somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণের স্বাদ, ভারতের হায়দরাবাদ

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের হায়দরাবাদে ছিলাম। ওই সময়ে ভ্রমণ নিয়ে ফেসবুকের টাইমলাইনে বেশ কিছু স্টাটাস দিয়েছিলাম। লেখাগুলো প্রিয় সামুতে শেয়ার করছি)

প্রথম পর্ব
কাল যাবো ইন্ডিয়া৷ হায়দরাবাদ৷ শেষ গন্তব্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ কলেজ অব ইন্ডিয়া৷ উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এসিএডি প্রশিক্ষণ কোর্স ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে অামার এই যাত্রা৷ বহরে মোট ৩৭ জন৷ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এই কোর্স উদ্বোধন করবেন৷ তিনি অালাদা যাবেন৷ অামরা হায়দরাবাদ থাকবো ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷

কাল দুপুর সোয়া একটায় ফ্লাইট৷ জেড এয়ারওয়েজ৷ দুই ঘন্টা অাগে এয়ারপোর্টে থাকতে হবে৷ তার মানে ১১ টায় বিমানবন্দরে থাকতে হবে৷ সাভার থেকে যেতে অারো দুই ঘন্টা৷ সব মিলিয়ে নয়টায় পিএটিসি থেকে রওয়ানা দিতে হবে৷

অথচ এখনো কিছুই গোছানো হয়নি৷ জামা কাপড় ইস্ত্রী করবো রাতে৷ প্রস্তুতির মধ্যে ৩০ হাজার রুপি কিনেছি৷ বিদেশি টাকা পয়সা কেনাবেচার জায়গাটাকে বলে কার্ব মার্কেট৷ বড়ই অাজিব৷ সেবার সিঙ্গাপুরের ডলার কিনতে গেলাম৷ বড় নোট৷ বেশি দাম৷ ছোট নোট৷ দাম কম৷ অার ইন্ডিয়ার বেলায় পুরো উল্টা৷ ছোট নোটের দাম বেশি৷ বড় নোটের দাম কম৷ অামাকে হোস্টেল খরচ দিতে হবে ১৬ হাজার রুপি৷ এ কারণে বিশ হাজার রুপি নিলাম দুই হাজার রুপির নোটে৷ দাম পড়েছে প্রতি রুপি ১.২৩ টাকা৷ অার একশ রুপির নোটে দশ হাজার রুপি৷ প্রতি রুপি বাংলাদেশি টাকায় ১.৩০ টাকা৷ কম নেই৷ দরাদরি কম করি নাই৷ মতিঝিলের একজন নোট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলো৷ তিনি প্রতি রুপিতে এক পয়সা কম নিতে রাজি ছিলেন৷ এতে ব্যবধান হতো একশ টাকা৷ ওইখানে অনেক দোকান৷ অাশপাশ দিয়েও হাটা যায়না৷ লোকজন ঘিরে ধরে৷ বলে ডলার অাছে? নাকি লাগবে৷ কে ঝামেলায় যেতে চায়৷ শেরাটন হোটেলের পাশ থেকেই রুপি কিনে নিলাম৷

ইন্ডিয়াতে অামার প্রচুর বন্ধু বান্ধব৷ এরা অাবার বেশিরভাগ সাংবাদিক৷ ড. ইউনুস যখন নোবেল পেয়েছিলেন তখন তারা এদেশে এসেছিলেন৷ অামার সঙ্গে পরিচয় তখনই৷ এখনো ফেসবুকের কল্যাণে যোগাযোগ অাছে৷ অামি একজনকে ফোন দিলাম৷ বললেন, তাদের দেশে যে অবস্থা চলছে৷ তাতে এতগুলো রুপি না কিনে ডলার কিনে নেয়াটা নিরাপদ ছিল৷ অামি বললাম, কিনে ফেলেছি৷ কিছু করার নেই৷ বাকীগুলো ডলার নেবো৷ কাল এয়ারপোর্ট থেকেই কিনবো৷ অাল্লাহ ভরসা৷ কারণ অামার জানামতে অামাদের বহরের একজন একলাখ রুপিও নেবেন৷ অামিতো তার কাছে নস্যি৷

