somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের রূপকুন্ডের 'কঙ্কাল হ্রদ' ও লোমহর্ষক এক রহস্য!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৪২ সালে অবিভক্ত ভারতের ব্রিটিশ গার্ডরা ভারতের রূপকুন্ডে ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া একটি হ্রদের সন্ধান পায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি প্রায় ২ মাইল উঁচুতে অবস্থিত। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এই হ্রদের আশেপাশের যা পাওয়া গেল, সেটি দেখে গার্ডদেরই ভয়ে জমে যাবার অবস্থা। এই হ্রদের আশেপাশে শত শত মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। গ্রীষ্ম আসার সাথে সাথে আরো ভয়াবহ দৃশ্যের সৃষ্টি হলো। হ্রদের জমে যাওয়া পানি গলে গিয়ে হ্রদ যত স্বাভাবিক হয়ে আসতে লাগলো, ততই হ্রদের পানির নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষের কঙ্কালগুলো ভেসে উঠতে লাগলো। আর সেসব এসে জমা হতে শুরু করলো হ্রদের তীরে।

১৯৪২ সালে যেহেতু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল, তাই অনেকের ভয় হলো এগুলো হয়তো মৃত জাপানি সৈন্যদের, যারা লুকিয়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিল। ব্রিটিশ সরকার অবিলম্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় সত্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে। যাই হোক, কংকালগুলো জাপানি সৈনিকদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো, কারণ সেগুলোর বয়স আরো অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছিলো। এরপর থেকেই এই হ্রদের নাম দেয়া হয় ‘কঙ্কাল হ্রদ’ বা skeleton lake। একই জায়গায় এতগুলো কঙ্কাল কিভাবে এলো সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা কম হয় নি। কারো মতে ভূমিধ্বস, কেউ বলেছেন মহামারী আবার অনেকের কাছে ধর্মীয় রীতির মাধ্যমে আত্মাহুতি বা উৎসর্গের ফলে এই বীভৎস ঘটনা সৃষ্টি হয়েছে। আর গত ৬ দশক ধরে রূপকুন্ডের কঙ্কাল হ্রদ এক রহস্য হয়েই ছিল।



২০০৪ এ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে একদল গবেষক অবতীর্ণ হলেন রহস্য উন্মোচন অভিযানে। তারা রূপকুন্ডের কঙ্কাল হ্রদ থেকে প্রায় ৩০টির মত কঙ্কাল উদ্ধার করলেন, যেগুলোর কোনটির গায়ে তখনো কিছু মাংস ও চুলের অস্তিত্ব ছিল। আর এগুলো নিয়েই তারা রহস্য উন্মোচন শুরু করলেন। আর প্রাপ্ত তথ্য সবাইকে হতবাক করে দিল। হিসেব করে জানা গেল, কঙ্কালগুলো অনেক পুরনো, ৮৫০ সাল সময়কার। ডি এন এ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেল, এই কঙ্কালগুলো দুটি আলাদা বৈশিষ্ট্যের দলভুক্ত ছিল। একদল ছিল কোন একটি পরিবার, উপজাতীয় গোত্র অথবা নিকট সম্পর্কযুক্ত। এর বাইরে ছিল অন্যান্য লোকজন। কঙ্কালগুলোর সাথেই পাওয়া আঙটি, কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিস, চামড়ার জুতো, লোহার তৈরি বর্শার মাথা বা ফলক ও বাঁশের পাত থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করলেন, এই কঙ্কালগুলো ছিল একদল তীর্থযাত্রীর যারা উপত্যকার উপরে উঠছিল, তাদেরকে সহযোগিতা করছিল একদল স্থানীয় কুলি বা মালপত্রবহনকারী।

রূপকুন্ড নামের এই স্থানটিতে পাথর আর বরফের বিরাট স্তূপ এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই গরুর গাড়ি সেসময়ে খুব ভাল একটি মাধ্যম ছিল এই জায়গাটি পাড়ি দেয়ার জন্য। স্থানীয় কিংবদন্তী অনুযায়ী, কনৌজের রাজা যশধাভাল ( Raja Jasdhaval ), তার রাণী ও পারিষদবর্গসহ নন্দীদেবীর মন্দিরে তীর্থযাত্রার জন্য গিয়েছিলেন। আজো প্রতি ১২ বছর পর পর রূপকুন্ডে নন্দী দেবীর মন্দিরে তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়।



ফিরে আসা যাক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বিজ্ঞানীদলের কাজে। তারা কঙ্কালগুলোর খুলি পরীক্ষা করে দেখলেন, প্রায় সবাই একভাবেই মারা গিয়েছে। সবার মাথাতেই ভারি কোন কিছুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল। আর সেই ক্ষত পরীক্ষা করে পাওয়া গেল আরো উদ্ভট তথ্য। কোন অস্ত্রের আঘাতে এতগুলো মানুষ মারা যায় নি। গোলাকার আকৃতির ‘কোন কিছু’র আঘাতে তারা মারা গিয়েছিল। কঙ্কালগুলোর মাথা ও কাঁধ পরীক্ষা করে আরো জানা গেল, আঘাতটা এসেছে মাথার উপর দিক থেকে। সবকিছু পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা একটি অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। শত শত তীর্থযাত্রী এক ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে মারা গিয়েছিলেন। শিলাবৃষ্ট সাধারণত প্রাণঘাতী হয় না। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত নিয়মে সেদিন হয়তো শিলাবৃষ্টির সাথে পড়া শিলাগুলোর আকার অনেক বড় ছিল। যাত্রীদের কাছে কোন ছাউনি ছিল ছিল না, যা তাদেরকে করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি করে দেয়। আর প্রায় ১২০০ বছর আগের সেই ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আজো রূপকুন্ডের কঙ্কাল হ্রদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে শত শত কঙ্কাল।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×