somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়াসের আহ্বানে...... (ভ্রমন গল্প)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষুধা জেকে বসলো, জীপে ওঠা মাত্রই... বরফের প্রেমে মশগুল ছিলাম বিধায়, ক্ষুধা অনুভুত হয়নি সেই ভোঁর থেকেই... কিছুদূর গিয়েই মানালির লোকাল একটি ছাপরা ধরনের হোটেলে সকালের খাবার খেটে ঢুকলাম, কিন্তু দারুণ খেলাম, সবকিছু মিলিয়ে। আবার জীপে উঠে সোলাং এর দিকে...... লোহার ব্রিজ পেরিয়ে উঠে যাব, এমন সময় চোখ গেল, রূপে ভরপুর... কিঞ্চিৎ কপোল...
ক্ষণিকের, এক চোখের দৃষ্টি মেলা...... বাতাসের এলো চুল...... এক হাতের ইশারায়, অর্ধ-ঘোমটার আড়াল থেকে আহ্বান করা গাঁয়ের মিষ্টি মেয়ের মত... বিয়াসের দিকে...... কারণ বিয়াস তখন পূর্ণ রূপে নয়... শীতের জমে যাওয়া জল আর ক্ষীণ, ধীর লয়ে গড়িয়ে আসা মৃদু স্রোতে বিয়াসের আহ্বান, যা উপেক্ষা... কঠিনই নয়, অসম্ভবও বটে......

ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে, নেমে পড়লাম...... ছোট-বড়-মাঝারি পাথর ধরে, নেমে যাচ্ছি বিয়াসের বুকে, অমোঘ আকর্ষণে.... পূর্ণতার আগের মুহূর্তের সুখের খোঁজে...... পাথরের খাঁজে-খাঁজে থাকা পানির, জমে নরম তুলতুলে বরফ হয়ে যাওয়া... হাত দিলেই, হাত ডুবে যায়! হাতের তালুতে নিলেই লাজে গলে-গলে, ঝোরে পড়ে ফোটা-ফোটা, টুপটাপ... হাত ভিজে থেকে যায় শুধু সুখের ভেজা-ভেজা রেশ... মুছতে মন চায়না...!

থাকনা ভেজাই... সুখের পরশ হয়ে... গালে ছোঁয়াই, সেই হিম শীতল ঠাণ্ডা হাত...... সুখের শিহরন জাগে, সারা শরীর জুড়ে, যেন কোন কাঙ্ক্ষিত নারীর, ভীষণ কাঙ্ক্ষিত অধর......!! ইস উঠে যেতে মন চায়না...... একটু সামনেই, কয়েকটি পাথর পেরুলেই জমে না যাওয়া জল, ধীরে-ধীরে ওই, উঁচু পাহাড়দের জড়িয়ে ধরা বরফ... রোদের কিরণ মেখে চুইয়ে-চুইয়ে... নেমে এলো এই, দুই পাহাড়ের মাঝে, অসংখ ছোট-বড়-মাঝারি, পাথরের ভাজ-খাঁজ আর মাঝে মৃদু জলের, সান্ত আর স্থির বয়ে চলার কুলকুল, কলরব...... নিয়ে নিলাম, এক আজলা, ছিটিয়ে দিলাম চোখে-মুখে-গলায়...!

যদিও ভীষণ ঠাণ্ডা, হিম-হিম... তবুও, এই সুখ, এই আনন্দ, এই আকুলতা, এই আবেগ, এই আকর্ষণ, এই আহ্বান পাব কোথায়? কার কাছ থেকে? আবার কবে? কিভাবে? কেন? তাই এই ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপণ...... সেই হিম শীতল সুখের ভেজা পরশ মেখে উঠে এলাম, অবশেষে...... আবার চলছি...... সোলাং এর দিকে......

জীপ চলছে, হেলে-দুলে, যেন মৃদু ঢেউয়ের মাঝে পাল তুলে...! রাস্তার এমনই বাঁক, পাহাড়ের পিঠ ধরে-ধরে, এবার পাহাড়ের ভিন্ন রূপ, নেই গাছ-ঘাস-জঙ্গল-সবুজ বন বা বনানী... পরিবর্তে আছে, পাথর- কংক্রিট-কয়লার মত কালো-কালো নিরেট কিন্তু তবুও আকর্ষণের কমতি নেই এতটুকু...! আর যাইহোক পাহাড় তো...? পাহাড় প্রেমী মানেই ভালো লাগবে, সে যেমনই হোক...! ওই যাকে ভালোলাগে, তারও সবই তো ভালোলাগে, তাইনা...? তার মন্দ বা খারাপ বা অসুন্দর, তাও চোখে পড়েনা...! গাঁয়ে লাগেনা...! মাথায় আসেনা...! ঠিক সেই রকম...!

অনেক নিচে, গভীরে, বাম পাশে বয়ে চলা বিয়াস......জলেদের বয়ে যাওয়া ঝংকার... বিয়াসের ওপারে, অবারিত আপেল বাগান... ফুল-ফল বা পত্রহীন, শুধু সাদা-সাদা তুষারের আবরনে ঢাকা বস্রহীন লজ্জা...! মাঝে, মাঝে এক বা দুই তালা স্বপ্ন কুটির... বিয়াসের কোল ঘেঁসে... বরফের বুক জুড়ে... পাহাড়ের শরীর ধরে... চারদিক সাদায়, সাদায় সত্যিকারের সুভ্রতায় মোড়া...... দিগন্ত বিস্রিত আপেল গাছের তামাটে শরীর... বাগান মাঝে-মাঝে রঙ-বেরঙ এর স্বপ্নময় স্বপ্নিল কুটির......

যতদূর চোখ যায় পাহাড়ের অসম্ভব আহ্বান আর গাঁ ছুঁয়ে বয়ে চলা বিয়াসের আকুলতা...... কোনটা নেবেন? কোনটা ছাড়বেন? কোনটা দেখবেন? কতো গুলো ছবি তুলবেন? অসম্ভব... অসম্ভব, এড়ানো এই সম্মোহিত সম্ভাসন...... হারিয়েই যাবেন নিজের মাঝে...... নিজের কাছে...... নিজেই, নিজের সুখের আবেশে...... সব-সব-সব ভুলে, ব্যাথা-বেদনা-না পাওয়া- সব কিছুই.........!

রাস্তা এবার দুই দিকে যাবে, ডানে উপরের দিকে রোথাং পাস আর একটু নেমে আবার উপরের দিকে সোলাংভ্যালী...... কিছু এগিয়ে থামতে হবে, কারণ, সামনে সুখের ঠিকানায় যাওয়ার আগের কিছু বিশেষ প্রস্তুতি নেবার জন্য, মানে আইস স্কেটিং এর কাপড় আর অন্যান্য সরঞ্জাম ভাড়া নিতে হবে......

বাধ্যতামূলক নয়, যদিও কিন্তু প্রথম বেলায় তাই মনে হবে...... তো নিয়ে নিলাম যা, যা দরকার, এই মুহূর্তের সেরা রোমাঞ্চ ছিল, আইস স্কেটিং এর সরঞ্জাম গুলো, এতদিন শুধু সিনেমায়ই দেখেছি, এই প্রথম হাত দিয়ে, ছুঁয়ে-ছুঁয়েই স্কেটিং এর রোমাঞ্চ অনুভব করছি...... ইস, আর কতক্ষণ......!

আরো একটু এগোতেই গাড়ির সারি, অসংখ গাড়ি দাঁড়ানো, একটি ছোট লোহার ব্রিজ পেরুবে বলে... আবার বিয়াসের হাহাকার তোলা বুকের উপর দিয়ে, অন্য পারে যাওয়া, আবারো আহ্বান, কাছে যাওয়ার...... পাশে বসার...... ছুঁয়ে দেখার...... হাতে হাত রেখে সময় কাটানোর...... নিমগ্ন হবার ওর রূপে...... জাদুতে...... জলে...... নুড়িতে...... পাথরে...... জমে থাকা তুষারে...... আপেল গাছের ঝুলে থাকা জমাট বরফে...... পাইনের পাতায়-পাতায় মেখে থাকা সুভ্রতায়...... নীল আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার প্রশান্তিতে...... জল ছিটিয়ে খেলা করার কিশোরীতায়...... দুরের পাহাড় দেখার একাত্মতায়......... কিন্তু এখন নয়, অন্য সময়...... এখন যাব সুখের সোলাংভ্যালীতে...... স্বপ্নের আইস স্কেটিং করতে...... বরফ পাহাড়ে চড়ে......

বরফের চরম ও চূড়ান্ত সুখ শুষে নিতে............
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×