মানুষ তার জীবনকে খুব ভালবাসে। তবে প্রতিটি প্রাণীই তা করে। অন্য প্রাণী তার জীবনকে যতটা ভালবাসে, মানুষ মনে হয়; তার চেয়ে একটু বেশী ভালবাসে। কেননা মানুষ তার জীবন থেকে প্রতিদান চায়। সে তার সমগ্র জীবনের পরিশ্রমের বিনিময়ে চায় সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা আর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।
সে কখনো তার মৃত্যু আর সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে না। আপনি করেন কি? না, না; আমি জানি আপনি করেন। তবে কিনা, বিশেষ ক্ষেত্রে; বিশেষ সময়ে। এই যেমন ধরুন আপনি যদি কোন গুরুতর অসুস্থ হন তবেই আপনি মৃত্যু ও সৃষ্টিকর্তাকে মনে করেন। কারণ দু’টো। এক, আপনি চলে যাওয়ার পর আপনার চারপাশ ঘিরে থাকা আপন মানুষগুলোর কি হবে? এটা মৃত্যুর চিন্তা। দুই, আপনি সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন তার কারণ হল, আপনি চান আপনার সমস্ত পাপ আর অন্যায় থেকে মুক্তি। তাই নয় কি??
এটা একটা উদাহরণ মাত্র। এছাড়াও মানুষ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুকে চিন্তা করে না। এই যেমন, আপনি একটা জুতা, চামড়ার বেগ, রঙ্গিন টিভি, ফ্রিজ, কাঠের আলমারি, টেবিল, কম্পিউটার যাই কিনুন না কেন আপনি সব সময় চান নিশ্চয়তা। আপনি চান জিনিসটি যেন ভাল এবং স্থায়ী হয়। আমি জানি আপনিও চান। চান না? আপনি হয়ত বলতে পারেন জিনিস কিনব তো, ভাল দেখেই কিনব। ঠিক আছে! আমিও তা স্বীকার করছি। কিন্তু আপনি কেন ভাববেন না, জিনিসটা নিয়ে যাবার সময়ই মৃত্যুর শীতল র্স্পশ আপনাকে ছুঁয়ে যেতে পারে? আমি জানি, আপনি বলতে পারেন, “তাই বলে কি দেখেশুনে খারাপ জিনিস নেব”? আমি তা বলছি না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি, মৃত্যু চিন্তার কথা। কারণ অনেক মানুষ আছে, যারা খুব প্রয়োজন না হলে সৃষ্টিকর্তার কথা মনে করে না। তাঁকে যদি আমরা সবসময় মনে রাখি তাহলে হয়ত আমাদের পাপ, অন্যায়, লোভ, হিংসা ইত্যাদি অনেক কমে যেত। আর তার জন্যই দরকার মৃত্যু চিন্তা। যা আমাদের পাশে আছে সবসময়। কেননা মৃত্যু আমাদের সন্নিকটে না আসলে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি না। আমি, আপনি কেউ করিনা। করি কি? প্রথমেই বলেছি আমরা প্রয়োজন না হলে তাঁকে স্মরণ করি না। সব ধর্মেই মৃত্যুর পর আরেকটি জগতের কথা এবং সেইখানে নাকি আমাদের এই জগতের সব কাজের হিসেব নেয়া হবে। তাই এখন থেকেই এই হিসেবের পাল্লাটা আমাদের দিকে রাখতে হবে। তাহলে আমাদের শাস্তির পরিমাণ অনেক কমে যাবে। তাই আমরা যদি মৃত্যুর চিন্তাটা মাথাই রাখি তাহলে হয়ত সৃষ্টিকর্তার কথাটাও মনে থাকবে। আর যদি মনে না রাখি, তাহলে আমরা সপ্তাহে একদিন, পরীক্ষার সময়, রোগের সময়, বিপদের সময়ই তাঁকে স্মরণ করা হবে অন্য সময় নয়। আর যদি মনে রাখি, তাহলে হয়ত খারাপ চিন্তা, লোভ, ঘৃণা, পাপ এগুলো আমাদের মনে আসবে না। তখন দেখা যাবে যে, আমরা নিজেদের অনেকটা হালকা মনে করছি। কারণ তখন কারও মনে পাপ বা হিংসে থাকবে না। ফলে সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারব। জানি তা সম্বভ না। কেননা আমরা যতদিন বাঁচব ততদিন সৃষ্টির্কতাকে হয়ত দুই এক দিন স্মরণ করব, তারপর আবার সেই পাপ চিন্তা আমাদেরকে আঁকড়ে ধরে। তাই একটু চিন্তা করা উচিত, নয় কি?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪১