somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমালয়কন্যার কোলে-১

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিচিত অনেকেই নেপাল থেকে ঘুরে এসে হিমালয়কন্যার অপরূপ সৌন্দর্য্য বর্ননা করত। তখন ভাবতাম, আহ! আমিও যদি একটিবার ঘুরে আসতে পারতাম হিমালয়কন্যার দেশ থেকে। কিন্তু চাইলেই তো সব ইচ্ছে পুরন হয়না। ই্চ্ছা আর বাস্তবতার মাঝে বিশাল তফাত। তাই অপেক্ষাতেই কেটেছে দীর্ঘদিন। কিন্তু হঠাৎ করে সুযোগ মিলে গেল। ‘সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ লিডারশিপ সেমিনার’ নামে একটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহনের আমন্ত্রন পেলাম। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ - এই সাত দিন। বাংলাদেশ থেকে আমরা মোট ৩০ জন এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহনের আমন্ত্রন পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা ২৭ জন এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ৩ জন।

বিমানে আমার সিট ছিল জানালার পাশে। একদম ডানা বরাবর। রানওয়ে থেকে ৩২০০০ ফিট উপরে উঠা পর্যন্ত পুরো সময়টুকু হৃদয়ের গভীর দিয়ে অনুভব করতে চাইলাম। জীবনের প্রথম বিমান-ভ্রমণ বলে কথা! কত শত স্মৃতি মনে দোলা দিয়ে উঠল। ছোটবেলায় যখন গ্রামে ছিলাম, প্লেনের আওয়াজ পাওয়া মাত্র ঘর থেকে এক ছুটে বেরিয়ে আসতাম। বিশাল কড়ই গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে দেখতাম বিমান উড়ে যাচ্ছে। কখনো খোলা মাঠে চলে যেতাম। বিমানের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তাম। ভাবতাম বিমানে বসা কোন যাত্রী নিশ্চয় আমাকে দেখছে। বড়রা বলতেন, বিমান থেকে মানুষকে নাকি পিপড়াঁর মত লাগে দেখতে। কিন্তু আমার চোখে মানুষের নড়াচড়া চোখে পড়লোনা। কিন্তু বাংলাদেশকে কেন নদীমাতৃক দেশ বলা হয়, সেটা বুঝতে পারলাম। উপর থেকে বাংলাদেশকে স্যাতস্যাতে ভেজা একটা দেশ মনে হলো। ক্রমশই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হলো।

আমার পাশেই বসেছিল বন্ধু ইমরান আজাদ। উইণ্ডোসাইড সিট না পাওয়াতে বেচারার প্রথম বিমান-ভ্রমণ পুরোপুরি সার্থক হচ্ছিলনা। তাই ওকে আমার আসন ছেড়ে দিতে হলো বেশ কিছুক্ষণ। অবশ্য বিনিময়ে ওর ডিএসএলআর দিয়ে দারুন কিছু শট নিয়ে আমাকে ওর খুশি করতে হয়েছিল। যাকগে, কিছুক্ষণ পরে যখন আবার জায়গা ফিরে পেলাম, বিমান ততক্ষণে ভারত পার হয়ে নেপালে সীমানায় প্রবেশ করে ফেলেছে। সে এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! ছোট ছোট ধুসর পাহাড়। পাহাড়ের ফাকেঁ ফাকেঁ আকাবাকা রাস্তার মত চোখে পড়ল। ভাল করে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, সেগুলা আসলে চিকন পাহাড়ি নদী। এখন একদম শুকনা। ভরা বর্ষায় এগুলা নাকি খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। হিমালয়ের গা থেকে পানি বয়ে নিয়ে যায় ভাটির দিকে। কে বলতে পারে হয়ত এদেরই অনেকগুলো একসাথে মিলিত হয়ে তৈরি করেছে আমাদের পদ্মা, যমুনা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান হারিয়ে গেল ঘন মেঘের মধ্যে। মেঘ কেটে যেতেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল স্বর্গীয় এক দৃশ্য। চারিদিকে মেঘমালা ভেদ করে গম্ভীরভাবে দাড়িয়ে আছে সুউচ্চ পর্বত। পাহাড়গুলো এতই উচু মনে হলো বিমান থেকে লাফিয়ে নামা যাবে। আবারো মনে পড়ে গেল ছোটবেলার কথা। সাধারন জ্ঞানের বইয়ের মাধ্যমে শিখেছিলাম পাহাড় ও পর্বতের পার্থক্য। কিন্তু কখনো চাক্ষুষ দেখা হয়নাই। তাই একবার কুমিল্লার কোথায় যেন একটা টিলা দেখেছিলাম। তাতেই পাহাড় দেখার আনন্দ আর তৃপ্তি অনুভব করেছিলাম। পরে লালমাই পাহাড়ে গিয়ে মনে হয়েছিল, আমার এ জনম সার্থক। এখন নেপালের প্রকাণ্ড পর্বতের সাথে সেগুলোর তুলনা করে হাসি আটকে রাখতে কষ্ট হলো।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যখন ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরন করলো, নেপালের মনমাতানো দৃশ্যপট আমাদের স্বাগতম জানালো। বিমানবন্দরের চারপাশের উচু পাহাড় থেকে আসা মৃদু ঠাণ্ডা বাতাস আমাদের শরীরে অন্যরকম একটা আবেশ সৃষ্টি করলো। মন চাইল, এক ছুটে পাহাড়ের বুকে হারিয়ে যাই। যাই হোক, বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে হোটেলের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। হোটেল 'শিভম প্লাজা’ আমাদের গ্রহন করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল।

প্রথম তিনদিন রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে লিডারশিপ সেমিনার। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হয়। দিনের বাকি সময়টুকু ছিল সাইট-ভিজিট। ঘুরে আসি বাগমাতি নদীর তীরে অবস্থিত পশুপাতিনাথ হিন্দু মন্দির। হোটেল থেকে পাঁচ মিনিট হাটার পথ। বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত এটা। এখানে নেপালিরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে আসে। কেউ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনায় প্রণাম করে। কেউ ব্যায়াম করে। আবার এক জায়গায় দেখলাম মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছে। আমরাও ব্যায়ামের একটা সেশনে অংশগ্রহন কির। ১৯৭৯ সাল থেকে ইউনেসকো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত।


.................................. পশুপাতিনাথ মন্দির

ঘুরতে যাই শয়ম্ভুনাথে; পাহাড়ের উপর বিশাল একটা স্থাপনা। এখান থেকে পুরো কাঠমান্ডু উপাত্যকা এক নিমিষে অবলোকন করা যায়। এক সন্ধ্যাবেলায় চলে যাই থামেল। পুরো কাঠমান্ডু সন্ধ্যা হতেই যেখানে ঘুমিয়ে পড়ে, থামেল যেন রাতের বেলা মাত্র ঘুম থেকে জাগে। সেখানে পর্যটকের আনাগোনা এত বেশি যে, থামেলকে দেখে পশ্চিম দুনিয়ারর কোন শহর বলে বিভ্রম হতে পারে।


.........................................শয়ম্ভুনাথ থেকে কাঠমাণ্ডু উপাত্যকা

তিন দিনের মূল প্রোগ্রাম শেষে চলে যাই পোখারা। নেপালের সবচেয়ে সুন্দর অঞ্চল। কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ২০০ কি.মি. দুরত্ব। কিন্তু উঁচু-নিচু আকাবাকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌছাঁতে ৬-৭ ঘন্টা লেগে যায়। কিন্তু যাত্রাপথের চারিদিকের দৃশ্য এত মনোরম এবং এতটাই আদিম প্রাকৃতিক যে ক্লান্তি আপনাকে আচ্ছন্ন করতে পারবেনা। চারিদিকে পাহাড়ঘেড়া ছোট একটা শহর পোখারা। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ১০ টা পর্বতের মধ্যে তিনটাই পোখারায় অবস্থিত। ট্রেকারদের তীর্থভূমি এই পোখারা। অন্নপূর্না রেঞ্জে ট্রেকিং করার জন্য হাজার হাজার পর্যটক পোখারায় ভিড় করেন।


পোখারায় পৌঁছে দুরের একটা সবুজ পাহাড়ের প্রতি আমার দৃষ্টি চলে যায়। পাহাড়চূড়া মেঘের স্তর ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে। মানব-বসতির চিহ্নও চোখে পড়লো। ছোট ছোট ঘর। মেঘের উপরে মানুষের বসবাস! “আহা! একটিবার মাত্র একটিবার যদি ওখানে যেতে পারতাম!” যদিও জানতাম মানুষের সব স্বপ্ন পূরন হয়না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো ক্ষতি নেই! রাতের ডিনার শেষে আমার জন্য ভয়াবহ সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল। শুনলাম, পরদিন ভোরে আমরা ওই পাহাড়চূড়ায় উঠতে যাচ্ছি সূর্যোদয় অবলোকন করতে। তাও গাড়িতে করে। আনন্দে সারারাত আমার ঘুম হলোনা। এ নির্ঘুম আনন্দের।


....................................... ঐ দেখা যায় সরনকোট চূড়া

পরদিন সূর্য ওঠার এক ঘন্টা আগেই ঘুম থেকে উঠে সরনকোটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আগের দিন দূর থেকে পাহাড়চূড়াটাকে দেখে মনে হয়েছিল, এইতো হাতের কাছেই। কিন্তু যেতে যেতে বুঝলাম দূরত্ব খুব বেশি। গাড়িতে করে বন্ধুর পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে পর্বতচূড়ার অনেকটা কাছাকাছি পর্যন্ত চলে যাওয়া যায়। তারপর সেখান থেকে ৪৫ মিনিট ট্রেকিং করে পর্বতচূড়ায় পৌছতে হয়। পুরো পর্বত আস্ত একটা গ্রাম। প্রায় ৫০০০ হাজার মানুষ এই পর্বত-গ্রামে বসবাস করে। সমুদ্র থেকে ১৫৯২ মিটার উচু পর্বতচূড়ায় উঠা মাত্র ঠান্ডা বাতাস ঝাপটা মেরে আমাদের স্বাগত জানালো। চোখের সামনে ভেসে উঠল অন্নপূর্না রেঞ্জ, ফিশটেইলসহ বেশ কিছু পর্বত। ভোরের আলো অন্নপূর্নার বরফাচ্ছাদিত চূড়ায় প্রতিফলিত হয়ে একটা অসাধারন দৃশ্য সৃষ্টি করলো। পুরো পোখারা উপত্যকা একটা ফ্রেমে চলে আসলো।


...................................ট্রেকিং করে চূড়ায় ওঠার পথে


দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন



...
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×