somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডার্লিং দার্জিলিং-সাত (রাফটিং রোমাঞ্চ...... তিস্তায়।)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাফটিং নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, কেউ করবে, কেউ করবেনা। কেউ আবার টাকা খরচের চিন্তায় কাতর! কিন্তু তিস্তার উম্মত্ততা দেখে আমি বাঁধনহাঁরা, আমি তো এই অভিজ্ঞতা মিছ করতে চাইই না, কে করলো আর না করলো! প্রয়োজনে অন্যদের সাথে উঠবো, তবুও উঠবো।

সুতরাং একজন ছাড়া বাঁকি সবাই রাজি হল, এঁকে, এঁকে, যে রাফটিং করবেনা সে আসলে ভয়ে, সেটাই স্বাভাবিক, যেহেতু সাতার জানেনা... তবে সেই ভালো, তুই ছবি তোল! কিন্তু, তার ছবি তোলার হাত এমন যে, রাফটিং আসলে, নদী বা পাহাড় আসবেনা! আর যদি পাহাড় বা নদী আসে তো রাফটিং আসবেনা! আর যদি কোন দৈবাৎ দুটোই একই সাথে এসেই যায়! তো নিশ্চিত থাকুন সেখানে সেই ছবিতে মানুষ (আমরা) আর থাকবোনা! কি আর করার, ছবি না থাকার চেয়ে তো, সে ঢের ভালো! সুতরাং এবার দরকষাকষির পালা......

দরকষাকষি শেষে একটা রফা হল, এবার অপেক্ষার পালা, রাফটিং এর শেষ সীমানা থেকে কখন রাবারের তৈরি সেই রাফটিং বোট, জীপে করে এসে পৌঁছাবে? যে জীপে করে আমরা রাফটিং এর শুরুর প্রান্তে পৌছাবো...

এই এলো একটা... কিন্তু ওটা আমাদের নয়! আমাদের আগে আরো চার-পাঁচটা গ্রুপ আছে? সুতরাং আবার অপেক্ষা সাথে নতুন রোমাঞ্চের, নতুন শিহরণ, রাফটিং... উম্মত্ত জলের তেড়ে আসা... পাথরের সাথে ধাক্কা খাবার দারুণ সম্ভাবনা... সেটা থেকে বাঁচার যার-যার নিজস্ব চেষ্টা... আচমকা স্রোতের গভীরে হারিয়ে যাওয়া... আবার জেগে ওঠা... পাথরের গাঁয়ে ধাক্কা লেগে, বোটের বনবন করে ঘোরা... কখনও, কখনও স্রোতের বেগের সাথে মানিয়ে নিতে একবার সামনে যাওয়া আবার একবার পিছনে চলে আসা... আর দুপাশ থেকে ছিটকে আশা পানিতে না চাইলেও গোসলে, গোসলে একাকার হওয়া... সব মিলিয়ে দারুণ রোমাঞ্চের জন্য নিদারুন অপেক্ষা......

দাড়িয়ে আছি পাহাড়ের একেবারে গাঁ ছুঁয়ে, মসৃণ রাস্তার ওপারেই সেই দুরন্ত-দুর্বার-প্রমত্ত-প্লাবনসম তিস্তা... সবাই বড় কাপড় চোপড় ছেড়ে, রাফটিং সরঞ্জাম নিয়ে অধীর আগ্রহে তীর্থের কাকের মত কেলিয়ে যাচ্ছি, যাচ্ছে তাই নিয়ে, সমালোচনা, অন্যের গুনকীর্তন! এটা, সেটা, ওটা কর্মহীন বসে থাকলে যা হয় আর কি...? এইবার এলো আমাদের ডাক, প্রায় ১ ঘণ্টার অপেক্ষার পরে!

সবাই উঠে পড়লাম, সেই জীপে আর আমি যথারীতি জীপের উপরে, রাফটিং এর বোটের ভিতরে! কিন্তু না ওখানে উঠে যাওয়া যাবেনা! কারণ সামনের রাস্তা ভীষণ খারাপ, নামতে হবে অনেক ঢালে, পাহাড়ের গাঁ জড়িয়ে, ধীরে-ধীরে, জীপ উল্টেও যেতে পারে, যে কোনো মুহূর্তে! সুতরাং সবার অনুরোধ আর উপদেশ উপেক্ষা না করে নেমে এলাম নিচে। এবার জীপ চলতে শুরু করলো, হেলে-দুলে, নেচে-নেচে, ঝাঁকিয়ে-ঝাঁকিয়ে, আঁকিয়ে-বাঁকিয়ে, পাথরে-পাহাড়ে, গাছের গুড়িতে, ইটের খোয়াতে... যেন রাফটিং এর আগেই তার রোমাঞ্চ জাগাতে, সড়ক পথেই ঢেউ-দোলা-উত্থান-পতন-ঝাকুনি-দুলুনির সাথে মানিয়ে নেবার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা...

