(আগুন ঝরা মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ , গাজী সবাইকে অনেক সালাম । কিছু যোদ্ধা বেঁচে গিয়েও প্রতিদিন শহীদ হয়েছেন বারবার বারবার । অজানা সেই মানুষদের সালাম । যাদের কারণে মানুষ নাম টিকে শ্রদ্ধা করি । ভালোবাসা সেই সব মানুষদের জন্য। )
পুস্প রানী আজ কি আমারে পান খাওয়াবা না ? ভাত খাইছি কতো আগে । পুস্প ,কই গেলা ? আয়শা , তোর মা গেলো কই ? লোকমান কাজী ডাকতে থাকে ।
আয়শা বাবার ডাক শুনে পড়ার টেবিল থেকে উঠে এলো । দরজায় দাঁড়িয়ে বলল , ডাকো কেন ?
তোর মা কই ?
আমার মা বলো কেন ? জানি না সে কই ।
খুঁজে দেখ তো মা । এতো রাতে থাকে কই ?
আমি তার কি জানি ? ভ্রু কুচকে যায় আয়শার ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লোকমান । মা মরা মেয়ে । ছোট বউ পুস্পকে মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই । সে ভেবেছিলো সমবয়সী দুজন একসাথে থাকবে ,বন্ধুর মতো । প্রথম দিকে পুস্প খুব চেষ্টা করেও কাছে টানতে পারেনি আয়শাকে । মেয়েটা দিন দিন একটা আড়াল তৈরি করছে সবার সাথে । আগে বাপ সোহাগী ছিলো বড় । সেদিনও বাড়ি ফেরার সাথে সাথে মেয়েটা ঝাঁপ দিয়ে পড়তো । পুস্পকে বিয়ে করবার পর থেকে মেয়েটা কেমন বদলে যাচ্ছে ।
তোমার পুস্প রানী কুয়োর পাড়ে । মেয়ের কথায় সম্বিৎ ফিরে পায় লোকমান । নতুন বউ এর এই বিষয়টা বোঝে না সে । দিন রাত মানে না । কুয়োর পাড়ে কি করে ! গুনগুন করে গান গায় । খুব মায়াকাড়া গলা । কিন্তু কারো সামনে মুখ খোলে না ।
আমারে বলো কি লাগবে ? আমি দেই ।
দিনকাল ভালো না । লোকমান কাজী খুব চিন্তায় থাকে । কি যে শুরু হইলো দেশে ! গণ্ডগোল লাগাইছে অকামে এই মুক্তিগুলান ! ঘরে সেয়ানা মেয়ে । বউ টাও বড় সুন্দর । এই মুক্তিগুলান কখন কি করে !
শান্তি কমিটির সামনের বৈঠকে কিছু বলবে ভাবে লোকমান । এই বদ মুক্তিগুলান রে কায়দা মতো শায়েস্তা করা দরকার । সোনার দেশ বানাইতে চায় পাকিস্তানি ভাইয়েরা আর এরা বোঝে বেশি । এহ ! দেশ স্বাধীন করবে ! মাথায় ঊঠাবে । বাঙালী পারছে কি এই পর্যন্তও । মুখ খারাপ করে ওঠে লোকমান ।
ঘরে ঢুকেই অবাক হয় পুস্প । কি হইছে ? কারে গাইল দেন !
কাউরে না । আমাগো দেশের পোলাপান লায়েক হইছে । দেশ স্বাধীন করবে । উদ্ধার করবে সব !
সমস্যা কি আপনের ? ওরা তো আমাগো ভালোই চায় । পরের হাতে দেশ দিবে কেন ? পরে তো লাত্থি খাইতে হবে ।
বউ , যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বইলো না তো ।পোলাপান পোলাপানের মতো থাকো । বেশি বুঝবার চাও কেন ?
আমি পোলাপান ? পোলাপান বিয়ে করছেন কেন ?ওই সময় সরম করে না ?
চুপসে যায় লোকমান । বউয়ের এই কথার উত্তর দেবার সাহস নাই । এর আগে বলছিলো । হাবিজাবি বলে । পুরুষত্ব নিয়েও খোঁটা দেয় । ঠাট্টা করে । বলে আয়শা আপনারে আব্বা ডাকে । আমি কি ডাকবো ? মানে হয় কোনো !
