somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানালির মুগ্ধতায়...... (ভ্রমণ গল্প)

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানালি পৌছাতে প্রায় সন্ধা, বিয়াস নদীর গাঁ ঘেঁসে আর পাহাড়ের পা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে... রাতের আকাশের তারাদের অভিবাদন, খণ্ড চাঁদের আলোকিত আমন্ত্রণ আর দূরের শ্বেত শুভ্র পাহাড় চুড়াদের নিমন্ত্রন.... মানালিতে স্বাগতম।

ঝমঝম শব্দে লোহার ব্রিজ পেরিয়ে মানালি শহরে ঢুকে পড়লাম। আলোয়-আলোয় আলোকিত সারা মল চত্তর, রাস্তা-ঘাট, গাছপালা, বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, যেন পুরো শহর সেজেছে বিয়ের সাঁজে! আসলেই তাই... মানালিতে বছরের প্রথমটা এমনই... বর্ণময়, বর্ণিল, বাঁধনহারা, বাঁধভাঙা...! উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনা, মায়া আর মাদকতা, আবেগ আর আকুলতায় ভরা, ঝকঝকে-তকতকে, রঙে-রঙে রঙিন আর লোকে-লোকে লোকারণ্য প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কোন...!

নেই কারোই কোন ব্যাস্ততা! নেই দ্রুত হাটার কার্যকারিতা, নেই হাক-ডাকের বালাই, এ যেন স্বপ্নের এক অলসপুরী! আমাদের গাড়ি সরু পীচ ঢালা রাস্তা ধরে আর পাহাড়ের বাঁকে-বাঁকে, এঁকেবেঁকে উপরের দিগে উঠছে... আর বসে থাকতে ইচ্ছে করছেনা, মনে হচ্ছে নেমে হেটেই যাই! কিন্তু পথ যে চিনিনা... গাড়ি চলছে তো চলছেই... থামার কোনো লক্ষণই নাই!

সবাই নামার জন্য অস্থির, আর কতক্ষণ? “এই সামনেই” ড্রাইভারের উত্তর, কিন্তু পথ যেন শেষই হতে চায়না... কতক্ষণই বা ৫ বা ৭ মিনিট! তাই যেন অনন্তকাল! “আমাদের হোটেল? “হবে সেখানেই, যার পরে আর রাস্তা নাই!” “যে জায়গা থেকে আর কোথাও যাওয়া যায়না!” “যার পরে আর গাড়ি যায়না!” “প্রত্যন্ত এলাকায়, যার পরে আর কিছুই নাই!” এই সব উল্টা-পাল্টা মন্তব্য করছিলাম, আমি... সারাদিনের ক্লান্তির অবসন্নতায়! আমার কথা শুনে ড্রাইভার একটু মন খারাপই করলো! আর অন্যরাও আমাকে বকতে লাগলো, থামাতে চাইলো!

তবে হ্যাঁ... গাড়ি থামলো, একদম পথের শেষেই... একেবারেই প্রান্তরে... যার পরে আসলেই আর যাবার জায়গা, রাস্তা বা সামনে নেই কোনোই গন্তব্য...! সুতরাং এবার আমি আবারো সরব হলাম, আগের মন্তব্য গুলো সঠিক ছিল বলে......!!

হোটেলে ঢুকে গেলাম, হুড়মুড় করে, কোনো দিকেই না তাকিয়ে, ক্লান্তিতে ক্লিষ্ট হয়ে, স্নান করে শান্ত হতে, ঘণ্টা খানেক পরে নিচে নেমে এলাম, সবাই... একে-একে, এবারই প্রথম হোটেলের পাশে বরফ দেখলাম! মনটা খুশিতে নেচে উঠলো... সিমলাতে প্রথম বরফ দেখার মতই! কিছুটা আশ্বস্ত হলাম, যাক তবে বরফের আসে-পাশেই আছি! দু-একটা করে ছবি সবাই তুললাম। তখন জানিনা যে আমরা চারিদিকে বরফের স্তূপ আর বরফে ঢাকা এক স্বপ্ন কুটিরেই রাত কাটাবো!

