somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তাল সমুদ্রে সেন্টমারটিন......(ভ্রমন গল্প)

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখনও পাহাড়ের প্রেমে পড়িনি......... পাহাড়কে দেখেছি মাত্র এক-আধবার...... নতুন অফিসে কাজ শুরু করেছি কিছুদিন হল, এই... কয়েকজনের সাথে পরিচিতি, এদের দু-এক জনের সাথে কিছুটা সখ্যতা... হঠাৎই একদিন এক সহকর্মী বেড়াতে যাবার প্রস্তাব দিলেন... আমিও সানন্দে রাজি, কোথায় যাব? কে, কে যাবে? আমি প্রস্তাব দিলাম যে সেন্টমারটিন যাই চলেন... কেউই দ্বিমত করলনা...।

প্রস্তুতি শুরুহল, দিনক্ষণ এগিয়ে এলো...... এদিকে শুরু হল বেশ ঝড়বৃষ্টি আর নিম্ন চাপ, সাথে সমুদ্র বন্দর গুলোতে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন সিগন্যাল... যাত্রা শুরুর পূর্বে অনেকেই নিষেধ করলেন সেন্টমারটিন এ না যেতে, কারণ এই সময় সমুদ্র অনেক উত্তাল ও ভয়ংকর থাকে! সাধারন মানুষজন এই সময় ওখানে যায়না, কিন্তু আমার গো-ধরা, ঘার ত্যাড়া আর নিষিদ্ধতাকে উপভোগের মানসিকতা আমাকে আরও তাঁতিয়ে তুলল, বললাম, আগে টেকনাফ পর্যন্ত যাই... তারপরে আবহাওয়া বুঝে সিদ্ধান্ত নেব, বেশী খারাপ হলে ওখানেই অথবা কক্সবাজারে চলে আসবো... ঠিক আছে, সবাই এতে সম্মত হল। অফিসের বাইরের আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে বেশ বড় একটা টিম হয়ে গেল...

আমাদের যাত্রা শুরু হল...... পথিমধ্যে তিনবার গাড়ি খারাপ হল, যে কারনে, কক্সবাজার পৌছতেই বেলা ১২ টা! টেকনাফে বিকেল ৩:৩০! শেষ ট্রলারটিও চলে গেছে... আজ আর যাওয়া যাবেনা... কিন্তু আমি আজই যেতে চাই, সমুদ্র বন্দর গুলোতে ৪ নাম্বার সিগন্যাল! সমুদ্র ভীষণ উত্তাল, তেমন কোন যাবার ব্যাবস্থাও আজ আর নেই... ঠিক আছে, আমরা এই বাজারে রাতে না থেকে শাহ্‌পরির দ্বীপে গিয়ে থাকি...? ওখানে থাকলে সমুদ্র তো দেখা যাবে, ঘুরে-বেড়ানো যাবে, আর আগামীকাল সকালে, একদম প্রথম ট্রলারে করে সেন্টমারটিন পৌঁছে যাব! ওখানে যেয়েই সকালের নাস্তা খাব! আর এখানে? এই বাজারের ভিতরে কিছুই দেখার নাই, থাকার জায়গাও তেমন পরিচ্ছন্ন না... উপরন্তু শুঁটকির বিটকেলে গন্ধ! সবাই আমার যুক্তি মেনে নিল, আসলে আমার মাথায় দুরভিসন্ধি! আগে ওখানে যাই, দেখা যাক কি করা যায়?

পৌঁছে গেলাম শাহ্‌পরীর দ্বীপে, তখন দিকেল গড়িয়ে সন্ধাদের উঁকিঝুঁকি দেয়া শুরু হল...... ওখানে গিয়ে দেখি বেশ কতগুলো স্পীড বোট বাঁধা! এইবার আমার এডভেঞ্চারের রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠলো! আমি যাবই, শুরু হল সবাইকে বোঝানো, যে এইটা যদি আমরা করতে পারি, মানে এই ওয়েদারে গিয়ে পৌছাতে পারলে সেটাই হবে জীবনের একটা চরম অভিজ্ঞতা! দারুন একটা রোমাঞ্চকর ড্রাইভ হবে এটা! আর সেটা সারাজীবন সবাইকে বলে বেড়াতে পারবে! আমি কিন্তু আজ, এই রাতেই যাব! তখন সন্ধার আঁধার আমাদের যেকে ধরেছে...

সমুদ্র শুধু গর্জন করছে, এক, একটা ঢেউ ৬-৮ ফিট উঁচু হয়ে সামনে এসে আছড়ে পড়ছে! বাঁধা স্পীডবোট গুলো কাগজের নৌকার মত লুটোপুটি খাচ্ছে সমুদ্রর ঢেউ আর পাড়ের মাঝখানে! যেন এরচেয়ে ডুবে গিয়ে, নিশিন্তে থাকাতেই ওদের বেশী শান্তি! আর আমি...... আমি শিহরিত! রোমাঞ্চিত!! উচ্ছ্বসিত!!! এই মরন এডভেঞ্চারের গন্ধ পেয়ে!

যাইহোক, সবাই মোটামুটি রাজি! স্পীড বোটের চালকের সাথে কথা বলতে, তিনি বললেন “আমরা যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, কোস্ট গার্ডকে রাজি করিয়ে যেতে পারি, ওনার আপত্তি নাই! তবে ভাড়া লাগবে তিনগুন!” আমার আপত্তি নাই! ভাড়া যাই লাগুক! আমি এই রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে চাই! এরকম সুযোগ জীবনে দু-একবারই আসে! আর তার চেয়েও বড় কথা পরিবারের কেউ জানেনা! জানলে কোনোদিনই করতে দেবেনা আর আসতেও দেবেনা এভাবে! সুতরাং...... সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবেনা!

