আমাদের অনেকেরই মহাকাশ নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারনা আছে। আসলে আমরা তো কখনও মহাকাশে যায়নি এবং মহাকাশ আসলে পড়ালেখা করার জন্য অনেক বিশাল একটা ব্যাপার। সিনেমা আর টিভি দেখেই যতকিছু জানতে পারি। আজকের ইন্টারেস্টিং ব্যাপারে মহাকাশ নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারনার কথাই তুলে ধরব।
ZERO Gravity ঃ
মহাকাশে Gravity শুন্য – এটা আমরা সবসময় জেনে এসেছি, শুনে এসেছি। কিন্তু আসলে এটি পুরোপুরি সত্য নয়। অনেকেরই হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। কিন্তু সত্যিকারের জিরো গ্রাভিটি মহাকাশে খুজে পাওয়া খুবই দুস্কর। এবং কোন মানুষ এটা কখনও এক্সপেরিয়েন্স করে নি। মহাকাশে যারা যান, তারা কিন্তু কোন ধরনের জিরো গ্রাভিটিতে থাকে না। আমরা সবসময় দেখি মহাকাশে সবকিছু ভাসছে আর আমরা ধরে নেই মহাকাশে গ্রাভিটই শুন্যের কোঠায়।
পৃথিবীর চারিদিকে ঘূর্নায়মান যেকোন বড় ধরনের বস্তু বা শরীরের গ্রাভিটি থাকতে বাধ্য। কিন্তু পৃথিবী যেহেতু সবসময় ঘুর্নায়মান অবস্থায় থাকে, মহাকাশযান গুলো পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে না। পৃথিবীর নিজস্ব গ্রাভিটি সবসময় একটি মহাকাশযানকে নিজের দিকে টানে কিন্তু পৃথিবী ঘুর্নায়মান থাকার কারনে মহাকাশযানের এই পৃথিবীর দিকে গ্রাভিটির টানে আসতে থাকাটাকে অনেকটা ভেসে থাকার মত দেখায় আর একটা দৃষ্টিভ্রমের কারনে আমাদের মনে হয় এটি ভাসছে। এমনকি মহাকাশচারী যারা সেই যানের মধ্যে থাকেন, তাদেরকেও আমরা ভাসতে দেখি একটাই কারনে – তারাও নীচের দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর টানে নীচের দিকে পড়তে থাকে কিন্তু যেহেতু যানটিও সেই টানে চলতে থাকে, তাই দেখে মনে হয় ভাসতে থাকে। একটা লিফ্ট থেকে খুব জোরে পড়ে গেলে একই ধরনের ব্যাপার এক্সপেরিয়েন্স করতে পারবেন।
বুধ গ্রহঃ
বুধকে আমার সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহগুলোর একটা বলা যায়। এটি সুর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ আর সেই কারনে এটিকে সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ হিসেবে ভাবা অসম্ভব কিছু না। কিন্তু এ কথাটা শুধু যে অসত্য শুধু তাই না, বরং বুধগ্রহ সময়ে সময়ে বেশ ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। বুধ গ্রহের সবর্োচ্চ তাপমাত্রা হয় ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি ধরা হয়ে থাকে সারা বছর বুধের এই তাপমাত্রা থাকে তাও ভেনাস গ্রহ থেকে তাপমাত্রা কম হবে। ভেনাসের তাপমাত্রা ৪৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভেনাসের এত উত্তপ্ত হবার কারন এই গ্রহে আছে শুধু কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর বুধগ্রহে কিছুই নেই। তাই বুধগ্রহ বেশ ঠান্ডাও হয়ে যেতে পারে। কারন CO2 না থাকলে তাপ আটকে থাকে না।
তবে আরো একটি কারন আছে কেন বুধ গ্রহ খুব ঠান্ডা হতে পারে। পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে বুধ গ্রহের সময় লাগে ৮৮ দিন আর নিজের অক্ষে ঘুরতে লাগে ৪৮ দিন। তার মানে সেই সময়টা রাত থাকে প্রায় ৫৮ দিন আর এঅসময়ে তাপমাত্রা -১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে।
ধুমকেতুর লেজঃ
একটা ধুমকেতুর ছবি মনে মনে কল্পনা করুন। সবার আগে কি মাথায় আসে? একটা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, রকেটের মত আর পেছনে একটা লেজ যেখানে আলোর আভা – তাই না? যেদিকে যাচ্ছে ধুমকেতুটি ঠিক তার উল্টো দিকে লেজটা থাকে – এটাই আমাদের মাথায় প্রথম আসে। আপনি জানলে অবাক হবেন যে ধুমকেতুর এই লেজের সাথে ধুমকেতুটি কোনদিকে যাচ্ছে তার কোন সম্পর্ক নেই। ধুমকেতুর এই লেজটি সৃষ্টি হয় অত্যাধিক উত্তাপ আর সৌরঝড় থেকে যা ধুমকেতুর বরফকে গলিয়ে দেয় আর ধুলা- সাদৃশ্ পার্টিকেল পাঠায় ধুমকেতুর গতিপথের উল্টোদিকে। আর এই ধুমকেতুর লেজ সবসময় সুর্যের দিকে থাকে এই কারনেই।
ব্ল্যাক-হোল দেখতে ফানেলের মতঃ
ব্ল্যাক-হোলের কথা তো অনেক শুনেছেন আর হলিউড মুভির কল্যানে কম দেখা হয় নাই। ব্ল্যাকহোল দেখতে সেখানে অনেকটা ফানেলের মত দেখায়। কিন্তু বাস্তবে ব্ল্যাক-হোল আসলে অদৃশ্য। টিভিতে যা দেখায় তা আসলে দেখানোর খাতিরে দেখায়। আসল ব্ল্যাকহোল একটা বৃত্তের মত দেখতে। এই ব্ল্যাক-হোলের আছে অনেক বেশী গ্রাভিটি। আপনি যদি এর ধারে কাছেও যান, আপনাকে টেনে ভেতরে নিয়ে যাবে। প্রবল মধ্যাকর্ষন শক্তির কারনেই এমনটা হয়।
সূর্যঃ
মহাকাশ নিয়ে আসলে কিছু জানতে গেলে প্রথমেই আসে সূর্যের কথা তাই না? সূর্যকে আমরা জানি অনেক বড় একটা অগ্নিবৃত্ত যা থেকে তাপ আর আলো ছড়ায়। কিন্তু আসলে কি জানেন? সূর্য হলো একটা অনেক বড় গ্যাসের বৃত্ত। এছাড়া আর কিছু নয়। সূর্যে কোন আগুন নেই। হিলিয়াম দিয়ে তৈরী সুর্যে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে সূর্য থেকে আলো আর তাপ নির্গত হয়। বাস্তবে এখানে কোন ধরনের আগুন নেই যা আমরা দেখি। সূর্য হলো সোজা বাংলায় একটি বিশাল বৃত্তাকার উজ্জল গ্যাসের আধার। আর কিছু না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫০