somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরিশালের লোকসাহিত্যের দুটো অর্থহীন ছড়াঃব্লগে লোকসাহিত্য সংগ্রহ প্রচেষ্টা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতীয় হিন্দি সিনেমা সংস্কৃতির প্রতি বাঙালীর উদগ্র আলিঙ্গন, আরবীয় ধর্মীয় সংস্কৃতির পেশন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ আমাদের লোকসাহিত্যকে ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুমুখে। আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির মূল উপাদান আমাদের লোকসাহিত্যের অনেক শাখাই আজ কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। কিছু এখনো টিকে আছে কেবল বিশেষ দিনে স্মরণের মাধ্যমে। সময়ের আবর্তে সবটুকুই হয়তো হারিয়ে যাবে। অ্যাকালচারেশনের এই ধারায় আমরা আমাদের লোকসাহিত্যের এরকম হারিয়ে যাওয়া নিয়ে যতই হা-পিত্যেশ করি একে টিকিয়ে রাখা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।

একেবারেই কি অসম্ভব? বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তিই নির্ধারণ করে কী টিকে থাকবে আর কী টিকে থাকবে না। আমরা আমাদের লোকসাহিত্যের সাথে প্রযুক্তিকে যুক্ত করতে পারিনি। প্রায় অসম্ভব এ কাজটির জন্য এগিয়ে আসতে হবে আমাদের মিডিয়াগুলোর। তাহলে হয়তো কিছু লোকসাহিত্য টিকে যেতে পারে। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন এইসব লোকসাহিত্যগুলো সংগ্রহ করে রাখা। কারণ বিলুপ্তপ্রায় লোকসাহিত্যগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রয়োজন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ।

শ্রদ্ধেয় ড. দীনেশ চন্দ্র সেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ অনেকেই এ ব্যাপারে বেশ ভাল কাজ করে গিয়েছেন। তারপরও তাদের সংগ্রহে উঠে আসেনি অনেক লোকসাহিত্য। ব্লগে যেহেতু বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্লগাররা উপস্থিত হন এবং অনেক ব্লগারেরই এখনো গ্রামের সাথে সংযোগ আছে, তাই আমি মনে করি ব্লগ হতে পারে লোকসাহিত্য সংগ্রহের একটি উপযুক্ত মাধ্যম। অনেক লোকসাহিত্য সংগ্রহ করে তা নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করা যেতে পারে।

আমি আজ বরিশাল অঞ্চলের লোকসাহিত্যের দুটি ছড়া লিখছি। ছড়া দুটি এখনকার শিশুদের আর তেমন বলতে শুনিনা। আমরা খেলাচ্ছলে এই প্রায় অর্থহীন ছড়া দুটো এত আওড়াতাম যে এখনো গড়গড় করে মুখস্থ বলে দিতে পারি। লোকসাহিত্য যেহেতু কোন অঞ্চলের কথ্য ভাষাতেই স্বরূপ লাভ করে, বিশেষ করে অন্তমিল এবং ছন্দে, তাই আমি বরিশালের আঞ্চলিক কথ্য ভাষাতেই দিলাম।

