somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিকতা ছেড়ে যাচ্ছি, অভিসারে স্মৃতিকাতর মন

১৭ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় আমি প্রশাসন ক্যাডারের জন্য মনোনিত হয়েছি।আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ। এখন অপেক্ষা শুধু নিয়োগের। রাজধানীতে বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছি। আজ অনেক বছরের সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য একটা পেশায় যাচ্ছি। সাংবাদিকতায় নবীশকালীন স্মৃতি নিয়েই আমার এ লেখা।

হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার
আমিও তোমার মত বুড়ো হব বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
আট বছর আগে একদিন। জীবনানন্দ দাশ
কবি জীবনানন্দ দাশ লাশকাটা ঘরে শুয়ে যখন জীবনের হিসাব মেলানোর কবিতা লিখেছিলেন তখনও তিনি কি জানতেন তাকেও একদিন ওই ঘরে যেতে হবে। আসলে কাকে কোন জীবনের পথে টেনে নিয়ে যায় কেউ বলতে পারেনা। জীবনের মানে কি? আমরা এখানে কেন এসেছি? জীবনের উৎস কি? জীবনের প্রকৃতি বা বাস্তবতা কি? জীবনের তাৎপর্য কি? জীবনের সবচেয়ে অর্থপূর্ণ ও মূল্যবান বিষয় কি? আমরা কিসের জন্য জীবন ধারণ করছি? এ উত্তর খুঁজেছে মানুষ সৃষ্টির আদি থেকেই। এ প্রশ্নকে ঘিরেই উৎপত্তি বিভিন্ন মতবাদের। কেউ বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন। আবার কেউ খুঁজেছেন ধর্মের ভেতরে। এ কারণে জন্ম নিয়েছে অনেক দর্শন অনেক বিশ্বাস। কিন্তু কেউ কাউকে আজ পর্যন্ত সত্যায়িত করেনি। জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে যার যে মতই থাকুক না কেন সব মতবাদই ক্ষুধাকে খাবার দিয়ে নিবারণ করেতে বাধ্য হয়েছে। এখানেই সব মতবাদ একটি সরল রেখায় গিয়ে মিলিত হয়েছে। আর এ কারণেই আদিকাল থেকেই মানুষকে জীবনের জন্য বেছে নিতে হয়েছে পেশা। জীবনের প্রয়োজনের কারণেই জীবনের বাঁকে বাঁকে পেশার বদল হয়।
আমিও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখম জীবন থেকে আদর্শ হিসেবে সংবাদিকতা পেশা বেছে নিয়েছিলাম। কত যুক্তি ছিল এ পেশা বেছে নেয়ার পেছনে। একসময় স্বপ্ন ভংগ হলো। কি উপাদান এর পেছনে তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে বলে সেদিকে যাচ্ছিনা। ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় আমি প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছি। বর্তমানে নিয়োগের অপক্ষায় রয়েছি- এটাই ধ্রুব। এ নিয়ে কয়েকটি পোস্টও দিয়েছিলাম সামুতে। দৈনিক মানবজমিনে আমার সহকর্মী দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার সাব্বির নেওয়াজ একটি পোস্টে একটি মন্তব্য করে আমাকে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, প্রথম সাংবাদিকতার অম্লমধুর স্মৃতিমুখর দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।

আমি লেখাপড়া করেছিলাম লোকপ্রশাসনে। কেমন করে যেনবা সাংবাদিকতার ভুত মাথায় চেপে গেলো। যুগান্তর স্বজন সমাবেশে সবাই মিলে যুগ্ম আহবায়ক করে দিল। সেই থেকে লেখালেখি। সেটা ২০০০ সালের কথা। পরে ২০০৪ সালে মানবজমিনে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেই। আমি তখন অনার্র্স চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র। সাব্বিরসহ আমরা চার পাঁচজন একসঙ্গেই মানবজমিনে যোগ দিয়েছিলাম। তখনও সাংবাদিকতায় আজকের মতো এত কর্পোরেট পুঁজি বিনিয়োগ হয়নি। সাংবাদিকতার শ্রম ছিল সস্তা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যেত কাকের মতো অনেক লোক। আমাদের বেতন ধরা হলো চার হাজার টাকা। তাতেই খুশী। লিখতে তো পারছি। এযে আরেক সৃষ্টি সুখের উল্লাস। ছাপা হওয়া নিজের নাম দেখার আনন্দে কখন যে অনেক সময় পার হয়ে গেছে তা নিজেও টের পাইনি। আজকে দেখি সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েই বেসরকারী ব্যাংকের চাকুরীজীবীদের মতো বেতন পাচ্ছেন। দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু আসল পেশাদারিত্ব কি হচ্ছে। আমি যদিও কোন সিনিয়র সাংবাদিক নই। কিন্তু আমরা যেভাবে সাংবাদিকতা শূরু করেছিলাম সেভাবে এখন আর হচ্ছেনা।

