somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি একটা খ্রিস্টান সন্তান জন্ম দিয়েছি, পর্দা পরা কোনো মুসলিমকে নয়

২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মায়ের সাথে আমার সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছিল। তিনি আমাকে সন্ত্রাসী পর্যন্ত বলতেন। আমাকে তাকে এবং দেশকেও ছাড়তে হবে কিনা তা নিয়ে ভাবতাম। তিনি ফ্রিজ ভরে রাখতে শূকরের মাংস দিয়ে। আমি সেখান থেকে কিছু খেতে অস্বীকার করতাম। এ নিয়ে ঝগড়া হতো। তিনি আমাকে হিজাব পরা দেখতে পারতেন না। আমি নামাজ পড়ি, সেটাও চাইতেন না। তিনি বলতেন, ‘আমি একটা খ্রিস্টান সন্তান জন্ম দিয়েছি, পর্দা পরা কোনো মুসলিমকে নয়।’

আমার নাম আয়েসা, থাকতাম উত্তর হাঙ্গেরিতে। সেকেন্ডারি স্কুলে ইতিহাস ক্লাসে আমি প্রথম ইসলাম ধর্মের নাম শুনেছিলাম। ইতিহাসে ইসলামের কথা থাকার কারণ, হাঙ্গেরি ১৫০ বছর তুর্কি শাসনে ছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মলেকুলার বায়োলজিতে পড়ার সময় কয়েকজন বিদেশী মুসলমান ছাত্রের সাথে পরিচিত হই। আমি সবসময় আশ্চর্য হয়ে ভাবতাম, মুসলমানরা কেন তাদের মুসলিম পরিচয় নিয়ে এত গর্বিত।

আমি ছিলাম ক্যাথলিক। কিন্তু সবসময় আমার ধর্মের কিছু কিছু ব্যাপারে একমত হতে পারতাম না, সন্দেহের ঘেরাটপে থাকতাম। উদাহরণ হিসেবে একটা কথা বলা যায়, ঈশ্বরের ছেলে থাকা এবং ট্রিনিটি তত্ত্ব আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো না।

তারপর আমি আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। একবার আমরা যখন ডিনারে ছিলাম, তখন আজান শুরু হলো। আমার এক বন্ধু বলল, থামাতে। কিন্তু আমি বললাম, না। আমি এতে খুবই অভিভূত হলাম। আমার হৃদয়ে নিশ্চিতভাবেই কিছু দোলা দিল।
তারপর আমি জানি না, কেন ওই গ্রীস্মে আমি কোরআন প্রোগ্রাম ডাউনলোড করেছিলাম। আমি আরবিতে তা শুনতাম আর ইংরেজিতে পড়তাম। তারপর আমি ইসলাম নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলাম। অনেক বই পড়তে থাকলাম।

কিন্তু দুই মাস পর আমি শেষ পর্যন্ত ইসলাম বেছে নেয়ার কথা ভাবতে থাকলাম। আমার দুই বন্ধুর সামনে আমি ‘শাহাদাহ’ উচ্চারণ করলাম। আমি বললাম : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা, মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। আমি আমার সংস্কৃতি, আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম গ্রহণ করলাম।

এর কিছু দিন পর রোজা শুরু হলো। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, রমজানের মাধ্যমেই ইসলামে আমার নতুন জীবন শুরু করব। আল হামদুলিল্লাহ। আমি সফলভাবেই তা করতে পারলাম। আগস্টের ৪ তারিখে আমি নামাজ পড়া শুরু করলাম। শুরুতে কাজটা কঠিন ছিল। কারণ, আমার চারপাশের লোকজনের কেউ আচারনিষ্ঠ মুসলমান ছিলেন না। ফলে আমি কারো কাছে কিছু জানতে চাইতে পারতাম না।
আমি ইন্টারনেটে নামাজ সম্পর্কে শিখতে লাগলাম। এর মাধ্যমেই আমি অজু, গোসল সম্পর্কে জানতে পারলাম, পবিত্রতা সম্পর্কে ইসলামি ধারণা বুঝতে পারলাম।

একবার আমার এক বন্ধু আমাকে তো টলিয়েই দিয়েছিল। সে বলল, তুমি যেহেতু জন্মসূত্রে মুসলমান নও, তা-ই কখনোই ইসলাম সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারবে না। প্রথমে মুষড়ে পড়েছিলাম। কিন্তু লেগে থাকায় আমার ধর্মটি আমি ভালোমতো বুঝতে পারছিলাম।
আমি যখন নামাজ পড়তে শুরু করলাম, আমি চিন্তা করলাম, আল্লাহ এখন আমাকে দেখে হাসছেন। কারণ আমি নামাজে কী কী করতে হবে, তা লিখে তা দেখে দেখে নামাজ পড়তাম। তবে অল্প সময় পড়ে আমি সুরাগুলো মুখস্ত করতে সক্ষম হলাম। তারপর থেকে আরবি ভাষা আমার জন্য কোনো সমস্যা হিসেবে থাকল না।

আমি ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক নতুন বন্ধু ও বোন পেলাম। আমার অনলাইন বোনেরা আমাকে অনেক ভালোবাসা আর সাহস দিতেন। একবার এক মুসলিম পুরুষ আমাকে প্রস্তাব দিলেন, তিনি আমার প্রথম হিজাবও দিলেন। একটা জায়নামাজ, একটা ইসলামি বইও দিলেন। তারপর থেকে আমি হিজাব পরছি।

আমার মায়ের সাথে আমার সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছিল। তিনি ফ্রিজ ভরে রাখতে শূকরের মাংস দিয়ে। আমি সেখান থেকে কিছু খেতে অস্বীকার করতাম। এ নিয়ে ঝগড়া হতো। আমাদের মধ্যে সমস্যা হতে থাকল। আলহামদুলিল্লাহ। এখন তিনি নমনীয় হয়েছেন। মনে হচ্ছে, তিনিই ইসলাম গ্রহণ করবেন। আল্লাহর কাছে এজন্য খুবই কৃতজ্ঞ। এখন আমি হিজাব পরেই বাইরে যাই। তিনি কিছু বলেন না।

আমি জীবনে কখনো আমার বাবার সাথে কথা বলিনি। তিনিও আমাকে দেখতে চাইতেন না। কিন্তু ইসলামের কারণে তিনিও এখন প্রায়ই আসেন আমার কাছে।

হ্যাঁ, আমার জীবনটা একটা বড় পরীক্ষা। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমাকে তিনি ধৈর্য ও আশা দিয়েছেন।

অনুবাদ করেছেন : ফুয়াদ ফয়সাল

ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র শান্তির পবিত্রতম জায়গা। আমরা কত জায়গায় না শান্তি খুজি। তবুও শান্তির দেখা কোথাও পাইনা। অথচ আমাদের পাশেই শান্তির নীড়। আর তা হলো ইসলাম। এই নীড়ের সন্ধান যারা পেয়েছে তারা সত্যিই ভাগ্যবান। সারা পৃথিবীর মানুষ ধীরে ধীরে ইসলামের ছায়াতলে জায়গা করে নিচ্ছে। যদিও ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্যও নানান গোষ্ঠী কাজ করছে। তারপরও সত্য চিরদিনই সত্য। যারা সত্যের সন্ধান করবে তারা নিশ্চয় সত্যের সন্ধান পাবে। পবিত্র মাহে রমজানের মাসে শান্তির জন্য সবাই সঠিক ইসলামের ছায়াতলে একত্রিত হই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×