somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাঁজেকে সূর্য নাকি ৩:৩০ টায় ওঠে......!!(ভ্রমন রম্য)

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকায় সূর্য উদয় হয় ৫:৩০ থেকে ৫:৪০ এই সময়ে। কিন্তু সাঁজেকে সূর্য নাকি ৩:৩০ এ ওঠে...!! জীবনে শুনেছেন এমন ঘটনা? যে এমন ছোট একটা দেশে দুই ঘণ্টা আগে-পরে সূর্য ওঠে!! চলুন সেই অদ্ভুত পাগলামির গল্পটা শুনি।

এবারই প্রথম সাঁজেক যাওয়া নয়। আগেও গিয়েছি। কিন্তু সূর্যদোয় বা সূর্যাস্ত দেখা হয়নি। তাই এবার আর যাই হোক এই অপার্থিব দুটি মুহূর্ত কিছুতেই মিছ করা যাবেনা বলে সবাই বেশ এক রোখা আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আছি।

সাঁজেক পৌছাতে পৌছাতে বিকেল গড়িয়ে গেল। এদিকে দুপুরের খাবার এখনো খাওয়া হয়নি। লাঞ্চ করতে বসলে আর সূর্যাস্ত দেখা যাবেনা আবার ক্ষুধায় সবার কাহিল অবস্থা। কে কি করবে, বা না করবে এটা ভেবে ভেবে অস্থির। শেষমেশ যেটা হল, পুরো দল ছন্নছাড়া হয়ে পড়লো। লাঞ্চ আর সূর্যাস্তের দোটানায়। কিন্তু যারা সূর্যাস্ত উপভোগে গেল তারাও শেষ পর্যন্ত হ্যালিপ্যাডে পৌছাতে পারলোনা আর যারা লাঞ্চ করতে থেকে গেল তারাও ওই সময়ই লাঞ্চ করতে পারলোনা।

সূর্যাস্ত দেখা হল গাছ, পাতা আর আদিবাসীদের আবাসের ফাঁক ফোঁকর থেকে যে যেভাবে আর যতটুকু পারে। সন্ধায় দুপুরের খাবার খেতে খেতে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, সূর্যাস্ত ঠিকঠাক পেলাম না সেটা নাহয় মানলাম। কিন্তু আগামী কালের সূর্যোদয় কিছুতেই মিছ করা যাবেনা। বেশ আগে ভাগেই হ্যালিপ্যাডে গিয়ে পৌছাতে হবে।

রাতের খাবার সেই ১১:৩০ টায়। সন্ধায় ভর পেট খেয়ে এর আগে আর খাওয়াও সম্ভব নয়। রাতের খাবার খেতে খেতে আলোচনা হচ্ছিল... ঠিক কটা নাগাদ উঠলে সূর্য উদয় উপভোগ একটুকুও বাদ যাবেনা? অনেক আলাপ আলোচনা আর যুক্তি তর্কের শেষে ঠিক হল, ভোঁর ৪ টায় ওঠা হবে। ৪:৪৫ এ সূর্য উঠবে! সেভাবেই আলোচনার শেষ হল এবং রাতের খাবারেরও।

ভ্রমনে এসে যতই খাই, আড্ডার ছলে একটু চা না খেলে কি হয়? তাই রাতের খাবারের ক্লান্তি দূর করতে একটু জিরিয়ে, চায়ের ফরমায়েস দেয়া হল। চা চক্রের ভিতরেই কোত্থেকে কে যেন শুনে এলো যে সাঁজেকে সূর্য নাকি অনেক আগে থেকেই দেখা যায়! একেবারে পাহাড়ের উপরে থেকে দেখবো বলে নাকি আরও আগেই আকাশ লাল-নীল-কমলা, মোট কথা “বেণীআসহকলা” রঙ ধারন করে!

তবে কখন উঠতে হবে? এই নিয়ে সবাই মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এরই ভিতরে আরও একটা খবর কানে এলো, সেটা হল... হ্যালিপ্যাডে যদি আগে আগে পৌঁছানো না যায়, তবে সামনে যায়গা পাওয়া যাবেনা। আর সূর্য উদয় ও ঠিক মত দেখা যাবেনা? পিছন থেকে নাকি লাফিয়ে লাফিয়ে সূর্য দেখতে হবে! তবে ছবি তোলা? তার কি হবে? এইসব ভাবনায় আগের দুশ্চিন্তা কয়েকগুণ বেড়ে টেনশন আর মানসিক অস্থিরতায় রূপ নিল! এবং সিন্ধান্ত নেয়া হল সবাই রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে একটু ফ্রেস হয়ে, রাত ৩:৩০ এর মধ্যে বেরিয়ে হ্যালপ্যাডের একদম সামনের যায়গা দখল করতে নেব!

কিন্তু এই রাত ১২:৩০ ঘুমোলে কি আর ৩:৩০ ওঠা যাবে?

