somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিছাং ঝর্ণা- উচ্ছ্বাস ও উৎকণ্ঠা... (ভ্রমন সতর্কতা)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসে খাগড়াছড়ি শহরে না গিয়ে, মধ্য পথে রিছাং ঝর্ণা যাওয়ার গেটেই নেমে পড়লাম সবাই। আসলে নেমে গেলাম না বলে, নামিয়ে দেয়া হল বলাই যুক্তিযুক্ত হবে! (সে গল্প এখানে নয়)।

মেঘ-পাহাড়-ঝর্ণা আর সবুজ প্রকৃতি দেখতে আশা সবাই বেশ খানিকটা অবাক যে হল সেটা বোঝাই গেল, চোখে-মুখে আর অভিব্যাক্তিতে। কিন্তু প্রকাশ কেউই করেনি। একটু পরেই মন মাতানো ঝর্ণা দেখতে পাবে বলে। ক্ষীণ ক্ষোভ আড়াল করে, পাহাড়ি ঝর্ণার নেশায় নিজেকে নিমজ্জিত করলো।

অনেক অনেক সবুজ, হালকা শীতের শিহরণ, কাছে-দূরের পাহাড় আর শিশির জড়ানো ঘাস ও পথ পেরিয়ে, একটি টং ঘরের ছায়ায় সাময়িক বিশ্রাম। হালকা খাবার, পানি আর কাপড় পরিবর্তন করে আবারো এগিয়ে চলা।

এবার পাহাড়ের গাঁয়ে গাঁয়ে বানানো সিড়ি বেঁয়ে নামতে হবে, নিচে অনেক নিচে। বেশ কিছুটা নামার পরেই দূরে, পাহাড়ের সুখের কান্না হয়ে ঝরে পড়া রিছাং এর উচ্ছ্বাস আর আহ্বান শুনতে পেলাম। আমি যেহেতু আগেও দুই দুইবার দেখেছি, ছুঁয়েছি ও সিক্ত হয়েছি আর অনুভব করেছি মন প্রান দিয়ে তাই এবার আর আগের মত অতটা ব্যাকুল ছিলাম না।

কিন্তু যারা এবারই প্রথম পাহাড় ও ঝর্ণা দেখতে এসেছে, তারা সিড়ি দিয়ে নেমে নয় পারলে পাখি হয়ে উড়ে যায়! বা বাতাস হয়ে ছুটে যায়! ঝর্ণাকে কাছে থেকে দেখার, ছোঁয়ার আর অবগাহনের আকুলতা তখন এমনই। হ্যাঁ এমনই ছিল, আমি দেখেছি সবার চোখে-মুখে সেই উচ্ছ্বাস আর অমোঘ আকুলতা। সুতরাং এবার সবাই নামতে শুরু করলো যে যেভাবে আর যত দ্রুত পারে। নিমিষেই রিছাং ঝর্ণাতে যাওয়ার সিড়ি ফাঁকা হয়ে গেল!

আমরা কয়েকজন দূর থেকে দেখতে লাগলাম, যে আমরা সিড়ি বেঁয়ে নামার আগেই অনেকে ঝর্ণার কাছে পৌঁছে গেছে এবং ঝর্ণার কাছে যেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। একেবারেই অনভিজ্ঞ আর আনকোরা ভাবে। ঘটনাগুলো এতো দ্রুতই ঘটেছিল যে ঝর্ণাতে নামা, ভেজা ও উচ্ছসিত হবার আগে কিছু সাধারন সতর্কতা জানার, শোনার বা বোঝার ছিল। সেটা বলার বা জানানোর সময়টাই পাওয়া যায়নি।

যে কারণে যা ঘটার নয় তাই ঘটলো, ভ্রমনের শুরুতেই। এবং সেকি বীভৎসতা! উহ অবর্ণনীয়!

তবুও বলবো অন্য এবং আগামী দিনে যারা নতুন যাবেন তাদের সতর্কতা ও সাবধানতার জন্য।

সবাই নিচে নেমে গেলাম। কেউ কেউ নেমেই ঝর্ণার শীতল জলে আদ্র হতে নিজেকে সপে দিয়েছে...... আবার কেউ কেউ অতটা উপরে না উঠে নিচে জমে থাকা লেকের মাঝে হেটে বসে আর ভিজেই তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। আর কেউ কেউ ছবি তুলে সৃতি ধরে রাখতে একাকার করে দিচ্ছে নিজেকে। দুই-একজন শুধু দূর থেকে ঝর্ণা আর ঝর্ণা নিয়ে উন্মাদনা দেখেই খুশি আর খুশি। এরই মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত একটা দুর্ঘটনা আর হয়ে গেল একজনের জীবনের অপূরণীয় একটা ক্ষতি।

কি?

বেশ কয়েকজন অনেকক্ষণ থেকেই ঝর্ণা থেকে স্লাইডিং করছেন উচ্ছ্বাসে আর উন্মাদনায়। এরই মধ্যে একজন স্লাইডিং করতে গিয়ে ভারসম্য হারিয়ে ফেললেন এবং তার একটি হাত শরীরের নিচের অংশে পড়ে গেল, তাৎক্ষণিক দেখতে পেলাম ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে! কি ব্যাপার?

কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নিচের লেকে এসে পড়লেন আর দেখতে পেলাম ওনার বাম হাতের মধ্য আঙুলের সামনের একটি কড় বা কড়া নাই...!! কি বীভৎসতা! ঝুলে পড়ে রয়েছে ক্ষীণ চামড়ার সাথে! ওটাকে কোন রকমে আবারো আঙুলের সাথে ধরে রাখার ব্যর্থ প্রয়াস। সাথে আরও একজনে হাত থেতলে গেল!

এরপর...... ডাক্তার কোন রকম শেলাই করে জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু ওটা আর জোড়া লাগবেনা বলেই জানিয়ে দিয়েছে। ওটা শরীর থেকে পরেই যাবে বা ফেলেই দিতে হবে!

সুতরাং, জতরকম উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা আর উম্মত্ততা যে যেভাবে আর যতই করুন না কেন। ভেবে রাখবেন নিজের নিরাপত্তা কিন্তু একেবারেই নিজের কাছে।

আমরা বা আপনার সঙ্গিরা শুধুমাত্র একটু উহ, আহ আর হায়হায়-ই করতে পারবো। আর পারবো কথা দিয়ে সামান্য সমবেদনা জানাতে মাত্র।

এর বেশী কিছু নয়। আসলেই নয়।

আমরা বড়ই স্বার্থপর আর নির্মম।

নিজের উদযাপন, উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা আর উপভোগ নিজের কাছে আর নিজের মত করে। নিরাপত্তা আর নির্ভাবনায় থাকাটাও একেবারেই নিজের কাছে এবং নিজের মত করে।

জেনে-বুঝে আর ভেবে নিন......।

সবাই ভালো থাকুন আর নিরাপদে পৃথিবী উপভোগ করুন।

শুভ ভ্রমন।

ধন্যবাদ।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×