somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোচনা সমালোচনায় জিপিএ-৫! সমস্যার দায়ভার যাদেরই হোক উত্তরণের একমাত্র উপায় লজ্জাহীনতা!!

৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের উপর করা প্রতিবেদনে পুরো বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়াগুলোতে একটা আলোচনার ঝড় উঠেছে। সবার মুখেই ধিক্কার, ছিঃ ছিঃ এসব কি হলো! কেউ ছাত্রদের, কেউ মিডিয়া কিংবা শিক্ষকদের আবার কেউ কেউ এই সুযোগে রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের আলোচনায় উঠে এসেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কিন্তু একদম ছাত্র ও শিক্ষকের সন্ধিক্ষণে থাকা কোন ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বিষয়টা একটু অন্যরকমই মনে হয়। আমি সেই বিষয়টা নিয়েই আজ আলোচনা করবো।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুটো শ্রেণী আছে। একটা হলো সাধারণ ছাত্র শ্রেণী আরেকটা হলো শিক্ষকশ্রেণী। যে যতো কথায় বলুক, শিক্ষার সামগ্রিক ফলাফল শুধুমাত্র এই দুটো শ্রেণীর উপরেই বর্তায়। আমি মোটামুটি এসএসসি পাশ করার পর থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি দু’একজন করে ছাত্র পড়াতাম। আজ পর্যন্ত যাদেরকে পড়িয়েছি তাদের মধ্যে ২-৩ জন ছাড়া বাকি সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুতরাং এটা বলাই যায় যে, ছাত্র হিসাবে আমি কিছু মেধাবী ছেলেকে পেয়েছিলাম। কিন্তু প্রাইভেট টিউটর এবং ক্লাস টিচারদের মাঝে একটা ফারাক সব সময় থাকে। কারণ পড়ালেখাটা ক্লাস কেন্দ্রিক তাই ক্লাস টিচারের প্রাধান্যটা সবচেয়ে বেশি।

২০১০-২০১১ সালের দিকে আমি যেসব ছাত্রদের পড়িয়েছি তাদেরকে পরীক্ষার আগের দিনে পড়াতে গেলে প্রায় সমস্ত সিলেবাস এর উপর একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে যেসব ছাত্রদের আমি পড়াই তাদেরকে পরীক্ষার আগের দিনে পড়াতে গেলে তাদের ক্লাস শিক্ষকের দেওয়া সংক্ষিপ্ত সাজেশন নামে পরের দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করে দিতে হয়। এখন কথা হলো, যদি একজন ছাত্র যেকোনো পরীক্ষার আগের দিনে প্রশ্ন পেয়ে যায় তাহলে সে কেন সারাটা বছর জুড়ে পুরোটা বই পড়বে? অভিভাবক কিংবা এই যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যাদের পরিচয় নেই তারা হয়তো চোখ কপালে তুলে ফেলেছেন! ভাবছেন এমন কেন হবে? এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। অনেকেই এর পেছনে নানা রকম কারণ অনুসন্ধান করলেও আমার কাছে একমাত্র কারণ হলো লজ্জা।

শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। আমাদের সমাজে প্রচলিত ভাবে শিক্ষককে একটা আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু বেতন কম থাকার কারণে অনেকেই এই পেশাটাকে ক্যারিয়ার হিসাবে ভাবতে পছন্দ করে না। তাই অধিকাংশ মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশাটাকে বাইপাস করে চলে যায়। ফলে ফেলনা হিসাবে পড়ে থাকা কিছু মানুষ ৪-৫ বছরের চেষ্টায় ৪০ মার্ক পেয়ে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করে। যদিও বর্তমানে ৩০-৫০ হাজার টাকায় অরিজিনাল শিক্ষক নিবন্ধনের সার্টিফিকেট কিনতে পাওয়া যায়। তবে শিক্ষক নিবন্ধন করলেও অধিকাংশ শিক্ষকের চাকরী হয় টাকার জোরে। কারণ ১০-১২ লাখ টাকায় আজকাল একটা স্কুল কলেজের শিক্ষকের চাকরী পাওয়া যায়।

