somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বাবা"

২৪ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পথ পাণে চেয়ে বসে আছি কখন আব্বা আসবে কারণ সকাল হলেই ঈদ আর আব্বু আজ আমাদের জন্য জামাকাপড় আর আমার চাওয়া সবি জিনিস নিয়ে আসবে কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে আসে তবু আব্বা আসেনা, তখন মোবাইলও নাই যে আব্বার কাছে ফোন করবো। সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে যাওয়া আমি আঙুল দিয়ে চোখের পাতা টেনে ধরে রেখেছি আব্বা না আসা পর্যন্ত ঘুমাবোনা। মা বকা দিচ্ছে আর বলছে যে ঘুমা তোর আব্বার আসতে দেরি হবে। আব্বা তখন রাত ৯-১০টার মধ্যে আসতো, ঈদের আগেরদিনই তার ছুটি হতো তাও সন্ধ্যায় তখন গাড়িঘোড়া এতটাও এ্যাভেইলেবল ছিলনা তাই ভেঙে ভেঙে আসতে এত রাত হয়ে যেত। অবশেষে আব্বা আসতো দুই হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ নিয়ে, আমি তখন অনেক ছোট আর আমাদের বাড়িতে তেমন কেউ ছিলনা যে আমাদের ঈদের যাবতীয় বাজার করে দিবে তাই আব্বা প্রয়োজনীয় সবকিছুই আসার সময় ঢাকা থেকে নিয়ে আসতো। বুঝতে পারতাম এতগুলো ব্যাগ নিয়ে তার হাটতে অনেক কষ্ট হতো তবুও দৌড়ে গিয়ে ওই অবস্থাতেই জরিয়ে ধরতাম আব্বা আমার কপালে গালে চুমু খাইতো, কারণ আমিই তখন তাদের একমাত্র রাজপুত্র। আব্বার বেতন খুব কম থাকলেও সাবানা আলমগীরের ছিনেমা ছাড়া আমি নিজ চোখে কখনো অভাব দেখিনাই। যখন যা চাইছি তাই পাইছি কখনও বা ২দিন আগে পরে কিন্তু পাইছিই।

মনেপরে ছোটবেলায় যখন ভালো মত হাটতে শিখেছি, কথা বলতে শিখেছি তখন আব্বা তার হাত আঙুল ধরিয়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে নিয়ে যাইতো আমি বরাবরই ভদ্র ছেলের মত আব্বার কোলে অথবা পাশে চুপচাপ বসে থাকতাম। নামাজ শুরু হয়ে গেছে আমি একবার এদিকওদিক তাকাই একবার আব্বার দিকে তাকাই, সেজদাহ্ এর সময় আমি সবার পরে সেজদাহ্ দিতাম আবার উঠতাম সবার আগে আর এই সময়টা চারিদিক তাকিয়ে দেখতাম এত এত মানুষ একসাথে সেজদাহ্ দিতেছে সেই দৃশ্য আমার কাছে অপরূপ ছিল অসম্ভব ভালো লাগতো দেখতে।

এখনো বছরে দুটি ঈদ আসে, আব্বাও আসে, সেই ঈদগাহেই নামাজ পড়তে যাই শুধু আব্বার হাত ধরে যাওয়া হয়না। সপ্তাহ খানেক পরও ঈদ আসবে, সেই ঈদগাহেই নামাজ পড়তে যাবো হয়ত আব্বার সাথেই যাবো কিন্তু শুধু হাতটা ধরে যাওয়া হবে না কারণ আমি বড় হয়ে গেছি আর আমার সেই জায়গাটায় ছিল আমার ইমিডিয়েট অমিত হাসান ও বড় হয়ে গছে এখন জায়গাটা ছোটভাই তানভীর মাহমুদ এর দখলে আছে একদিন সেও বড় হবে,আব্বার বয়সও বাড়বে অনেক তখন আব্বার হাত আর আমরা কেউই ধরবনা। আচ্ছা আব্বা কি তখন আমার মত করে আমাদের বদলকরা হাতগুলো খুব মিস করবে??

বড় হলে তো আর আব্বা, মা'কে সেই ছোট্টবেলার মত জরিয়ে ধরা যায় না, বলা যায় না তোমাকে খুব ভালোবাসি। মুসলিম হবার সুবাদে বছরে দুইটা দিন আব্বাকে জরিয়ে ধরতে পারি (আলহামদুলিল্লাহ্‌)। দিন বদলের এই দুনিয়ায় মহান আল্লাহর কাছে এই সুজোগটা আমি আমার মৃত্যুর আগপর্যন্ত চাই (আল্লাহ্‌ কবুল করেন, আমীন)।

আজকাল আপনারা যারা কথায় কথায় বলেন "আমি মুক্তিযোদ্ধা দেখিনি, আমি মাশরাফিকে দেখেছি, অমুককে দেখেছি, তমুককে দেখেছি" তারা শুনে রাখেন আবেগ ভালো তবে অতিরিক্ত সবকিছুই চরম খারাপ। খেলোয়াররা যেখানে ফাইভ স্টার হোটেলে ঘুমায়, খায়, ১লক্ষাধিক টাকার বেতন পায় সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ নয় মাসে কয়দিন ঠিকমত ঘুমাইছে বলতে পারবেন?? বলতে পারবেন কয়দিন তিনবেলা পেট ভরে খাইছে?? বলতে পারবেন যুদ্ধ করার জন্য তাদেরকে কত টাকা বেতন দিয়ে রাখা হইছিল??
জবানে তালা লাইগা যাইব আপনাদের।

শোনেন, যদি মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও অন্যরকম একজন সত্যিকারের যোদ্ধাকে দেখতে চান তাহলে আপনার বাবাকে দেখেন, যিনি আপনাকে খাওয়ানো পড়ানোর জন্য আপনার কাছে কোন বেতনের দাবি করবে না কোনদিন, আপনাকে খাওয়াচ্ছে পড়াচ্ছে শুধুমাত্র এইজন্য যে তার মৃত্যুর আগে তিনি আপনাকে এমন এক জায়গায় দাড় করিয়ে রেখে যেতে চান যেন তার মৃত্যুর পর বাকি জীবনটা আপনি নিজেই সুন্দর সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারেন। পরিবারকে পেছনে রেখে নিজে বাধা বিপত্তির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে, ফোনের ওপাশে কর্মস্থল থেকে কতকিছু শুনিয়ে বোঝায় সে খুব ভালো আছে কিন্তু আদৌ কি সে এতটা ভালো থাকে?? আপনি আমি এত বড় হবার পরও যাখন রোদ বৃষ্টিতে একই সাথে বের হতে গিয়ে দেখি একটাই ছাতা তখন তিনি বলেন তুই ছাতা নিয়ে যা আমি আসতেছি কিন্তু তিনি ঠিকই ভিজে পুরেই যান তখন।

জ্বি, রোদ বৃষ্টিতে ঝড়ে পিঠ পেতে দিয়ে বুকে আগলে রাখা এক বটবৃক্ষের নাম "বাবা", ভরসার অন্য নাম "বাবা", ভালোবাসার অন্য নাম "বাবা", আমার দেখা যোদ্ধার নাম "বাবা"।

মহান আল্লাহ্ পৃথিবীর প্রতিটি বাবাকে ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন। প্রতিটি দিন, প্রতিটিক্ষণ পৃথিবীর প্রতিটি বাবাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে সালাম ও শ্রদ্ধা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×