সু-লেখক স্পর্শীয়ার নারী সহিংসতার উপরে লেখা থেকে অনুপ্রানিত হয়ে। প্রথমেই স্বীকার করে নেই আমি নারীবাদী নই, আদৌ নই! আবার বিদ্বেষীও নই। আমি পুরুষবাদীও নই। বিশ্বাস অবিশ্বাস পাঠকের ব্যাপার। আমি সমঅধিকার বা সমাজে সবার কতটুকু আর কি ধরনের অধিকার সেও বলতে চাইনা।
লেখালেখিটা আজকাল আমার এক অন্যরকম ভালোবাসা, অনেকটা নিশ্বাসের মত হয়ে গেছে। অনেক অসঙ্গতি আর সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে, শুরুও করি আবার মুছেও ফেলি। কারণ আমি এখনই, এই লেখালেখির শুরুতেই বিতর্কের মুখে পড়তে চাইনা। এতটুকুও।
যে কারণে আমার অধিকাংশ লেখাই আত্ম-অনুভূতিমূলক বা ব্যাক্তিগত আবেগ আর অনুভূতির প্রকাশ মাত্র। কিন্তু স্পর্শীয়ার লেখা পড়ে নিজেকে, নিজের ছোট বেলা থেকে এই প্রায় মধ্যবেলা পর্যন্ত দেখা ও অভিজ্ঞতায়, আমাদের সমাজে প্রতিটি ঘরে ঘরে পুরুষরা যে প্রতিনিয়ত কত নির্যাতনের স্বীকার হয়, সে কথা কোথাও লেখা থাকেনা, থাকেনা কোন তথ্যের মাঝে, হয়না এটা নিয়ে কোন গবেষণা, আলোচনা বা গোল টেবিল বৈঠক বা উন্মুক্ত কোন আলোচনা।
সেই সুযোগ বা উপায় কোনটাই পুরুষের নেই যে! ছেলেরা তো আর পারেনা মিডিয়া বা পুলিশের কাছে গিয়ে এসব বলে কোন সুরাহা চাইতে। মনের ও ব্যাক্তিত্তের ক্ষত কিভাবে দেখাবে বা বোঝাবে সে? কিভাবেই বা চাইবে এসবের কোন প্রতিকার? তাই আজ আর লেখার আবেগ আর আকুলতাকে বাঁধা দিতে পারলাম না। মাত্র একটি পরিবারের কয়েকটি উদাহারণ দেখি আমরা আজ?
আমি কোন নারী বা নারী নির্যাতনকে একটুকু হেয় না করে, সবাইকে পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েই বলতে চাই, যে আমাদের দেশের ঘরে ঘরে পুরুষরাও কম নির্যাতিত নয়। এটা মানুষ জানেনা, পত্রিকায় আসেনা, পুরুষরা বলেনা, ওদের বলার বা প্রকাশের কোন সাহস বা উপায় নেই, তাই তারা শুধু মুখ বুজে সহ্য করে যায়। আমার এই ৩৩ বছরের জীবনে এমন অন্তত ২০ জন পুরুষ দেখেছি যারা প্রতিদিন আর প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়েছেন তাদের ঘরে, বারান্দায় আর বিছানায়ও!