সাংবাদিকতায় আমার প্রথম কয়েকটি মাস কেটেছিল রাজধানীতে ঘুরে ঘুরে। সারাদিন পাড়া মহাল্লায়। সন্ধ্যায় অফিসে ফিরে লিখতাম। অনেক লেখাই ছাপা হয়নি। আবার রাতে রাজধানী দেখতাম। আমি জানি রাতে গুলশান বারিধারায় পরিবেশ কেমন। আবার তেলেগু পট্টিতে রাত কিভাবে পার হয়। এভাবে উদ্যানে রাস্তায় দিনরাত ঘুরে একসময় রাজনৈতিক দল। নেতাদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলতাম। একসময় সরকারী অফিসগুলোতে হেটে হেটে জুতা ক্ষয় করতে হয়েছে। মনে পড়ে প্রতিদিন রাজধানীর একটি করে থানায় গিয়ে সকাল সন্ধ্যা বসে থেকেছি। পুলিশের কর্মকান্ড দেখতে দেখতে মনে হয়েছে ইস যদি একটু আন্তরিকতা দেখানো যেতো তাহলেই থানার চেহারা অন্যরকম হয়ে যেতো।

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামের বানান শিখতে হলো। মনে আছে, আহমদ ওয়ালারা বেশি সমস্যায় ফেলেছিলেন। কেউ লেখেন আহমদ, কেউ আহমেদ, কেউ আহমাদ আবার কেউ আহম্মেদ। হ্রস্ব উ কার ও দীর্ঘ উকার বা ই কার নিয়েও কম ঝামেলা ছিলনা।সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল কার নমের আগে কার নাম লেখা হবে তা নির্ধারণ করা। কে সিনিয়র তা নির্ধারণ করতে দিনের পর দিন অনুশীলন করতে হয়েছে। সবার সম্পর্কে জানতে হয়েছে। এসময়ই বেশিরভাগ ব্যক্তির অতীত ইতিহাস জানতে পেরেছি।একসময় মনে হয়েছে আসলে আমাদের জাতির মধ্যে সর্বজন নমস্য এবং বিতর্কের উর্ব্ধে কোন ব্যক্তিত্ত্ব নেই। বিষয়টি আমাকে পীড়া দিত। এভাবে প্রতি সেক্টরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে শুরু কললাম। একসময় দেখা গেলো যেকোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের হাজার হাজার ফোন নম্বর আমার সংগ্রহীত হলো। অবস্থা এমন দাড়ালো যে ওই সময় যে কারো ফোন নম্বর দরকার হলে আমার খোঁজ পড়তো। এক্ষেত্রে আমার সিনিয়র কলিগ বর্তমানে এটিএন বাংলায় কর্মরত মাশহুদুল হকের মাধ্যমে অনেক অনুপ্রানিত হয়েছিলাম। একজন সাংবাদিক তার ক্যারিয়ার গড়তে কতটা কষ্ট করতে পারেন তার উদাহরণ হচ্ছেন মাশহুদ ভাই। নীরবে তার কাছ থেকে শ্রম দেয়ার বিষয়টি শিক্ষা নিয়েছি। প্রিয় শামীম ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। সাংবাদিকরা এত কোমল হন কিভাবে? রিপোর্ট লেখার আগেই যেতাম তার কাছে । বলতাম শামীম ভাই ইন্ট্রো বলে দিন। ইন্ট্রো পেলেই রিপোর্ট লিখতে আমার আর সময় লাগতনা। সত্যি সাব্বির সেদিনগুলোর কথা মনে পড়বেই। গভীর রাতে পরিবাগ থেকে সূর্যসেন হলে দুজনের হেটে হেটে যাওয়ার কথা। সাংবাদিকতা আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে গড়তে আরবী, ইংরেজী, উর্দু, হিন্দী ও ফার্সি শিখেছি। সাহেব বা হুজুর কারো কথা বুঝতে যেনো অসুবিধা না হয়। শেখ শাদীর কবিতায় পড়েছিলাম,
আঁটসাঁট জুতা না পরে হাঁটো, খালি পায়ে
যদি রঙিন পৃথিবীর গৃহবিবাদ অবসন্ন করে দেয় মন
বেরিয়ে পড়ো,
এর চেয়ে সফর ভাল।
ভাবো,
ক’টা নিঃশ্বাস নিয়েছো জীবনে
ক'টাই বা বাকী আর?
অথচ মৃত্যু এখন সন্নিকটে
এমন রঙিন জীবন
থেকে যাবে পেছনে
তুমি চলে যাবে মৃত্যুর সাথে।
আসলেই জীবন আর কত দিনের? কিন্তু এই ক্ষণিকের জীবনকে আমি সরকারী চাকুরী নামের আটসাট জুতো পড়াতে চাইনি। একারণেই খেলামেলা এক স্বাধীন জীবনের জন্য সাংবাদিকতা পণ করেছিলাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছিলেন, "জীবনে জীবন যোগ করা, না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা।" সাংবাদিকতা পেশাতো লাখো জীবনকে নিজের জীবনের সংগে সম্পৃক্ত করার সবচেয়ে বড় সুযোগ। এ কারণেই সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়তে কষ্টও করেছিলাম। কষ্টের ফল পেয়েছি। মানবজমিনে যোগদানের দুই মাসের মাথায় আমার বেতন দ্বিগুন হয়ে গেলো। মতি ভাই বললেন, তিনি নাকি এর আগে কখনোই কোন রিপোর্টারের বেতন দ্বিগুন করেন নি। তিন বছর পর ফিরে তাকিয়ে দেখি রাজধানী ঢাকায় আমিই একজন রিপোর্টার যে সব বিটেই কাজ করে ফেলেছে। এখন সাংবাদিকতা ছেড়ে যাওয়ার আগে আমার বর্তমান সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, আপনাকে সাংবাদিকতার স্বার্থেই দরকার ছিল- কবির ভাইয়ের এ মন্তব্য আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এ কারণেই সাংবাদিকতা ছেড়ে যাওয়ার আগে বলতে পারি, আমি যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম তা স্বার্থক হয়েছে।

