somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যপাঠ : জহির রায়হানের 'শেষ বিকেলের মেয়ে'

২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জহির রায়হানের মত অসাধারণ জীবনশিল্পীর হাতেই নির্মিত হয়েছে এই সাদামাটা আখ্যান । কোথাও রহস্যময়তার জালে পাঠককে আটকাবার ফন্দি আটেন নি, তবুও পাঠক মধ্যপথে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় না, এগিয়ে যায় । এগিয়ে যায় জীবনরসের শেষ বিন্দুটুকু আহরণের জন্য । আখ্যানের শেষে এসেই চমকে উঠে পাঠক । এ কী ঘটল ! জীবনটা তো এমন হওয়ার কথা ছিল না । এটাকেই বুঝি বলে নিয়তির নির্মম পরিহাস ? হ্যাঁ, উপন্যাসটির শেষে এসেই বুঝতে পারা যায় সাদামাটা আখ্যানের ভিতর দিয়েই এক অসাধারণ শিল্প-সার্থকতা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন জীবনশিল্পী ।
আখ্যানের মত উপন্যাসের নায়কও সাদামাটা । কাসেদ । মধ্যবয়সী এক যুবক । কেরানিগিরি তার পেশা । মা ছাড়াও তার ছোট্ট পরিবারে আছে নাহার । নাহার তার কেউই নয় । ছোট্টবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে কাসেদদের বাড়িতে তার আশ্রয় হয়েছে । কাসেদের মা এই মেয়েকে নিজের সন্তানের মত মায়া-মমতা দিয়েই বড় করেছেন । কাসেদের মত নাহারকে নিয়েও মায়ের সমান চিন্তা । ভালো দেখে একটা পাত্র জুটিয়ে নাহারকে বিয়ে দিবেন, মেয়েটি যেন তার চিরকালই সুখে থাকে ।
বেশিরভাগ সময় কেরানিগিরি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কাসেদের ভিতরে আছে এক রোমান্টিক মন । মাঝেমধ্যে টুকটাক কবিতাও লেখে কাসেদ । অবসর পেলেই সে জীবিকার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে এক অন্যরকম রোমান্টিক ভাবসাগরে আত্মনিমগ্ন হয় । জাগিয়ে তোলে কল্পনার চিত্রপটে আঁকা তার মানসীর ছবি । মানসীর নাম জাহানারা ।
একদিন জাহানারাকে বিয়ে করবে কাসেদ ।অর্থের প্রতি তার লোভ নেই । একগাদা টাকা আর অনেকগুলো দাসীবাঁদীর স্বপ্নও সে দেখে না । ছোট্ট একটা বাড়ি থাকবে , শহরে নয়, শহরতলীতে, যেখানে লাল কাঁকরের রাস্তা আছে আর আছে নীল সবুজের সমারোহ । মাঝে মাঝে দুপায়ে কাঁকর মাড়িয়ে বেড়াতে বেরুবে ওরা ।—
জাহানারাকে নিয়ে এমনই স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে কাসেদ ।
কিন্তু সময় যতই সামনে গড়ায় জাহানারাকে নিয়ে তার স্বপ্নের আলোগুলি ততই ক্ষীণ হয়ে আসে । জাহানারাকে কাসেদ ভালোবাসে, কিন্তু জাহানারা কি বাসে ? কাসেদ এর উত্তর খুঁজে পায় না । সংশয়ে পড়ে যায় কাসেদ ।
এই সংশয়ের মধ্যেই কাসেদের জীবনে আবির্ভাব ঘটে আরো একটা মেয়ের— শিউলি । জাহানারাদের বাড়িতেই শিউলির সাথে প্রথম দেখা, প্রথম পরিচয় । সে জাহানারার কাজিন । শিউলি একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ হতে চায় কাসেদের জীবনে । কিন্তু কাসেদ ভালোবাসে জাহানারাকেই । বিয়ে যদি তার কাউকে করতে হয়, জাহানারকেই করবে ।
আকস্মিক একদিন একটি মেয়ে কাসেদের হাত ধরে পালিয়ে যেতে চায় । মেয়েটি জাহানারা নয়, শিউলিও নয়— সালমা । সালমা কাসেদের খালাতো বোন । কাসেদের ছোটবেলার খেলার সাথী । সালমা এখন অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী । তার ছোট একটা বেবিও আছে । তবুও সালমার জীবনে এক অন্তহীন শূন্যতা । ভীষণ অসুখী সে । সুখের সন্ধানে সে ফিরে আসতে চায় বাল্যপ্রেমের কাছে । কিন্তু কাসেদ ওত ছেলেমানুষ নয় । সে সালমার ডাকে সাড়া দেয় না । শূন্য হাতেই ফিরিয়ে দেয় সালমাকে ।
এদিকে শিউলি এসে কাসেদকে এমন একটা সংবাদ দেয়— শুধু চমকেই উঠে না কাসেদ; বিষাদের ঘন কালো ধোঁয়ায় ভরে উঠে হৃৎপিণ্ড । জাহানারা অন্য একজনকে ভালোবাসে ! ছেলেটা গান শেখায় জাহানারাকে । ওতেই ভালোলাগা , তারপর প্রেম । জাহানারা অন্য কারো হয়ে গেছে— কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না কাসেদ । সে জাহানারার কাছে ছুটে যায় । জাহানারাকে সব মনের কথা বুঝিয়ে বলবে, সব । কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে যায় । জাহানারা সেদিন কাসেদকে বাড়ির দরজা থেকে বিনা বাক্যে ফিরিয়ে দেয় ।
ব্যথায় অভিমানে কাতর কাসেদ শিউলির সামনে এসে দাঁড়ায় । নিউমার্কেটের মোড়ে । সন্ধ্যার ধূসরতায় ঢেকে গেছে পুরো শহর । শিউলি মিটি মিটি হাসছে । শিউলির মাঝে তার তার মানসীকে আবিষ্কার করতে চায় কাসেদ । না, পারে না, এবারও কাসেদ ব্যর্থ ! শিউলিও তাকে প্রত্যাখ্যান করে ! তখন সালমাকে খুব মনে পড়ে কাসেদের ।
বিপন্ন কাসেদ অবশেষে আপন নীড়ে ফিরে আসে । তার মায়ের কাছে । সেই রাতেই মাও তার চলে যায় অনেক দূরে— যেখানে গেলে কেউ ফিরে আসে না । দুঃস্বপ্নের বালুচরে হাতড়াতে হাতড়াতে ক্লান্ত কাসেদ ধপ করে শুয়ে পড়ে বিছানায় ।
মায়ের মৃত্যুর দু’দিন পরে আবারও চমকে উঠে কাসেদ ! সময়টা তখন শেষ বিকেল । মেয়েটি তার সামনে দাঁড়িয়ে— শেষ বিকেলের মেয়ে । পরনে শাড়ি, গায়ে হলুদমাখা । আগামিকাল মেয়েটির বিয়ে । মেয়টি জাহানারা নয়, শিউলি নয়, সালমা নয়— মেয়েটি নাহার । না, নাহারকে কাসেদ ফিরিয়ে দেয় না ।


৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×