এক সন্ধ্যায় পুস্প বসে ভাবছিলো অনেক অনেক কথা । বাড়ির কথা । বাবা , মা , ভাই বোন । কেমন আছে ওরা ? আয়শার বাবাকে বলতে হবে খোঁজ নিতে । নইলে ওকে পাঠিয়ে দিতে বলবে । অনেক দিন যায় না ও ।
হঠাৎ একটা ফিসফিস শব্দে থমকে যায় পুষ্পর ভাবনা । বাড়ির পেছন দিক থেকে কিছু কথা শোনা যায় । কারা ওখানে ? ওখানে তো একটা পুরনো গোলাঘর ছিলো । অনেক দিন যায় না ওদিক । পুষ্প খুব সন্তর্পণে উঠে দাঁড়ায় । পা টিপে টিপে বাড়ির পেছন যেতেই ওর হাত পা হিম হয়ে ওঠে । আয়শা কার সাথে কথা বলে ! গোলাঘরের দরজায় আয়শা । ভিতরে কেউ আছে । দূর থেকে দেখা যাচ্ছে না । তবে আয়শাকে খুব বিচলিত লাগছে । হঠাৎ আয়শা ঘুরে দাঁড়ালো । পুষ্প চট করে আম গাছটার আড়ালে দাঁড়ালো । আয়শা এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজা বন্ধ করলো । তারপর বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো । পুষ্প আস্তে আস্তে গোলাঘরের দিকে এগোলো । বেড়ার ফাঁকা দিয়ে যা দেখলো তাতে স্তম্ভিত হয়ে গেলো সে । এক অল্প বয়সী ছেলে । বড়জোর ওর চেয়ে বছর দুই তিনের বড় হবে ছেলেটি । পায়ে কাপড় পেঁচানো । তাতে রক্তের শুকিয়ে যাওয়া দাগ । খুব দুর্বল লাগছিলো ছেলেটিকে । কেমন ভয় ভয় নিয়ে পড়ে আছে । আহারে ! মনটা কেমন করে উঠলো পুষ্পর । কিন্তু ও এখানে কেন ? আয়শা ওকে কিভাবে চেনে ! ভাবতে ভাবতে পুষ্প বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো ।
প্রথম এ বাড়িতে এসে অবাক হয়েছিলো আয়শাকে দেখে । এ যে ওর বয়সের মেয়ে ! প্রথম থেকেই আয়শা মেনে নিতে পারেনি ওকে । নেবার কথাও নয় । নিজের বয়সী কাউকে মা ডাকা , নিজের মায়ের জায়গা ছেড়ে দেয়া খুব কষ্টের । কি করবে আয়শা । প্রথম প্রথম ভাব জমানোর চেষ্টা করে পরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলো সে । থাক ও ওর মতো । নিজের একটা ভুবনে বন্দী থাকে সে । পুষ্প নিজেও তাই । এতো বড় বাড়িতে মাত্র তিন জন মানুষ । তিন ভুবনে তিন জন থাকে যেন । দুই জন কাজের লোক । তারা যার যার মতো কাজ করে । ভূতুড়ে বাড়ির মতো । পুষ্পর একটুও ভালো লাগে না এখানে ।
রাতে আয়শার ঘরে যায় পুষ্প । আজ কথা বলতেই হবে । ভুরু কুচকে তাকায় আয়শা । তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে । সত্যি কথা বলবা ।
কি কথা ? মিথ্যা বলার কি তোমারে ?
ওই মানুষটা কে ?
কোন মানুষ ?
গোলাঘরে কে ?
তোমারে কে বললো ? তুমি কি আমার পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াও নাকি ? আয়শা বিচলিত ভাবটা আড়াল করবার চেষ্টা করে ।
আমি আজ দেখছি । এখন ঘটনা বলো ।
ঘটনার কিছু নাই । ওর নাম সাব্বির । ওর পায়ে গুলি লাগছিলো ।
মুক্তি ?
