somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জীবনে প্রথম গরু কেনা B-) B-) B-) ......... (ঈদ পরবর্তী ফান পোস্ট)

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ভাই আমি ছাগল, আমি ছাগল”- এক ছোট ভাই আমাকে দেখে ঠিক এভাবেই চিৎকার করতে করতে আমার কাছে আসতে লাগল। কোরবানের ঈদের মৌসুম হওয়াতে উত্তর টা কমন পড়ে গেল। কিন্তু ব্যাপার হল আমরা কোরবানের ঈদের সময় যে প্রশ্নটা স্বাভাবিক করে থাকে এই প্রশ্নের উত্তর তো এভাবে না। কেউ শাইধা বলে না আমি ছাগল। ভাবলাম প্রশ্ন মনে হয় আগেই ফাঁস হয়ে গেসে, যুগ তো তাই বলে। আবার ভাবলাম আজকাল সৃজনশীল প্রশ্নউত্তরের যুগে আন্সার মনে হয় প্রশ্ন করার আগেই দেয়। কিন্তু আমার এই ছোট ভাই নিজেরে ছাগল বলার কাহিনী জিজ্ঞেস করতেই বলল-“ভাই বাজারে গেসিলাম গরু কিনতে। কিন্তু এক একজন গরু বেপারী গরুর যেই হারে দাম চাইতেসে গরুর দাম শুইনাই আমি ছাগল হয়ে গেসি”।


ব্যাপারটা আমাকে আঘাত করল বটে। কারন ঘরের ছোট ছেলে হওয়াতে এমনিতেই বেশ কিছু ব্যাপারে আমি ইম্যুনিটি পেয়ে থাকি। তেমন একটি হল কোরবানের ঈদে গরু টরু কিনতে হাটে যেতে না হওয়া। কিন্তু এবার ব্যাপারটা ভিন্ন। বড় ভাইয়া কাজের কারনে আগে থেকেই দেশের বাইরে। আর মেজ ও সেজ ভাইয়া বদলী চাকরীর কারনে চট্টগ্রামের বাইরে থাকায় আব্বার সাথে গরু কেনার গরু(গুরু) দায়িত্ব এই বেলা আমার উপরে। তাই ভাবতেসি আমি যদি বাজারে গিয়া দাম শুইনা ছাগল হইয়া যায় তাইলে আর কিছু না হোক আমার বড় ভাইয়া মিথ্যা প্রমানিত হইয়া যাইব। ভাই আমারে ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখায় ডাল হওয়ার কারনে গাধা বইলা ডাকে। নিঃসন্দেহে গাধা ইজ ব্যাটার দেন ছাগল। না ব্যাপারটা পাঠকই বিবেচনা করবেন।

গরুর ব্যাপক দাম শুইনা বাপরে কইলাম আগে ভাগে বাজারে গিয়া গরু কিনে ফেললে ভাল হয়। নাহয় পরে ঠিকই গরু কিনমু। কিন্তু বাজার থেকে আসার সময় দেখমু হাতে একখান দড়ি। বাজারের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারনা না থাকায় আমি পাম্প সু পইরা রেডি হইয়া বাপের দিকে তাকাতেই মাথা গেল বিগড়াইয়া। বাপে আমার গত দুসপ্তাহ ধইরা মর্নিং ওয়াকের নাম কইরা সুদূর দিল্লী থেকে কিনে আনা আমার এডিডাসের স্নিকার দখল কইরা রাখসে। এখন বাজারে যাওয়ার জন্যও তাই পরসে আবার জুতার ভিত্রে মোজাও পরসে!! যাক ছাইড়া দিলাম। কিন্সি তো উনার টাকা দিয়েই। প্রতি ঈদে গরুর বাজারে যাওয়ার আগে আমার আম্মার দুই খানা শর্ত থাকে যা আমি জন্মের পর থেকে দেখতেসি আমার বাপে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এক. আমার বাপের কালারের গরু কেনা যাবে না। দুই. ম্যাডাম কেনা যাবে না। বাপের কি কালার সেটা বলব না। শুধু বলব হে নিষ্ঠুর দুনিয়া জেনে রেখ ‘ব্ল্যাক ইজ বিউটি’। আর ম্যাডাম বলতে আম্মা গাই গরু বুঝান।

