somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীরপ্রতীক

২৩ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের বিবেচনায় ৪২৬ জন মুক্তিযোদ্ধকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। বীরপ্রতীক প্রাপ্তদের তালিকায় ৪২৫ নম্বর নামটি যার, তিনিই বঙ্গবন্ধুর 'বীর বিচ্ছু' শহীদুল ইসলাম_ সর্বকনিষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। ডাক নাম লালু। যুদ্ধের সময় যার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর! টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌর এলাকার সুতিপলাশ গ্রামের লালু যুদ্ধ করেছেন বীরউত্তম কাদের সিদ্দিকীর অধীনে। মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইলের গোপালপুর যে থানা দখল করেছিলেন, বলতে গেলে সেই থানা দখলের কৃতিত্বের পুরোটাই লালুর।
যুদ্ধের সময় লালু মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির দলে যোগ দেন। এতো ছোট ছেলে যুদ্ধ করবে কি করে! তাই লালুকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ফাইফরমাশ খাটা ও অস্ত্রশস্ত্র পরিষ্কারের কাজ দেয়া হয়। এরপর সদলবলে সীমান্ত পাড়ি দেন। মেঘালয়ের তুরাতে ট্রেনিং ক্যাম্পে লালুর কাজ ছিল ভোরে উঠে হুইসেল বাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্যারেডের জন্য ডাকা। এরপর জাতীয় পতাকা টাঙানো আর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া। তার সঙ্গী ছিল সমবয়সী আরেক কিশোর ভুলু। দু'জনকেই বিচ্ছু বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ট্রেনাররা তাদের শেখান কিভাবে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়, অস্ত্র চালাতে হয়, গ্রেনেড ছুড়তে হয়, শত্রুর গতিবিধির খবর নিতে হয়। ২৫ দিনের ট্রেনিং শেষ করে কাদের সিদ্দিকীর দলে যোগদেন। যুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে গ্রুপ কমান্ডার পাহাড়ি তাকে নির্দেশ দেন গোপালপুর থানা রেকি করে আসতে। লালু সেখানে গিয়ে তার এক দূর সম্পর্কের ভাই সিরাজের দেখা পান। সিরাজ পাকসেনাদের দালালি করছে, সে লালুকেও একই কাজ করার প্রস্তাব দেয়। লালু কৌশলে নিজের পরিচয় গোপন করে রাজি হয়ে যান। পরে পরিকল্পনামাফিক তিনটি গ্রেনেড নিয়ে থানায় হাজির হয়। অল্পবয়স বলে তাকে চেক করা হয় না। পুরো পুলিশ স্টেশন একবার চক্কর মেরে এসে এক বাংকারে প্রথম গ্রেনেড ছুড়লেন লালু। ভীত ও হতভম্ব পাকিস্তানিরা আন্দাজে গুলি ছুড়তে শুরু করে লক্ষ্যহীনভাবে। শুয়ে লালু দ্বিতীয় গ্রেনেডটি ছোড়েন, কিন্তু এটা ফাটেনি। তারপর তৃতীয় গ্রেনেডটি সশব্দে ফাটে আরেকটি বাংকারে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসতে থাকে। গোলাগুলির একপর্যায়ে পাকিস্তানিরা পালায়, কিছু ধরা পড়ে, মারা যায় অনেক। বলতে গেলে শহীদুল ইসলাম লালুর প্রায় একক কৃতিত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেন গোপালপুর থানা। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর সব মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র জমা দিচ্ছিলেন, তখন শহীদুল ইসলাম লালুও তার স্টেনগানটি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেয়। বঙ্গবন্ধু অবাক হয়ে শহীদুল ইসলাম লালুর পিঠ থাপড়ে বলেছিলেন, 'সাব্বাস বাংলার দামাল ছেলে।' যখন সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে লালুর বাংকার ধ্বংসের কথা শুনলেন তখন বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলেন, 'বীর বিচ্ছু'। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করলেও জীবনযুদ্ধে ছিলেন পরাজিত। এ বীর মুক্তিযোদ্ধা সারাজীবনই কাটিয়েছেন চরম দরিদ্র অবস্থায়। জীবিকার তাগিদে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ের চাকরি নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পর পরই। দরিদ্রতাকে সঙ্গি করে কখনও রেলস্টেশনে কুলির কাজ করেছেন, হোটেলের বাসন মেজেছেন আবার কখনও হয়েছেন পাচক। শেষদিকে এসে ঠেলাগাড়িতে করে চা বিক্রি করেছেন। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, তিনি যে বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন সে কথা নিজেও জানতেন না। জেনেছেন বহু পরে, ১৯৯৬ সালে। অভাব ও দারিদ্র্যকে সঙ্গি করে বঙ্গবন্ধুর 'বীর বিচ্ছু' ও দেশের সর্বকনিষ্ঠ বীরপ্রতীক লালু ২০০৯ সালের ২৫ মে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×