ধানমন্ডি লেকে কতদিন পর?
স্মরণের বালুকাবেলায় অনেক নুড়ি পাথরের ভীড়ে সময়টা হারিয়ে গেলেও স্মৃতিরা জ্বলছে মিটি মিটি করে মনের আকাশে স্নিগ্ধ এই সকালে-বলতে শুরু করলে পাতার পর পাতা ভরে যাবে। থাক সেসব কথা। সামনেই দেখতে পেলাম দু'টো পথ দু'দিকে বেঁকে গেছে-একটা মসজিদের দিকে, অন্যটা লেকের দিকে। মসজিদের দিকটা বোধ হয় নতুন করেছে, আমি কখনো যাইনি। চললাম সেদিকেই, কিছুদূর যেতেই দেখি একটা ফলকে শোভা পাচ্ছে চমৎকার কিছু কথাঃ
ছোট্ট পরিসরে, ছোট্ট প্রয়াস
ইট-পাথরের মাঝে বনায়ন অভিলাষ।
মোবাইলটা বের করে ক্লিক।
ছবি-০১
(ছোট্ট পরিসরে, ছোট্ট প্রয়াস
ইট-পাথরের মাঝে বনায়ন অভিলাষ।)
চলার পথের দু'পাশে সবুজের সমারোহ, চোখটা জুড়িয়ে গেল। দেখি একটা একটা লোক কোদাল দিয়ে গাছের পাশের বড় বড় মাটির ঢেলা ছোট করছে, আমি উৎসুক হয়ে দাঁড়াই। মাঝাড়ি গড়নের ফর্সা ভদ্রলোক, হাঁটুর উপর পর্যন্ত পকেটওয়ালা প্যান্ট, পায়ে কেডস। বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করি,"আপনি কি গাছগুলো লাগিয়েছেন?"
উনি সরাসরি কোন উত্তর দিলেন না। একটু ঘুরিয়ে বললেন,"না ভাই, কত লোক কত কিছু বলে।"
বুঝলাম আমরা ভাল কাজ করতে না পারলেও তার সমালোচনায় পিছিয়ে নেই।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে ক্লিক।
ছবি-০২
(বনায়ন অভিলাষের রূপকার, নামটা জানা হয়নি)
রূপকার ভদ্রলোকের কথা ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে যাই - লেকের স্বচ্ছ জলের আয়নায় দেখি পাড়ের বিশাল সবু্জগাছ গুলো ঝুঁকে পড়ে নিজেদের দেখছে। লেকের পানি থির থির করে কাঁপছে, যেন কত কথা জলের সনে গাছের সবু্জ পাতার। ছবিতে সেই না বলা কথা অনুপস্থিত কিন্তু আমি যেন তা এখনো দেখতে পাচ্ছি।
ছবি-০৩
একটু কান পাতি, মৃদু বাতাসের বেগে কি কথা বলে চলেছে জল ও পাতা? যদি আমি বুঝতে পারতাম ওদের কথা !!!
ছবি-০৪
দূরে দৃষ্টি ছড়িয়ে দেই, দেখি রবীন্দ্র সরোবর, পাশেই ৮ নম্বর ব্রিজ। ওরাও জলে নেমেছে, সারারাত শেষে নিজেকে আবার নতুন করে দেখছে, সারা রাত্রির জমানো কত কথা যেন বলছে !!!
ছবি-০৫
লেকের পাড় ঘেষা বাড়িগুলোও গাছেদের সাথে পাল্লা দিয়ে লেকের স্বচ্ছ পানিতে উকি দিচ্ছে, নগরায়ন ও প্রকৃতি এক হতে চাচ্ছে !!!
ছবি-০৬
বড় বড় গাছগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ৮ নম্বর রোডের মসজিদটা দেখা যাচ্ছে। লেকের পানিতে সেও ডুব দিয়েছে, সবার মতে সেও জলের সাথে সখ্যতায় মেতেছে !!! আজকের সুউচ্চ, সুরম্য এই মসজিদের সাথে জড়িয়ে কত না স্মৃতি - উপরে টিন আর পাশে বাঁশের বেড়ার সেই মসজিদে কতগুলো কিশোর বালক নামাজ পড়ার চেয়ে দুষ্টুমি করে কত না সময় কাটিয়েছে। অন্য একদিন সেই স্মৃতির পসরা বসাব।
ছবি-০৭
আরো কিছুটা এগিয়ে যাই, দেখি জাহাজমার্কা বাড়িটা তার হতশ্রী চেহারাটা নিয়ে লেকের জলে কি যেন একটা অভিযোগ জানাচ্ছে।
ও যেন বলছে, "আমাকে যখন তিল তিল করে সুন্দর করে গড়ে তোলা হচ্ছিল, তখন কোথায় ছিল কর্তৃপক্ষ?
কোথায় ছিলে তাদের নিয়ম-কানুন? মহৎ সৃষ্টিকে গলা টিপে মারতে তাদের কি একটুও হাত কাঁপে না?"
ছবি-০৮
বিষন্ন মনে আনাম র্যাংগসের পাশ দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে ওপারে। ফুটপাতের উপর বাজার বসেছে, চলবে ৯ টা কি ১০ টা পর্যন্ত চলবে-প্রাতঃভ্রমণকারীরা অনেকেই এখান থেকে বাজার করে বাসায় ফেরে। আমিও দর-দাম করতে লাগলাম- মিনিট পাঁচেক আগের প্রকৃতি মানব কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ে গেল পুরোদস্তর সংসার মানব !!!!!
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মোঃ শামছুল ইসলাম
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬
ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০০