যথাসময়ে বাজারে পৌঁছলাম। গেইটে গিয়া টেলিসামাদের মত বাপে তাকায় আমার দিকে,দিলদারের মত আমি তাকায় আমার বাপের দিকে। আর পুরা বাজার বাসী তাকায় আমাগো দিকে (ব্যাক গ্রাউনডে হিন্দি সিরিয়ালের মত ক্যামেরা দুই চার এঙ্গেল থেকে ঘুরে ঘুরে ধ্রুম ধ্রুম আওয়াজ হপে)। বাজারের যতটুকু চোখ যাইতেসে খালি হাঁটু পরিমাণ কাঁদা আর পানি ছাড়া কিচ্ছু দেখিনা। এই অবস্থায় আমাগো মত জুতা মোজা পরা ফুলবাবু দেখলে তো মানুষ তাকাবেই। কিন্তু বাজারের ভিত্রে যা অবস্থা বাপরে কইলাম ধান চাষ দিলে শতক প্রতি হাজার মণ ধান পাওয়া যাইব। যাহোক আল্লাহ ভরসা বইলা বাপ পুতে ঢুকে গেলাম বাজারে। কিন্তু প্রথম কদম দিতেই ‘ম্যাট্রিক্স’ সিনেমার মত থ্রিডি ওয়েতে কাঁদা পিছন দিক থেকে ঘুইরা মাথার উপ্রে দিয়া সামনে জামায় আইসা পরতেসে। কিন্তু এত দেখার সুযোগ নাই।


আল্লাহর নাম নিয়া প্রথমে গেলাম এক গরু বেপারীর কাছে। তার একটা গরুর দাম শুইনা যে একটা দাম আমরা কমু সেই সাহস ও পাইতেসিলাম না। কারন দাম কইছে ‘আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা’। আই মিন আকাশচুম্বী। বাপে আমারে কয় দাম কইতে। বললাম ‘ডেড ইউ গট টু বি কিডিঙ মি’। এক কেজি ওজনের ফার্মের মুরগি কিনতে গিয়া যেখানে আমি ২০০গ্রাম ঠইকা আসি এই আমি কমু গরুর দাম!!!! যাইহোক বাপের চাপাচাপিতে একটা দাম কইলাম। হালার গরু বেপারী দাম শুইনা ভেটকি মাইরা এমন এক লুক দিল যেন ফ্রি তে তার কলিজা খানা চাইসি। না এইডা হইব না বইলা আরেক দিকে হাটা দিলাম।

হাঁটতে গিয়া বাপরে কইলাম “আব্বা আপনের পা কই”। বাপে কয় “কেন নিচে”। নিচের দিকে তাকায় দেখে বাপের পাও দেখা যায়না। হাঁটু সমান কাদায় ডুইকা গেসে। হায় আল্লাহ আমার এডিডাসের স্নিকার কইয়া ভ্যা কইরা কাইন্দা দিমু ভাবতেসিলাম, এমন সময় দেখলাম আমার পাশে এক পিচ্চি আমার আগেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতেসে। হের বাপ পাশে ছিল। কারন জিগাইতেই কয় এক ঘণ্টা ধইরা হিসু আটকায়া রাখসে, বলসি কইরা ফালাইতে। কিন্তু সবার সামনে সে মুতবে না। আবার আটকায়াও রাখতে পারতেসে না। আমি কইলাম ‘বাবু মুইতা ফেল, কিসসু হবে না। তোমার বয়সে আমি ঐশ্বরিয়া খালামনির সামনে নাঙ্গা নাচছিলাম’। শেষ করার আগেই পোলা দেখি কাপড় ভিজায়া ফেলসে। ছোটবেলায় ‘তাল’ মুভির ‘তাল সে তাল মিলা’ গানে সাথে ঐশ্বরিয়া আমাগো ড্রয়িং রুমে নাচতেসিল। তারে দেইখা পিচ্চি আমি এতই আবেগআপ্লূত হয়ে গেসিলাম যে তাঁর সামনেই নাঙ্গা নাচা শুরু করসিলাম। আমাদের মাঝে দূরত্ব ছিল মাত্র তিন হাত। ফারাক শুধু সে ছিল টিভির ভিত্রে আর আমি টিভির বাইরে।


