মুসলিমদের দ্বারা অহরহ সংঘটিত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শিরক (আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করা) বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি। [এই লেখাটা শুধুমাত্র মুসলিমদের উদ্দেশ্যে লেখা। অমুসলিম ভাইরা ইগনোর করতে পারেন লেখাটা এবং আশা করি এটা দেখে মাইন্ড করবেন না। ]
শিরক বলতে বোঝায় আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করাকে। সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হল এই শিরক। যতগুলো কবীরা গুনাহ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য পাপ হল শিরক। এই শিরক বলতে কিন্তু শুধুমাত্র মূর্তিপূজা করাকে বোঝায় না। আজকাল মুসলিমরাও প্রায়শই জেনে বা না জেনে এমন অনেক কাজ করে থাকেন, যা শিরকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি।
১) কোন পীরের কাছে বা কোন মাজারে গিয়ে কিছু চাওয়া, তাবিজ পরা এক ধরনের শিরক।
২) অমুসলিমদের থেকে পোশাক, অলংকার বা এমন কিছু ফলো করা যা তারা মূলত ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করার জন্য করে থাকে। যেমন সিঁদুর দেওয়া, ক্রুশ পরা ইত্যাদি কাজ মুসলিমরা ফ্যাশনের উদ্দেশ্যে করলেও এগুলো শিরকের মধ্যে অন্তর্ভূত হবে।
৩) আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মনে করা। যেমন, "আমেরিকা, ভারত সাহায্য না করলে আমরা সবাই না খেয়ে মারা যাবো" - এ ধরনের কথা বলা সুস্পষ্ট শিরক।
৪) অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা। যেমন, হোলি, দিওয়ালী বা ক্রিসমাস ডে পালন করা। এগুলোর মধ্যে পূজার ব্যাপার থাকুক বা না থাকুক, এগুলোতে অংশগ্রহণ করা যে কারো জন্যই সুস্পষ্ট শিরক। মুসলিমরা মজা করার উদ্দেশ্যে এগুলোতে অংশগ্রহণ করলেও সেটা শিরক হবে।
৫) মোমবাতি, আগুন বা প্রদীপ জ্বালালে মঙ্গল হবে - এরকম কথা বলে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালালে সেটা শিরক হবে। (সম্ভবত) ২০১৪ সালে গণজাগরণ মঞ্চ এরকম একটি মোমবাতি জ্বালানোর ইভেন্ট পালন করেছিল। আগামী ২৫ মার্চ গ্রামীণফোনও ঠিক এই ধরনের একটা আলো জ্বালানোর প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছে। আলো জ্বালাতে হয় অন্ধকার দূর করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আলো জ্বালালে মঙ্গল হবে এমন মনে করলে, বা আলো জ্বালিয়ে কোন কিছু স্মরণ করা বা শ্রদ্ধা নিবেদন করলে সেটা শিরক হবে। 'শিখা অনির্বাণ'কে স্যালুট দেওয়া এবং এর মাধ্যমে শহীদদের সম্মান জানানোর কনসেপ্টটাও এক ধরনের শিরক।
৬) অনেক গান এর মধ্যে শিরকপূর্ণ কথাবার্তা থাকে। যেমন, "বান গায়ে হো তুম মেরে খুদা", "তুহি মেরা রাব হ্যায়, জাহাঁ হ্যায়, তুহি মেরি দুনিয়া", "তুঝ মে রাব দিখতা হ্যায়... সাজদে সার ঝুকতা হ্যায়" ইত্যাদি।
৭) আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম খাওয়া অনেক বড় পর্যায়ের শিরক যেটা অধিকাংশ মুসলিমই জানে না। যেমন, মায়ের কসম, মাটির কসম, রক্তের কসম, মাথা ছুঁয়ে কসম খাওয়া হারাম এবং শিরক। মানুষ কসম শুধুমাত্র আল্লাহ্র নামে করতে পারবে কারণ আল্লাহ্ই একমাত্র অপরিবর্তনশীল। অন্য কিছুর নামে কসম খাওয়ার অধিকার আছে শুধু আল্লাহ্র, যেমন আল্লাহ্ কুরআনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের নামে কসম করেছেন। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কথায় কথায় কসম খেতেও ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে।
লেখাটা সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এই লেখাটা আল-কুরআন এবং ৬টি সহীহ হাদিস গ্রন্থ (সিহাহ সিত্তাহ) এর শিক্ষার ভিত্তিতে লিখেছি। এর মাধ্যমে যদি আপনাদের একটুও উপকার হয়, তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক। ভালো থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ।