somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাম খোলা চিঠি (৪) ঃ মা, তোমাকে ……

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুর্বকথা ঃ



আমাকে হত্যা করার সিদ্ধান্তটি নেন আমার বাবা ।






শহরে গল্পগ্রস্ত মানুষের অভাব হয়না কখনও । বুকের গহীন কোণায় একটা গল্প নিয়ে এই শহরে ঘুরে বেড়ায় মুখোশ অভিনেতারা । কেউ কেউ কোনও একদিন কোনও জোনাকি পোকার দেখা পেয়ে যায়, কান পেতে সেইসব গল্প শুনবার জন্য । আর কারও কারও বুকে ঘুন পোকা বাসা বাঁধে , সেই গল্প খাওয়ার অফুরান কষ্ট জমে রয় পলকতলে । শাহানা ভেবেছিলো সে প্রথম দলের । রাশেদকে সে জোনাকি পোকা ভেবেছিলো । ভেবেছিলো, ভয় পাওয়া কলসিতলা অন্ধকারে হৃদয় পুড়িয়ে আলো হবে রাশেদ । কেনই বা ভাববে না, রাশেদও তো স্মৃতি কারিগর ছিলো । সেও তো বলেছিলো, আমি তোমার হাসির সমান সুখী । তোমার কান্না সমান মৃত । বলেছিলো, আমি তোমার ভালোবাসার সমান পাগল । তোমার দূরত্ব সমান একা । তাই তারা আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল রেখে বদলে দিতে চেয়েছিলো হাতের রেখা । যাবতীয় কাঁটাতারের বেড়া ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলো আবেগের আগ্নেয়গিরি উত্তাপে । অথচ উড়ে যেতে যেতে বলে নাগরিক চড়ুই, এমন সুখ সইবে না । কিন্তু সে তো ঈর্ষার বিষ লাগানো সূচলো বল্লম । হয়না এমন তো হয়না , কলম পিষে পিষে বলে কবি । সেও তো হতাশাবাদি কবির চিরন্তন শব্দের ধোঁকাবাজি । পৃথিবীর সব লাল নীল কাগজের চশমা পরা প্রেমিক প্রেমিকার মতো সাহানা আর রাশেদও ভেবেছিলো এমন। ভেবেছিলো, পাঁজর ভেঙ্গে কলজে চুরি হয়না কোনওকালে । কিন্তু হায়, একদিন এমনকি নক্ষত্রও পথ হারিয়ে মরে যায় । একদিন গাংচিলও কেঁদে কেঁদে জীবনানন্দের কবিতায় বেদনা জাগায় ।





এইটুকু বলে থামলেন দেবদূত । আমি বললাম, তারপর ??
দেবদূত হাসলেন । বললেন, তুমি কি জানো কেনও এই গল্প তোমাকে বলা হচ্ছে ??
আমি বললাম, জি জানি । আগামীকাল আমাদের সবাইকে একটি চিঠি লিখতে হবে ।
দেবদূত বললেন, হ্যাঁ , আজকের গল্প শুনে তুমি যা ভাববে সেটাই লিখতে হবে ।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম , বললাম, তারপর ??




তারপর একরাত । সে রাতে চাঁদ উঠেছিলো কিনা রাশেদ কিংবা শাহানা কারই মনে নাই । ছোট ছোট শব্দেরা পাশাপাশি হেঁটে গিয়েছিলো কিনা তাও খেয়াল নেই কারও । শুধু জানে শরীরের কোনও অন্তঃমহলে উঠেছিলো তীব্র উৎসব । বেহিসেবিকাল পুরানো এক আবেগিয় ঝঙ্কার বেজেছিলো প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে । তার না ফেরানো স্বাদ খুন করে শারীরিক বেড়াজাল । নির্ভীক সুখের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মরে যায় অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ । শুধু শরীরের নবীন হালখাতায় রয়ে যায় কিছু স্মৃতিচিহ্ন । স্মৃতি চিহ্ন রয়ে যায় শরীরের নাম না জানা অন্তঃস্থলে । খুব গোপনে ।





আমি দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে থাকি । শঙ্খে লুকানো ঝিনুকের মতো চুপচাপ ।



