somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই ঈদ, সেই ঈদ...

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলার ঈদের আন্দের সঙ্গে কোন বেলার আনন্দেরই তুলনা চলে না। তখন ঈদ শুরু হতো বলতে গেলে সাত দিন আগে থেকে, সেই কেনা-কাটার সময় থেকে।
তখন মফস্বলে থাকতাম। এই রকম জাকজমকের দোকানপাট তখন ছিল না। টাঙ্গাইল শহরে ভাল কেনাকাটার জন্য ভাল জায়গা ছিল নিউ মার্কেট। একেবারেই ছোট্ট পরিসরের ছিল এই মার্কেট কিন্তু ভাল ভাল হাতেগোনা কয়েকটি দোকান ছিল। মেইন রোডে উঁচু সেতুটির পাশেই ছিল এই মার্কেট, এখন জীর্ণশীর্ণ। কেউ চিনতেই পারবে না, বিশ্বাসও করবে না। জামাকাপড় সাধারণত ওখান থেকেই কেনা হতো। ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের আদলে তৈরি মার্কেটটির বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও নতুন জামাকাপড় আর প্রসাধনীর গন্ধ নাকে লাগতো। একটি ঈদে বাড়ীর সব ভাই বোনদের জন্যই কেনাকাটা হতো। ছোট সময় শার্ট আর হাফ প্যান্ট রেডিমেড কেনা হতো। একটু বড় হলে শার্টের কাপড় কিনে দর্জির কাছে বানাতে দিতে হতো। অন্য ভাইদের কথা মনে নেই, কিন্তু আমার দুয়েকটি ঘটনা মনে আছে। কি কারনে জানি না আমি আব্বার খুব আদরের ছেলে ছিলাম। হয়তো ছেলেদের মধ্যে ছোট, তা-ই শুনেছি কিন্তু এর যৌক্তিকতা আজও বুঝি না। আমার নাকি গভীর রাতে বিস্কুটের ক্ষুধা লাগতো। যে কারনে বাসায় সবসময় বিস্কুট কেনা থাকতো। কোনও কারনে না থাকলে বা ভুলে গেলে আব্বা নাকি ঐ গভীর রাতে পাশের রাস্তার দোকানদারকে ডেকে তুলে বিস্কুট নিয়ে আসতেন আমাকে ঠাণ্ডা করার জন্য। নইলে সারা রাত বেহালা বাজতো। এতেই বুঝা যায় তিনি আমার প্রতি কতটা সহনশীল ছিলেন। যাই হোক, আমার প্রতি এই আধিখ্যেতা আমার অগ্রাধিকার বাড়িয়ে দিয়েছিল সবকিছুতে। আব্বার কাছে তার অন্য দুই ছেলে কাছে ভিড়বার সাহস বা আবদার না করতে পারলেও আমার ছিল সবকিছুতেই সাবলীল অধিকার। আব্বার সঙ্গে রাগও করতে পারতাম। আব্বা আমার সেই রাগ সহজেই হজম করে নিতেন, কারন ঐ রকম রাগ তার বাবা অর্থাৎ আমার পিতামহই শুধু করতে পারতেন। এই গুনের জন্যও নাকি আমি আব্বার প্রিয় ছিলাম। অন্য দুই ভাইয়ের জামাকাপড় কেনা হয়ে যেতো যেমন তেমন ভাবে কিন্তু আমার হতো আমার পছন্দের, সেটা একটু বড় হলে। শার্টের জন্য কাপড় কিনতাম সবচেয়ে দামীটা। নিউ মার্কেটে এক দোকান ছিল যেখান থেকে বাঁধা কাপড় কেনা হতো। বলতে কি আব্বা কখনোই ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করতেন না। নির্দিষ্ট দোকান বাঁধা ছিল। ঐ দোকান থেকে সবচেয়ে দামী শার্টের কাপড় কিনলাম। তখন তার দাম ছিল সাড়ে ছয় টাকা গজ। তখন পাঁচ টাকা গজের কাপড় কিনলেই হয়ে যেতো। কিন্তু ঐ চেক্‌টা আমার চোখে ধরে গেছে। দোকানী চাচা ইতস্ততঃ করলেন, কিন্তু আমি নাছোড়। কারন আমি জানি আব্বা কিছুই বলবেন না। বলেনও নি। তার পরের বছর তেমনি দামী শার্টের কাপড় কিনলাম। সেই