু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তাই এই ঘটনাসমূহ সাধারণভাবে তাবিজের বৈধতা প্রমাণ করে না।
তাবিজের বৈধতা ঘোষণা করতে অনেকে পবিত্র কুরআনের যে সব আয়াতে প্রত্য-পরো শিফা শব্দ রয়েছে সেগুলো উপস্থাপন করে থাকেন। তারা ইতিমধ্যে বিভিন্নভাবে যে সব আয়াতের নম্বর আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন আসুন আমারা সে সব আয়াতের অর্থ, ব্যাখ্যা, শানে নুজল খুলে দেখি কোথাও তাবিজ-কবজের কথা বলা হয়েছে কি?


লন্ডনের পাকি ইসলামিক সমাচার (বর্ষ-২, সংখ্যা- ৬৫) এ আমাদের অনেকেরই শ্রদ্ধাভাজনেষু হযরত মাওলানা মহিউদ্দিন খান তাবিজের পক্ষে যে সব আয়াতের নম্বর দিয়েছেন পাঠকদের সামনে সেগুলোর অর্থ-ব্যাখ্যা সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।

১.সূরা তাওবার ১৪ নম্বর আয়াত
...........
অর্থ : ‘যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দিবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তর সমূহ শান্ত করবেন।’
এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে জিহাদের মাধ্যমে যে বিজয় আসবে তাতে মুসলমানদের অন্তর সমূহ শান্ত হবে।‘ এখানে তাবিজের কথা নয়। বলা হয়েছে জিহাদের কথা।

২. সূরা ইউনূসের ৫৭ নম্বর আয়াত
.......
অর্থ : হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের প থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।’
এই আয়াতে ‘শিফা’ শব্দের সাথে ‘ছুদুর’ শব্দ যুক্ত হয়েছে। ‘ছুদুর’ হলো ‘ছদর’ শব্দের বহুবচন। আভিধানিক অর্থ-বুক, মুফাচ্ছেরগণ অর্থ উঠিয়েছেন-অন্তর।
হযরত হাসান বসরী (রাহ.) বলেন, ‘পবিত্র কুরআনের এই বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বোঝা যায় যে এটি বিশেষত অন্তরের রোগের শিফা; দৈহিক রোগের চিকিৎসা নয়।
(রুহুল মা’আনী)।
শায়েখ ইমাদুদ্দিন ইবনে কসির (রাহ.) বলেন, ‘বান্দার উপর স্বীয় ইহসানের বর্ণনা দিতে আল্লাহ পাক এই আয়াত নাজেল করেন।...এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘এটা তোমাদের অন্তরের সন্দেহ, সংশয়, কালিমা ও অপবিত্রতা দূরকারী।’
(তফসীরে ইবেন কাসির)

৩. সুরা নহলের ৬৯ নম্বর আয়াত
অর্থ : এরপর প্রত্যেক ফল থেকে কিছু কিছু আহার কর। অতঃপর তোমাদের প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর; তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগমুক্তি; নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল স¤প্রদায়ের জন্যে।’
এই আয়াতে ‘ফি’হীস শিফা-উ-লিননাস’ বাক্য দিয়ে আল্লাহ পাক তাবিজ-কবজের কথা বলেননি। আয়াত দ্বারাই স্পষ্ট এখানে মধুর কথা বলা হচ্ছে। এত স্পষ্ট করে বলার পরও কেউ যদি মনে করেন এটা তাবিজ-কবজ সম্পর্কিত তবে তিনি ভুলে আছেন। কেউ কেউ অবশ্য এই আয়াতের ‘ফি হীশ শিফা-উ-লিননাস’ বাক্যে কুরআনের দিকে ইঙ্গিতের কথা মনে করেন। হাফেজ ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির (রা.) তা খণ্ডন করে বলেছেন, ‘কুরআনে শিফা রয়েছে তা সত্য কিন্তু এখানে শুধু মধুর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।