আদগান কৈতর তালগাছ বায়
সোনার কৈতর উইড়্যা যায়।
নলবুইনিদ্যা অতীত আইছে
গঞ্জি কিইন্যা লইয়া আইছে।
হে গঞ্জিতো ভাল না
মাইয়া বিয়া দিমু না।
মাইয়ার মাথায় লম্বা চুল
কোথায় পাবো কুসুম ফুল।
কুসুম ফুলের গোন্দে
খোপা বান্দে নোন্দে।
খোপার উপর দাড়াইশ সাপ
লাফ দিয়া পড়ে বেয়াই সাব।
বেয়াই সাবের ডরে
ভুতুম পড়ে চরে।
ও ভুতুম, তুই কর কী?
ধ্যাতরা কাথায় তালি দি।
==============
বিশুদ্ধ বাংলায়-
অর্ধেক কবুতর তালগাছ বায় (আরোহন করা)
সোনার কবুতর উড়ে যায়।
নলবুনিয় (জায়গার নাম) থেকে অতিথি এসেছে
গেঞ্জি কিনে নিয়ে এসেছে।
সে গেঞ্জিতো ভাল না
মেয়ে বিয়ে দেব না।
মেয়ের মাথায় লম্বা চুল
কোথায় পাবো সুগন্ধী (সম্ভবত) ফুল।
(সুগন্ধী) ফুলের গন্ধে
খোঁপা বাঁধে ননদে।
খোঁপার ওপরে দাড়াইশ সাপ (বেনীকে বুঝানো হয়েছে)
লাফ দিয়ে পড়ে বেয়াই সাব (সম্ভবত বেনীকে সাপ ভেবে)
বেয়াই সাবের ডরে
ভুতুম (সম্ভবত কোন ভয়ানক প্রাণী) পড়ে চরে*১
ও ভুতুম, তুই কর কী?
ছেড়া কাথায় তালি দিই।
================
ওয়ান টু থিরি
পাইলাম একটা বিড়ি
বিড়িতে নাই আগুন
পাইলাম একটা বাগুন
বাগুনে নাই আডি
পাইলাম একটা বাডি
বাডিতে নাই কান্দা
পাইলাম একটা রান্দা
রান্দায় নাই ধার
পাইলাম একটা হার
হারে নাই লকট
পাইলাম একটা পকট
পকটে নাই টাহা
ক্যামনে যামু ঢাহা
ঢাহা নাই গাড়ি
ক্যামনে আমু বাড়ি

থিরি-থ্রী; বাগুন-বেগুন; আডি-বীজ; বাডি-বাটি; কান্দা-ধার; রান্দা-রাম দা; ধার-শার্পনেস; লকট-লকেট; পকট-পকেট; টাহা-টাকা; ঢাহা-ঢাকা, ইত্যাদি।
*১=বরিশাল অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে মহিষগুলো গরম কাটানোর জন্য জলে নেমে বসে থাকে যারে চরে/চরায় পড়া বলা হয়।
==================
ছি-বুড়ি খেলায় আমরা কিছু অর্থহীন লাইন ব্যবহার করতাম। তার দু'একটা দিচ্ছি-
১. ছি কুত কুত তাইয়া, বাবুলের মাইয়া, বাবুল কান্দে পঁচা কাডাল খাইয়া, খাইয়া, খাইয়া...........(শ্বাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত)
২. ওপারেতে যাবো না, ভাডা মাছ খাবো না, ভাডা মাছের ত্যালে, সংসার জ্বলে জ্বলে জ্বলে.........
৩. একছিমালা দুইছিমালা বউ থুইআইছি কদমতলা, কদম ফুল ফোটছে, বউ লইয়া ছোডছে, ছোডছে, ছোডছে.......
৪. কচু পাতায় চিনা জোক, চিনচিনাইয়া রোদ্দুর ওঠ।

এরকম আরো অনেক লোকসাহিত্য ছিল যা এখন ভুলে গিয়েছি। গ্রামের ছেলেমেয়েদের এখন আর দেখিনা এসব আওড়াতে। তারা এখন টুইঙ্কল, টুইঙ্কল লিটল স্টার আওড়ায়। ছি-বুড়ি খেলেনা, ক্রিকেট খেলে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রাম্য এসব লোকসাহিত্যগুলো।

আপনাদের মধ্যে যারা শিশুবেলা গ্রামে কাটিয়েছেন প্রত্যেকের জীবনেই এরকম কিছু লোকসাহিত্য জড়িয়ে আছে। যদি মুখস্থ থাকে তাহলে মন্তব্যের ঘরে আপনার এলাকার নামসহ কথ্য ভাষায় তা দিয়ে যাবেন। শুদ্ধ বাংলায় ব্যাখাটাও করে যাবেন আশা করি। আপনাদের সকলের সহযোগিতা পেলে লোকসাহিত্য সংগ্রহে আমার এ উদ্যোগ সার্থক হবে।
সকলকে ধন্যবাদ।

*দয়া করে কেবল ভাল উদ্যোগ বলে পলায়নপর হবেন না। আপনার এলাকার দু'একটি লোকসাহিত্য দিয়ে এই উদ্যোগকে সফল করুন।
**আপনাদের সংযোজিত লোকসাহিত্য দিয়ে নিয়মিত আপডেট হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৩৬
২০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×