somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডার্লিং দার্জিলিং-তিন (চোখ মেলেই কাঞ্চনজঙ্ঘা......!)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শেষ বিকেলই খাবার টাই যে রাতের আহার হবে সেটা কেউই ভাবিনি! কারণ শেষ বিকেলে খেয়ে দেয়ে দেশীয় স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী বেড়াতে বের হলাম যে যার মত। সবাই ফিরবে যার-যার মত রাতের খাবার খেয়ে, নির্ধারিত সাময়িক আবাসে। কিন্তু আগের পুরো রাত আর সারাদিনের জার্নির ক্লান্তি একাকার হয়ে আমরা আত্ন-সমর্পণ করলাম বিশ্রাম আর বিছানার কাছে।

এদিকে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে সবাই ফিরে এসেছিলাম নিজেদের আবাসে! এতো বেশী উঁচু-নিচু পথ এতটা আয়েশ করে আর উপভোগ করা যাচ্ছেনা বলে। তার চেয়েও বড় কথা হল, সকল দোকান-পাট-বাজার-রেস্তোরাঁ-মল সব একে-একে তাদের ঝাঁপ ফেলে আর শেকল টেনে তালা লাগিয়ে দিচ্ছিল! কিছু বুঝে ওঠার আগেই! তাই নিজেদের নিয়মিত ক্ষুধার কথা ভেবেই আগাম কিনে নিয়েছিলাম পাওরুটি আর জিলাপি! কারণ এ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাচ্ছিলোনা! সেই সাথে একটি শীত তাড়ানোর ভিন্ন স্বাদের কিছু পানীয়! সে বললেও আর না বললেও!

রুমে ফিরে খাবার গুলো আবার চালান করে দেয়া হল বাংলাদেশী গাড়লদের পেটে! কোন অপেক্ষা ছাড়াই ডাবল কম্বলের নিচে সুড়সুড় করে ঢুকে পড়লাম যে যার মত সুবিধা করে নিয়ে এবং অচিরেই ঘুম! প্রস্তুতি ছাড়াই, কে-কখন ঘুমোলো কেউ জানিনা।
অনেক ভারী পর্দার সামান্য ফাঁক গলে আলোহীন প্রত্যূষে ঘুম ভেঙে গেল। ওহ এতো ভোঁরে ঘুম ভাঙার কি দরকার ছিল? কোথাও বেরোনোর এতো বেশী তারা নেই। ধীরে-সুস্থে উঠে হেলে-দুলে বের হব, তারপর আজকের প্ল্যান কোথায় ও কিভাবে যাব। কিন্তু এতো সকালে কি করি? আবার ডুব দিলাম কম্বলের নিচে।

কিন্তু আগের রাতে যেহেতু সাভাবিকের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছি তাই ঘুম আর কিছুতেই আসছিলনা। এপাশ-ওপাশ আর উসখুস করে অন্যের ঘুম না ভাঙিয়ে বরং উঠে একটু মেঘ আর কুয়াশার লুকোচুরি দেখি! আর যদি সেই সাথে দেখা মেলে এক টুকরো পাহাড়ের তো কথাই নেই আর! পাহাড় সেতো আমার প্রেম! তাকে যখন-যেখানে-যেভাবেই পাইনা কেন, আমি আপ্লুত-বিমুগ্ধ-বিলুপ্ত ওর মাঝে!

সেই ভেবে খুব সন্তর্পণে অনেক ভারী পর্দা সরিয়ে রুমের সাথে লাগোয়া করিডোরের ছিটকানি খুললাম। ওহ যেন ছিটকে ফেলে দিতে চাইলো কনকনে ঠাণ্ডা এক দমকা হাওয়া! সেই সাথে মুখ ভিজিয়ে দিল না চাইতেই, বেহায়া কুয়াশা! তবুও শীতের চাঁদর গায়ে জড়িয়ে বের হলাম... আমার বাম পাশে ঘন সবুজ অরণ্যে বেষ্টিত থরে-থরে সিঁড়ির মত সাজানো পাহাড়, আমি ও দিকেই তাকিয়ে ছিলাম মুগ্ধ হয়ে। অন্য দিকে তাকাবার ইচ্ছেই যে হয়নি আর!

আবারো বাতাস, আবারো ধেয়ে আসা কুয়াশা, ভিজে যাওয়া মুখ! কুয়াশার ঢেউয়ে একটু মুখ ঘোরাতেই আমার আরও ডানে কাছের জানালায় চোখ পড়তেই যেন ঝলসে গেলাম! সোনালি আভায় আর হঠাৎ চোখে পড়া অর্কর ছটায়! এবার বাধ্য হয়ে পাহাড়কে উপেক্ষা করে ডানে তাকালাম... বেশ-বেশ দূরে অর্কর আভায় কমলা-সোনালি-রুপালি-গোলাপি-ক্ষীণ লাল-আর কিছুটা হলুদের ছটা দেখতে পেলাম!

এই সময়টার সঠিক অনুভূতিটা কি ছিল বা হয়ে থাকে সেটা আসলে বোঝানোর নয়, ঠিক বোঝারও নয়! এই রকম মনোমুগ্ধকর সম্মোহনে মানুষ আসলে বোবা হয়ে যায় বোধয়! অথবা হয়ে যায় অনুভূতিহীন-বাকরুদ্ধ-অসাড়! কারণ তখন তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখা ছাড়া পৃথিবীর আর সব কিছুই তুচ্ছ আর অমুলক অথবা ভিত্তিহীন বাস্তবতা! তখন ওই সম্মোহনই একমাত্র প্রার্থনা-প্রাপ্তি বা প্রবঞ্চনা!

এভাবে কয়েক মিনিট নির্বাক হয়ে সেই সম্মোহন উপভোগ করার পর, সূর্য আর একটু আলো ছড়ালে দূরের সেই নানান রঙের মেলা, শেতশুভ্র বরফে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা তার লাজুক ঘোমটা সরাতে লাগলো, একটু-একটু করে, ভেঙে লজ্জা-শরম ও গাল ভরা অভিমান!
কারণ? ওটা যে কাঞ্চনজঙ্ঘা সেটা যে বুঝতেই পারিনি তখন!

এরপর আর নয়, সেটা বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে যাবে সেই ভঁয়ে অন্যদেরও ডেকে তুললাম, ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে আমার অবিরাম ক্যামেরার ক্লিক-ক্লিক-ক্লিক! যেখানে-যেমন ওঠে উঠুক, পরে দেখেশুনে বাছাই করবো! আগে তো তুলে নেই জতখুশি তত!

এবার অন্যরাও সরব হল, সব ভুলে, কেউ-কেউ হাড় কাঁপানো শীতকেও উপেক্ষা করে, তবে বঞ্চিত হয়েছিল সেদিনকার মত, সেই প্রথম দেখা রঙ-বেরঙ এর বরফ-আলোর সম্মিলিত সম্মোহন থেকে! তবে এর পরের দিন থেকে একটি দিনের জন্যও নয়, কেউ-ই।

কারণ আমাদের সামনেই...... সব সময়, সারাক্ষণ দেখতে পাই, রুমের পর্দা সরালেই বা করিডোরে দাঁড়ালেই, হেটে-বসে বা শুয়ে, যখন-যেভাবে-যেমন আর যত খুশি.........

সে এক অপার্থিবতা,

চোখ মেললেই কাঞ্চনজঙ্ঘা......!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×