somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্বাসরুদ্ধকর ১৮ মিনিট...!!! (ভ্রমণ গল্প)

১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেন্ট মারটিনের নীল-সবুজ সমুদ্রে দাপাদাপি-ঝাপাঝাপি, মাতলামি-পাগলামি, নাকানি-চুবানি খেয়ে-খেয়ে দিশেহারা অবস্থা! যেহেতু সেবারই প্রথম গিয়েছি, তাই উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা একটু বেশীই ছিল এবং সেটাই হয়তো স্বাভাবিক...... সময়ের ডাকে উঠতেই হল, ফিরতে হবে কেয়ারীতে ঠিক ৩:৩০ মিনিটে! নয়তো ছেড়ে যাবে, সুতরাং কি আর করার? উঠে আসতেই হল!

অনেকের সাথে হাঁটছি আমরা দুই দোস্তও, আচমকা আমি ধুলো মাখা পথে পড়ে গেলাম মুখ থুবড়ে! ঘটনা কি? সবাই বেশ অবাক! হাঁটছিলাম তো বেশ স্বাভাবিক ভাবেই, কি হল হঠাৎ? আমি আর উঠতেই পারছিনা? করে যাচ্ছি বুকফাটা চিৎকার আর আর্তনাদ! গড়াগড়ি করছি পুরো রাস্তা জুড়ে! কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা! কি করবে এখন? আসে পাশে নেই কোন চিকিৎসা বা অন্য কোন সশ্রুশাও! কয়েকজন ধরাধরি করে কেয়ারীর ঘাট পর্যন্ত নিয়ে এলো, এতক্ষণে ব্যাথা কিছুটা কমেছে! আসলে আমার পায়ের রগে টান পড়েছিল, যেহেতু ঠাণ্ডা পানিতে অনেক, অনেক্ষন সময় কাটিয়েছি তাই ঠাণ্ডা যেকে বসে আমার পায়ের রগ টেনে ধরেছিল, পা সোজাই করতে পারছিলাম না.........

এই ব্যাথা আমার দুটো উপকার করলো! একঃ একদম শেষে এসেও তিন তলাতে একটা বসার জায়গা পেয়েছিলাম! আর দুই? সেই, শ্বাসরুদ্ধকর ১৮ মিনিট...!!! নাহ, যেটা উপরে ঘটে গেছে, সেটা নয় অবশ্যই! এটা সবার কাছেই একটা অপ্রত্যাশিত গল্প হবে! এবার আর ভনিতা না করে চলে যাই সেই রুদ্ধশ্বাস ১৮ মিনিটে............

তো যেহেতু বসার জায়গা পেয়েছি, আমার ঘটনার আর একজন প্রত্যক্ষদর্শী তার চেয়ারে আমাকে পা তুলে রাখার অনুমতি দিলেন! এবার, আমি আমার শরীর টাও কিছুটা এলিয়ে দিলাম! সেন্ট মারটিন থেকে কেয়ারীর বিদায়ী রাগিণী বেজে উঠলো! মনটা কেন যেন ভীষণ, ভীষণই খারাপ হল! কারণ খুঁজে পেলাম!

মন যেতে চাইছেনা এই স্বর্গ ছেড়ে! হ্যাঁ সেন্ট তখন স্বর্গই ছিল! এখন না হয় কালের পরিহাস আর আমাদের সোনার ডিম পাড়া হাস হয়ে বিলুপ্তির দারে পৌঁছে গেছে! তাকিয়ে ছিলাম একই দৃষ্টিতে, মোহাচ্ছন্ন হয়ে, সেই স্বর্গের পানে! হঠাৎ কেয়ারী সমুদ্রে একটু ঘুরতেই একটা চমৎকার, মনমাতানো মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগলো! দুঃখ ভুলে আনচান করে উঠলো মন! সেই মিষ্টি সুবাসের খোঁজে! কিন্তু আমি তো নিরুপায়! পায়ে যে এখনো ব্যাথা! উঠতে পারবোনা! কিন্তু আরও চঞ্চল হল চোখ আর মন! সুবাসের উৎসর খোঁজে, এবার সেই মিষ্টি গন্ধ মাদকতায় রূপ নিল! বাতাস তার বেগ বাড়ালো...চোখ আরও চঞ্চল!

আমার চোখের খুঁজে বেড়ানো, এক সময় স্থির হল! তার উরন্ত ওড়না দেখে! বাতাসে এলোমেলো চুল! আর দূর স্বর্গের পানে বেদনাহত দৃষ্টি দেখে! কিন্তু দেখতে কেমন হবে কে জানি! হবে একরকম, তাতে আমার কি? দৃষ্টি ফেরালাম, সেই স্বর্গের পানে, নীল জলে, বড়-বড় ঢেউয়ে, উড়ে যাওয়া গাংচিলে, মাছ ধরার ট্রলারে, দূর সিমান্তের অন্য দেশের পর্বত মালায়! কেন যেন, আবার দৃষ্টি পড়লো সেই বাতাসে এলোমেলো করে দেয়া চুলের পানে... বাতাসে মুখ ফেরালো! আর তার সেই এলো চুলের ফাক গলে রূপের ঝলকানিতে আমিই এলোমেলো!

