somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫,০০০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ...!!! (স্বপ্নের সান্দাকুফু)

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাই কি যে বলেন না!

কেন ভাই?

এই যে, বললেন, ৫,০০০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ!

হাহ, ভাইরে যে স্বপ্ন পূরণ করতে মাত্র ৫০০০ টাকা লাগে, সেইটা কেমন স্বপ্ন! এইটা কোন স্বপ্ন হইলো আপনি-ই বলেন?

ভাই এটা আপনি টাকা দিয়ে পরিমাপ করতে পারবেন না, যে স্বপ্ন কিনা? এটা জানতে আপনাকে একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে, আর কষ্ট করে এই স্বপ্নের পিছনের ঘটনাগুলো সামান্য জানতে হবে, তবেই বুঝবেন এটা স্বপ্ন ছিল কিনা? ঠিক আছে?

তাহলে চলেন, স্বপ্ন কি স্বপ্ন না একটু জেনে নেই, কয়েকটা উদাহারন দেখে?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে গুণে গুণে চারটি বছর লাগে, সেটা কি স্বপ্ন নয়?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে, অফিসের বসের পায়ে তেল মারা লাগে, সেটা কি স্বপ্ন নয়?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে, সহকর্মীদের কাছে কথা শুনতে হয়, সেটা কি স্বপ্ন নয়?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে, বাসায় টানা-পড়েন শুরু হয়, সেটা কি স্বপ্ন নয়?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে, ভিসার জন্য নিজেকে ভিখারির মত ব্যাবহার পেতে হয়, সেটা কি স্বপ্ন নয়?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে, লেহ-লাদাখের মত জৌলুসে ভরা যায়গাকে উপেক্ষা করতে হয়, সেটা কি তবে স্বপ্ন নয়?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে, শেষ পর্যন্ত বাসায় আগুন লাগাতে উদ্ধত হই, সেটা কি স্বপ্ন নয়?

যে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে, গাইডহীন ট্রেক শুরু করেছিলাম এক নেপালি অচেনা দম্পতির সাথে।

যে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে জীবন-মরণের মুখোমুখি হয়েছিলাম?

এই সবগুলো ঘটনা নিয়েই আলাদা আলাদা গল্প আছে। আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখবেন। (পোস্ট করছি ধীরে ধীরে, টাইম লাইনে)



এবার মূল গল্পে চলে যাই, কিভাবে মাত্র ৫০০০ টাকায় এই স্বপ্ন পূরণ করলাম! জানি এটাতেই সবার সবচেয়ে বেশী আগ্রহ।

সান্দাকুফু যাবার স্বপ্নটা মনে গেঁথেছিলাম সেই ২০১২ থেকে। হয় হয় করেও আর হয়ে ওঠেনা। তাই এবার যখন ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভিসা পেয়েই গেলাম, তখনই মনে মনে ঠিক করেছিলাম, ইনশাল্লাহ এবার এই ভিসার সুযোগটা নিয়ে সান্দাকুফুর স্বপ্নটা পূরণ করবই করবো। কিন্তু ভালো ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেল অক্টোবরের আগে এই অভায়ারন্যে কাউকেই ঢুকতে দেয়না বনের নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা। তাই অন্যান্য সব প্ল্যান বাদ দিয়ে, এটাকেই মূল লক্ষ স্থির করে সেভাবে পরিকল্পনা করতে লাগলাম।

বিভিন্ন ব্লগ পড়ে, অভিজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নিয়ে, বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা করে দেখা গেল ৮/১০ হাজারের নিচে এই ট্যুর কিছুতেই সম্ভবনা। কারণ শুধু গাইডের পিছনেই দিন প্রতি গুনতে হবে ৬০০/৮০০ টাকা! তার মানে অন্তত ৫ দিনের জন্য এখানে লাগবে, ৩০০০/৪০০০ টাকা! এতেই আমার মাথায় হাত! এতো টাকা আমি কোথায় পাবো?

তার উপর আমি একা, মানে বাজেটের প্রায় পুরোটাই লাগবে শুধু গাইডের পিছনে, হাঁয় আল্লাহ! তাই এরপর সঙ্গী খুঁজে বের করার নতুন কাজে নামতে হল। খুঁজে পাওয়াও গেল চারজন। বাহ, মনে মনে হিসেব করলাম, চারজন মানে প্রায় ৮০০/১০০০ টাকায় নেমে এলো, জনপ্রতি গাইডের খরচ। আশ্বস্ত হলাম মনে মনে।

কিন্তু যাত্রা শুরুর দুইদিন আগে জানতে পারলাম, ভিসা জটিলতায় দুইজন যেতে পারছেন না! রইলো বাকি দুই। তার মানে খরচ আবার বেড়ে গিয়ে জনপ্রতি শুধু গাইডের পিছনেই লাগবে ১৫০০/২০০০ টাকা! আবারো কিছুটা আহত হলাম খরচের কথা ভেবে। কিন্তু তবুও এগিয়ে চললাম, অনেক দিনের লালিত স্বপ্নটা তো আগে পূরণ করে নেই! তাই বেড়িয়ে পড়লাম, শেষমেশ দুইজনে মিলেই। একজন ফুলবাড়ি আর একজন বুরিমাড়ি দিয়ে।

