somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলকাত্তাকা ল্যাড়কা, দিল্লীছে অ্যায়া......!! (ভ্রমণ রম্য)

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেবার কলকাতা গেলাম ট্রেনে করে। ভারত যাবার নতুন স্বাদ নিতে। তো পথে যেতে যেতেই অম্ল-মধুর ভ্রমণ নিম তেতো হয়ে গেল! গরম-ঘাম আর নিরন্তর জ্যামে। মানে ট্রেনের সিগন্যাল আর এক এক জায়গায় অসীম সময়ের জন্য দাড়িয়ে থাকার নিদারুণ যন্ত্রণায়! যে কারণে লক্ষ্য ছিল কলকাতা থেকে ট্রেনে করে শিলং যাবার সেটা বাতিল করতে হয়েছিল, পুরো উদ্যম এক যাত্রাতেই শেষ হবার কারণে। সেই সাথে জুন-জুলাইয়ের কলকাতার গরম! উহ মামা, সেই চামড়া পোড়ানো রোদের উত্তাপ যে বা যারা গাঁয়ে মাখেনি তারা বুঝবেনা।

সেই নিদারুণ গরমের অসহ্য আর অনুউপভোগ্য কলকাতার একমাত্র সস্থি ছিল, রাস্তার মোড়ে মোড়ে হরেক রকম ফলের সালাদ! অন্তত ১০ রকম ফল তো হবেই এক একটা সালাদের প্লেটে! দারুণ স্বাদের আর ভীষণ মন ভোলানো রঙের বর্ণিল আয়োজন! আর দাম? সেই নিতান্তই কম। ১০ রুপীতেও পাওয়া যায় আর ২০ রুপীতেও! স্বভাবতই আমরা ১০ রুপীর দলে। প্রয়োজনে আবার খাব, তাই প্রতিবার ওই ১০ রুপীই ঢের!

প্রচণ্ড সেই ভ্যাঁপসা গরমে দূরে কোথাও যাবার চিন্তা তখন বিলুপ্ত। কাছে পিঠে কোথায় যাওয়া যায় সেটা নিয়ে কিছুটা ভাবিত ছিলাম। হুট করে মনে পড়লো। আরে এতোবার কলকাতা এসেছি গিয়েছি কিন্তু অনেক নান্দনিক আর প্রাচীন ঐতিহ্যের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তো দেখা হয়নি কখনো! যে ভাবনা সেই কাজ। কোন যুক্তি তর্কে না গিয়েই ঘোষণা করা হল বিকেলে তবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘুরে দেখা হবে, ধীরে ধীরে আর আয়েশ করে। যেহেতু অন্য কোথাও যাবার কোন তাড়া বা চাপ নেই। সেটাই হল নির্ধারণ। বিকেলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।

বিকেলের আগে, শেষ দুপুরে, কলকাতার চিপচিপে গরমে, হোটেল থেকে ধীর লয়ে নামছি। বেশ খানিকটা ফরেনার বেশে! নীল হাফ প্যান্ট-লাল টি শার্ট-হলুদ ক্যাপ-খয়েরি সাইড ব্যাগ-কালো চশমা আর বাদামী আমি! বেশ এক কিংভুতকিমাকার অবস্থা! নিজের কাছে নিজেই! সুখের সান্ত্বনা বলতে এখানেতো আর পরিচিতজন কেউ নেই যে টিপ্পনী কাটবে! পিছন থেকে ধিক্কারমূলক উক্তি ছুড়ে দেবে বা পচানোর জন্য দল পাকাবে। তাই ডোন্ট কেয়ার মনোভাব নিয়ে ঝলমলে রোদের মাঝে এক রঙিন বাংলাদেশী বাদামী ফরেনারের হেটে চলা!

হোটেলের নিচে নামতে না নামতেই সঙ্গীর আবদার “ট্যাক্সি ধর!” আরে বলে কি? যাবো হেলে-দুলে, হেটে -হেটে, দেখে-শুনে, আর ইনি বলেন কিনা ট্যাক্সি নিতে! ট্যাক্সিতে গেলে তুই যা, আমি যাবনা। আর আমি গেলেও কোন টাকা ভাগাভাগি করতে পারবোনা। এবার সঙ্গী ক্ষান্ত দিল। ধীরে-ধীরে হাটি আর মোড়ে মোড়ে ফলের সালাদ খাই। এভাবে একে-ওকে জিজ্ঞাসা করে রাইটার্স বিল্ডিং পর্যন্ত এলাম। আর পা চলেনা। গরমে যান-প্রান ওষ্ঠাগত! যে কারনে বাধ্য হয়েই অবশেষে ৮০ রুপীর বিনিময়ে ট্যাক্সি নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কয়েক চক্কর দিয়েই ধবধবে সাদা পাথরে গড়া স্বনামে খ্যাত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের গেটে।

এবার টিকেট কাটার পালা। ভারতীয়দের টিকেট ১০ রুপী মাত্র। আর বিদেশী হলে ১০০ রুপী। আমরা যেমন চালবাজ তেমনিই করলাম। ১০ রুপীর টিকেট কেটে এবার ভারতীয় সাজলাম! গেটে আটকালো। কাহা ছে অ্যায়া? কলকাতার আশেপাশের কোন একটা জায়গার নাম বলেছিলাম মেদিনীপুর বা মালদহ হবে হয়তো। কিন্তু পোশাকে তো আর তা বলেনা! অবশেষে আমার সঙ্গী যিনি কিনা আগেই সাধারন ভারতীয় হিসেবে ঢুঁকে পড়েছেন, তিনি এবার উদ্দার করলেন আমাকে, কারণ এখন তিনি আর “লাল মোহন সাদাটার!!” মত কথা বলেননা। তিনি এখন সচল হয়ে আমাকে উদ্ধার করে ফেললেন! কিভাবে?

তিনি সব কিছু শুনছিলেন দূর থেকে, গেটের কাছে এসে গেট ম্যানকে বললেন, ওনার উৎকৃষ্ট কোর্স করা হিন্দিতে “আরে ও আদমি, কলকাত্তাকা ল্যাড়কা, লিকেন দিল্লীছে অ্যায়া!!” এবার গেটের দারোয়ানের একটু বোধোদয় হল, ও আচ্ছা দিল্লীছে অ্যায়া! মানে দিল্লীর ছেলেরা এমন উদ্ভট পোশাক পরতেই পারে। তাই আর কোন কথা না বলে আমাদেরকে ঢুকতে দিলেন!

সেই থেকে সেই সংক্ষিপ্ত কলকাতা ট্যুরের নাম হয়ে গিয়েছিল......

“কলকাত্তাকা ল্যাড়কা, দিল্লীছে অ্যায়া!!”

এরপর বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভ্রমণ-উপভোগ আর অনুভব, তবে সেই গল্পটা খুব একটা শালিনতাময় শব্দে লেখা যাবেনা। তাই ভাবছি লিখবো না...!!!

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×