মনে পড়ে, মানবজমিনে আমি নিজেকে চীপ রিপোর্টার বলতাম। অনেকে বুঝতেন অনেকে বুঝতেন না। যারা বুঝতেন না তাদের বলে দিতাম চীপ মনে সস্তা। তবে চীফ রিপোর্টার ছিলেন সারোয়ার ভাই। তিনি একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি কোন বিটে কাজ করতে চান। আমি জানালাম শিক্ষা বিট চাই। দুদিন পরে বললেন, একটা সমস্যা হয়ে গেছে। বললেন, সাব্বির আপনার কি হয়? আমি বললাম, আমার হলের ছোট ভাই। এবার তিনি বললেন, সাব্বিরও শিক্ষা বিট চায়। এরপর সিদ্ধান্ত হলো যে আগে শিক্ষা বিটের একটি এক্সকুসিভ রিপোর্ট দিতে পারবে তাকে ওই বিট দেয়া হবে। আমি নেমে গেলাম মাঠে। রাজধানীতে অনার্স কোর্স পড়ানো হয় এমন সবকটি কলেজ ঘুরলাম। রিপোর্ট করলাম ‘নামেই অনার্স কলেজ’। লিড হলো। অনেক সহকর্মী এসে প্রশংসা করলেন। মানবজমিনে ওই সময় সহকর্মীরা ভাল রিপোর্টের প্রশংসা করতেন, যা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। পরে সারোয়ার ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আপনি সিদ্ধান্ত দিন। আমি বললাম, শিক্ষা বিট সাব্বিরকে দিন। এখন ভাবি ওই দিন কি সিদ্ধান্তই না নিয়েছিলাম। আজ গর্ব হয়, সাব্বির এখন শিক্ষা বিটের অন্যতম সেরা রিপোর্টার। যেদিন শুনলাম সাব্বিরের রিপোর্ট পড়ে এক ব্যক্তি একলাখ টাকা উপহার দিয়েছেন সেদিন খুশীতে আমার বুক ভরে গেছিল।