হেটে-হেটে নেমে গেলাম ম্যলের দিকে কিছুক্ষণ আগেই উপরে উঠার রাস্তা ধরে, কিন্তু দেখতে পারিনি তেমন কিছুই শুধু পথে বিভিন্ন ঢং আর আকৃতির ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কুটিরের আবছা সৌন্দর্য ছাড়া, চারিদিকে যে কুয়াশায় জড়ানো... মেঘে মোড়ানো... বরফে হারানো... নিয়ন বাতির অনুজ্জল আলোতে নেভানো...!!

মল চত্তরে কিছুক্ষণের উম্মত্ততা শেষে, গরম-গরম রসগোল্লায় মন ভরে, আস্ত মুরগীর গ্রিল, নান বা সেই জাতীয় রুটি, আর সাথে সামান্ন পানীয়!! নিয়ে মানালির বিখ্যাত উইন্টার ফেস্টিভ্যাল এর বর্ণিলতার উষ্ণতা! গাঁয়ে মেখে ফেরার পথে, অন্ধকারে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কিছু উদ্ধার করতে, করতে রুমে ফেরা আর খেয়ে দেয়ে ডাবল কম্বলের নিচে উষ্ণতার খোঁজে হারিয়ে যাওয়া... কে? কখন? ঘুমিয়ে পড়েছি কেউ জানিনা......!

ঘুম ভেঙে, চোখ কচলে, বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছি... সারাদিন কি করবো এই সব ভাবতে... ভাবতে জানালার অনেক ভারী পর্দা সরাতেই......... হা......... হয়ে গেলাম...... শরীরের প্রতিটি রোম জেগে উঠলো! স্তম্ভিত হয়ে ভুলে গেলাম পিছনের সব... সব... সব কিছুই... এক নিমিষেই...! এতো পুরোই স্বপ্নপুরী! এতদিন ধরে সিনেমায় যেমন দেখেছি... হলিউড, বলিউড এর... যতদূর চোখ যায় শুধু সাদা... আর সাদা... নরম বরফে মোড়ানো চারিদিক... পাইনের কালো গাছ... আর সাদার সুভ্রতায় মোড়ানো পাতা...! কাছের পাহাড়, দুরের পাহাড় সব... সবই বরফে জড়ানো... সাদায় মোড়ানো... বারান্দায় বরফ! রেলিংএ বরফ! জানালায় বরফ! বরফ আর বরফ যেন বরফের জন্মভূমি... বরফের একাকার চারিদিক...!

সবাই মিলে শতেক ছবি তো তুললামই! কিছুক্ষণ পরে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরে নেমে এলাম হোটেলের নিচে... এবার সবাই বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ প্রায়! আরে এযে অনেক নাম শোনা হাদিম্বা টেম্পলের পাশেই আমরা! যেন সুজারল্যানডের আবহ! দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত স্তরে, স্তরে উঠে যাওয়া বরফ পাহাড়! যেখানেই একটু সমতল, সেখানেই একটি রঙিন কুটির! হাজার রঙের বর্ণিলতায় সাজানো! যার যে রঙ ইচ্ছে মতন! বাড়ির ছাদ গুলো সব তুষারে ঢাকা! গাড়ি গুলো সব তুষারে জড়ানো! প্রতিটি কুটিরের প্রবেশ মুখে যেন তুষারের দেয়াল! তুষারের গেট!

পত্রহীন আপেলের গাছে-গাছে তুষারের ঝুলে থাকা! সেও এক অপার্থিব সম্মোহন! ওখানেই কাটিয়ে দিলাম একটি বেলা... তুষার মেখে, তুষার ছুঁড়ে, তুষারে হেটে, বরফে শুয়ে, স্লাইডিং করে, লাফিয়ে-দাপিয়ে, বরফ নিয়ে মারামারি করে, উদ্দাম উদযাপন করে, আপেলের গাছে ঝুলে... পাইনের বনে হারিয়ে গিয়ে... জমাট বাঁধা তুষার কেটে-কেটে যতদূর পারি হেটে-হেটে সেই অপার রূপ-রস-গন্ধ, তাড়িয়ে-তাড়িয়ে উপভোগ করে। গত রাতের অপূর্ণতার আফসোসে... পুড়ে পুড়ে পূর্ণতার প্রাপ্তিতে......... বরফের শ্বেত সুভ্রতায় হারিয়ে গিয়ে......... আবার জীপে উঠে............

এবার...... সোলাং ভ্যালীতে...... স্বপ্নের সীমানায়... আকাশের নীলিমায়......স্বর্গের কাছাকাছি...... অন্য গল্পে......!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×