যাই হোক হায়দরাবাদ যাচ্ছি৷ নিজামুল মুলুক৷ নিজামদের খুঁজবো অনুসন্ধানি দৃষ্টিতে৷ চার মিনারে৷ বা গোলকান্দার দুর্গে৷ তবে অাগেই বলে রাখি-একজন সরকারি চাকরিজীবির কাছ থেকে বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক হবেনা৷ ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত পরিবেশ পরিস্থিতি এখন সুবিধের না৷ তবে লেখালেখি চলবে৷ সেটা স্ট্রিট ফুড বিষয়ক হোক কিম্বা হায়দরাবাদি বিরিয়ানির রেসিপির হোক৷ তাছাড়া কেন বিশ্বের সব বাঘা বাঘা অাইটির কোম্পানী হায়দরাবাদ গিয়ে বাসা বেধেছে তা দেখার অাগ্রহও কম নয়৷ শুনলাম, সেখানকার ভাষা উর্দু৷ অামার অবস্থা হবে পানি পে মছলি৷ কোথাও অামাকে বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত টিকেট কিনতে হবেনা৷ তবে বাংলাদেশি জানলেও সমস্যা নেই৷ অামাদের ক্রিকেটার মোস্তাফিজ হায়দরাবাদের হয়ে অাইপিএল খেলেছেন৷ প্রাধান্য তো পাওয়া যাবেই৷

২৭ ব্যাচের সাহাদত কবীর স্যার যিনি মাটির মায়ার অফিসার হিসেবে খ্যাত নিজেই ফোন করে অামাকে হায়দরাবাদ বিষয়ক তথ্যে সমৃদ্ধ করেছেন৷ তিনি সেখানে দুই মাস ছিলেন৷ অামি কোথাও গেলে যেটা করি৷ প্রথম যাই মাছের বাজারে৷ সিঙ্গাপুরে গিয়ে মাছের বাজার খুঁজেছিলাম৷ নেই৷ মাছ সব সুপার সপে স্থান নিয়েছে৷ মোস্তফা মার্কেটে গিয়ে দেখি ইয়াবড় ইলিশ মাছ৷ চায়নিজ বংশোদ্ভোত সেলস গার্ল জানালেন, মাছটা বাংলাদেশি৷ কমপক্ষে পাঁচ কেজিতো হবেই৷ এতবড় মাছও এদেশে পাওয়া যায় নাকি! অাসলে কি ধরণের মাছ পাওয়া যায় তা দেখারও উপায় নাই৷ কারণ গলাচিপায় দেখেছি, নদীর মাঝ থেকেই নৌকা থেকে মাছ তুলে সোজা ঢাকার দিকে যাত্রা করে কার্গো৷ তারপর হারিয়ে যায় বড় বড় মাছগুলো৷ যাই হোক হায়দরাবাদেও অামার মাছের বাজার ভ্রমণ বাদ যাবেনা৷

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি হায়দরাবাদ কোন ফ্লাইট অাছে কিনা জানা নেই৷ অামরা প্রথম যাবো মুম্বাই এয়ারপোর্টে৷ চার ঘন্টার ট্রানজিট৷ তারপর সেখান থেকে হায়দরাবাদ৷ ভ্রমণে ক্লান্তি নেই অামার৷ বরং ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে পারি৷ অামি অাসলে সারা বছরই ভ্রমণ করি৷ সারা পৃথিবী৷ অামার কাছে ইবনে বতুতা কিছুই না৷ তবে অামার ভ্রমণ মানস ভ্রমণ৷ এবার সুযোগ হলো সশরীরে৷ স্বপ্ন দেখতে থাকলে মাঝে মাঝে কিছু বাস্তব হয়৷ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা দিয়েই শেষ করি-

ইচ্ছে তো হয় সারাটা জীবন
এই পৃথিবীকে
এ-ফোঁড় ওফোঁড় করে যাই দুই
পায়ে হেঁটে হেঁটে
অথবা বিমানে। কিংবা কী নেবে
লোহা শুঁয়ো পোকা?
অথবা সওদাগরের, নৌকো, যার গলুইয়ের
দু‘পাশে দু‘খানি
রঙিন চক্ষু, অথবা তীর্থ যাত্রীদলের, সার্থবাহের
সঙ্গী হবো কি?

চৌকো পাহাড়, গোল অরণ্যে মায়ার আঙুলে
হাতছানি দেয়
লাল সমুদ্র, নীল মরুভূমি, অচেনা দেশের
হলুদ আকাশ
সূর্য ও চাঁদ দিক বদলায় এন গহন
আমায় ডেকেছে
কিছু ছাড়বো না, আমি ঠিক জানি গোটা দুনিয়াটা
আমার মথুরা
জলের লেখায় আমি লিখে যাবো এই গ্রন’টির
তন্নতন্ন
মানস ভ্রমণ।

কাজী সায়েমুজ্জামান
বিপিএটিসি, সাভার,
২৮ জানুয়ারি, ২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×