মূল সড়ক শেষে, এবার ঢালু পাহাড়ের শরীর কেটে, বাঁকে, বাঁকে খাঁজ কেটে-কেটে বানানো পাথুরে মাটির রাস্তা... ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ আর রোমাঞ্চকর! একটু এদিক-ওদিক হলেই গাড়ি গড়িয়ে পড়বে, নিচে...! বনের গাছ-ঘাস-জঙ্গল-মাটি-পাথরে গড়িয়ে, গড়িয়ে একেবারে তিস্তার পদতলে...! ইস বেশ মজা হত যদি একবার গড়িয়ে যেত! কারণ, একটু ব্যাথা বা কাঁটা ছেড়া ছাড়া অন্য বড় বিপদের সম্ভাবনা কম, তাই, এই চাওয়া...!

সবাই বেশ শক্ত করে, জাপটে ধরে আছে জীপের বিভিন্ন অংশ আর আমি? সেই চলন্ত জীপের ভিতর থেকে বাইরে এসে, চাকার উপর দাড়িয়ে আছি! ব্যাপক রোমাঞ্চ, ব্যাপক! মনে, মনে খুবই চাইছিলাম, জীপটা একবার উল্টে যাক! রোমাঞ্চ আর একটু বাড়ুক! ভ্রমণটা আরো একটু শিহরণ তুলুক শরীর ও মনে! কিন্তু টা আর হলনা... জীপ ওই ভাবেই, হেলে-দুলে, হেসে-খেলে! পৌঁছে গেল তিস্তার তীরে...

এবার জীপ থেকে রাবারের সেই বোট নামালাম, বৈঠা নিয়ে কাড়াকাড়ি! কে, কোনটা নেবে? বোট নদীতে নামাবার পরে আর এক দফা বিতণ্ডা! কে সামনে থাকবে, আর কে পিছনে থাকবে, আর কে পাশে থাকবে? এই নিয়ে... তো বোটের চালক নির্দেশ দিলেন, যে সব থেকে খাট, সে সামনে থাকবে! তাতে করে, তার (বোট চালকের) সামনে দেখতে সুবিধা হবে, সুতরাং আমাদের টিম লিডার সামনে থাকার সুবর্ণ সুযোগ টা পেয়ে গেলেন! আর আমরা সবাই পিছনে, আসে-পাশে। শুরু হল উত্তাল স্রোতে আর বিশাল-বিশাল জেগে থাকা আর ডুবে থাকা পাথরের মাঝে নিজেদের সেচ্ছায় সপে দেয়ার সার্থক সাধনা!

এই পাথরের সাথে ধাক্কা! এই পানির ভিতরে প্রায় ডুবে যাওয়া! তো এই, স্রোতের সাথে তাল মেলাতে না পেরে বোটের এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াবার পাগলামি! একবার বোটের চালক সবাইকে সামনে ঝুকে যেতে বললেন, তার কোনো একটা সুবিধারথে। সুতরাং সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লাম সিনিয়র টিম লিডারের উপরে! আহ, এক আচমকা পানির ঝটকায় ভিজে গেলাম সবাই! ঝুবুথুবু! এই বিরম্বনায় টিম লিডারও বেশ খুশি!

আর তার খুশি বুঝতে পেরে, আমরা সবাই একই সাথে, আবার ঝাঁপিয়ে পড়লাম তার উপর! এভাবে, কয়েক বার! দারুণ কিছু সময়, বেহুসের মত কিছু মুহূর্ত, পাগলের মত কিছু ইচ্ছাকৃত আতলামি! অবুঝের মত কিছু বাঁদরামি! দুর্লভ কিছু দুষ্টমি! বুঝেও, না বোঝার মত কিছু ছ্যাঁচড়ামি! আর সর্বপরী ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন আমেজের, ভিন্ন রোমাঞ্চের একটা রাফটিং আমাদের ভ্রমণকে করে তুলেছিল আরও বর্ণিল, আরও ব্যাঞ্জনা ময়, আরও ব্যাপ্তিময়... প্রাপ্তিতে ভরপুর..................

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×