দোকান থেকেই, শুধু অন্য চেক্‌। খুব পছন্দ আমার। ঈদের দু’দিন পর কালিহাতী গেলাম আমার এক দুসম্পর্কের মামা বাড়ী বেড়াতে। কাছেই, মাত্র ২০ কিলমিটার টাংগাইল শহর থেকে। বিকেলে আমরা আর মামাতো ভাইবোনেরা মিলে চিবুড়ি খেলছি। এক সময় আমি দোউড়াচ্ছি আর পিছনে আমার মামাতো বোন বীণা ছুটছে। ধরতে না পেরে সে আমার শার্ট ধেরে হেঁচকা টান দিল। আমি গেলাম পড়ে আর শার্ট গেল ফড়াৎ করে ছিড়ে। রাগে দুঃখে আমার চোখে পানি এসে গেল। সেই যে বীণার সঙ্গে কথা বন্ধ করলাম আর জীবনে কথা বলিনি। শার্টটা মাত্র দু’দিন পড়েছিলাম।
ঈদের সময় জুতা কেনা হলে বাক্স সমেত আলমারির উপর উঠিয়ে রাখা হতো। তখন বাটা ছাড়া জুতা কেনা হতো না। ঈদের দিন না আসা পর্যন্ত প্রতিদিন সকালে উঠেই নতুন জুতার গন্ধ শুঁকতাম। গন্ধ নয়, ওটা ছিল খুশবু। কি যে মন মাতানো গন্ধ! আজকাল জুতার গন্ধ খুঁজেই পাই না। নাকি বয়সের সঙ্গে ঘ্রাণেন্দ্রিয় ভোঁতা হয়ে গেছে! ঈদের দিন নামাজ পড়ে এসেই জুতা আর প্যান্টশার্ট পড়ে নিতাম। তারপর ঘুরে বেড়ানো, লজেন্স আইস্ক্রিম কিনে খাওয়া, বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া। বেলা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা বাড়তে থাকে। একসময় নতুন জুতা খুলে পায়ে মলমের পট্টি লাগিয়ে লক্ষী ছেলের মত ঘরে বসে থাক। অর্থাৎ পায়ে নতুন জুতার ফোস্কা পড়ে গেছে। এরপর ঐ জুতা আর সাতদিন পড়া যেতো না। সন্ধ্যা হলেই মনটা খারাপ হয়ে যেতো ঈদ শেষ হয়ে গেল বলে।
তখন ‘দুলাল বস্ত্রালয়’ ছিল নামকরা শাড়ীকাপড়ের দোকান। আম্মা কদাচিত দোকানে যেয়ে কাপড় কিনতেন। ওটাও বাঁধাধরা দোকান ছিল। ঈদের কয়েকদিন আগে দোকানের কর্মচারী এক সাদা কাপড়ের গাট্টি নিয়ে বাসায় হাজির হতো। আম্মা সেই ১০/১৫টা কাপড় থেকে পছন্দ মতো দুয়েকটি কাপড় রেখে দিতেন।
ঈদের দিন আমাদের বাড়ির রান্না হতো সবার আগে। আব্বার বন্ধুরা খেতে আসতেন দুপুরে। হিন্দু বন্ধুরাও থাকতেন। তাঁরা মুলতঃ আম্মার হাতের পোলাউ আর কোরমা খেতে আসতেন। বলতেও শুনেছি এমন রান্নাটি হয় না।
তখন ঈদের চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন হতো। রোজার শেষে আমাদের বাসার সামনের ফাঁকা মাঠের কোণের তালগাছটার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম এবং এক সময় চিকন চাঁদটা ঠিকই দেখতে পেতাম। মাঝে মাঝে এত্তো চিকন থাকতো যে প্রায় দেখাই যেতো না। যে দেখতে পেতো সে আরেকজনকে দেখানোর জন্য মাথা ধরে আঙ্গুলের নিশানা করে কতরকমভাবে যে দেখাতে চাইতো। না দেখতে পেরে কানা অপবাদ জুটতো। চাঁদ দেখার পর চোখের সামনে রঙিন জামা-জুতা ভেসে উঠতো।
এখন ঈদ এলে আর নতুন জামাকাপড় কেনার কথা মনে হয় না, শুধু মনে হয় কাকে কত ভাল কাপড় দেবো খুশি করার জন্য। আজ যারা শিশু কিশোর তাঁরা কি ঈদের দিন আমার মতই তেমনি খুশি হয় যেমনি আমি খুশি হতাম?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×