এই কথা শুনে এক বদ্ধ ভ্রমন উন্মাদ প্রস্তাব দিল... আজকে না হয় নাই ঘুমাই? কি দারুণ তারা ভরা আকাশ, অর্ধ কিন্তু ঝকঝকে চাঁদ, জোনাকির ঝিকিমিকি, পোকা মাকড়ের ভিন্ন ব্যাঞ্জনা, মেঘেদের সমুদ্র সাজানো, কুয়াশার চাঁদর জড়ানো, আর? আবেগে আবেশে ভেসে যাওয়ার মত মুহূর্ত! কি এমন হবে একরাত না ঘুমোলে? এমন রাত, এমন মুহূর্ত আর এমন বন্ধু বেষ্টিত ক্ষণ কি বার বার আসে? তাই আজ নাহয় জেগেই থাকি?

এইসব বর্ণনা শুনে একটু আবেগি না হয়ে কি পারা যায়? বাঁধা কি যায় দেয়া, উপভোগের অনুভূতিকে? যায়না বোধয়, তাই বেশ কয়েকজন সহমতও পোষণ করলো, এই রাত জেগেই কাটাবে। রাস্তায় হেটে, আকাশ দেখে, তারা গুণে, জোনাকির আলো নিয়ে খেলা করে, চাঁদের সাথে কথা বলে, আর পাহাড়ে হেলান দিয়ে! বাহ কি দারুণ!

কিন্তু শেষমেশ রাত একটার পরে আর কাউকেই পাওয়া গেলনা, শুধু সেই বদ্ধ ভ্রমন উন্মাদ ছাড়া। সবাই রুমে, ঘুমে। আর এক বদ্ধ ভ্রমন উন্মাদ যা বলেছে সে ভাবেই রাস্তায় হেটে হেটে, পাহাড়ের চুড়ায় শুয়ে বসে। ভালোবাসার জনের সাথে একা একা কথা বলে, মেঘ-কুয়াশায় জড়িয়ে গিয়ে, গান শুনে, মনে মনে গল্প লিখে রাত ৩ বাজিয়ে দিল।

এরপর সবাইকে ডেকে তোলার দায়িত্বও নিল। এবং সেভাবেই রাত তিনটায় প্রায় সবাইকেই জাগালো। গোছগাছ হয়ে সবাই বের হতে হতে ৪:১৫ পেরিয়ে গেল। গল্প-কথা আর গানে গানে হ্যালিপ্যাডে পৌঁছানোর আগেই সেনাবাহিনীর বাঁধা! এতো রাতে কোথায় যাচ্ছি? কেন সূর্যদোয় দেখতে? এতো রাতে? পাগল নাকি আপনারা। সূর্য কয়টায় ওঠে জানেন না? আপনারা সবাইতো শিক্ষিত, পরিপক্ক মানুষ, একবারও ভাবলেন না যে সূর্য তো সব জায়গাতেই একই সময় ওঠে!

৫:৪০ এ সূর্য উঠবে। আর এখন বাজে ৪:৩০! বুঝলেন কিছু? কতটা ঝুঁকিপূর্ণ পথ হেটে এসেছেন আপনারা? আপনাদের নিয়ে আর পারিনা আমারা। ইত্যাদি ইত্যাদি কথা শুনে সবাই শুধু এঁকে অন্যের দিকে বেকুবের মত তাকিয়ে ছিলাম। তারপর ইনিয়ে-বিনিয়ে দুই চারটা ফালতু আর অগ্রহণযোগ্য যুক্তি তুলে ধরে মুক্তি পেয়ে হ্যালিপ্যাডে গিয়ে পৌছালো সবাই।

এরপর পরবর্তী এক ঘণ্টা পূবের আকাশে চাতক পাখির মত করে তাকিয়ে থেকে, অপেক্ষা অপেক্ষা আর অপেক্ষা... বর্ণিল সূর্যের জন্য অধীরতা, আকুলতা আর অমোঘ আকাঙ্ক্ষা। ক্ষণে ক্ষণে আকাশ হাসছে, তার রঙ পরিবর্তন করছে, কখনো গোলাপি, কখনো হালকা হলুদ, কখনো কমলা, কখনো লাল আবার কখনো বেগুনী!

অদ্ভুত সব রঙের বর্ণিল খেলা খেলতে খেলতে একসময় সূর্য উদয়ের সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু সূর্য আর ওঠেনা! কেন কি হল? আকাশের রঙও যেন তার বর্ণিলতা হারালো। সূর্য আছে বোঝা যাচ্ছে কিন্তু দেখা মিলছেনা! আসলে পূবের আকাশ মেঘে ঢেকে গিয়ে সূর্যকে আড়াল করে রেখেছে!

এরপর যখন সূর্যকে দেখা গেল, সেদিকে আর তাকানোর উপায় ছিলনা। আলোর বিচ্ছুরণ বা তেজ এতই ছিল!

কিন্তু সেই অধীর আগ্রহ আর অপেক্ষার মোহময় সূর্যদোয় অধরাই থেকে গেল............

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×