একটু ভাবুন তো আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। সব কিছু জেনে শুনে আর বুঝেই ধরা দিয়েছিলেন আপনার জীবন সঙ্গীর বাহুডোরে। বাঁধা পড়েছিলেন ভালোবাসার মায়াজালে। এবং বিয়ে করে থিতুও হয়েছিলেন। বেশ চলছিল আপনাদের জীবন-যাপন। আপনি ঘরে একা একা সময় কাটান, মন মরা হয়ে বসে থাকেন। সেইসব দেখে ও আপনাকে কিছুটা হলেও বুঝে আপনার সঙ্গী আপনাকে চাকুরী করতে পাঠাল বা তার সম্মতিতেই আপনি খুঁজে নিলেন একটা চাকুরী।
ব্যাস, অমনি দুই-তিন মাস যেতে না যেতেই আপনার পাখা গজালো, সঙ্গীকে খোটা দেয়া শুরু করলেন যে আপনিও সংসারে অবদান রাখছেন, তিনি একা একা টানছেননা এই সংসার। আপনি চাকুরী না করলে এতো এতো সাচ্ছন্দ আসতো না আপনাদের ঘরে। ছেলে বা মেয়ের পড়া হতনা ভালো মানের কোন স্কুলে, ঘরে লাগতো না এলইডি টিভি, ভাবতে পারতেন না ফ্ল্যাট বুকিং দেবার কথা, স্বপ্ন দেখতে পারতেন না দুই-তিন বছর পরে গাড়ি কেনার, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরে একবার ভেবে দেখেছেন কি যে আপনার সঙ্গী যখন একা একা সংসার চালাতো তখন কি কোন অভিযোগ দিয়েছে আপনাদের কাছে। বলেছে কি যে সে পারবেনা এই সংসারের ঘানি টানতে? মুখ কি ফিরিয়ে নিয়েছিল কিছু পারবেনা বলে? করেছে সব সব। সাধ্যের বাইরে গিয়েও। আপনি কি জানেন, কতটা ছোট হয়ে আর কতটা লজ্জায় পরে তার আর একজন সহকর্মীর কাছ থেকে তাকে ধাঁর চাইতে হয়, মাসের মাঝামাঝি বা শেষে? কতটা হেয় হয়ে মাথানত করতে হয় বসের কাছে। নিজেকে বিক্রিও করতে হয় কখনো কখনো!
না, মেয়েদের শরীর বা সৌন্দর্য বিক্রি করাই একমাত্র বিক্রয় যোগ্য পন্য নয়! ছেলেদের মেধা, মনন, ভাবনা, ব্যাক্তিত্ত, আর নৈতিকতার বিসর্জনও পন্য আর বিক্রীত অনেক অনেক সময়। ভেবেছেন কি? ভাবেননি নিশ্চয়।
এবার ছয় মাস পরে আপনি, আপনার স্মার্টনেস, সৌন্দর্য আর গুনের কদর এর বদৌলতে নতুন চাকুরী পেলেন। যেখানে স্যালারি আপনার সঙ্গীর সমান সমান। এবার আপনার দেমাগ আরও বেড়ে গেল। না, আপনি জানেন না যে কখন আপনি বদলে গেছেন, কখন আপনার গলার স্বর পরিবর্তন হয়েছে আপনি বুঝতেই পারেননি! কখন আপনি আপনার সঙ্গীকে হেয় করতে শুরু করেছেন সেটা আপনি নিজেই জানেন না। কখন থেকে আপনি আপনার সঙ্গীর চেয়ে নিজেকে যোগ্যতর আর বেশী উপযুক্ত ভেবে নিয়েছেন সেটা আপনার বোধেই আসেনি।
এরপর আপনার অনেক অনেক সহকর্মী হল। হল কিছু বন্ধু-বান্ধব খুব স্বাভাবিক ভাবেই। আপনি বিভিন্ন জায়গায় যেতে লাগলেন, সহকর্মীদের সাথে কথা ভাগাভাগির মাঝে জানতে পারলেন কোন সহকর্মীর কয়টা ফ্ল্যাট আছে, কবে গাড়ি কিনছে, কোথায় জমির বুকিং দিয়েছে, কার কার ছেলে-মেয়ে কোন কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে, কার কার সঙ্গী দেশের বাইরে গেছে, কে কতটা মেধাবী আর উঁচু পদে চাকুরী করে, কার কার সঙ্গী কোন কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কি?
ব্যাস, এবার আর আপনার সঙ্গী বেচারা সাধারন চাকুরীজীবী আর স্বল্প ভাবনার সহজ স্বাভাবিক জীবন বোধের মানুষটা উপর নির্যাতন আর অত্যাচারের পালা শুরু হল। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ আর প্রতি মুহূর্তে। আজও একটা খুব ভালো চাকুরী পেলেনা, তোমার বন্ধুরা কে কোথায় চলে গেছে, ওরা প্লটের বুকিং দিয়েছে, ওর বৌ কাল ফোন করেছিল নিজেদের ফ্লাটে উঠছে সেই দাওয়াত দিতে, কোন সহকর্মীর সঙ্গী কতটা স্যালারি পায়, কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা, কবে দেশের বাইরে বেড়াতে যাচ্ছে, ছেলে-মেয়ে দেশের বাইরে পড়তে যাবে আরও যে কত কি? বাজার আর সংসারিক অবদানের কথা তো প্রতি ক্ষণে বাজান কানের কাছে। কই সে তো বাজায়নি এমন করে কখনোই। বলতে গেলেই বলবেন সংসারের দায়িত্ব তোমার, তুমি কিভাবে চালাবে সেটা তোমার ব্যাপার।
বাহ কি দারুণ! সংসারের দায়িত্তের সময় ওনার একার, আর কথা শোনাবার সময় কতটা অবদান আছে সেটা শোনাতে আপনার বাধেনা! আবার যদি বলে যে ঠিক আছে আমি যেভাবে আর যা পারি তা দিয়েই সংসার চলবে এখন থেকে তখন আবার ক্ষেপে উঠবেন, বলবেন আমি ওভাবে খেতে পারিনা, বাপের বাড়িতে এভাবে কখনোই খাইনি, ছেলে-মেয়েকে এভাবে মানুষ করতে পারবোনা, তোমার মত এতো অল্প আর সাধারন ভাবে চলতে আর ভাবতে পারবোনা। আমার একটা সামাজিক মর্যাদা আছে। তাহলে আপনার সঙ্গী বেচারার যাবে কোথায়?
