somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাহেদ শাহরিয়ার জয়
সত্য সবসময় সত্য,আমি সত্যেরই সারথী।লেখালেখির অভ্যাস পুরানো,ফেলতে পারি না;সময় অসময়ে জেগে ওঠে।ব্লগ কিংবা ফেবুতে আমি একজনই.."শাহেদ শাহরিয়ার'',জয়' নামটা বন্ধুদের দেয়া।ওটা'ও তাই রেখেই দিয়েছি।লিখছি,যতকাল পারা যায় লিখব;ব্যস এতটুকুই!

জয়ী হওয়ার প্রথম পা'!

২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জয় বেহিসেবী মানুষ;হিসেব করে কখনোই চলা হয়নি।হেঁটে চলার পথ সে রিকশায় গিয়েছে,রিকশার পথটা সিএনজিতে...তাই সবাই যেটা পুঞ্জীভূত করার চিন্তায় থাকে;সেটা জয়ের করা হয়ে উঠেনি কখনোই।ভোগেছে অনেক সেটার জন্যই।অনেক কিছু হারিয়েছে,যা হারাবার নয়,তা'ও!।একটা সময় ছিল,গ্রাম থেকে শহরে উঠে আসতে তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে।পড়ালেখা চালিয়ে যেতে তাকে কাধে কোদাল তুলে নিতে হয়েছে,তাতেও যখন হতো না তখন চাতকের মতই ওপরের দিকে তাকিয়ে কতকাল কেঁদেছে সে খবর পাড়ার প্রতিটা বেওয়ারিশ কুকুর আর বাঁশ ঝাড়ের পাশের ঐ একলা ব্রীজটাই জানে।যখন সে এসএসসি দিচ্ছিল;ফর্ম পূরনের টাকাটা জোগাড় করতে পারছিল না,কোনভাবেই।হঠাৎ করেই একদিন একটা ছাগলের বাচুর তাদের উঠোনে এসে ধরা দিল,অনেক খোঁজা হলো তার মালিক কে,পাওয়া গেল না।বাচুরটার গায়ে অনেক আটালী পোঁকায় রক্ত চুষছিল।জয় বাচুরটাকে গোসল করিয়ে গায়ে বনাজী ঔষধ লাগিয়ে সুস্থ করে,সে ছাগলটা একটা সময় জয়ের স্বপ্ন পূরনের উপাদান হয়ে যায়: ওটা জয়কে হয়তো অদৃশ্য কোন শক্তিই দিয়েছে।এরপর ও তার দুর্দশা যায়নি।যখন সে এইচএসসি দিবে তখনও ফর্ম পূরনের টাকার কথা ভেবে অানমনে রাস্তায় হাঁটছিল আর ভাবছিল এবার আর বোধয় পড়ালেখাটা হবে না। এটা ভাবতে ভাবতেই রাস্তার কাছায় জমানো বালিতে উদাসীন ভাবে লাথির ভঙ্গিতে পা চালাচ্ছিল;হঠাৎই তার চোখ চকচকে কিছু একটা ধরা দেয়। সে হাতে নেয়,'কানের দুল'।সে তার পাশের দু'বন্ধুকে দেখায় সেটা।তারা হাসতে হাসতে বলে-নে,এইটা তোর বৌকে দিস!
