somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উডল্যান্ড ও আমাদের ভ্রমন খরচ! (ভ্রমন গল্প)

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এবারের প্ল্যান সিমলা হয়ে মানালি যাব। খরচের হিসেব করে দেখা গেল ৩০০ ডলারে হয়ে যাবে কিন্তু নিরাপত্তার খাতিরে ১০০ ডলার বেশি নিতে হবে সবাইকে। সুতরাং মোট বাজেট ৪০০ ডলার। তো যথারীতি আমরা সবাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিলাম কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় এখন সেমিস্টার ব্রেক ঘোষণা করেনি, এটা নিয়ে আমারা সবাই বেশ উদ্বিগ্ন, ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ, হঠাৎ ছুটি ঘোষণা করল, সাথে-সাথে এক- একজন এক-এক বাস স্ট্যান্ডে গেলাম, কোন বাস কলকাতা যাবে, সেই খোঁজ নিতে এবং টিকেট কাটতে, কল্যানপুরেই শুধুমাত্র টিকেট পাওয়া যাচ্ছে তাও, শুধু সোহাগ পরিবহণের। সবার মতামত নিয়ে টিকেট কাটা হল এবং অনেক উত্তেজনা ও রোমাঞ্চকর (সে গল্প অন্য দিন বলব) বিকেল ও রাত পেরিয়ে, অবশেষে পৌঁছেগেলাম কোলকাতাতে।

ট্রেনের টিকেট কেটে, ৬ জনের দলটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে, চলেগেল তাদের মত সময় কাটাতে, কারন ট্রেন ছাড়বে বিকেল ৪:৩০ মিনিটে। দুই দলের একদল গেল নিউমার্কেটে সময় কাটাতে, নিউমার্কেট গামী দলকে বার-বার সাবধান করা হল, যেন তারা কেউ কোন রকম কেনাকাটা না করে! কারন যেতে হবে বহুদুর, অচেনা জায়গা, ফিরতে হবে ভালোভাবে এরপর সময় ও টাকা থাকলে কেনাকাটা করা যাবে। আর যারা কলকাতা নিউমার্কেটে গিয়েছেন তারা মাত্রই জানেন ওটা কি রকম একটা আকর্ষিক জায়গা! অন্তত কেনাকাটার জন্য? খুব কম মানুষই ওখান থেকে ফিরতে পারে, কোন রকম ব্যয় না করে! প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক!

মূল রোমাঞ্চ এবারই শুরু, প্রথম ও দ্বিতীয় মোড় পার হয়ে, নিউমার্কেটের প্রবেশ গলি, একটু এগোতেই, হাতের বামে, আমাদের ব্যথাতুর উডল্যান্ড! Up To 70% Discount!! লেখা বড় বিজ্ঞাপন! কেউ কিছু কিনবেনা! শুধু একটু ঢুঁ মারবে, এইযা! এরকম ব্র্যান্ডের শো রুমে, এতোবড় ছাড়! একটু দেখিই না! ওকে, দেখ, কিন্তু খবরদার কেনাকাঁটা কিন্তু করবেনা! ওঁদের সেলস গার্লসদের মায়াবী ফাঁদে পা দেবেনা সাবধান!

আমরা ঢুকলাম, এটা দেখি, ওটা দেখি, সবাই দেখছে, আমিও দেখছি, তবে শুধু জুতোর অংশে আমার ঘোরাঘুরি, অনেকদিন থেকেই ভীষণ ইচ্ছা, একটা ভাল মানের ও (অবশ্যই Discount এ পেলে) ট্রেকিং বুট কিনবো! কয়েকটা পেলাম, ভীষণ আকর্ষণী, মনের মত দাম, আর নজরকাড়া Outlook! আমিতো প্রায় শেষ! এটা পায় দেই, ওটা পায় দেই! দাম দেখি, খরচের হিসেব দেখি, আমার কাছে কত টাকা extra আছে তাও দেখি! সবকিছু মিলিয়ে একটা বুট প্রায় নিয়ে নেব, ঠিক এমন সময় দেখি, আমার কলিগকে এক সুন্দরী সেলসগার্ল জ্যাকেট পরিয়ে দিচ্ছে! খুলে দিচ্ছে! Winter jacket! Windproof! আর আপনারা যেহেতু মানালি যাবেন, সেহেতু এটাই, সবথেকে উপযুক্ত!

