somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ লিখলেন, “তানজিম বড় হয়ে পড়বে।”

১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






ঘুম ভেঙ্গে গেল, ওঠে সময় দেখলাম পৌনে তিনটা, চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই। সময়টাকে কাজে লাগাই, দাঁত মাজলাম, ওজু করে নামাজ পড়লাম। তার পরও দেখি তিনটা পনোরো। কি করি? একটা বইয়ের কথা মনে পড়ল, হুমায়ূন আহমেদের লেখা – “জোছনা ও জননীর গল্প”। হঠাত করে এত রাতে ওই বইটার কথা মনে পড়ার একটা কারণ আছে।

সালটা খেয়াল নেই, বই মেলাতে গিয়েছি আমরা তিন জন – আমি, আমার স্ত্রী (তুহিন) ও আমার ছেলে (তানজিম)। শিশু তানজিমের জন্য কিছু শিশুতোষ বই কিনলাম, ও প্রথম শ্রেণীতে পড়ে, কিন্তু গল্পের বইয়ের খুব শখ।কী কী বই কিনব তা আমরা দু’জন মেলায় আসার আগেই ঠিক করে এসেছি – তালিকায় “জোছনা ও জননীর গল্প” ও আছে, সেবারই বইটা প্রথম মেলায় এসেছে। অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে অসম্ভব ভীড়, হুমায়ূন আহমেদ অটোগ্রাফ দিচ্ছেন তার কেনা বইয়ে তার ভক্তদের। বই কিনে যথারীতি লাইনে দাঁড়ালাম অটোগ্রাফের জন্য, তানজিমের খুব ইচ্ছা অটোগ্রাফটা ও নিবে। ভক্তরা অটোগ্রাফ নিয়ে হাসিমুখে প্রস্থান করছে। তানজিমের পালা এগিয়ে আসছে, লাইনে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছি, লেখক গুরু-গম্ভীর এই উপন্যাসের জন্য তার এই ক্ষুদে ভক্তের জন্য কি লিখবেন? বইটা হাতে নিয়ে উনি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে নাম জানতে চাইল। ও উত্তর দিল:
-তানজিম।
মাথা নামিয়ে খস খস লিখে বইটা ফেরত দিলেন।
উনার প্রত্যুৎপন্নমতি আমাকে মুগ্ধ করল, উনি সম্ভবত: লিখেছিলেন: “বড় হয়ে পড়বে”।
আমার সেই অনুমানটা যাচাই করার জন্যই এই খোঁজাখুঁজি।

বুক শেলফে খুঁজতে গিয়ে দেখি হুমায়ূন আহমেদের “শ্রেষ্ঠ উপন্যাস”- অনেকগুলো ভাল ভাল উপন্যাসের সংগ্রহ। বের করে নিয়ে ওটার উপরের খাপটা সরাতেই দু’তিনটা তেলাপোকা হাত বেয়ে গায়ে ওঠে পড়ল-বইটা টেবিলে রেখে গা ঝাড়া দিলাম, দৌড়ে তারা পালাল্। আমার ওপর ওদের এই উপদ্রব আমি হাসি মুখে মেনে নেই, কিন্তু যখন দেখি বইয়ের পাতার গায়ে তাদের ডিমের কারুকার্য, যা বই গুলোকে নোংরা করে অপাঠ যোগ্য করে তোলে, তখন মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু বই কেঁটেও ফেলেছে। একটা কাপড় নিয়ে এসে বইটার পাতাগুলো পরিষ্কার করলাম।তারপর পেলাম হুমায়ূন আহমেদের দশটা সেরা ছোট গল্পের সংকলন “দশজন”, ওটা মোটামুটি ভালই আছে। ড্রইং রুমের বুক শেলফটার সব গুলো বই খুঁজে দেখলাম, “জোছনা ও জননীর গল্প” বইটা পেলামনা। সম্ভাব্য আরোকটা জায়গা, শোবার ঘরের পুরনো বুক শেলফটা। শোবার ঘরে তুহিন অঘোরে ঘুমাচ্ছে, লাইটা জ্বালালে ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে, তাই বিরতি দিলাম, সকালে খুঁজব।

১৫ই আগস্ট, জাতীয় শোকদিবস – অফিস যাওয়ার তাড়া নেই। ফজরের নামাজ পড়ে ধানমন্ডি লেকের দিকে রওনা হলাম ঝিকাতলা থেকে। ধানমন্ডি তিন নম্বর রোডের আওয়ামী লীগের অফিসে থেকে ভেসে আসছে কুরআন তেলায়াতের আওয়াজ, শুনতে শুনতে আনাম রাংগসের পাশ দিয়ে ঢুঁকে গেলাম লেকে। রাতে বৃষ্টি হয়েছে, ঠান্ডা হাওয়ায় গা জুড়িয়ে যাচ্ছে, লেকের পাড়ের গাছগুলো নুয়ে পড়েছে জলের একেবারে কাছে, স্বচ্ছ পানিতে তাদের ছায়া-প্রকৃতি এখনো কত নির্মল!!!
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই মানুষকে চলে যেতে হয়, সেই চলে যাওয়ার দলে আছে মা, বাবা আরো অনেকে, আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। অপেক্ষমানের তালিকায় আছি আমি, আমরা।
তাই ছুটির এই সকালে চলে গেলাম আজিমপুর – যেখানে শুয়ে আছেন মা, বাবা। বাসায় ফেরার পথে কিছু কাঁচাবাজার করে বাসায় ফিরলাম আটটায়।মুখহাত ধুয়ে সোজা শোবার ঘরের বুক শেলফে তল্লাশী। একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম বহুল কাঙ্খিত বইটা। কিন্তু বইটার পাতাগুলো খোলা যাচ্ছে না, তোলাপোকার পাড়া ডিম শুকিয়ে পাতাগুলোকে সেঁটে দিয়েছে। একটি কাপড় দিয়ে যত্ন করে সব পরিষ্কার করে বইয়ের পাতাগুলো অবমুক্ত করলাম।
হুমায়ূন আহমেদের লেখাটা খুঁজে পেলাম, উনি লিখেছিলেন : “তানজিম বড় হয়ে পড়বে।”

মোবাইলটা নিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম।
হুমায়ূন স্যারের কথা ঠিক, সেদিনের শিশু তানজিমের গল্পের বই পড়ার খুব নেশা। পড়তে পড়তে সেই শিশু কিশোর বয়স থেকেই এক-আধটু লিখে আসছে, তারুণ্যে সে লেখা আরো পরিপক্ক হয়েছে। এবার একুশের বইমেলায় বেশ কয়েকটা গল্প বেরিয়েছে। ওর প্রায় সবলেখার প্রথম পাঠক আমি আর আমার প্রায় সবলেখার প্রথম পাঠক ও। পিতা-পুত্রের এই যৌথ প্রচেষ্টায় একটা কঠিন প্রকল্প হাতে নিয়েছি - “জোছনা ও জননীর গল্প” নিয়ে আমার অনুভূতির কথা লিখব, আলোচনা নয়।

এত বিশাল মাপের একজন লেখকের এত মহান একটা উপন্যাসের আলোচনা আমার মত একজন নগণ্য মানুষের মানায় না, কিন্তু ২০০৪ সালে পড়া উপন্যাসটা আমাকে যেভাবে আলোড়িত করেছিল, তা পাঠকদের জানাতেই আমার এই দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। অনেককিছুই ভুলে গেছি, আবার নতুন করে পড়ছি, প্রতি সপ্তাহে কিছু লেখার আশা রেখে আজকের মত শেষ করছি।

ঢাকা
১৮ আগস্ট ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×