আমার পরিচিত যেসব মানুষজন আজকাল শিক্ষকতার পেশায় আছেন তাদের সবারই অবস্থা এমন যে, ইংরেজিতে ইংলিশ লিখতেও ভুল করে ফেলবে। কারণ টাকার জোরে শিক্ষকতার একটা চাকরী পাওয়া গেলেও মেধা এবং যোগ্যতা কিনতে পাওয়া যায় না। এসব শিক্ষক ক্লাস রুমে গিয়ে আর কী পড়াবে? তারা বইয়ের দু’চারটা পাতা উল্টিয়ে প্রাইভেট টিচারদের ভরসায় পড়ালেখার ইতি টানে। প্রত্যেকটি শিক্ষকের উপর কর্তৃপক্ষের একটা চাপ থাকে। চাপ এড়াতে এবং লজ্জা ঢাকতে তারা পরীক্ষার আগে ছাত্রদের সংক্ষিপ্ত সাজেশনের নামে পরীক্ষার প্রশ্নটাই দিয়ে দেয়।

টিচারের দায়ভার শেষ। কিন্তু সরকারের দায়ভার কে ঠেকাবে? বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা সরকার তৈরি করেছে সেখানে সব জায়গায় অযোগ্যদের জয়জয়কার। ছাত্রদের জিপিএ-৫ পাওয়ানোর চিন্তায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রীর ঘুম হারাম প্রায়। এখন তাহলে উপায় কি? তাহলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা যাক। কারণ সরকারও জানে যেসব ছাত্র স্কুল কলেজে ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে তারা ফাইনালেও এমন প্রশ্ন ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারবে না।

ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা হয়ে গেলো। কিন্তু তারপরেও আশানুরূপ ফল তারা পায়নি। কারণ প্রশ্ন ফাঁস হলেও সেই প্রশ্নের উত্তরও অনেকে অলসতায় বের করেনি (এবারের পরীক্ষায় কিছু কেন্দ্রে উত্তরপত্রও পাওয়া গেছে)। তাই তারা পরীক্ষায় খারাপ করে। এখন তাদের ভালো রেজাল্ট করাতে পরীক্ষকদের উপর নির্দেশনা থাকে খাতায় লেখা থাকলেই ফুল মার্কস দিতে হবে। শিক্ষকের কী আর করার থাকে বলেন? আমার পরিচিত একজন নীতিবান স্যার নিরপেক্ষ নাম্বার দেওয়ায় তাকে ডেকে পাঠিয়ে থ্রেট করা হয়েছিলো বেশি নাম্বার দিতে।

এখন বলেন, যে ছাত্ররা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা কি কাউকে গিয়ে বলেছে আমাকে জিপিএ-৫ হাতে ধরায়ে দেন। তাদের হাতে জোর করে জিপিএ-৫ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এখন মিডিয়া নেমেছে তাদের অপমান করার জন্য। এখন আমার মতে শুধু ছাত্রদের না, শিক্ষকদেরও এমন কিছু সহজ প্রশ্ন করা উচিত। তখন দেখা যেতো কে কতোটা ভালো শিক্ষক। আমার বিশ্বাস আজ ছাত্রদের যে অবস্থা, শিক্ষকদের সাক্ষাতকার নিলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ দেখা যাবে।

শেষ করার আগে একটা কৌতুক বলে শেষ করবো। একজন বোকা লোক নতুন বিয়ে করেছে। তো সকাল বেলা তার শ্যালিকা এসে তাকে মুখে মাখার জন্য ক্রিম দিয়ে গেলো। এখন সেই লোকতো আর বুঝে না ক্রিম দিয়ে কী করে। তাই সে ক্রিমকে মাখন মনে করে খাওয়া শুরু করে দিলো। এটা দেখে তো সবাই অবাক, পরদিন ছেলের শ্বশুর তার বেয়াইকে অভিযোগ করলো, ‍“আপনার ছেলেতো বলদের বলদ। সকাল বেলা তাকে ক্রিম দেওয়া হয়েছে আর সে হাতে নিয়েই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে”। সব শুনে ছেলের বাবা আক্ষেপ করে বললো- ‍“কিছু মনে করবেন না বেয়াই। আমার ছেলেটা একটু বোকা। ও আসলে জানেই না ক্রিম সরাসরি না খেয়ে রুটি দিয়ে মাখিয়ে খেতে হয়”।

আসলে আমাদের শিক্ষাবিদদের অবস্থাও কি মোটামুটি ছেলের বাবার মতোই না? তারা জিপিএ-৫ পাওয়া ছেলেদের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলে, আসলে আমাদের জানতে হবে স্মৃতিস্তম্ভ (স্মৃতিসৌধ) কোথায় অবস্থিত!! ..................... এ ব্যাপারে বিজ্ঞজনদের মন্তব্য প্রত্যাশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৪৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×