সেই পথে ঘটলো কতনা যন্ত্রণার ঘটনা, আছে আলাদা গল্পে, চাইলে পড়ে নেবেন।



কিন্তু এই ভ্রমণ, এই স্বপ্ন পূরণ যে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৫০০০ টাকায় হয়ে যাবে, এটা ছিল সকল কল্পনার বাইরে। এতো এতো পথ, এত-এত দিন (৭দিন), এত-এত অর্জন, এত-এত পূর্ণতা, এত-এত আনন্দের গল্প যে পেয়ে যাবো মাত্র ৫০০০ টাকা খরচ করেই, স্বপ্নেও দেখিনি সেটা! তাই সেই খুশিতে ডগমগ-ডগমগ করতে-করতে ফিরছিলাম বাসে করে নিচের হিসেব গুলো করতে করতে...

আহা, এই ভাবে না হলে স্বপ্ন পূরণ!

মাত্র ৫০০০ টাকায় এমন অরাধ্য একটা স্বপ্ন পূরণ হল......
সান্দাকুফু ট্রেক, খরচের খতিয়ান! (সকল হিসেব টাকায়)
১ম দিনঃ
ঢাকা-তেতুলিয়া-৬০০/-
তেতুলিয়া-বাংলাবান্ধা, লোকাল বাস-১৫/-
ট্র্যাভেল ট্যাক্স-৫০০/-
শিলিগুড়ি-১২/- (লোকাল বাস)
শিলিগুড়ি-দার্জিলিং-১৫৫/- (শেয়ার জীপ)
হোটেল-৩৬০/-
খাওয়া-১৫০/- (দুই বেলা)
ট্রেক এর শুকনা খাবার-৩০০/- (২০ প্যাকেট ১.৫ টাকার কফির মিনি প্যাক)
দার্জিলিং-মানেভাঞ্জন-৭০/-
নাস্তা মোমো-৪৫/-
টুমলিং রাতে-সকালে (থাকা-খাওয়া)-২৭০/-
গাইরিবাসে নাস্তা-৪৫/-
কালাপখারি- রাতে-সকালে থাকা-খাওয়া-৩০০/-
সান্দাকুফু-ফালুট (১৩ কিলো পর্যন্ত) থাকা এবং খাওয়া দুপুর-রাত-সকাল-৬০০/-
ফেরা, জীপ ৬ কিলো-১২০/-
টুমলিং থাকা-খাওয়া-৩০০/-
জীপ ১৩ কিলো মানেভাঞ্জন-১২০/-
মানেভাঞ্জন-দার্জিলিং-৬০/-
দার্জিলিং-শিলিগুড়ি-১৫০/-
শিলিগুড়িতে খাওয়া-৫০/-
ফুলবাড়ি পোর্ট-১৭/-(অটো)
ঢাকা-৬০০/- (বাস)
খাওয়া-১৫০/- (সন্ধা-রাত)
মোট? ৪৯৯০/- টাকা!

উল্লেখ্য কোন, গাইড নেইনি! সেটা কিভাবে? আছে আলাদা গল্পে, চা-কফি কিনে খাইনি কাপ প্রতি ২৫/- টাকা! দিনে অন্তত ৪/৫ কাপ, মানে ১০০/১২৫ টাকা, পাঁচ দিনে ৫০০/৬০০ টাকা বাঁচিয়েছি নিজের কাছে থাকা কফির মিনি প্যাক দিয়ে, ওদের কাছ থেকে গরম পানি নিয়ে। আমার কাছে স্টিলের একটি মগ থাকে সব সময়, এই টাকা বাঁচাতে!

আর যেদিন সকালে কফির সাথে নিজের শুকনো খাবার খেয়েছি, সেদিন আলাদা করে নাস্তা করে টাকা খরচ করিনি। আর যেদিন সকালে বাইরের নাস্তা করেছি, সেদিন দুপুরে নিজের কাছে থাকা শুকনো খাবার দিয়ে দুপুরের লাঞ্চের টাকা বাঁচিয়েছি!

তার মানে,

গাইডের অন্তত ১০০০/১৫০০ জন প্রতি...
চা/কফির ৫০০/৬০০
নাস্তা/লাঞ্চের ৪০০/৫০০
মোট ২০০০/২৫০০ টাকা বাঁচিয়েছি এভাবে কৃপণতা বা কম খরচ করে।

এখন কে কিভাবে আর কত টাকা কোথায় খরচ করবেন সেটা একান্তই আপনার রুচি/অভ্যাস/আনন্দ/ইচ্ছা আর অদম্যতার ব্যাপার!

তাই বলেছি, ৫০০০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ!

সবার ভ্রমণ আনন্দের, পরিপূর্ণ আর নিরাপদ হোক,

সেই প্রত্যাশায়......

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×