somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম দ্বীপের নির্ঘণ্ট-দুইঃ কেবিন থেকে করিডোরে......(অপ্রত্যাশিত)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লঞ্চে ওঠার পরে সবাই বেশ উৎফুল্ল, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ যেখানে লঞ্চ পাবারই কথা ছিলনা সেখানে এখন সবাই এক সাথে। লঞ্চে ওঠার আগে, মাঝ রাস্তায় একবার এও ভেবে রেখেছি, যে যদি হাতিয়ার লঞ্চ না পাই, তবে যারা উঠতে পারবোনা তারা অন্য লঞ্চে উঠে পটুয়াখালি চলে যাবো। কুয়াকাটা ঘুরে আসবো...! কিন্তু ট্যুর কোনো ভাবেই বাতিল করবোনা...!

সে যাইহোক, কেবিনে কোনো রকমে ব্যাগ গুলো ছুড়ে ফেলে, করিডোরে চলে এলাম সবাই মিলে। চরম আড্ডায় মশগুল... এই গল্প, সেই গল্প, এর আলোচনা, ওর সমালোচনা, ভালো বসদের প্রসংশা আর বাজে বসদের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম, যে যার মতন। এবং এতে সবাই শামিল...! কারণ চাকুরীজীবী সাথে ভ্রমণকারী মানে সবারই কম-বেশী এই অভিজ্ঞতা আছে...!

বুড়িগঙ্গার পানির বিকট গন্ধে নিঃশ্বাস যেন নিঃশেষিত...! নাক চেপে ধরলে মুখে ঢুকে যায়। আর মুখ চেপে রাখলে নাকে ঢুকে পড়ে, আর নাক-মুখ দুটোই চেপে রাখলে প্রান প্রায় যায়যায়...! সে এক বিষম ব্যাথা...! মনের ব্যাথা, সীমাহীন সম্ভাবনার চোখের সামনে অপমৃত্যুর ব্যাথা। সে আমি বলবনা, আমি পরিবেশ বাদী নই, আমি রাজনীতিবিদও নই, নই কোনো উন্নয়নকর্মী... শুধু পারি নিজের ব্যাথা সয়ে নিজের সাথে বকতে, ধিক্কার দিতে নিজেই, নিজেকে...!

সে সব থাক আমরা, আমাদের কথা বলি... চা-টা, এটা-ওটা এবং বেশ রাতে লঞ্চের বেশ স্বাদযুক্ত (যেহেতু তেলে টুপটুপে) ডিনার শেষ করে আবার সেই করিডোরে ফেরা। এবং আবার সেই গল্পের ঝুড়ি খুলে বসা। মনের মাঝে জমে থাকা, কত-শত ক্ষোভের নিশ্চিন্ত উদ্গিরন...! লঞ্চ এবার বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা ছেড়ে মেঘনায় পতিত। শুরু হল বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়া। খণ্ডিত চাঁদের মাঝেই রোমান্টিকতার স্বাদ খুঁজে নেয়া। অল্প-বিস্তর মেঘেদের সাথে তারাদের লুকোচুরি। মৃদু বাতাস... হালকা ঢেউয়ের ক্ষণিক দোলা... কাছে-দুরের লঞ্চ-ইস্টিমারের আলোর বিতরণ... গভীর জলে জেলেদের জীবন-যাপন।

চাঁদপুর পার হবার পরে চোখের কাছে ঘুমের আকুতি...! বিছানার কাছে শরীরের আকর্ষণ। বালিশের তরে মাথার টান। বিশ্রামের কাছে ক্লান্তির সমর্পণ। তো চল এবার ঘুমোতে যাই? চলে গেলাম যে যার মতন। বিড়ম্বনার শুরু এখানেই। অধিক উত্তেজনাবসত কেউই খেয়াল করিনি যে আমাদের মাত্র একটা সিঙ্গেল কেবিন নেয়া ছিল। আসে পাশে বা ডেকে কোনো সিটও দখল করা হয়নি...! যে কারনে এখন এক কেবিনেই সবার সংকুলান করতে হবে!

কিন্তু বাস্তবতা তো তা মেনে নিচ্ছেনা...! তো ঠিক করলাম বাসের মত করে সবাই মিলেই আধ-সোয়া আর আধো-বসার ব্যাবস্থা করা যায় কিনা? যেহেতু সবার একটা করে চেয়ার আছে, সেহেতু... সব গুলো চেয়ার খাটের মুখো-মুখি করে, লেপ আর বালিশটাকে বেডের পিছনে দিয়ে, বেডে শরীর আর চেয়ারে পা দিয়ে বাসের সিটের মত করে থাকার চেষ্টা...! কিন্তু তাতেও সমস্যা, এতোটুকু নড়া-চড়া করা যায়না! আর দেখবেন, যখনই যে কাজ না করার কারণ থাকবে... তখন সেটাই বেশী করে করার ইচ্ছে জাগে। যেমন আমাদের ক্ষেত্রে নড়া-চড়াটা ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে... নড়া-চড়া করা যাবেনা বলে...!

অথবা জায়গা কম তাই নড়া-চড়াটা বেশী বোধ হচ্ছে, যেটা অন্য সময় হয়না। কিন্তু এভাবে হচ্ছেনা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হল, সবাই মিলে কেবিনের করিডোরেই থাকবো, চাদর বিছিয়ে... যে কথা, সেই কাজ, চাদর নিতে গিয়ে দেখা গেল মাত্র দুইটা...! হোক, ওতেই হবে...! সুতরাং এবার একটি চাদর বিছিয়ে আর একটি গায়ে দিয়ে পড়ে থাকা!

একটু পড়েই শুরু হল নদীর হু-হু বাতাস আর শীতের ছোবল...! শীত আর বাতাসের চেয়েও যেটা বেশী অসহনীয় লাগছিল, সেটা হল... একজন একপাশ থেকে চাদর টানলে অন্য পাশ থেকে আর একজনের গায়ে থাকেনা...! আবার মাথা ঢাকতে গেলে পা বেড়িয়ে যায়...! আর পা ঢাকতে গেলে মাথা...! আর পিঠের নিচের চাদর আরো বেয়াদব...! নড়া-চড়ায়, পিঠের নিচ থেকে সরে যায় বারে-বারে আর সাথে-সাথে যেকে ধরে ইস্পাতের শীতলতা...! দুই পাশ থেকেই।

একবার একজন কে, তো আর একবার অন্য জনকে, সুতরাং সবাই-ই অ-সস্থিতে শুধু চাদরের চতুরতায়...! আর সাথে রয়েছে দুই পাশ, পা-মাথা আর উপর-নিচের বাতাসের যন্ত্রণা...! সেই সবকে সাথে করে, আধো-ঘুমে, আধো জাগরণে ভোরের উঁকিঝুঁকি। নির্ঘুম তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে হঠাৎ আলোর বিরক্তি।

চোখ কচলে সামনে তাকাতেই, দূরে জেগে উঠা নাম না জানা সবুজ চরের সারি... একটার পর একটা। কাক ডাকা ভোর... নির্মল বাতাস... দূর দিগন্তে আলো ছড়ানো আকাশ... অরুনের কিরণ মালা... মাঝ নদীতে মাঝিদের ঘরে ফেরা... এসব দেখে নির্ঘুম রাতে, মনের মাঝে জমে যাওয়া কুয়াশা বিলীন হয়ে, এক স্বপ্নিল সকালের হাতছানি...

সামনেই অনেক গল্প শোনা মনপুরা............!

মনপুরার চরে, একটি সকাল...... (কোমল অনুভূতি) পরবর্তী গল্প।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×