একটু ভাবেন না কেন যে, একটি ক্লাসে সমমেধার অনেকেই থাকলেও প্রথম বা দ্বিতীয় ঐ এক বা দুই জনই হয়। সবাই হতে পারেনা, সে সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান একজনই হয়। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে ঐ প্রতিষ্ঠানে সেই প্রধান সমমেধা আর যোগ্যতর আরও দুই একজন আছে বা কেউ হয়তো তার চেয়েও যোগ্য! কিন্তু প্রধান তো একজনই, তাইনা?
এইসব সাংসারিক ঘ্যানঘ্যানি আর আপনার প্রতিনিয়ত মানসিক অত্যাচারে আপনার সঙ্গী যখন ধৈর্যের বাঁধ আর রাখতে পারেনা তখন হয়তো শুনিয়ে দেয় দুই চার কথা, বা বলে দেয় চাকুরী ছাড়ার কথা তখন আপনি আরও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন! ঝাঁপিয়ে পড়লেন ওনার উপরে, যে আপনার সফলতা আর এগিয়ে যাওয়া তিনি সহ্য করতে পারছেন না, আপনার সামাজিক অবস্থান মজবুত হচ্ছে দেখে তিনি নিজেকে হেয় ভাবছেন, আপনি বেশী স্যালারি পাচ্ছেন দেখে, তিনি নিজেকে সংকুচিত করে ফেলছেন এইসব।
অথচ এটা ভেবে দেখেন নি একবারও যে এটার জন্য আপনিই দায়ী! আপনার কথা, খোটা আর মানসিক অত্যাচার সইতে সইতে তার চুল পেকেছে, হারিয়েছে আত্ন-বিশ্বাস, খুইয়েছে মাথা তুলে বেঁচে থাকার অধিকার আর নিভে গেছে সকল ছোটখাট প্রতিভার দীপ্তি!
শুধু মাত্র একটি পরিবারের অল্প কিছু উদাহরণ দিলাম। আরও কত কি বলতে ইচ্ছে করছে যে কিন্তু কিভাবে বলি...... ঠিক শালীনতার পর্যায়ে পড়বে কিনা সেটাই ভাবছি। তাই থাক অন্যদিন যদি আবার ভাঙে বাঁধ কভু এমন লেখার, দেখে বা পড়ে কারো নারীবাদী কোন লেখা।
নারী-পুরুষ সবাই ভালো থাকুক আর সহমর্মী হোক একে অপরের এটাই চাওয়া............
খুবই অসংলগ্ন, এলোমেলো আর অপরিপক্ক কিছু অভুনুতির প্রকাশ মাত্র। কাউকে হেয় বা খাটো করতে নয়। শুধুমাত্র নারীরাই পুরুষের দ্বারা সহিংসতার স্বীকার নয়, পুরুষরাও নারীদের দ্বারা সহিংসতা ও অমানবিক অত্যাচারের স্বীকার যে হয় বা হয়ে থাকে সেটাই আমার ক্ষীণ অভিজ্ঞতা আর সামান্ন মূল্যবোধের আলোকে বোঝানোর অপচেষ্টা মাত্র।
অনেক শঙ্কা নিয়ে লেখা আর পোস্টকরা, একবার পোস্ট করেও তুলে নিয়েছিলাম, মনের তাড়নায় আবার দিলাম।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