আমি স্বাস্থ্য বিট পেলাম। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরি। একি অবস্থা ! আমার মনে হলো- দুটি স্থানে গেলে এদেশে জন্মের সাধ মিটে যায়। একটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মুমূর্ষু আদম সন্তানেরা মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। রোগীর তিল ঠাই নেই। জরুরী বিভাগে ঢাকা ও তার আশপাশ থেকে সকল রোগী যায়, বিশেষ করে যেকোন দুর্ঘটনার রোগীদের প্রথম আবাস এ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ। অথচ মানবতা প্রতিনিয়ত গুমরে কেদেঁ মরছে এখানে। ঢাকা মেডিকেলের জন্য একটা ২০ তলা ভবন তুলে দিতে সরকারের কত খরচ হয়? আর ডাক্তারগুলো এত পাষণ্ড হন কিভাবে? একদিন দেখলাম, একজন ডাক্তার সংজ্ঞাহীন এক বৃদ্ধার পেটের ওপর দুহাত দিয়ে ধামাক্কা চাপ দিচ্ছেন। আর তার শোকাতুর ছেলেকে বলছেন, হারামীর সংবাদিকরা বলে ডাক্তাররা খারাপ। এখন দেখেন ডাক্তার খোদার চেয়েও বড়। আমি হতবাক হয়ে আর কথা বলতে পারনি। আমার দেখা আরেকটি স্থান হলো আজিমপুর কবরস্থানে। কিভাবে জায়গার অভাবে মাটিতে মিশে যাওয়ার আগেই লাশকে কেটেকুটে তুলে ফেলে। দেখতাম আর অন্তর দিয়ে কাদতাম। জাগতামও দ্রোহে ও ধিক্কারে। মনে আছে একবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ওষুধ চুরি ধরতে গিয়ে কিভাবে কর্মচারীদের রোষ থেকে দেয়াল ডিঙ্গিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলাম। রেগে হাসপাতালের পরিচালককে বলেছিলাম, আর্মি অফিসাররা কেন পরিচালক হবেন? আপনারাতো শিক্ষিত বনসাই । আইএ পাশ করে সেই যে চাকরিতে ঢুকেছিলেন তার বাড়েননি। এরপর আমার নিজেকে সঠিক প্রমানের জন্য হাসপাতালের দাড়োয়ানদের টাকা দিয়ে পাহারা বসিয়ে এক্সরে ফিল্মসহ হাতেনাতে মজনু নামের এক কর্মচারীকে ধরেছিলাম। জেনেছিলাম ওই কর্মচারী নাকি ঢাকায় বাড়িও করেছিলেন। অনেক দিন হয় ঢাকা মেডিকেলে যাইনা। পরে শুনেছিলাম তার বহিস্কারাদেশ আদালত তুলে নিতে বলেছে। এরপর কি হয়েছে জানিনা। মনে পড়ে হায় সবই মনে পড়ে। এভাবে প্রতিটি সেক্টর থেকেই আমার নামে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর কাছে বিচার যেত। মতি ভাই শুনতেন,অনেক ক্ষেত্রে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন অনেকক্ষেত্রে চেপে যেতেন। অনেক কৃতজ্ঞতা মতি ভাই।

একসময় সাব্বির সমকালে চলে গেল। আমি শিক্ষা বিট পেলাম। আমার স্যার অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জমান তখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ার। আমাদের বিভাগের সব ছাত্ররাই স্যারের পা ধরে সালাম করতো। শিক্ষা বিটের সাংবাদিকরা স্যারকে ছাড়া যেন অচল। স্যারও সহায়তা করতেন। স্যার আমাকে নিয়ে অনেক গর্ব করতেন, বলতেন তার ছাত্ররাও সাংবাদিকতায় এসেছে। একবার বঙ্গভবনে একটি শপথ অনুষ্ঠানে স্যারের সঙ্গে দেখা হলো। স্যার আমাকে ধরে নিয়ে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। অনেকেই স্যারের হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। আমাকেও স্যার বলতেন, সবাই আসে। তুমি কেন আসোনা? আমি বলতাম, স্যার সবাইতো আপনার কাছে চাকরির জন্য যায়। আমি গেলে সবাই সন্দেহ করবে লবিং করতে যাচ্ছি। আমার কথা শুনে এ অমায়িক সরল লোকটি শিশুর মতো হাসতেন। স্যার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ২০ বছর কৌশলপত্র করে গেছেন। আমি কৌশলপত্রটি খসড়া অবস্থায়ই মানবজমিনে একটি সিরিজ করেছিলাম। স্যার সিরিজটি দেখে এত খুশী হয়েছিলেন যা প্রকাশ করা যাবেনা। খুটিয়ে খুটিয়ে পড়েছিলেন আমার রিপোর্টগুলো। আজ স্যার বেঁচে থাকলে হয়তো তার কাছে গিয়ে বিসিএস এর চাকরির সংবাদ দিতে পারতাম। স্যার নেই। এ কারণে শিক্ষা বিট আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরে উবায়দুল্লাহ বাদল ওই বিট করেছিল।