হুম । এখন কি করবা , বাবারে বলে দিবা ? বলো , কিচ্ছু আসে যায় না । ওর কিছু হইলে আমি ফাঁস দেবো কিন্তু । এইটা মাথায় রাইখো ।
ও তোমার কি হয় ?
কিচ্ছু না । চোখের পানি আড়াল করে আয়শা । কিছুতেই পুষ্পরে ওর কান্না দেখাবে না ও । এই মেয়ে আসার পর ওর বাবা এই মেয়ে নিয়েই ব্যস্ত থাকে । একবারও ওর মায়ের কথা বলে না। পুষ্পকে ও জীবনেও ক্ষমা করবে না ।
আয়শা যা বোঝার বুঝে নিলো । কি করছে এই বোকা মেয়ে ! ভাবতেই শিউরে ওঠে পুষ্প ।
ডাক্তার দেখাইছো উনারে ?
হুম ।
কি বলছে ডাক্তার ?
বিশ্রাম নিতে বলছে । গুলি বের করে দিছে ।
ডাক্তার জানলে বিপদ নাই ?
নাহ ! রমেশ কাকা ভালো মানুষ । তুমি এতো কথা শুনে কি করবা , বাবারে বলবা ? মনে আছে তো আমি কি বলছি ?
পুষ্প কিছু না বলে বের হয়ে এলো ঘর থেকে । আয়শা ফুঁপিয়ে কাঁদছে টের পেলো ও । কাঁদুক কেঁদে হালকা হোক । খুব মায়া লাগছিলো মেয়েটার জন্য । ওর মা বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই ও মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো । কুয়োর পাড়ে যাবে এখন পুষ্প । যেতেই হবে এখন । নইলে সে শান্ত হবে না। এটা ওর ছেলেবেলার অভ্যাস । বাড়িতেও ছোট্ট একটা কুয়ো আছে । কুয়োর কাছে এলে ও খুব শান্তি পায় কেন জানেনা । কুয়োর পানিতে নিজেকে দেখতে ওর খুব ভালো লাগে ।ওই পানিতে ও যখন নিজেকে দেখে তখন ও পানির মতো শান্ত হয়ে যায় ।
এক দুপুরে পুষ্প আয়নায় চুল বাঁধছিলো । আয়নায় আয়শার মুখ দেখে ও চমকে তাকালো । ঘুরে দাঁড়াতেই ওকে জড়িয়ে ধরলো আয়শা । পাগলের মতো বলতে লাগলো , মা , মাগো , মা !
পুষ্প অবাক হয়ে গেলো ! কি হয়েছে আয়শার ? কোন দিন মা ডাকেনি । ওর বাবা বলেছিলো ডাকতে । শোনেনি । আজ কি হলো !এই মেয়ে , কি হইছে ?
আয়শা কিছু বলতে পারছিলো না । ওকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো মা ,মা করছে । একটু ধাতস্থ হয়ে বললো , বাবা ওরে ধরায় দিছে মা । মা , তুমি ওরে বাঁচাও । ওরে মাইরা ফেলবে । মা , তুমি ওরে বাঁচাও । আমি তোমার পায়ে ধরি । তোমার নিজের মেয়ে হলে তুমি পারতা মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে ? ও মা , মা । বলো । তুমি বাবারে বললে , বাবা তোমার কথা শুনবে । ওরে ছাড়ায় আনবে । মা , মাগো । পাগলের মতো করতে থাকে আয়শা ।
ওকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয় পুষ্প । তোমার বাবা কই ?
উঠানে , কেবল ধরে নিয়ে গেলো ওরে । বাবাই ওদের খবর দিয়ে আনছে ।
পুষ্প উঠানে গিয়ে দাঁড়ায় । আপনের সাথে আমার কথা আছে। কি দোষ করছে ছেলেটা ? নিজের দেশের জন্যই তো যুদ্ধ করতেছে । আপনার লজ্জা করেনা ? নিজে হইছেন দালাল । এইটুকু একটা বাচ্চা ছেলেরে মরণের হাতে তুইলা দিতে আপনার একটুও মায়া লাগলো না ? আপনি মানুষ না পশু ?
