somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডার্লিং দার্জিলিং-চার (কারো শপিং , কারো এক্সপ্লোরিং.....!)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাঞ্চনজঙ্ঘার মাদকতাময় অপরূপ রঙের-ঢঙের আর লাজুকতা মাখা রূপ সুধা পান করে-করে সবাই মাতাল প্রায়! আর মাদকে মাতাল হলে যা হয় আর কি? কোন কিছুই তখন আর স্বাভাবিক ভাবে হয়না বা ঘটেনা। যে কারণে ওই অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘার জাবর কাটতে-কাটতে সকাল পেরিয়ে শীতের পালাই-পালাই ভাব আর আরামের উষ্ণতা বিলানো মিহি রোদের লুকোচুরি দূরে সরিয়ে উজ্জ্বল রোদের আবির্ভাব। সেই সাথে আমাদেরও জেগে ওঠা আর সময়ের সাথে পাল্লা দেবার ব্যর্থ চেষ্টা।

যে কারণে হোটেল রুম থেকে বের হতে হতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হল, আজ তাহলে আর দূরে কোথাও না গিয়ে দার্জিলিং শহর ও এর আশে-পাশেই ঘুরে কাটাই আর কিছু কেনাকাটা করা হোক যে যার মত! কাল সকাল-সকাল উঠে মিরিখ বা কালিম্পং যাওয়া যাবে।
তো সেভাবে ভেবেই আমরা সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে পছন্দ মত হোটেল খুঁজছি... সবাই মিলে যে যার মত করে খোঁজার ফাঁকেই দেখি আমাদের সবজান্তা-বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অতি আকৃষ্টজন তেমন একটি হোটেলে ঢুকে পড়েছেন! আর ঢুঁকে পড়েছেন তো পড়েছেনই আর বের হবার কোন ইচ্ছাই তার আর দেখা গেলনা! কারণ ওখানে তিনি জীবন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়েছেন! যে কাঞ্চনজঙ্ঘা আবার পরাটা এবং আলুর তরকারীও তৈরি করতে পারে!

সুতরাং আমাদের সবাইকেও ওই হোটেলেই ঢুকতে হল বাধ্য হয়েই, কারণ তিনি সেই যে চলমান কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রায় কোল ঘেঁসে বসেছেন আর উনুনের উত্তাপ নিয়ে উষ্ণ হচ্ছেন! ও থেকে তাকে সরাবার সাধ্য আপাতত কারোই নাই! এমনকি আমাদের টিম লিডারেরও! তাই দূরের দৃষ্টি সুখের কাঞ্চনজঙ্ঘা আর পাশের উষ্ণতাময় কাঞ্চনজঙ্ঘা একই সাথে উপভোগের মোক্ষম সুযোগের সদব্যাবহার এবার সবাই কম-বেশী করতে লাগলাম।

কিন্তু সেখানে যা খেলাম মামা! সেই আলুর তরকারীও যেন আর এক রঙ-বেরঙের কাঞ্চনজঙ্ঘা! এতই বেশী আর কড়া শুকনো মরিচের ঝাল যে কেউই সেই আলুর তরকারী খেতে পারিনি! কোন মতে শুকনো রুটি পানি দিয়ে গিলে ফেলেছি আর কি? সেই ভয়াবহ তিক্ত ঝাল আর মাথা ঝিম ধরিয়ে দেয়া আলুর তরকারির বিষাক্ত স্বাদ যেন এখনো ক্ষতবিক্ষত করে দেয়!

সেই নাস্তা শেষ করে চক বাজারের পাহাড়ি পীচ ঢালা রাস্তা ধরে হাঁটছি, ততক্ষণে দোকান-পাট খুলে রঙ-বেরঙের মাথা পাগল করে দেয়া সব গরম কাপড়-শাল ও অন্যান সরঞ্জাম নিয়ে দোকানিরা বসে গেছে। আমরাও হাঁটছি আর এটা-ওটা দেখছি, নেড়ে-চেড়ে, উল্টে-পাল্টে। এরই মধ্যে আমাদের গ্রুপের সব চেয়ে কৌতুক প্রবণ ও নতুন কিন্তু বয়সে বেশ-বেশ এগিয়ে যে জন, তিনি তার কেনাকাটার তুমুল উৎসব শুরু করে দিলেন! তুমুল মানে, আসলেই তুমুল! যা দেখেন তাই কিনে ফেলেন প্রায়! কিনতে-কিনতে যেন উন্মাদ হয়ে গেলেন! আর এই কেনারকাটার সংক্রামক অন্য সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়লো অচিরেই! সুতরাং এবার সবাই মোটামুটি ঝাপিয়েই পড়লো কেনাকাটায়!

আমার তো মাথাই খারাপের জোগাড়, এদের সবার কেনাকাটার অবস্থা দেখে! আমি তো ভ্রমনে এসে এইসব আলতু-ফালতু কেনাকাটার কাছেই ঘেঁষি না। আর এরা কিনা দার্জিলিং এসে কেনাকাটা কেই মূল উৎসব বানিয়ে ফেলছে! অবশ্য আমাদের টিম লিডারও সব সময়ই কেনাকাটার বিপক্ষে, কিন্তু তিনিও এদিন তেমন কোন বাঁধা দিলেন না। ওনার চেয়েও সিনিয়র একজন এই উৎসবে সবচেয়ে সক্রিয় দেখে!