৪. সূরা বনী ইসরাঈলের ৮২ নম্বর আয়াত
-------
অর্থ : আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত।’
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাচ্ছিরগণ একমত, এখানে যে শিফা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এর দ্বারা পাপ মুক্তি বুঝানো উদ্দেশ্য। যেমন, এই আয়াতেরই শেষ অংশে বলা হয়েছে ‘গোনাহগারদের তো এতে শুধু তিই বৃদ্ধি পায়।’ এখানে গোনাহকে একটা রোগ বলা হয়েছে এবং আর যারা কুরআনকে গ্রহণ করলো তারা সেই রোগ থেকে মুক্তি পেলো। আর যারা অমান্য করলো তারা তিগ্রস্ত হলো। যেমন সূরা বাকারায় বলা হয়েছে-‘এটা এমন এক কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই এবং তা পথ প্রদর্শক মুত্তাকীদের জন্যে। (সূরা বাকারা- ২)।
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, যারা মুত্তাকী হতে চায় তারাই এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন থেকে উপকৃত হয়ে থাকে। এবং যারা উপকৃত হতে চায় না তারা তিগ্রস্ত হয়। হাফেজ ইবনে কাসির (রা.) সূরা বনী ইসরাঈলের ৮২ নম্বর আয়াতের তাফসিরে বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তাঁর সেই কিতাব সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, পবিত্র কুরআন ঈমানদারদের অন্তরের রোগসমূহের জন্য শিফাস্বরূপ। সন্দেহ, কপটতা, শিরক, বক্রতা, মিথ্যার সংযোগ ইত্যাদি সবকিছু এর মাধ্যমে বিদূরিত হয়। ঈমান, হিকমতহ, কল্যাণ, করুণা, সৎকার্যের প্রতি উৎসাহ ইত্যাদি এর দ্বারা লাভ করা যায়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।
মুফতি শফি (রা.) বলেছেন, ‘কুরআন পাক অন্তরের ঔষুধ এবং শেরক, কুফর, কুচরিত্র ও আত্মিক রোগ সমূহ থেকে মনের মুক্তিদাতা।’ (মাআরেফুল কুরআন, বাংলা অনুবাদ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান)। কোনো কোনো আলেম এই আয়াতের শিফা শব্দের শারীরিক রোগ মুক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তারা উদাহরণ স্বরূপ হযরত আবু সাইদ খুদর্রী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত ঐ হাদিস নকল করেল যে, ‘এক দল সাহাবি (রা.) সফর থেকে ফিরে হযরত নবি করিম (সা.)কে বললেন-‘এক গ্রামের সর্দারকে বিচ্চু দংশন করলে লোকেরা আমাদের কাছে আসে চিকিৎসার জন্য। আমরা সাতবার সূরা ফাতেহা পড়ে রোগীর গায়ে ফুঁ দিলে সে সুস্থ হয়ে যায়। রাসুল (সা.) এই কাজকে জায়েজ বলে স্বীকৃতি দিলেন।’ এই হাদিস দ্বারা তাবিজ-কবজের বৈধতা প্রমাণিত হয় না। শিরক মুক্ত ঝাঁড়-ফুঁক বৈধ হওয়ার ব্যাপারে তো কারো কোনো সন্দেহ নেই।

৫. সূরা আশ-শোআরা-৮৫ নম্বর আয়াত
..................
অর্থ : ‘আমাকে নেয়ামত উদ্যানের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর।’
এই আয়াত হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর দোয়ার একটি অংশ। দোয়া শুরু হয়েছে ৮৩ নম্বর আয়াত থেকে।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) মুশরিকদের সামনে বক্তব্য শেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেনÑহে আমার পালনকর্তা আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর এবং আমাকে নেয়ামত উদ্যানের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর।
(সূরা আশ-শোআরা-৮৩-৮৫)।
এখানে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ‘নেয়ামত’ শব্দ দিয়ে অবশ্যই তাবিজ-কবজের দিকে ইঙ্গিত করেননি। আর নিয়ামত উদ্যানের অধিকারী বলতে তাবিজ-কবজ দাতাদের কথা বলেননি। তিনি আকাক্সা প্রকাশ করেছেন বেহেস্তের। এখানে নিয়ামত শব্দ দিয়ে বেহেস্ত বুঝানো হয়েছে।