লোকমান কাজী হঠাৎ একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো পুষ্পর গালে ।
পুষ্প টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো উঠোনে । প্রচণ্ড ঘৃণায় তাকিয়ে থাকলো স্বামীর দিকে ।
পুষ্পর ওই দৃষ্টি সহ্য করতে পারলো না লোকমান । হনহন করে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে ।দরজায় দাঁড়ানো আয়শা মাটিতে বসে পড়লো । পৃথিবী যেন থেমে গেলো ওখানেই ।
দুই দিন আয়শা কিছু খায় না । অনেক চেষ্টা করেছে পুষ্প । কাজ হয়নি । লোকমান কাজী কেমন নির্বিকার ভাবে বাড়ি আসে রাতে । সাত সকালে বের হয়ে যায় । পুষ্প অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে থাকে মেয়েটিকে । বাবার এক অন্যায় মেয়েটিকে আর এক ভালোবাসার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে । সমবয়সী দুজন মানুষ । একজন মা ! একজন মেয়ে !
সন্ধ্যায় আয়শা বসে ছিলো কুয়োর পাড়ে । মায়ের প্রিয় কুয়ো এখন মেয়ের ও প্রিয় । আয়শা , আয়শা । মায়ের ডাক শুনে এগিয়ে গেলো সে
কি , ডাকো কেন ?
আমার সাথে চলো ।
কোথায় ?
কথা বলবা না , চলো ।
উঠোনে দাঁড়ানো সামাদ । আয়শা'র বাবার ডান হাত । এই লোকটা ছিলো সেদিন । ওই দেখিয়ে দিয়েছিলো সাব্বিরকে । আয়শাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সামাদ ।
মা , এই লোকটা কি চায় ? শয়তান !
চুপ করো আয়শা । ও দেখায় দেবে সাব্বির কোথায় আছে ।
মানে ?
কথা বইলো না তো । দ্রুত হাঁটতে শুরু করে পুষ্প । আয়শার বাবা জানার আগেই যা করার করতে হবে । সামাদ বলেছে , স্কুল ঘরে যেখানে আর্মি ক্যাম্প আছে , সেখানেই অন্যদের সাথে আটকে রেখেছে সাব্বির কে ।
সন্ধ্যা শেষ হয়ে অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিক । একটা টর্চ হাতে আগে আগে সামাদ , পেছনে পুষ্প আর আয়শা । পুষ্পর মাথার ঘোমটা বাতাসে পড়ে গেছে । মায়ের এই রূপ দেখেনি আগে আয়শা । মূর্তির মতো শক্ত চেহারা । যেদিন সাব্বির কে ধরে নিয়ে গেলো , বাবা চড় দিয়ে যখন মাকে ফেলে দিয়েছিলো মায়ের চোখে আগুন দেখেছিলো আয়শা । আজ মা একদম শান্ত । মাকে দেখে কেমন ভয় করছে আজ ওর । সাব্বির কে ফিরে পাবে অথচ আয়শা সেটা অনুভব করতে পারছে না , মাকে নিয়েই ভাবছে ও । ওর বয়সী একটা মেয়ে, অথচ কি দৃঢ় !
স্কুল ঘরের কাছে এসে পড়েছে ওরা । ভিতরে আলো জলছে । কোন ঘরে সাব্বির ? সত্যি মা পারবে তো ওকে ছাড়াতে ? পারবে । একটা অবাক বিশ্বাস কাজ করছিলো ওর । মাকে প্রচণ্ড ক্ষমতাবান কেউ মনে হচ্ছে ।
তুমি এখানেই থাকো ,আমি আসছি এখুনি ।
তুমি একলা যাবে , আমিও আসি ?