গেলাম কোস্ট গার্ডের কাছে, আমাদের প্রস্তাব শুনে তো তাদের চোখ ছানাবড়া! বিস্ফোরিত চোখে দুরদুর করে দিতে চাইল... এবং সেটাই স্বাভাবিক, তাদের উত্তর “এই ওয়েদারে আমরাই কোন রিস্ক নেই না, ট্রেনিং থাকা সত্তেও, আর আপনারা! পাগল হইছেন মিয়া!” “যান, যান, রাত্রে ঘুমান আরাম কইরা, সকালে আমাদের বোটে যাবেন সেন্টমারটিন”

রাজি করানো যাচ্ছেনা দেখে, সবাই সামান্ন খুশি! আমার মেজাজ আরও চড়ে গেল, শেষ দেখে ছাড়বো... গেলাম ওদের বড় কর্তার কাছে, তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে এলাম ঘাঁটে, বড়কর্তা, তার জুনিয়রদের বললেন “কেউ যদি নিজেদের জীবন, নিজেরাই বিপন্ন করতে চায়, আমাদের কি করার আছে?” “ওনাদের সবার নাম, ঠিকানা, বাড়ির ফোন নাম্বার লিখে, সবার স্বাক্ষর নিয়ে, আর সবাইকে একটা ইমারজেন্সি নাম্বার দিয়ে দে, যেন, সাহায্যের দরকার হলে, ওই নাম্বারে শুধু রিং দেয়, কথা না হলেও, আমরা পৌঁছে যাব” “তারপর যেতে দে” আর একটা সাহায্য করলো, সেটা হল, তার জানামতে সবচেয়ে দক্ষ স্পীড বোট চালককে ডেকে পাঠাল, এবং তাকে বুঝিয়ে আমাদের তুলে দিল! তখন রাত ৭:৩০! সমুদ্র তখন আরও একটু রাগী! সন্ধা এবং জোয়ারের সম্মিলনে যা হয় আর কি............!

শরীরের ঢিলেঢালা পোশাক খুলে, টাইট পোশাক পরে, লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম, যেন ডুবে গেলে কাপড়ের ওজন কম হয়! সবার ব্যাগ এক জায়গায় বেঁধে রাখলাম, সাথে শুধু টাকা আর মোবাইল, মোবাইলে কোস্ট গার্ডের নাম্বার টা ডায়াল করে রাখলাম, যেন সবার আগেই থাকে, সবাই তার পরিচিত একজনকে ফোনে তাদের অভিযানের কথা জানিয়ে শুরু করলাম.........

স্পীড বোট, স্টার্ট নিয়ে ঘুরতেই আবার বন্ধ হয়ে গেল! আমরা একটু হতাশ! কি হল? জানিনা, আবার স্টার্ট নিল এবং পাড়ে ফিরে এল! কিছুই বুঝলাম না! চালক উপরে গিয়ে, অন্য চালকদের কিছু বলে এল? কি তা বললনা! আবার শুরু হল...... এবার আর কোন কথা নয়...... সেই সুযোগই তো নেই আর, এবার যে, যাকে রক্ষার চেষ্টা মাত্র!

এক, একটা ঢেউ আসে, স্পীডবোট তিন-চার হাত শুন্যে উঠে যায়! আর ধপাস করে আছড়ে পরে সমুদ্রে, এ যেন তীর থেকে ঢিল ছোঁড়ার মত অবস্থা! শুধু সেই ঢিলের সাথে লেপটে থাকা আমরা! আবার ঢেউ যখন সামনে থেকে আসে, দু-একজন ছিটকে পিছনে পরে যাই! ঢেউ যখন দুপাশ থেকে একি সাথে আসে, তখন সবাই নিচু হয়ে পরি, কখন-সখন শুয়ে পরতে হয়! সবচেয়ে ভয়ংকর, ঢেউ যদি পিছন দিক থেকে আসে! কারণ, তাতে করে, আমরা নিশ্চিত ভাবেই উল্টে যাব! যে কারনে, চালক, সামনে বা দু-পাশের চেয়ে, পিছনে বেশী নজর রাখছে!

একবার ০০৭ সিনেমার মত ঘটলো! সামনে বিশাল এক ঢেউ দেখে চালক, দিক ঘুরিয়ে দিল, আর আমাদের স্পীডবোট, কতটা উঁচুতে উঠেছিল জানিনা... তবে দেখলাম... আমাদের বোটের নিচ থেকে দুই-তিনটা ঢেউ চলে গেল!! আমরা সবাই একেবারে থথথথ......... এই প্রথম সবার আতঙ্ক, রোমাঞ্চে পরিণত হল! এবং সবাই হাই-ফাইভ করলো একে, অন্যের সাথে! আনন্দে, উত্তেজনায়, রোমাঞ্চে! এভাবেই পৌঁছে গেলাম, আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেন্টমারটিন! একটু-আধটু ব্যাথা, কাটা-ছেরা হয়নি বা লাগেনি, তা নয়...

আমাদের মরন এডভেঞ্চারের খবর আগে থেকেই সেন্টমারটিন দেয়া ছিল, জানতাম না! পৌঁছে দেখি অনেকেই আমাদের স্বাগত জানতে এসেছেন! বিশেষ করে, আমাদের ভোলা ভাই ও তার অবকাশের টিম! আর, আমাদের এই চরম সাহসিকতার পুরস্কার স্বরূপ, উনি আমাদের রাতের ডিনার টা স্পন্সর করেলেন!!!

অভাবনীয়, অভাবনীয়, আমাদের কাছে অবিস্মরণীয়............
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×