somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-বাবা , এই বাবা , কি করো ?
- কিচ্ছু না রে মা , এমনি বসে আছি ।
-সন্ধ্যা হলেই তুমি বারান্দায় এসে বসে থাকো কেন ? লাইট জ্বালাই ?
-থাক না মা । অন্ধকার তো ভালো লাগছে ।
-বাবা জানো , আমি এখন বারান্দার লাইটের সুইচ একলাই দাঁড়িয়ে অন করতে পারি , চেয়ারে দাঁড়াতে হয় না ।
-তাই নাকি ! আমার মামনি তো তাহলে অনেক লম্বা হয়ে গেছে !
-হুম বাবা , আমি বড় হয়ে মা'র সমান লম্বা হবো ।
-মা'র সমান কেন ? তর মা তো বেশি লম্বা ছিলো না । আরও লম্বা হবি তুই ।
-না ,না বাবা , আমি ঠিক মায়ের সমান লম্বা হবো । তারপর মায়ের শাড়ি পরবো ।
-আচ্ছা মা , পরিস ।
-আচ্ছা বাবা , তুমি আমাকে বলবে কেন তুমি অন্ধকারে বসে আকাশ দেখো ?
- এমনিতেই রে বুড়ি , ভালো লাগে তাই ।
-আমি জানি তোমার কেন ভালো লাগে ।
-কেন?
-স্কুলে আমার এক বন্ধু বলেছে , মানুষ মরে গেলে আকাশের তারা হয়ে যায় । এটা কি ঠিক বাবা ?
-হতে পারে মা । আমরা কি আর সব জানি ?
- ওর দাদু ওকে বলেছেন , মানুষ মরে গেলে আকাশে তারা হয়ে যায় ।
- বন্ধুর দাদু যখন বলেছেন তাহলে হয়তো তাই হবে ।
-বাবা , তাই কি তুমি সন্ধ্যায় আকাশের তারা দেখো ? মাকে খোঁজ ?
- হুম।
- মা কোন তারাটা ?
-ওই যে সবথেকে উজ্জ্বল তারাটাই তোর মা ।
- মা , ওখানে বসে সব দেখেন ?
-হ্যাঁ রে বুড়ি , সব দেখেন । আমি কি করি , তুই কি করিস সব দেখেন।
-বাহ ! মায়ের তো তাহলে ভীষণ মজা !
-হ্যাঁ , তোর মায়ের অনেক মজা ।
-বাবা , তোমার মায়ের জন্য মন অনেক খারাপ লাগে তাই না ?
- তা তো লাগবেই রে মা । এই যে তোর মা কথা নাই , বার্তা নাই হুট করে আমাদের রেখে তারা হয়ে গেলো । এখন তোর দেখাশোনা তো আমি ঠিকমতো করতে পারি না ।
- কি যে বল বাবা , আমি তো অনেক বড় হয়ে গেছি । আমাকে তোমার দেখাশোনা করতে হবে না । আমিই তোমার দেখাশোনা করবো । বুঝলে বাবা ?
- হাহাহাহা ! তাই নাকি ? কি কি দেখাশোনা করবি আমার ?
-এই মনে করো সকাল বেলা তোমার চা বানিয়ে দেবো । নাস্তা খাবার সময় তোমার কাছে বসে থাকবো ।
-আর ? আর কি করবি আমার মা ?
-আর তোমার অফিসে যাবার সময় হলে মায়ের মতো তোমাকে সব গুছিয়ে দেবো । মা তোমার কপালে চুমু দিতো , আমিও দেবো । তুুমি দেখে নিও একদম মায়ের মতো সব দেখাশোনা করবো আমি।
-তারপর?
-তারপর আমি নিজের পড়া শেষ করে স্কুল বাস এলে স্কুলে চলে যাবো । দুপুরে ফিরে এসে গোসল করে তারপর ফোন করে তোমার খবর নেবো ।
- ওরে বাপরে ! তুই এত্ত কিছু জানিস মা?
-বাহ ! জানবো না ? আমি তো মাকে দেখতাম এগুলো করতে ।
- আমার সেদিনের এতটুকুন মেয়ে ! কবে কবে এত্ত বড় হয়ে গেলিরে মা !
-মা নেই , এখন তো আমাকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে । স্কুলের মিস বলেছেন , নানু বলেছেন , এখন থেকে আমিই তোমার গার্ডিয়ান ।
- ওরে ! বাপরে ! দেখি দেখি আমার গার্ডিয়ান কতো বড় হয়েছে । কেমন দেখতে হয়েছে ! হাহাহাহা !
-অকারণে হাসবে না তো বাবা । শোন বাবা , তুমি সন্ধ্যায় অফিস থেকে এলে তোমাকে চা আমি বানিয়ে দেবো । বুয়া আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে রঙ চা বানাতে হয় । তুমি তো রঙ চা খাও লেবু দিয়ে , চিনি এক চামচ । ঠিক বলেছি ?
-তুই চা বানিয়ে খাওয়াবি আমাকে? তাহলে তো তুই সত্যি অনেক বড় গার্ডিয়ান আমার ।
-হুম , বাবা একটা হাসির কথা শুনলে ? বুয়া লেবুকে কি বলে জানো ? বলে লেম্বু । হি হি হি ।
- হা হা হা । আসলেই তো মজার শব্দ । লেম্বু !
-আর রাতে খাবার খেয়ে তুমি যদি ওষুধ খেতে ভুলে যাও তাহলে কিন্তু বকা দেবো ।
- বকাও দিবি ? আমি তো এখুনি ভয় পাচ্ছি রে ।
-অফিস থেকে ফিরে কাপড় চোপড় অগোছালো করে রাখলেও কিন্তু বকা খাবে । আর একদম সিগারেট খাওয়া যাবে না ।
-আর কি কি করা যাবে না আমার আম্মাজান ?
-বেশি রাত জাগা যাবে না ,বুঝলে বাবা ?
-বুঝেছি ,বুঝেছি, আমার কপালে শান্তি নেই । তোর মা যেমন জ্বালিয়েছে মনে হচ্ছে তুইও জ্বালাবি তেমনি ।
- এসব বলে কোন লাভ নেই বাবা । এখন ঘরে চল । আমাকে পড়া দেখিয়ে দেবে ।
- একটু পর আসি ? তোর মায়ের সাথে আর একটু কথা বলি ?
-না তা হবে না। আমি গেলেই তুমি কাঁদবে জানি । আমি কি কাঁদি বলো ? আমারও তো কান্না পায় , আমি তোমার কথা ভাবি আমার সব কান্না ফুরিয়ে যায় ।
- আমিও আর কাঁদবো না রে মা । তোর মায়ের জন্য অনেক দোয়া করবো শুধু । যেন ওই আঁধারের তারা হয়ে সে খুব ভালো থাকে ।
-আমিও দোয়া করবো বাবা ।
-হ্যাঁ , তাহলে তোর মা অনেক ভালো থাকবে । প্রতিদিন তারা হয়ে আমাদের দেখতে আসবে ।
- তারা মাকে আমরা অনেক গল্প বলব , তাই না বাবা ?
- হ্যাঁ মা ।সারাদিনের সব গল্প বলব ।
- তুমি একটুও মন খারাপ করবে না । ঠিক তো বাবা ?
- আজ সত্যি সত্যি আর মন খারাপ লাগছে না রে বুড়ি । তোর মা আঁধারের তারা হয়ে যাবার আগে যে তোকে আমার কাছে দিয়ে গেছেন । আমার গার্ডিয়ান আলো'র তারা ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×