এইবার গেলাম আরেকটা গরু দেখতে। কিন্তু এবার বেপারীর লগে না। লাগসে আমার আরেক লোকের লগে যিনিও আসছেন গরু কিনতে। ইনি হইলেন গিয়া বাজারের সবচেয়ে অবিবেচক লোকটি। কেউ দরদাম করার সময় মাঝখানে যদি আরেকজন আসেন দরদাম করতে সে শুধু গরু কেন অন্য ব্যাপারে হোক, তিনি হচ্ছেন আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অবিবেচক লোক। আব্বার দাম বলার মাঝখানেই দেখলাম উনি দামাদামি শুরু করে দিলেন। উনারে কইলাম “আঙ্কেল আপনার পাশের পোলাডা কি আপনের?”। তিনি বললেন ‘হু’। উনারে অন্যদিকে একটা বিশাল গরু দেখায়া কইলাম “তাইলে আপনে ওই গরুডা দেখেন”। আঙ্কেল বেকুবের মত হাইসা হাইসা কয় “ওইডা তো বেশি বড় বাবা, দেইখা আইলাম দাম কয় বেশি”। কইলাম “আপনের পোলার সাইজ দেখসেন, হাতির মত পোলার জন্য তো অন্তত ওর সাইজের একটা গরু লাগব। এই ছাগল সাইজের গরু দিয়া তো তারে পোষাইব না’। এইবার আঙ্কেল গরম হইয়া গিয়া কইলেন “বেদ্দপ পোলা মজা কর আমার সাথে?”। বললাম “চাচা মিয়া মজা তো আপনে করেন। আপনি একটা গরু দরদাম করার সময় যদি মাঝখানে আমি গিয়া কই এই গরু এত দাম দিমু আম্রে দিয়া দেও ।আপনের কেমন লাগব?”। এইবার আমার কথার ‘শানে নুজুল’ ধরতে পাইড়া আঙ্কেল রাগে গিজগিজ করতে করতে অন্যদিকে হাঁটা দিলেন।

এই গরুও নিলাম না আমরা। আমার বাপে তাঁর এক্সপেরিয়েন্স থেকে বললেন গরু কিনতে আমার বাপের এত সময় কখনো লাগে নাই। বাপে আমার টি২০ তে বিশ্বাসী। টেস্ট ফেস্ত আমার বাপের পছন্দ না। অবশেষে অনেক সাধনার পরে পুরা বাজারে গরু খোঁজা দিয়া আমরা একটা লাল বলদ কিনলাম।


বিরিশ গরু আমার পছন্দ। বিরিশ গরু আমার কাছে অ্যাকশান হিরোর মত। সব ফাটাইয়া ফুটাইয়া ধুমধাম মাইরা নায়িকারে নিয়া চইলা যাইব। আর বলদ গরু হল ট্র্যাজেডি হিরোর মত। যে শেষ সিনে নায়ক বা নায়িকারে বাঁচাইতে গিয়া গুল্লি খাইব তারপর নায়কের হাতে নায়িকার হাত তুলে দিয়া বলব ‘চিরদিন সুখে থেক’। কিন্তু বাপের উপরে কথা নাই। তাই বলদ গরু কিনলাম। যুগে যুগে ঘরের গরিবেরা আই মিন ছোটরা নির্যাতিত বলেই হয়তো আমার কথার দাম দিল না বাপে। ছোট বেলায় বিরিশ গরু ক্যামনে বলদ বানাইতে হয় সেটা পড়ছিলাম কৃষি শিক্ষা বইয়ে। আর সেটা ভাইবা হাসতে হাসতে গরু নিয়া হাঁটা দিলাম বাসার দিকে। কাঁদায় মাদায় মুড়াইয়া অবশেষে বাসার নিচে আইসা আম্মারে ফোন দিলাম নিচে নামতে গরু দেখার জন্য। কাঁদায় মুড়ানো আমি গরু নিয়া গেইটে দাঁড়াইয়া আছি। আম্মা নামল।

নাইমা গরুর দিকে না তাকাইয়া আম্মা আমার উপর নিচের দিকে তাকাইয়া হাসতে হাসতে কহিল---

“গরু কোনটা?” :(( :(( :((
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১
৫৮টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×