এতো সুন্দর! ওহ প্রথম ট্যুরের পরম সৌন্দর্য! প্রকৃতিও বুঝি হার মানলো! একটা ছবি না তুল্লেই নয়! কিন্তু কিভাবে? আমার ক্যামেরার চার্জ তো সেই কখন থেকে নেই-নেই করে সংকেত দিচ্ছে! তবে কিভাবে? দেখিই না চেষ্টা করে, অনেকক্ষণ বন্ধ থাকলে, অনেক সময় নতুন জীবনীশক্তি ফিরে আসে ক্যামেরার ব্যাটারিতে, সেই আশায় বের করলাম ক্যামেরা, ইস আবারো পিছন ফিরলো! তবে ছবি কিভাবে তুলবো? তবুও অপেক্ষা! ক্যামেরা অন করে, তার পানে স্থির করে হাত আর দৃষ্টি! আমি অপেক্ষারত......

ভুলে গেছি স্বর্গ! দেখিনি আর ওই নীল সমুদ্র! শুনিনি উচ্ছল ঢেউয়ের শব্দ! মনে নেই গাংচিলেদের উরে বেড়ানো! চোখে পড়েনি সবুজ, হারিয়েছি পাহাড়ের মায়া! মাখিনি গাঁয়ে শেষ শীতের হিমেল হাওয়া! শুধু নির্বাক আর এক দৃষ্টিতে সেই রূপসীর রূপের আর একটি ঝলকের অপেক্ষা...!

আমার ক্যামেরা আমাকে সতর্ক করছে বার-বার! তবুও অপেক্ষা শুধু মাত্র একটি ক্ষণের! একবার এদিকে ফেরার! দৃষ্টি সরাবার! এদিকে আমার দোস্ত বার-বার বারন করছে ছবি না তোলার! আহ্বান করছে, প্রকৃতির সীমাহীন সম্মোহনে সম্মোহিত হবার! আমি তো উন্মাদ প্রায়! “আর একবার যদি ডাকিস, আর যদি সে মুখ ফেরায়? আর আমি যদি মিছ করি? ছবি তোলা! তোর কিন্তু খবর আছে! যাবই না তোর সাথে!”

আমার হুমকিতে দোস্ত পিছু হটলো! আর বলে গেল, “তুই গোল্লায় যা!”

আমি, অটল, স্থির, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, চোয়াল শক্ত করে, ব্যাথা ভুলে, প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে! রূপসীর রূপের মায়ায় ক্যামেরা তাক করে আঁটকে রইলাম, আমার শেষ সাধনার, চূড়ান্ত সফলতার ক্ষীণ প্রত্যাশায় কেটে গেছে ১৭ মিনিট! এক ভাবে, ক্যামেরা তাক করে, একটুও নড়াচড়া না করে! কোন দিকেই না তাকিয়ে...!

আবার এলো বাতাস, কিছুটা দমকা হাওয়া! সামান্ন ঢেউয়ের দোলা, দুলে ওঠা কেয়ারী! যাত্রীদের ভীত গুঞ্জন! আর সেই সাথে পরম প্রত্যাশার আশীর্বাদ হয়ে এলো সেই ক্ষণ! তার ফিরে তাকানো!! আর আমার হাতের আঙুল যেন, হরিণের সতর্ক সংকেত! ক্লিক, ক্লিক, ক্লিক...... কয়েক মুহূর্ত মাত্র! দু-একটি সেকেন্ড! আমার ক্যামেরার সাহসী ফ্ল্যাশ! যেন জীবন্ত পরী! ইচ্ছে করে, পোজ দিয়ে, অনেক আগ্রহ নিয়ে, বার-বার দাড়িয়ে, ফিরে-ফিরে ঠিকঠাক চাহনি দিয়ে তোলা ইচ্ছে মত, সেচ্ছায় তোলা, স্নিগ্ধ ছবি......!!!

একটি, দুইটি, তিনটি ছবি! ক্যামেরা Re-on করে দেখলাম! কারণ? তিনটি ক্লিক দেবার পর মুহূর্তেই সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল! আহ, জীবনের প্রথম এডভেঞ্চারের, সুন্দর ও সাহসী সত্যিকারের সার্থকতা!

১০০ ভাগ সফল ও দারুণ তৃপ্তি দায়ক একটি ভ্রমণ.........!!!

সত্যি বলছি, কোনো খেদ ছিলনা সেই সময়... প্রথম ও অপরিপক্ক ভ্রমণকারী ছিলাম... চেয়েছিলাম, সম্ভব্য সবটুকু আনন্দ নিংড়ে নিতে...... পেরেছিলাম ও.......

সেই থেকে আজও থাকে কোনো না, কোনো পাগলামি সকল ভ্রমনেই! না এখনকার পাগলামি গুলো ওরকম নয় আদৌ... একটু অন্য রকম........

সেসব গল্পও বলবো আস্তে-ধীরে।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×