কিন্তু আমি মামা অটল, আমার মত একগুয়ে জেদ, নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা আর আত্ন-প্রকাশে সব সময়ের সোচ্চার ও কখনো-সখোনো স্বেচ্ছাচারী হিসেবেও! তাই একাই ভেটো দিলাম, সাথে স্পষ্ট হুমকি! ১৫ মিনিটের ভিতরে এইসব কেনাকাটার মত ফালতু আর অযৌক্তিক অকাজ বাদ না দিলে, আজকের মত আমি একাই আমার মত চলে যাব, যেখানে খুশি সেখানে, যেভাবে খুশি সেভাবে আর ফিরবোও যখন খুশি, তখন!

কিন্তু সবারই কেনাকাটার এমনই ঘোর ও নেশা লেগেছে যে, আমাকে বা আমার ভেটো বা হুমকিকে কেউ ০০১% পাত্তাও দিলনা! ব্যাস আমিও অটল আমার সিদ্ধান্তে! সবাইকে ছেড়ে পাহাড়ি পীচ ঢালা রাস্তা, পাথরের ঢাল, কখোনো পাথুরে সিঁড়ি বেঁয়ে উঠতে লাগলাম উপরের দিকে। কি করবো, কোথায় যাব? আর কিভাবে যাব ভাবতে-ভাবতে চোখ পড়লো এক চুড়ায়। যেটা আবার ওখান থেকে দেখতে পাওয়া সবথেকে উঁচু চুড়া! তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম, আজ তাহলে একা-একা ওই চুড়াতেই উঠবো। তাতে সময়ও কাটবে আর উপরি হিসেবে ওদের চেয়ে একটা বেশী চুড়া জয়ের স্বাদ ও সার্থকতা পাওয়া যাবে।


তো যেই ভাবনা সেই কাজ। আবারো কখনো রাস্তা, কখনো পাথুরে সিঁড়ি, কখনো পাহাড়ের ভাঁজ ও খাঁজের আলিঙ্গন-উষ্ণতা-আতিথিয়তায় বিলীন হতে হতে হেটে চলছি আপন মনে, সাথে আছে দূর-দুরান্তে দাড়িয়ে থাকা অসংখ্য নানান রঙের পাহাড়ের লুকোচুরি! এক-একটি পাহাড় যেন সেজেছে এক-এক রঙের বর্ণিলতায়।

কেউ সেজেছে নীলে, আকাশের রঙে-রেঙে করে আকাশের সাথে মিতালী, কেউ সবুজে সেজেছে করে বৃক্ষ আর বন-বনানীকে করে সাথী, কেউ হলুদে রাঙিয়েছে নিজেকে হয়ে ফুলেতে মাখামখি! কেউ সাদার সুভ্রতায় রাজসিক করে তুষারকে আবরণ! কেউ আবার রঙধনু রঙে রঙিন, মিলিয়ে সূর্যের রঙ আর বরফের ঢং!

আর সারাক্ষণের দৃষ্টি সুখের কাঞ্চনজঙ্ঘা? সে তো আছেই পাশে পরম প্রার্থিত প্রেয়সী হয়ে। কভু শরীর জুড়ানো মিহি ঠাণ্ডা হাওয়া। করে দেয় আনচান, শরীর-মন আর মনন! পাহাড়ের গাঁ বেঁয়ে সারি ধরে স্কুলের বাচ্চাদের বিলাসী পথ চলা। প্রতিটি বাড়ির বেলকনিতে লাগানো সম্ভব্য সব রঙের ফুলের সমাহার। এক চিলতে সবুজ লন আর দু-একটি আরাম কেদারার অলসতা দেখতে দেখতে প্রায় পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং সবচেয়ে উঁচু পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত সেন্ট পলস স্কুলের গেটে!

এবার আমি আরও অনেক-অনেক বেশী অভিভূত! কারণ এই স্কুল ও এর আশেপাশের চিত্র অনেক দিন ধরে মানসপটে আঁকা ছিল, শাহ্‌রুখ খানের “ম্যা হু না” সিনেমা দেখার পর থেকে। আমি সেই জায়গায় এসে পৌঁছে গেছি বুঝতেই পারিনি বা ভাবতেই পারিনি।
এরপর সেই স্কুল ঘুরে-ঘুরে দেখা, “বাচ্চার এডমিশনের খোঁজ খবর নিতে চাই” এই মিথ্যে বলে স্কুলে ঢুঁকে ঘুরে-ঘুরে দেখা, ছবি তোলা, ফাদারের অনাকংখিত আতিথিয়তা ও কফি খাওয়া। সব কিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে, শতভাগের চেয়েও বেশী সার্থক ও মন-প্রান ভরে যাওয়ার মত কিছু অমলিন ছবি ও সৃতি নিয়ে শেষ দুপুরে ফিরে আশা।


সাথে একদম একা-একা একটা দারুণ-দারুণ ভ্রমণের তৃপ্তি আর ফিরে এসে সেদিনের প্রাপ্তির বর্ণনা দেয়া ও ছবি দেখানোর পরে অন্য সব সঙ্গীদের (যারা কেনাকাটা উপভোগ করেছেন) অনেক উপভোগ্য আনন্দঘন ঈর্ষা ও বিদ্রূপ সাথে হতাশার মিলমিশ!

এই প্রথম বারের মত মনে হল যে ঈর্ষা-বিদ্রূপ-অবজ্ঞা আর কটু দৃষ্টিও যে কত মধুর আর আনন্দময় হতে পারে! যে বা যার এটা কখনো পায়নি, সে বা তারা এটা বুঝবেনা!

সেন্ট পলস স্কুল ও একটি আকাঙ্ক্ষার গল্প (এরপর)

গল্পের মাঝখানে কিভাবে ছবি দিতে হয় আমি জানিনা, তাই শেষে কয়েকটি ছবি দিলাম, পাঠকের অনেক অনেক অনুরোধে।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×