somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খনা এবং তার বচন

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলের নবম-দশম শ্রেনির বাংলা পাঠ্যবইয়ে ’খনার বচন’ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা অনেকটা না জানার মতই। কারন সেখানে খনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা ছিলনা। তাই খনাকে নিয়ে একটু কৌতুহল রয়ে গিয়েছিল বৈকি। কৌতুহল নিবারন হয়েছিল 'পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’, বগুড়ায় গিয়ে। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের শিক্ষাসফরে সেখানে ছিলাম। পুরো একাডেমি জুড়ে একটু পরপর দেয়ালের সাথে ‘খনার বচন’ গুলো বেশ যত্ন করে লেখা ছিল। সেখান থেকেই এগুলো হাতে লিখে সংগ্রহ করা হয়।


কে এই খনা?



খনার পরিচয় নিয়ে অনেক কিংবদন্তী আছে। এক কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার (বর্তমানে বারাসাত জেলার) দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিন অনাচার্য। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে তিনি ছিলেন শ্রীলঙ্কার কোন এক রাজার কন্যা। তিনি লীলাবতী নামেও খ্যাত ছিলেন। খনা ছিলেন একজন প্রাচীন কৃষিবিদ। মূলত সেসময়ের একজন বিখ্যাত জ্যোতিষী হয়েও বাংলার কৃষকদের সাহায্যার্থে তিনি অসংখ্য ছন্দবদ্ধ উপদেশমূলক উক্তি রেখে গেছেন যা আধুনিক কৃষিবিজ্ঞানের সাথে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। খনার জন্ম নিয়ে সঠিক কোন তথ্য জানা নেই। তবে ধারনা করা হয়, আনুমানিক ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার জন্ম হয়েছিল।

বিবাহ

বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরকে খনার স্বামীরূপে পাওয়া যায়। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গণনা করে পুত্রের আয়ূ এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন।


কর্ম

খনা এবং মিহির দু'জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন।


মৃত্যু

রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় পিতা বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।


৭৫ টি খনার বচন

১. যে না শোনে খনার বচন, সংসারে তার চির পচন
২. যত জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট, তত জ্বালে ভাত নষ্ট
৩. খরা ভয়ে ঢালবি জর, সারা বছর পাবি ফল
৪. চাষী আর ঊর্বও মাটি, দু’য়ে মিলে দেশটা খাঁটি
৫. গাই পালে মেয়ে, দুধ পড়ে বেয়ে
৬. বামুন বাদল বান, দক্ষিণা পেলেই ছুটে যান
৭. উঠান ভরা লাউ শসা, ঘরে তার লক্ষ্মীর দশা
৮. পুত্র ভাগ্যে যশে ভাসে, কন্যা ভাগ্যে লক্ষ্মী আসে
৯. সবলা গরু, সুজন পুত; রাখতে পারে ক্ষেতের জুত
১০. তাল, তেতুঁল, কুল; তিনে কওে বাস্তু নির্মূল
১১. বেধেঁ রাখ কদম পাতা, সেরে যাবে যত ব্যথা
১২. কৃমি যদি সারাতে চাও, কদম পাতার রস খাও
১৩. থানকুনির পাতার কষে, আমাশয়ের ওষুধ আছে
১৪. নিম তিতা, নিশিন্দা তিতা, তিতা পীতরাজ; সর্বরোগের ওষুধ ধরে তাইতো কবিরাজ
১৫. সারায় কাশি তুলশির রস, জ্বরের ওষুধ শিউলীর কষ
১৬. শুভ দেখে করবে করবে যাত্রা, কারো না শুনে কু-বার্তা
১৭. ক্ষেত আর পুত, যা বিনে যমদূত
১৮. বাশ মরে ফুলেতে, মানুষ মরে ভুলেতে
১৯. নিজে মূর্খ, পুত নষ্ট; এর থেকে কি আর কষ্ট?
২০. পুবে হাঁস, পশ্চিমে বাঁশ; উত্তরে কলা, দক্ষিলে খোলা
২১. গরু-জরু-ক্ষেত-পুতা; চাষী বেটার মূল সুতা
২২. নিজের বেলায় আটিঁ সাটিঁ, পরের বেলায় চিমটি কাটি
২৩. হালে নড়বড়, দুধে পানি; লক্ষ্মী বলে চললাম আমি
২৪. ধরলে পোকা দিবি ছাই, এর ভালো আর কিছুই নাই
২৫. যদি বর্ষে মাঘের শেষ; ধন্যি রাজা, পুন্যি দেশ
২৬. খাই বসিলে বড়ই পেট, খাই খাইলে যমের ভেট
২৭. তপ্ত, অম্ল, ঘন দুধ; যে খায় সে নির্বোধ
২৮. তিনে নাশে গলা, ঘোল কুল কলা, তিনে নাশে গলা
২৯. বেল খেয়ে খায় পানি; জির (কৃমি) বলে মইলাম আমি
৩০. আম, নিম,জামের ডালে, দাতঁ মাজও কুতুহলে
৩১. খালি পেটে খাবে কুল; ভর পেটে খাও মূল
৩২. ফল খেয়ে জল খায়; জম বলে আয় আয়
৩৩. সকালে শোয় সকালে ওঠে, তার কড়ি না বৈদ্য লুটে
৩৪. গাছ যদি হয় তাজা মোটা, তাড়াতাড়ি ধরবে গোটা
৩৫. কলা রুয়ে না কাটে পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত
৩৬. গাই গেল হালে, দুধ উঠল চালে
৩৭. ধনের মধ্যে ধান, আর ধান হল গাই; সোনা রূপা কিছু কিছু, আর সব ছাই
৩৮. দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ; কমেনা কোন কালে বাড়ে বার মাস
৩৯. তাল বাড়ে ঝোপে, খেজুর বাড়ে কোপে
৪০. গুয়ার গোবর, বাঁশে চিটা; কাট দাদা কাটিসনা বেটা
৪১. ভরা হতে শুন্য ভাল, যদি ভরতে যায়; আগে হতে পিছে ভাল, যদি ডাকে মায়
৪২. হাত বিশেক করি ফাঁক, আম কাঠাল পুতে রাখ
৪৩. দশেক ধেনু হাজার কলা, কি করবে আকাল শালা
৪৪. সকল গাছ কাটি কুটি, কাঁঠাল গাছে দেই মাটি
৪৫. আগিয়ে দক্ষিণ পা, যেথা ইচ্ছা সেথা যা
৪৬. গরুর মুখে দিয়ে ঘাস, তারপরে করবে চাষ
৪৭. মাংস খেলে মাংস বাড়ে, দুধে বাড়ে বল; ঘিয়ে বাড়ে মস্তিক, শাকে বাড়ে মল
৪৮. বুড়া গরু ঝরা ধান, যে বেচে সেই সেয়ান
৪৯. চাষার বলে দেশটা নাচে, সোনা ফলে গাছে গাছে
৫০. চাষার পো জাগবে আগে, তারপর সুরুজ জাগে
৫১. খাটে খাটায় লাভের জতি, তার অর্ধেক কাধেঁ ছাতি; ঘরে বসে পুছে হাত, তার কপালে হা-ভাত
৫২. নিত্য নিত্য ফল খাও, বদ্যি বাড়ি নাহি যাও
৫৩. কালা জ্বর সারায় কালো মেঘের রস, যকৃতের দোষ সারায় দন্ডকলস
৫৪. গাছ যত তিতা, বাতাস তত মিঠা
৫৫. বাসক পাতার এমন গুণ, পুরনো কাশে ধরে ঘুণ
৫৬. (ফল) সকালে খাওয়া সোনা, দুপুরে খাওয়া রূপা, রাতে খাওয়া লোহা
৫৭. পাতার কষে, গাছের রসে; সকল রোগের ওষুধ আছে
৫৮. আলো হাওয়া বেধোঁনা, রোগে ভোগে মরোনা
৫৯. বারো মাসে বারো ফল, না খাইলে যায় রসাতল
৬০. মঙ্গলে উষা, বুধে পা; যথা ইচ্ছা তথা যা
৬১. নারিকেল গাছে নুন মাটি, শীঘ্র শীঘ্র বাঁধে গুটি
৬২. বীজ আনো খুঁজি, নয় যাবে পুঁজি
৬৩. গুয়ায় গোবর, বাঁশে মাটি; অফলা নারিকেলের শিকড় কাটি
৬৪. উঠান ভরা লাউ-শশা, খনা বলে লক্ষ্মীর দশা
৬৫. সবল গরু, গভীর চাষ; তাতে পুরে চাষার আশ
৬৬. গাছের মরিল আগ, গেরস্থের গেল ভাগ
৬৭. দক্ষিণ দুয়ারী ঘরের রাজা, পূর্ব দুয়ারী তাহার প্রজা; পশ্চিম দুয়ারীর মুখে ছাই, উত্তর দুয়ারীর খাজনা নাই
৬৮. থেকে বলদ না বয় হাল, তার দুঃখ চিরকাল
৬৯. গরু ছাগলের মুখে বিষ, চারা না খায় রাখিস দিশ
৭০. হাতে হাত ছোয়’না মরা ঝাটি রয়না, নারিকেল ময়না
৭১. নারিকেল বার হাত, সুপারি আট; এর থেকে ঘন হলে তখনই কাট
৭২. সোনরে মালি বলি তোরে, কলম রো শাওনের ধারে
৭৩. আনারসের কচিপাতা করে ক্রিমি নাশ, ফলের রসেতে হয় আমাশয় বিনাশ
৭৪. ভরা পেট খায়, মরণ পাছে যায়
৭৫. তিনশ পয়ষট্টি কলা রুয়ে, থাকবে চাষা ঘরে শুয়


খনার বচনগুলো সংগ্রহে যাদের ভূমিকা রেখেছেন:

নাসরিন নাহার বীথি
আইরিন আক্তার
রওশন রুনা
ফয়সাল ফারুক
ঝুয়েনা আক্তার
ইমরান আহসান
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×