জয় আজো তার সে বন্ধুদের দেয় ধন্যবাদ দেয়,যদি তারা দুলটা ফেলে দিত অথবা নিজেরা নিয়ে যেত,হয়তো তার পড়ালেখাটাই হতো না।সেই দুলটা বিক্রির টাকায় তার ইন্টারের ফর্ম পূরন যে হয়েছে।অদৃশ্য শক্তির প্রতি তার বিশ্বাসের ভিতটা আরো মজবুত হয় যখন সে ইন্টারে অসুস্থ থাকার পরও কলেজে ফার্স্ট হয়।পড়ালেখার নেশাটা তাকে পেয়ে বসে,সাথে পরিবারের বংশগত দারিদ্রতা।দুটোকেই সে লালন করে,ছিড়তে চায় পারে না।সেটা ছিড়তে সাহায্য করে তার বড় ভাইয়ের এক বন্ধু।তিনিই জয় একজোড়া কবুতর উপহার দিয়েছিল ই্‌ন্টারে ভাল রেজাল্ট করায়।জয় আর বেশি কিছু চাইতে পারে নি।তাই সে অদৃশ্য সে শক্তির কাছেই চায়: যেন সে ইংরেজিতে অনার্স করতে পারে। জয়ের আ্ত্ন বিশ্বাস এতটাই ছিল যে অদৃশ্য সে শক্তিটা জয়ের সবকথাই শুনছেন,এটাও শুনবেন।তাই বাবা-মা যখন দারিদ্রতার দোহায় দিয়ে শহরে যেতে বারণ করলো,জয় কিছু বলে নি। অনেক সখের কবুতর জোড়া বিক্রি করে ৬৫০ টাকা পকেটে নিয়ে ছুটে যায় শহরে,এ শহরে পরিচিত বলতে শুধুই তার কলেজের একজন,যে ভার্সিটি ভর্তির কোচিং করছে। জয় তার কাছেই যায়,তার হাতে ৬০০ টাকা দেয়,ফর্ম কেনার জন্য আর প্রস্তুতির জন্য একটা বই কেনার জন্য।সে কোচিং থেকে মোটা একটা বই জয়কে কিনে দেয়।বাদলা সেটা নিয়ে গ্রামে ফিরে আর তন্ন তন্ন করে প্রতিটা পাতা।একটা দীর্ঘ সময় পর রেজাল্ট দেয়। জয় আর তার সে কলেজ বন্ধু রেজাল্ট খুঁজতে থাকে...শেষ দিক থেকে খুঁজে তারা।খুঁজতে খুঁজতে তার বন্ধুটা পায় এগারশো সিরিয়ালের কোথাও!অর্থাৎ সাবজেক্ট পাওয়া হয়তো হবে না,আর পেলেও বাংলা কিংবা ইতিহাস ছাড়া কিছু জুটবে না।জয়ের মনটা প্রায় ভেঙ্গে যাবার অপেক্ষায় চোখ বুলাতে থাকে প্রথম লিস্টটায়।প্রথম লিস্টের নিচ দিক থেকে উঠে আসে একদম প্রথম সিরিয়ালে...জয়,কেঁদে দেয়।সে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারে না।সে তার বন্ধুকে ডেকে তাই নিশ্চিত হয়,না ওটা তারই রোল ছিল!এরপরও প্রতিটা দিন তাকে শহরে ঠিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে।কাঁচা বাজারে মসল্লা বিক্রি করতে হয়েছে,মাটি কাটতে হয়েছে। এতকিছুর পরও একটা জিনিস হয়েছে,ইংরেজিতে তার অনার্স আর মার্স্টাস ডিগ্রীটা হয়েছে।সাথে জুটেছে মনের কথা শুনার মতো কিছু মানুষ,তাদের কেউ কেউ আবার মনের গহীনেও ঢুকে গিয়েছে,যেটাকে সমাজ ভালোবাসা বলে।কিন্তু বাদলা চাতক,তৃষ্ণাত্ব চাতক।তাই ওর পাশে থাকেনি। যার আজীবন পাশে থাকার কথা ছিল সেও। নেশা তাকে এই পোড়া শহরে ডেকে এনেছিল,পড়ালেখাটা হয়তো হয়েছে,কিন্তু তার কাদা-মাটি মন পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।তার এখন ভীষণ মিস করে তার শৈশব আর গ্রাম সাথে সেই ছয়দিনের ছোট বাচ্চা দেয়া কবুতর জোড়া,যেটা ভার্সিটির ভর্তি ফর্ম কেনার জন্য তাকে বিক্রি করতে হয়েছে।
কিন্তু জয় তার নিজেকে অবাক করে কিছু অদৃশ্য নোট জমা করেছিল একাউন্টে আর পুরাতন ডায়েরীতে।ভেবেছিল কাউকে কখনোই কিছু দেয়া হয়নি;কিছু একটা দেবে।সেটা আদৌ হয়ে ওঠেনি।তবে,সেই নোটগুলো জীবনে অন্যকিছু নিয়ে এসেছে: জয়ের আমিকে মেলে ধরার সুযোগ।"জলরঙ বসন্ত" কাব্যগ্রন্থটি জয়ের ভিতর অন্য একটি মানুষের জন্ম দিয়েছে।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×