এখন আরেকটি পেশায় যাচ্ছি। দুটি পেশাই পরষ্পর বিপরীত। একটি পেশায় কোন কিছু লিখে কত তাড়াতাড়ি প্রকাশ করতে পারবো তা নিয়ে উদ্বীগ্ন থাকতাম। আরেকটি পেশায় লিখেই ফাইলবন্দী করে ফেলবো। বর্তমান সমেয় ওই পেশাজীবনের বহু স্মৃতি ফাইলবন্দী করার কাজ শুরু করেছি। আমার বিসিএসের খবরে প্রতিটি সাংবাদিক উদ্বেলিত হয়েছেন। তাদের ঋণ শোধ করার মতো নয়। সবার সঙ্গেই আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। জানিনা জীবনের বাঁকে আরও কত শিহরণ অপেক্ষা করছে। তবু চ্যালেঞ্জের সেই দিনগুলো কখনোই ভুলতে পারবোনা। ওই দিনগুলোর অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে অবশ্যই লেখবো। ধন্যবাদ সাব্বির। আমাকে স্মৃতিকাতর করে দেয়ার জন্য।
থমথমে রাত, আমার পাশে বসল অতিথি-
বললে, আমি অতীত ক্ষুধা-তোমার অতীত স্মৃতি!
-যে দিনগুলো সাঙ্গ হল ঝড়বাদলের জলে,
শুষে গেল মেরুর হিমে, মরুর অনলে,
ছায়ার মতো মিশেছিলাম আমি তাদের সনে;
তারা কোথায়?-বন্দি স্মৃতিই কাঁদছে তোমার মনে!
স্মৃতি --জীবনানন্দ দাস

সাব্বির যা লিখেছিল
সাব্বির নেয়াজ বলেছেন: প্রিয় সায়েম ভাই,
প্রথমেই আপনি আমার গভীর ভালোবাসা নেবেন। আপনার কাছ থেকে আমরা দেশের প্রকৃত মঙ্গলই কামনা করি। জানি আপনি আমাদের সে প্রত্যাশা পুরণ করেত পারবেন।
আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে প্রাচ্যর অক্সফোর্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মল চত্ত্বর, জমজমাট লাইব্রেরী আঙ্গিনা আর টিএসসির আড্ডামুখর সেই সন্ধ্যাগুলোর কথা। আমাদের জীবনের স্বর্ণসময় কাটিয়ে আসা সূর্যসেন হলের দিনগুলো। কতদিন, কতরাত আমাদের কেটেছে সেখানে। আর মাসের ১৫ তারিখ নেক্সাসের ফিস্টের জন্য সুগভীর প্রতীক্ষা! আপনি-আমি, আমাদের কত বর্ষা, কত শরৎ, কত বসন্ত একসাথে কেটেছে। হলের একই ব্লকে আমরা একসময় একসাথে থাকতাম। আবার একইসাথে দু'জন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় চাকরি পেলাম।আপনি তখন মাস্টার্সের আর আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। অথচ, মানবজমিন অফিসে আপনার আমার ঘনিষ্টতা দেখে চীফ রিপোর্টার সারোয়ার ভাই সহ সবাই ভাবতো যে আপনি-আমি বন্ধু।
মনে পড়ে সায়েম ভাই, আপনি আর আমি অফিস শেষে গভীর রাতে ক্লান্ত শরীরে সূর্যসেন হলে হেঁটে হেঁটে ফিরতাম? কত রাতে পরীবাগ ক্যান্টিনে রাতের খাবার খেয়েছি দু'জনে বসে। কারন অফিস শেষে অতো রাতে হলে গিয়ে কোন খাবার মিলতো না। সেই সব মধুর দিন আর কোনদিনো জীবনে ফিরে আসবে না। স্মৃতি বড় মধুময়, তেমনি আবার বেদনাদায়ক বটে।
আপনি বিসিএস এর জন্য প্রচুর শ্রম দিয়েছেন। মহান আল্লাহ আপনাকে আপনার পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন। আমি সব সময় আপনার জন্য দোয়া করেছি। ভবিষ্যতো আমার শুভকামনা আপনার সঙ্গী হয়েই থাকবে।
যেখানেই যখন থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন তাঁর মঙ্গলময় হাত আপনার দিকে প্রসারিত করুন, আমিন।


সাব্বির
সিনিয়র রিপোর্টার
দৈনিক সমকাল



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৫৭
৩০টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×