৬. সূরা হা-মীম সেজদাহ-৪৪ নম্বর আয়াত
.........
অর্থ : আমি যদি অনারব ভাষায় কুরআন পাঠাতাম তবে অবশ্যই তারা বলতো-এর আয়াত সমূহ পরিষ্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষার আর রাসুল আরবি ভাষী। বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার এবং যারা মুমিন নয় তাদের কানে আছে ছিপি আর কুরআন তাদের জন্য অন্ধত্ব।’
এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কুরআন অস্বীকারকারীদের কানে ছিপি আর চোখ অন্ধ এবং যারা ঈমান এনেছে কুরআনে বিধান মতো নিজেদের জীবন পরিচালিত করেছে তারা এই রোগ থেকে মুক্ত। মুফাচ্ছিরগণ সবাই একমত যে, এই আয়াতে কুরআনের মাধ্যমে কুফর, শিরক, অহংকার, হিংসা, লোভ, লালসা ইত্যাদি আত্মিক রোগ নিরাময় হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। অবশ্য অনেকে বলেছেন, দৈহিক রোগের ও প্রতিকার কুরআনী দোয়া পাঠের দ্বারা সম্ভব। আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি ঝাঁড়Ñফুঁক দেয়ার ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হলো তাবিজ-কবজ নিয়ে। যে আয়াতগুলো আমরা দেখলাম তাতে কি তাবিজের পে প্রত্য বা পরো কোনো দলিল রয়েছে? ইহুদীরা নবি করিম (সা.) কে যাদু করে ছিলো। তা প্রতিকারের জন্য আল্লাহ পাক সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস প্রেরণ করেন। আমার অনেক শ্রদ্ধাভাজন হযরত মাওলানা এই ঘটনা দিয়ে তাবিজ-কবজের দলিল খুঁজেছেন। অথচ হযরত রাসুল (স.) এই সূরা দুটিকে তাবিজ-কবজ হিসেবে ব্যবহার করেননি। তিনি তা দোয়া হিসেবে পাঠ করে নিজের শরীরে ফুঁক দিয়েছেন। আজো সহী-উল-আকায়েদ প্রত্যেক উলামায়ে কিরাম ফজরের এবং মাগরিবের নামাজের পর আয়াতুল কুরসী এবং চার কুল পড়ে নিজেদের শরীরে ফুঁক দিয়ে থাকেন। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আমাদের মুসলিম সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতির ল্েয মানুষকে সহী-উল-আকায়েদ ইসলাম থেকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার যে সকল প্রিয়জন ও শ্রদ্ধাভাজনরা ইসলামের পোশাক গায়ে দিয়ে তাবিজ-কবজের ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, ‘সহী-উল-আকায়েদ’ চিন্তে করে অন্য কোনো ব্যবসা খুঁজে বের করুন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। আর ব্যবসাতো আমাদের নবি করিম (সা.) এর সুন্নত। অবশ্য বর্তমানে কিছু সংখ্যক আলেম তাবিজ-কবজের ব্যবসাকে লজ্জাজনক মনে না করলেও কলকারখানা কিংবা এই রকমের শ্রমিকের কাজকে লজ্জাজনক মনে করেন। আমি তাদেরকে প্রায়ই প্রশ্ন করি, আপনি কি রাসুল (সা.) কিংবা সাহাবা-এ কিরাম থেকে বড় আলেম? আপনি কি ওদের থেকে বড় পির? রাহমাতুল্লিল আলামীন হয়েও যদি রাসুল (সা.) ইহুদীর ঘরে মজুর হিসেবে চাকুরী করতে পারলেন, আর যে আলী (রা.)-এর কথা স্বয়ং রাসুল (সা.) বলছেন, ‘আমি যদি হই জ্ঞানের ঘর হবে আলী সেই ঘরের দরজা।’ সেই আলী অন্যের ঘরে চাকুরী করেছেন নিজের পরিবার চালাতে। আরো অসংখ্যা ঘটনা রয়েছে। ইসলাম কোনো পাদ্রীইজম কিংবা ব্রাহ্মণ্যবাদীতার নাম নয়। ইসলাম হলো কুরআন-সুন্নার প্রতিটি আদেশ-নিষেধকে সহী-উল-আকায়েদ বিশ্বাসের সাথে আমলের নাম। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন কুরআন-সুন্নার নীতিতে চলার তৌফিক দেন।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:৫৬
১৮টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×