এই যে পাহাড়ি, কোথায় চলেছ আবার সেই পাহাড়েই নাকি?
উহু, আমি পাহাড়ি হলাম কিভাবে? পাহাড়কে আমি ভালোবাসি, পাহাড় আমার প্রেম। তাই বলে আমি পাহাড়ি নই।
কেন, পাহাড়ি বললে তোমার এতো লাগে কেন? আমি তোমাকে পাহাড়ি নামেই ডাকবো আজ থেকে, তোমাকে খ্যাপাতে!
ওহ আচ্ছা, আমাকে খ্যাপাতে? তবে ডেকো কোন আপত্তি নেই।
আমাকে একদিন নিয়ে চল তোমার সাথে, কোন এক পাহাড়ে।
নাহ, তুমি পারবেনা। অনেক কষ্ট, অনেক যন্ত্রণা। যদিও দিন শেষে কোন পাহাড়ের চুড়ায় বা পিঠে বাঁধা টং ঘরের চালাতে যদি পাও বর্ণিল গোধূলি, তবে দেখবে বা অনুভব করবে কি সুখ, আর কি আনন্দ, এক অপার্থিব অনুভূতি।
সে বুঝতে পারি কিছুটা, নইলে কেন তুমি আর তোমার বন্ধুরা মিলে কর এতো এতো পাগলামি, ঐ পাহাড় আর পাহাড়ের মায়াকে ঘিরে? নিশ্চয়ই এমন অপার আনন্দ আর অকিত্রিম সুখের কিছু আছে ঐ পাহাড়ে। নতুবা মানুষ এমন করবেনা কখনোই। তাই চল একবার আমাকে নিয়ে, দেখে আর অনুভব করে আসি তোমাদের ঐ পাহাড়ের আকুলতা আর মায়াময়তাকে।
হুম নিতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে? শুধু শুনলে হবেনা, যদি কথা দিতে পারো তবেই নিয়ে যেতে পারি।
কি শর্ত?
তোমাকে শুধু পাহাড়েই নিয়ে যাবো তা নয়, আরও দেব বা হব তোমার আরও অনেক অনেক কিছুই, শুধু একটাই চাওয়া.........
কি বল, বললাম তো কথা দিতে হবে বুঝেশুনে আর ভেবে। অথবা এড়িয়ে যেও একেবারে, আমি বুঝে নেব, তোমার ভাবনাটা। তবে মিথ্যে আশ্বাস দেবেনা কিন্তু?
আচ্ছা ঠিক আছে বল, যা বলার সরাসরি আর সত্যি সত্যিই বলবো।
বলি তবে... আমি তোমাকে শুধু পাহাড়েই নিয়ে যাবো তাই নয়, আমি আরও অন্য রকম আর অন্য ভাবে কিছু হতে চাই। আর পেতেও চাই আরও একটু অন্য রকম ভাবে। তোমাকে। অনন্ত সময় ও কালের জন্য, আমার কাছে, আমার পাশে, আমার ভেতরে। যেখান থেকে তুমি আর কখনো পারবেনা দূরে যেতে, মিছে হতে, পর হতে বা কোথাও হারাতে!
এমন করে আর এভাবেই চাই তোমাকে?
আচ্ছা, সেটা কিভাবে সম্ভব হবে বল তো শুনি? আমি কথা দিলাম, আমি হব বা পারবো কি পারবোনা অমন হতে, ভেবে আর বুঝেই কথা দেব।
ঠিক আছে বলি তবে.........
“আমি পাহাড় হব, যদি তুমি ঝর্ণা হও......!!!”
মানে, কিভাবে? ঠিক বুঝলাম না.........
ঝর্ণা দেখেছ কখনো?
হ্যাঁ দেখেছি তো, কাছে দূরে, পথে যেতে, পাহাড়ের মাঝে আর ভাজে ভাজে। সবুজ পাহাড়ের মাঝে থেকে ঝরে ঝরে পরে সাদা ফেনার মত পানির বিচ্ছুরণ আর উন্মাদনা। তবে শুনেছি ঝর্ণাকে নাকি পাহাড়ের কান্না বা দুঃখ বলা হয়? তবে আমি কেন তোমার দুঃখ হব, কেনই বা তোমার কান্না হব?
নাহ, ওটা পাহাড়ের কান্না নয়। ওটা যদি কান্না হত তবে মানুষ দুঃখ পেত, কষ্ট পেত আর হাঁয় হাঁয় করতো। ওটা কিছুতেই কান্না হতে পারেনা। দেখনা সবাই কত উচ্ছ্বসিত আর উল্লাসিত হয় ঝর্ণা দেখে। অনেক অনেক পাহাড় ডিঙিয়ে আমরা যখন কোন ঝর্ণার কাছে নয়, শুধু মাত্র শব্দ শুনি তখনই হই রোমাঞ্চিত। শিহরিত হই কাছাকাছি এসে গেছি বা পৌঁছে গেছি ভেবে। আর যখন পৌঁছে যাই সেই ঝর্ণার কাছে, সেই সময়ের অনুভূতি আর উদ্বেল আবেগ সে কি কেউ পেরেছে কোনোদিন সঠিক ভাবে প্রকাশ করতে! না পারবে? তাই ঝর্ণা কিছুতেই পাহাড়ের কান্না হতে পারেনা। কিছুতেই না।
পাহাড়ের বুক চিড়ে ঝরে পরে সুখের অশ্রু! অবিরত, কখনো কম, কখনো বেশী, কখনো বা মৃদু-মন্দ। কিন্তু থেকে যায় পাহাড়ের বুকে, অসীমতায়, অনন্ত আর অপার সময়ের জন্য। দূরে যায়না, সরে যায়না, কোথাও হারায় না কভু। যেতে পারেনা পাহাড়কে ছেড়ে বা পাহাড়ের বুক থেকে, ছিড়ে পাহাড়ের এই মায়ার বাঁধন, অসীম ভালোবাসা আর অমোঘ আকর্ষণ।
পারে কি বল, না পেরেছে, নাকি পারবে কভু, ছেড়ে যেত পাহাড়কে, কোন ঝর্ণা কোনোদিন?
তাই বলেছি,
আমি পাহাড় হব, যদি তুমি ঝর্ণা হও.........!
কথা দিলাম,
তুমি পাহাড় হলে... আমি হব সেই পাহাড়ের ঝর্ণা......!!!
যেখানে পারবেনা কেউ কখনো কাউকে ছেড়ে যেতে।
নাও আজ থেকে, আমি পাহাড় আর তুমি ঝর্ণা সেই পাহাড়ের!
ঠিক আছে তুমি আমার অসীম পাহাড় আর আমি তোমার বুকে সুখের ঝর্ণা.........!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৪