somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডুব দেওয়া, ফিরে আসা নিয়ে কিছু (অ)প্রাসংগিক কথা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় তিন মাস যাবৎ ইন্টারনেট এর আওতার বাইরে ছিলাম। মাঝে কিছুদিন অবশ্য কিছুটা স্বেচ্ছায় ও কিছুটা সময়-সুযোগের অভাবে এই ল্যাপটপ-যন্ত্রটাকে পাশ কাটিয়ে গেছি।
কিন্তু আমি কল্পনাও করিনি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আমার বর্ধিত পরিবার ও বন্ধুমহলে আমার এই "অনলাইনে-না-আসার" নৈঃশব্দের কেমন মানে হতে পারে। আমার ভাই আমার হয়ে কৈফিয়ত দিতে দিতে ক্লান্ত; "হ্যা, ও ভাল আছে।" "না না পারিবারিক কোনও সমস্যা হয়নি।" "না ও কোনও চাকরি করেনা, এখনও বেকার।" ইত্যাদি।
মোবাইলে ফোনের পর ফোন। "শাফ্ক্বাত তুমি ভাল আছ?" "শাফু তোকে ফেইসবুকে নক করসিলাম..." "তোমার কোনও প্রব্লেম হচ্ছে? আমাকে খোলাখুলি বলতে পার..." ব্যাপারটা সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে দেখে ফেইসবুকে লগিন করলাম একদিন। মেসেজ ইনবক্সে ২৬ টা আর নোটিফিকেশেন ১০৩। আবার লগাউট করে ফেল্লাম, এত পড়ার সময় ও ধৈর্য সে-সময়ে ছিলনা।
অবাক লাগছে এটা ভেবে, কী করে আমি কখন এমন ইন্টারনেট-নির্ভর যোগাযোগে জড়িয়ে পড়লাম?

চাকরি ছাড়ার পর মোবাইল নাম্বার বদলে ফেলেছিলাম। কেমন একটা আলস্য থেকে নতুন নাম্বারটা জনগণকে দেইনি। টেলিকমে কাজ করতাম বলে প্রচুর কথা বলতাম বিলের তোয়াক্কা না করে। তাছাড়া চাকরির ধরণটাই এমন ছিল যে বাসায় এসে মেয়েকে কোলে নিয়েও কান থেকে মোবাইল ফোনটা সরাতে পারতামনা। তাই অনেকটা বিরক্তি থেকেই ফোন থেকে অবসর নিয়েছিলাম কয়েক মাস।
সেবারও একই কান্ড। "সব ঠিকাছে তো?" এ-ওকে জিজ্ঞেস করে, কার সাথে আমার যোগাযোগ আছে...গেট-টুগেদারে দাওয়াত পাইনা, কেউ আমার নাম্বার জানেনা, অনেক ইমেইল, অনেক ফেইসবুকের-ওয়ালপোস্ট...আমি চুপ। মনে হতো ৬ বছরের কামলা-খাটার পর আমি মিনিমাম একবছর খালি বাসায় থাকবো। অখন্ড অবসর নিয়ে। খালি মা-মেয়ে আর ঘরবাড়ি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, অনলাইন যোগাযোগ, মোবাইলের বিল গোনা (বেকার হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি ফোনবিল কী জিনিস), কিচ্ছু না। নিজের ভেতরকার "আমি" টাকে ফিরে পেতে চাইছিলাম শুধু নিজের মাঝে থেকে, আমার মেয়েদের সাথে সময় কাটিয়ে।

খুব ভাল উদ্যোগ। আসলে এই মোবাইল-ইন্টারনেট যতই উপকারী হোক না কেন...ভীষণ দায়বদ্ধ করে ফেলে। যোগাযোগ টিকিয়ে রাখার দায়বদ্ধতা। সামাজিক প্রাণী হিসেবে আমরা মানুষরাই এই মাধ্যমগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি নিজের চারপাশে অন্যমানুষের আনাগোনা তৈরী করার জন্য। তবে যখন "নিজেকে" নিয়ে থাকার তাগিদটা প্রবল হয়ে যায়; এই যন্ত্রগুলো তখন বাহুল্য মনে হয়।

আমি চট্টগ্রাম ছেড়ে যখন ঢাকায় এলাম, রোকেয়া হলের ঠিকানায় চিঠি লিখে পাঠাতো আমার মা। সেই আম্মু এখন প্রতিদিন তিন-চারবার ফোন করে, এসএমএস করে। কত সহজ হয়ে গেছে যোগাযোগ!! কিন্তু সেই চিঠিগুলো, বারবার এপিঠ-ওপিঠ করে পড়তাম। আমার রুম-মেটরাও পড়তো। একজন মা-য়ের চিঠিতে সবার ব্যাপারে খোঁজখবর থাকতো। "শেলীকে বোলো মন দিয়ে পড়তে"... "দীপুকে জানিয়ো ওর রেজাল্টে আমি খুব খুশী হয়েছি"..."তোমাদের সবার জন্য রইলো অনেক দোয়া। ইতি-আম্মু।"
আমার প্রেম হলো, ক্লাসমেটের সাথে। ক্লাসে দুইপ্রান্তে বসে দুইজন খালি দুজনকে চিঠি লিখতাম। দিনশেষে ও বাসায় চলে যেত, আমি ফিরতাম হলে। পরদিন সকালে খুব সংকোচ নিয়ে ওর পকেটে একটা চিঠি ঢুকিয়ে দিতাম। সেই কার্ডফোনের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতি-রাতে ফোন করার সময় মনে হতো "কবে আমার একটা মোবাইল ফোন হবে?" হলোও মোবাইল ফোন একদিন। বন্ধ হলো চিঠি লেখা। ইতি হলো কার্ডফোনের লাইনে দাঁড়ানোর। কিন্তু এই সহজ যোগাযোগ, জীবন থেকে কী যেন একটা ছিনিয়ে নিয়ে গেল।

অনলাইনে এখন ব্লগ লিখা যায়, ডাইরির ভাত মরেছে। আমার সাহেব অফিসে খবরের কাগজ পড়েন আর আমি অনলাইনে। ঘরে আর খবরের কাগজের স্তুপ হয়না। সেদিন অনেক পুরনো এক উপন্যাস ইন্টারনেটে গিয়ে পড়লাম। গান শুনি ল্যাপটপে, ডাউনলোড করে।

কী যেন নেই, কী যেন হারিয়ে গেছে। মনে হয় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়ত। ভয় পাই, যন্ত্রনির্ভর জীবনযাত্রায় আমি যন্ত্রের মতো কাঠখোট্টা হয়ে যাচ্ছি...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:২০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×