না , সামাদ যাবে শুধু আমার সাথে । থাকো , আসতেছি আমি ১০ মি এর মধ্যে ।
একা দাঁড়িয়ে রইলো আয়শা । ওর হাত পা কাঁপছে । আল্লাহ , সাব্বির ঠিক আছে তো ? ক্যাম্পে মিলিটারি এতো কম কেন? একজন পাহারাদার আছে মনে হয় । সব কোথায় ? শুনেছিলো অনেক মিলিটারি । কোথাও গেছে মনে হয় মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে । এতো সময় লাগছে কেন ? অস্থির হয়ে উঠছে আয়শা । সাব্বিরকে মা পাচ্ছে না ? তবে কি ওকে ... আর ভাবতে পারছে না আয়শা । খুব খুব ক্লান্ত লাগছে ওর ।
তখনি পুস্পকে দেখলো স্কুলের বারান্দায় । ওই তো সাব্বির ! এই দুই দিনে আরও শুকিয়ে গেছে ? অল্প আলোয় বোঝা যাচ্ছে না । সামাদের পাশে আরও একজন লোক । বেশি বয়স না । সাব্বিরের মতোই হবে । মিলিটারি । পাহারাদার সালাম দিলো দাঁড়িয়ে ওকে । কি কথা বলছে সবাই । ছেড়ে দেবে তো সাব্বিরকে ? একটা চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা গলায় আটকে যাচ্ছে বারবার ।
মা আসছে এদিকেই । সাব্বির কে ধরে ধরে আনছে সামাদ । আহারে বেচারা ! গুলির ঘা এখনো শুকায় নি ।
আয়শা তুমি সাব্বির কে নিয়ে নদীর ঘাটে যাও । ওখানে নৌকা আছে । আমার বাপের বাড়ির লোক আছে নৌকায় । এই নাও কিছু টাকা আর গয়না আছে এখানে । তাড়াতাড়ি করো । তোমার বাবা খবর পেয়ে যাবে । দেরি করবা না । মাঝি তোমাদের আমার মামার বাড়ি পৌছায় দেবে । সব শান্ত হলে আমি খবর দেবো ।
আয়শা জড়িয়ে ধরলো পুস্পকে । তুমি আমার সত্যিকারের মা , কেঁদে ফেললো সে ।
কথা না বাড়ায়ে রওনা দাও তো । অস্থির দেখাচ্ছে পুস্পকে ।
চলো তোমারে বাড়ি পৌছায় দিয়ে আসি ।
না , আমি চলে যেতে পারবো একাই । যাও তোমরা ।
না , না । মা , অনেক রাত হয়েছে একা ফেরা ঠিক হবে না । আমি তোমারে না পৌছায় দিয়ে যাবো না । পুষ্পর হাত ধরে আয়শা ।
খুব শান্ত ভাবে আয়শার হাত ছাড়িয়ে নেয় পুষ্প । ঠাণ্ডা গলায় বলে , কেন বুঝতেছো না ? আমি আজ এখানেই থাকবো ।
মানে ? চমকে ওঠে আয়শা ।
নির্লিপ্ত পুষ্প , বাতাসে এলোমেলো করা চুলগুলো মুখে এসে পড়ছে । মানে নাই । আমাকে আজ এইখানে থাকতে হবে , তুমি যাও ।
সাব্বির কিছু বলার চেষ্টা করতেই ধমক দেয় পুষ্প । কথা শুনবা আমার ?
সামাদ বললো , তোমার মা'য় ছোট সাহেবরে খুশি করবেন আজ । এই জন্যই তো এই পোলাডারে ছাইড়া দিছে । বড় সাহেব অপারেশনে গেছে । নাইলে কি পারতাম নাকি ? একটা রাইত মাত্র । তারপর আমি নিজে পৌছায় দিবো তোমার মায়েরে । তোমার বাপ আজকে আইবো না । গঞ্জে গেছে । কেউ কিচ্ছু টের পাইবো না ।
এতো কথা হচ্ছে পুষ্প কেমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে ।
আয়শা কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুষ্প হাঁটতে শুরু করলো স্কুল ঘরের দিকে । পিছনে পিছনে শকুনের মতো সামাদ ।
আয়শা মা বলে ডাকলো । কিন্তু কোন আওয়াজ বের হলো না গলা দিয়ে । ওই তো পুষ্প হাঁটছে । ওর বয়সী ওর মা ! দূরে কোথাও একটা কুক পাখি ডেকে উঠলো । কে যেন বলেছিলো , কুক পাখি ডাকলে অমঙ্গল হয় ।
১৫/০৩/২০১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