খাম খোলা চিঠি ঃ মা , তোমাকে



মা, জানি এই চিঠি কোনোদিন তোমার কাছে পৌঁছাবে না । তবুও লিখছি, দেবদূত বলেছেন, আমাদের রোজকার খেলার মতো এটাও একটা খেলা ।জানো মা,আমাদের স্বর্গে নানারকম খেলার ব্যবস্থা আছে । এইসব খেলায় আমাদের সবসময় আনন্দে রাখার চেষ্টা করা হয় । কারণ, স্বর্গে আনন্দেই থাকতে হয় । আমিও ছেলেভুলানো খেলায় এতদিন সব ভুলে ছিলাম । গতকাল আমাকে আমার জন্মপরিচয় জানানো হয়েছে । এটাই নিয়ম । একদিন আমাদের সবার জন্ম পরিচয় জানতে দেওয়া হবে । জন্মপরিচয় জেনে আমার কি অনুভূতি সেটা লিখে রাখতে হবে । আজকের খেলা এটাই । দেবদূত বলেছেন, এই খেলাতেই আনন্দ হবে । কিন্তু কিভাবে আনন্দ হবে এখনও বুঝতে পারছি না । আমার কেবলই বিষাদ লাগছে ।





তোমারও কি এমন বিষাদ লেগেছিল যখন আমাকে তোমার কাছে থেকে ছিন্ন করা হলো ?? ডাক্তারের কাছে আমি ছিলাম শুধুই রক্তপিণ্ড , সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে স্রেফ অভিধানের একটা শব্দ, ভ্রূণ । কিন্তু আমি তো তোমার অস্তিত্বর অংশ ছিলাম । তোমার বিষাদ কি আমার চেয়েও বেশি ছিলো?? তাই কি আমাকে আলাদা করতে চাওনি তুমি কোনোভাবেই?? আমি শুনেছি , তুমি অনর্গল কেঁদে গেছো । আমাকে রক্ষা করতে বার বার ছুটেছ বাবার কাছে । বারবার করুণা ভিক্ষা করেছো , কিন্তু বাবা তার এক রাতের আবেগকে দীর্ঘ করতে চাননি । আমাকে হত্যা করার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন । খুব ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়েছিলেন তোমাকে, কেনও আমার পৃথিবীতে আসার প্রয়োজন নেই । দেবদূত বলেছেন, তুমি বাবাকে কখনও ক্ষমা করোনি । বলেছেন, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তুমি বাবাকে বলেছো, আমার সন্তান তোমাকে কখনও ক্ষমা করবে না । মা, তুমি ভুল বলেছো । স্বর্গের শিশুরা কারও উপরে রাগ, ক্ষোভ রাখেনা । স্বর্গের শিশুরা মানবীয় ত্রুটির উর্ধে । আমাদের স্রেফ আনন্দিত থাকার নিয়ম ।

কিন্তু আজ নিয়ম ভেঙ্গে বিষণ্ণতা চেপে বসছে বারবার । জানো, এখানে আমাদের জন্য রয়েছে অসংখ্য দেবদূত । আছে মিষ্টি ঝর্না , অনেক পবিত্রতম নদী, অপূর্ব সব ফুল আর গানের পাখি । চোখ ধাঁধানো পরীরা এসে আদর করে দিয়ে যায় ইচ্ছে হলেই । এখানে শুধু একজন মা নেই । আমি জানিনা , মা এর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে কেমন লাগে । জানিনা , মা স্পর্শ করলে কেমন লাগে । জানিনা মায়ের বুকে ঘুমিয়ে যাওয়ার শান্তি কত । কোনোদিন জানবোও না, মা ডাকতে কেমন লাগে । আজ এসব ভেবে সবকিছু কেমন এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে । মনে হচ্ছে, এইসব আনন্দ সমাহার নয়, শান্তিময় জীবন নয় । তোমাকে জড়িয়ে থাকায় সব। মা, আমার খুব তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে ।

স্বর্গ যদি সব ইচ্ছে পূরণের জায়গা হয় তাহলে তবে এই ইচ্ছে কেনও পূরণ হবে না বলতে পারো??




শেষকথা

আশ্চর্য! চিঠি শেষে আনন্দ শুরু হওয়ার কথা । অথচ আমার কেবলই বিষাদ লাগে!

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০১
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×