আহ! কি তার রূপ! Y কাট, Strait আষাঢ়ের মেঘকালো চুল! মাস্কারার মায়াবী প্রলেপ! কাজলের কমনীয়-শিল্পিত ও নিখুঁতছোঁয়া! স্যাডর যথার্থ ব্যাবহার! ফাউনডেসনের উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ! লিপলাইনারের অদ্ভুদ সুন্দর করে আঁকা ঠোঁট! গোলাপি লিপস্টিকের আবরণে, সদ্যপ্রস্ফুটিত গোলাপের দুটি পাপড়ি! টোল পড়া কর্পোরেট হাসি! সামান্য খাঁজ যুক্ত চিবুক! আর চোখের পলক যেন, ময়ূরের পেখমের নাচন! হাতের আঙুল যেন, কচি ঢেঁড়শেড় হালকা হাওয়ায় নড়াচড়া! আমি শুধু, দেখছি আর দেখছি! আমি অভিভূত তার সবকিছুর, সার্থক সাঁজ আর সার্বিক ব্যাবহার দেখে। কথাবলার ঢং আর আকর্ষণের ক্ষমতা দেখে! মনে-মনে বলছি, “ইসকি তো গায়ী”!

পাশ থেকে আমাদের একজন বোলে উঠলো, “দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে!”

আমি বললাম নাহ! “ও, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেনা!, ও ঘোলের স্বাদ, দুধে মেটাচ্ছে!!”

কি রকম? অন্যজনের জিজ্ঞাসা?

আমি বললাম, “ও তো বিয়েই করেনি, তো ও কি যানে? যে, কোনটা দুধ? কোনটা ঘোল?! ও তো কোন স্বাদই পায়নি এখনো!
সুতরাং, মেনে নিল।

এবং ঐ আকর্ষণে, আকর্ষিত হয়েই তিনি ৬৮০০ রূপী দিয়ে একটি Windproof, Winter Jacket কিনে ফেললেন! হায় ৩০০ ডলারের, অর্ধেকইতো শেষহয়ে গেল! এবার ভাবুন বাকিভ্রমণের কি হয়েছিল? আর, আমরা তার কি অবস্থা করেছিলাম! এবং এখনো, প্রতিনিয়ত, তাকে এটা হজম করতে হয়!

তার কেনার শেষে আমরা যখন বেরিয়ে আসবো, আমার সামনে এলো! সেই মায়াবিনী! ইস, আমার সামনে, একদম সামনে, তার শরীরের ব্লুলেডি বডি স্প্রের মাদকতাময় গন্ধে, আমার লুপ্ত হবার যোগাড়! বাকি অনুভূতি থাক! তার জিজ্ঞাসা?

স্যার আপনি কিছু নেবেন না?
নাহ!
কেন? জুতো পছন্দ করলেন যে?
নাহ! কিনলেই যে টাকা খরচ হয়ে যাবে!
কিনলে তো টাকা খরচ হবেই! তার উত্তর।
সেই জন্যই তো কিনবো না! কেন?
তাহলে তো আর, এখানে আসতে পারবোনা!
কেনা হয়ে গেলে আর এখানে আসার প্রয়োজন কি?

বলব? হ্যাঁ বলুন? যতক্ষণ কেনা না হবে, ততক্ষণ কেনার অজুহাতে এখানে আসতে পারবো।

হ্যাঁ? যতবার আসবো, আপনাকে দেখতে পাবো! আপনার কথা শূনতে পাবো! আপনার ঘ্রাণ নিতে পারবো! আর কখন-কখন......... আপনার একটু, আঢটুঁ ছোঁয়া!!

এই প্রথম, তার পলক পোড়লো..... লাজের রঙধনু রঙে!
গালে টোল পোড়লো......সেলসগার্লের আবরণ সরিয়ে, সত্যিকারের মায়াবী রূপে!
আর একটুকরো হাসি ছড়াল...... সে হাসির বর্ণনা... আমার বোধগম্যতার বাইরে!

সারংশঃ ভ্রমণের শুরুতেই ক্ষণিকের মায়াবী মায়ায়, মোহাচ্ছন্ন না হয়ে, ভ্রমণ শেষে কেনাকাটা করুন, সময় ও অর্থ বেঁচে থাকলে।

বরফের প্রেমে পাগল পারা...... (পরবর্তী গল্প)

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×